somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ( স্বল্পদৈর্ঘ্য ) হারানো বিজ্ঞপ্তি . . .

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কোন কিছু হারিয়ে গেলে যেখানে হারিয়েছে সেখানে না খোঁজে আমরা যেখানে হারানোর কোন কথাই না সেখানেই খোঁজতে থাকি ।
রাত চারটার দিকে আমি আমার একটা সীম হারিয়ে ফেললাম । আমার বিছানার চাদরে এত কারুকাজ যে কোনটা সীম আর কোনটা কারুকাজ বুঝে উঠতে পারলাম না ।
দুইটা লাইট ধরালাম । কাজ হল না । আমি অন্ধের মতো হাত দিয়ে আলতো করে বিছানা বুলিয়ে খুজলাম কিন্তু পেলাম না ।
যতদূর মনে পড়ছে বিছানায়ই রেখেছিলাম । এর মাঝে বেশ কিছু চিন্তা মাথায় আসছে । এর তালিকা করলে এমন দাঁড়ায় -

১ । আচ্ছা, মানুষ কিভাবে পাগল হয় । সীমটা খোঁজতে খোঁজতে আমি কি পাগল হয়ে যাব । আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি । মাথাটা টেস্ট করা দরকার । পাঁচ বারো ষাট । হ্যাঁ , ষাটই তো । নাকি ক্যালকুলেটর এ দেখব ।

২ । আমি যখন সীমটা রেখে টয়েলেটে গেলাম । তখন কি সীমটার কিছু হয়েছে । কোন প্রেত আত্না সীমটা সড়িয়ে আমার সাথে মজা করছে । আমি তো ভূত প্রেত বিশ্বাস করি না । তাহলে এসব কি ভাবছি !

৩ । ঘরে কিছু ইঁদুর আছে । তবে , তারা ভদ্র । তারা তাদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকে । বাইরের কোন রেস্টুরেন্ট থেকে খাওয়া দাওয়া করে আসে । ঘরের কোন ক্ষতি করে না । নাকি সীমটা ইঁদুর তার মুখে করে নিয়ে তার গর্তে চলে গেছে ।

৪ । আচ্ছা ,সীমটা কি আমার শরীরের কোথাও রেখেছি । কানের পেছনে ? চেক করলাম । মাথার চুল ছোট করেছি তারপরেও মাথা হাতালাম কিছুক্ষণ । লুঙ্গি খুলে ঝাড়া দিলাম কিছুক্ষন । চেয়ারের ভেতর হাত ঢুকালাম । ধুলাবালি ছাড়া কিছু নেই। আরো যেখানে যেখানে খোজার কথা না সেখানেও খোজলাম । মোবাইলে ব্যাটারিতে কোন ফাঁকা আছে কিনা তা দেখলাম । বালিশের কভার খুলে ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে দেখলাম কিছুক্ষণ । নাহ , পেলাম না ।

৫ । আচ্ছা এমন তো হতে পারে পাঁচ দশ মিনিট আমার মাথা কাজ করছিল না ।সীমটা নিয়ে আমি নিজেই টয়েলেটে ফেলে দিয়ে এসেছি । টয়েলেটে গেলাম । সাবানের উপরে নিচে সব জায়গায় দেখলাম । সাবানেও লেগে থাকতে পারে । সীমটা গেল কই । নাকি চিবিয়ে খেয়ে ফেললাম !


আচ্ছা, সীমটা কি এতো জরুরী যে খুঁজতে হবে ? আমি তো কাউকে কল দেই না বা কেউ আমাকে । একবার ভাবলাম বাদ দেই । যা বাদ দেই ভাবি তা আমি আরো বেশি আগ্রহবোধ করি । কারন এখন আমার কাছে সীমটা পাওয়ার চাইতে সিমটা গেল কোথায় আর কিভাবে গেল তা খুঁজে বের করতে বেশি আগ্রহবোধ করছি ।
সেদিন পড়া মানিক বন্দোপাধ্যায়ের বিপত্নীক গল্পটা মনে পড়ল । সেখানে গল্পের নায়কের স্ত্রী গলায় ফাঁসি দেয় । গল্পের শেষে দেখানো হল লোকটা তার স্ত্রীর মৃত্যু নিয়ে তেমন ভাবছে না বরং ঘরের এত উপরে কিভাবে দড়ি লটকানো হল তা নিয়েই ভেবে অস্তির হচ্ছে ।
আমি কিছুই ভেবে পেলাম না । আমার খুঁটিনাটি শব্দ শুনে ভোর পাঁচটা বাজে বাবা মা এল আমার রুমে । কিরে বাবা কি খুঁজছিস । আমি যেন প্রান ফিরে পেলাম । যেকোন জিনিস বাবা ভালো খুঁজে পায় । তাই কিছু হারালে বাবাকে আগে বলি । বাবা বলল , বইয়ের ভেতর দেখ । আমি একত্রিশ পৃষ্ঠায় ছিলাম । পাতা উলটে দেখলাম । ঝাড়া দিলাম । নাহ , নেই ।
মা বলল , বাবা , অস্থির হইস না ।আমি পরে খোঁজে দিব । ঘরেই তো আছে । আমি এটা শুনে যেন আরো অস্থির হলাম । আরে , ঘরেই আছে তাহলে গেল কোথায় ।
ব্যাপারটা কেমন হল । ভোর পাঁচটা দিকে আমাদের পরিবারের সবাই আমার হারিয়ে যাওয়া সীম খোঁজছে ।
কিছুক্ষণ পর ভাবলাম তাদের কষ্ট দিয়ে লাভ নেই । বললাম ,থাক, ঘরেই আছে ,পাবো, সমস্যা নেই ।
মা বলল , ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহির রাজিউন পড়, পেয়ে যাবি । বাবা মা চলে গেল । আমি দুই একবার পড়লাম ।
লাইট দিয়ে খোঁজতে লাগলাম । খাটের নিচে ঢুকলাম । এই ঘরে আছি অনেকদিন কিন্তু আমার খাটের নিচে যে আরেক পৃথিবী পড়ে আছে তা আজ টের পেলাম । একটা জিনিস খোঁজলে আরেকটা জিনিস পাওয়া যায় ।
একটা পুরানো চিরুনি , একটা পুরানো পেন্সিল খুঁজে পেলাম । তার একটু ভেতরে তাকিয়ে দেখি সীমটা আমার দিকে তাকিয়ে মজা করে হাসছে । আমি দাঁত কিড়মিড়িয়ে তাকালাম । চোখে আগুন টের পেলাম ।
সীমটা হাতে নিয়েই আমার প্রথম ইচ্ছা হল সীমটা ভেঙ্গে দুই টুকরা করে ফেলি । একটা অকথ্য গালি দিলাম সীমটার দিকে তাকিয়ে যা কখনো কাউকে দেই না ।
নাহ , সীমটাকে বকে লাভ নেই । ওর তো আর পাখা গজায় নি যে নিজে নিজে উড়ে গেছে । দোষটা আমার । এই একটা সীম আমাকে কতগুলো অনুভূতি দিয়ে গেল তার হিসাব করলাম । একটু হাঁসি আসল তা ভেবে ।
ততক্ষনে সূর্য উঠে গেছে । নতুন দিনের শুরু ,যে দিনে আমি বা আমরা কিছুই হারাতে চাই না . . .
.

- পাভেল রইস
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:১১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিনেতা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৫



বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×