somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরক

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির ছদ্মনাম ছিল নির্ভয়া। মেডিকেলে পড়ত। দিল্লীতে চলন্ত বাসে তাকে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়। পরবর্তীতে মেয়েটি সুস্থ হয়ে ওঠে নি। হারিয়ে গিয়েছিল মৃতদের শহরে। বলছিলাম ২০১২ সালের কথা। বাংলাদেশে তখনও চলন্ত বাসে ধর্ষণের অপচর্চা শুরু হয়নি (অথবা আমি খবর পাই নি)। দেখতে দেখতে বাংলাদেশেও শুরু হল। যাত্রা আরম্ভ হল একটি চলন্ত মাইক্রোবাসে ধর্ষণের ঘটনা দিয়ে। আমি ২০১৫ সালের কথা বলছি। একেবারে ঢাকা শহরের ভেতরে একজন আদিবাসী গারো তরুণী এই নৃশংসতার শিকার হয়। অর্থাৎ বিকৃতির পাচার ঘটে দেশ থেকে দেশে। কিন্তু দৃষ্টান্তের পাচার হয় না। নির্ভয়াকে ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত চার জনের ফাঁসির সাজা হয়। একজন কারাগারে আত্মহত্যা করে। তবুও ভারতে নারীনিরাপত্তা ভয়জড়ানো বার্তা দেয়। অথচ বাংলাদেশে অপরাধীদের সাজাদানের কোন দৃষ্টান্তই স্থাপিত হয় না। বিগত কয়েকবছরে বাংলাদেশে শিউরে ওঠার মত অনেকগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কতজনের ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়ছে? বাংলাদেশে অপরাধীরা ধর্ষণ করছে। ধর্ষণের পর মেয়েদের হত্যা করছে। হত্যার পর মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করছে, মুখ গলিয়ে দিচ্ছে- যেন চেনা না যায়! পূজা নামের ছোট্ট একটি শিশুকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এই দেশে- তাতে করে বিচারের দাবিটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। গত পরশুবারের পহেলা বৈশাখে নারী নির্যাতনের ঘটনার অপরাধীদের আমরা হয়ত আর কোনদিন ধরতে পারব না। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে যারা রাস্তায় বখাটেপনা করে- তাদেরকেও পুলিশ কখনও খুঁজে পাবে না। খুব সম্প্রতি বিউটি আকতারের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় সবাই বাকরুদ্ধ হয়েছে। আমাদের এই দেশেই মেয়েকে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে বাবা। অথচ এসব নিয়ে কোথাও কোন ভাবনা-চিন্তা নেই। কোথাও কোন বিচারের দাবি নেই। যেন মার খেয়ে মরে যেতেই অভ্যাস হয়ে গেছে ভাতে-মাছে বাঙালির।

লেখাটার নাম ‘নরক’। এই ঢাকা শহরটাকে আমি ’নরক’ বলেই চিহ্নিত করছি। মেয়েদের চলাচলের জন্য ঢাকা শহর এখন বইয়ের পাতায় পড়া নরকের থেকে কম কিছু নয়। এই শহরের সিংহভাগ নারী কোন না কোনভাবে রাস্তা-ঘাটে বিকৃতির শিকার হন। আরও ভয়ানক বিষয় হচ্ছে- অধিকাংশ নারীই এই ঘটনাগুলো গোপন রাখেন। বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ও বিচার চেয়ে আরও বেশি নির্যাতিত হবার ভয় থাকায় নির্যাতন সহ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে পথ চলা এই শহরে এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। এত এত অবকাঠামোগত উন্নয়নের ভিড়ে শত শত নারীদের প্রতিদিনের হাহাকার চোখে দেখা যায় না, মনে বোঝাও যায় না- এই শ্বাসরুদ্ধকর বাংলাদেশ তো আমরা চাই নি। খুব সম্প্রতি দেশে বেশক’টি ভয়ঙ্কর ঘটনার খবর পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। সবগুলো ঘটনাই চলন্ত বাসে। রাত দশটা’র পর পরই বাসে মেয়েদের চলাচল করা অভিশাপতুল্য। এমনকি দিনের আলোতেও এই অপচেষ্টা চলছে। সাভার-গাবতলী সড়কে রাতের বেলায় মেয়েদের চলাচল নাকি আরও বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ কোথায় বিচার? কোথায় অপরাধী? কোথায় শাস্তি?

প্রতিটি রাতে আকাশের তারাদের সাথে সাথে জেগে ওঠে কিছু পশু- বিভংস-বিকৃত; জিভে লালা- বুকে জিঘাংসা। বলা হয়ে থাকে- কিছুটা নিরাপত্তাব্যবস্থা মেয়েরা নিজেরাই নিক। যেমন, সন্ধ্যের পরে একেবারে ফাঁকা বাসে না ওঠা- অথবা রাস্তায় হঠাৎ সিংহভাগ যাত্রী নেমে গেলে বা কোন একটা জায়গায় গিয়ে বাস ফাঁকা হয়ে গেলে সে বাস থেকে নেমে যাওয়া। এসব সতর্কতা গুটিকয়েক ধর্ষণের ঘটনা হয়ত বাঁচাবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে কোন উন্নতি ঘটাবে না। অপরাধীরা নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করবে। জীবনের প্রয়োজনে রাত-বিরাতে চলাচল করা নারীদের নিরাপত্তা এভাবে বিধান করা সম্ভব নয়। একটি চমৎকার উপায় হল শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কিন্তু শাস্তি দিতে গিয়ে দেখা যায়- অপরাধী কখনও ভয়ানক প্রভাবশালী, কখনও স্বজনপ্রীতি, কখনও সরকারপক্ষের ওমুক-তমুক নেতা অথবা কর্মী; শান্তি ও দৃষ্টান্ত তাই আজপর্যন্ত একটাও স্থাপিত হয়নি। অথচ প্রয়োজন আমাদের সবার। একজন ধর্ষকও নিশ্চয়ই চায় না তার বোন রাস্তায় ধর্ষিত হোক। আইনের প্রয়োগহীনতা, শৃঙ্খলার অভাব- সোজা কথায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নাজুক দশায় রাস্তা-ঘাটে পশুর মত ছিন্ন-ভিন্ন শরীর নিয়ে পড়ে থাকে আমাদের মেয়েরা। বহুদূরের কোন শব্দবিবর্ধনীতে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ ভাসে-‘ আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়…’। মেয়েরা কাজে গিয়ে কাজ শেষে ঘরে ফিরে আসবে- এটা মানুষের অধিকারের অংশ। তার তা নিশ্চিত করতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর কথাগুলো এই স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যর্থ হয়ে যায়। মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নিরাপত্তা না থাকলে কি হবে উন্নয়ন আর উপার্জন দিয়ে ! রাস্তা-ঘাটে নিরাপদে চলতে না পারলে কি হবে কোটি কোটি টাকার ফ্লাইওভার বানিয়ে ! বর্তমান সরকার তাদের সব সাফল্য ও ব্যর্থতাগুলোকে একপাশে সরিয়ে রেখে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করুক, দলপ্রীতি ভুলে গিয়ে ধর্ষকদের বিচার করুক- তাদের নাম বাংলার মানুষ অনেক বছর শ্রদ্ধার সাথে মনে রাখবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×