somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিপা গলির গ্যাং সদস্যরা ভালো থেকো....

২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক তাড়া অনেক ব্যস্ততা এর মাঝে খুজে ফিরি নীরবতা,ভালো লাগে একাকিত্বতা। নিজেকে বার বার স্বার্থপর বলি অমানুষ বলি
সত্যি কথা বলতে কি কোন দিন অমানুষ হয়ে উঠার গল্প কাউকে বলিনি। কোন দিন কাউকে জবাব দেই নি কেন চলে যাই
আর কেন ছুটে চলি এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে। আমার খুব ভালো লাগে ট্রেন ভ্রমন। আমি পিপাসা বোধ করি জীবনের গল্প শুনতে। গল্প শুনতে শুনতে গভীরতায় হারিয়ে যাই। কোন নির্মম ঘটনা আমাকে কাঁদায়, কোন কৌতুক হাসায়, কোন বেদনা আমায় ছুঁয়ে দুঃখী করে তোলে। না আজ অন্য কারো গল্প নয়, আজ আমায় নিয়ে বলবো.......

প্রজাপতি আমি, রঙ্গিন পাখা মেলে ফুলের বাগানে ঘুরি। মনের সুখে যখন ঘাস ফুলের কাছে যাই তখন আমি ঘাস ফড়িং হয়ে উঠি!
মনে পড়ে যায় সেই ছোট্ট সময়ের কথা ছোট ছোট চুলে ঝুটি করে ফড়িং এর মতো ঘুরে ফিরতাম আর ইচিং বিচিং চিচিং চা খেলে বেড়াতাম। চড়ুই পাখি বারো টা ডিম পেরেছে তের টা, একটা ডিম নষ্ট চড়ুই পাখির কষ্ট বলে যখন মুখ টা কে গোমড়া করে ফেলতাম আবার এক-দুই-তিন এভাবে যখন দশ বলে খেলার সাথীকে হারিয়ে দিতাম বিজয়ের হাসি হাসতাম। কত আনন্দময় সময় ছিল তখন......

ঘুড়ি!
খুব ইচ্ছে করে ঘুড়ি ঊড়াতে। ছোট সময় আমি আর বড়দা মিলে কত আগ্রহ নিয়ে ঘুড়ি বানাতাম। কখনো দোকান থেকে কাগজ কিনে
কখনো পলিথিন দিয়ে কাঠি,সুতা ইত্যাদি দিয়ে কত যত্ন করে বানাতাম। তারপর বিকালে আকাশে ঊড়াতাম। বড়দা আকাশে ঘুড়ি ঊড়াতো। যখন অনেক উপরে উঠে যেত ঘুড়ি তখন আমার হাতে দিত নাটাই। সবচেয়ে মজা হতো সেই দিন,যে দিন দেখতাম অন্য কারো ঘুড়ির সুতো ছিড়ে গিয়ে আমাদের ছাদে এগিয়ে আসছে। আমাদের সব খেলার সাথীদের মধ্যে একটা প্রতিযোগীতা শুরু হয়ে যেত। কে কার আগে ঘুড়ি টা ধরবে। কার হবে সেই ঘুড়ি, দড়ি-ঘুড়ি নিয়ে ধরাধরি আর টানাটানি করতে করতে দেখা যেত একটা সময় সেই বেনামী ঘুড়িটা ছিড়ে যেত। বেনামী ঘুড়ি কারো ভাগ্যে জুটেনি বলে তখন সবাই শয়তানি মার্কা হাসি দিতাম!

কমিকস বইয়ের ঘটনা টা বলি...
আমি আর বড়দা চাচা চৌধুরী, বিল্লু, পিংকী, বাটুল দ্যা গ্রেট এর পাগল ছিলাম। আমরা তখন দো-তলা বাসায় থাকি। পুরো ফ্ল্যাটের আশে পাশের বাড়ির যে সব ছেলে-মেয়ে ছিল সবাই আমাদের খেলার সাথী। আমরা এক বিরাট গ্যাং ছিলাম। আমাদের বন্ধু-বান্ধব কলেজ থেকে ৬ বছরের পিচ্চি-পাচ্চা পর্যন্ত ছিল। আমাদের গ্যাং দলের নিয়ম ছিল কেউ কাউকে ছোট ভাববো না,সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা, কাউকে ছোট না করা,সবাই মিলে মিশে খেলাধুলা, ঝগড়া-ঝাটি না করা ইত্যাদি। যাই হোক এই সব কথা কোন দিন শেষ হবে না। তো একদিন হলো বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি সামনের বাসার গ্যাং সাথী জুল্লু আমাকে বলল যাও তো মামা কে ডাকো। গ্যাং দলে সবার এক একটা টাইটেল ছিল বড়দা কে সবাই মামা বলে ডাকতো এবং এখনো দেখা হলে ডাকে! বড়দা আসলো তারপর জুল্লু বলল- মামা নতুন বই আনলাম। তোমার কাছে যে বই আছে সেই গুলো আমাকে দাও আর আমার গুলো তোমাকে দেও। কিন্তু কিভাবে দিবো বিকাল ছাড়া দেখা হওয়ার সুযোগ নেই। সকাল বেলায় বাসা থেকে কাউকে বের হতে দিবে না। তারপর তিন জন মিলে ভেবে বের করলাম বারান্দা দিয়ে বই পাস করবো। বড় লাঠি খুঁজতে লাগলাম। জুল্লু ফুল-ঝাড়ু নিয়ে আসলো আমরাও ফুল-ঝাড়ু নিয়ে আসলাম। তারপর পিলিথিন ব্যাগে বই ভরে ফুল-ঝাড়ুর মাধ্যে দু'বাসায় বই পাস হলো। রাস্তা দিয়ে যারা হাটছিল তারা হা করে দাঁড়িয়ে দেখছিল কি হচ্ছে........

এখন সব বদলে গেছে,আমাদের গ্যাং দলের সবার জীবন অনেক খানি বদলে গেছে। শুধু আমাদের নাম গুলো বদলায় নি। বদলায়নি চিপা গলির সেই বাড়ি।
শেষে জুল্লুর বর্তমান কথাই বলি পড়াশুনার পার্ট চুকিয়ে গত পাঁচ কি ছয় বছর দেশের বাহিরে থাকে। এ বছর বাংলাদেশে এসেছিল, যে মেয়ে কে ভালোবাসে সেই মেয়ে কে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলে। সেই মেয়ের বাবা কেস করাতে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে কিছু দিন জেল খাটে। তারপর বের হয়ে সেই মেয়ে কে ঘরে তুলে বেশ ভালোই সংসার জীবন কাটাচ্ছে। তারপর ফিরে গেছে প্রবাসে...

এমন অনেক চিপা গলির গ্যাং দলের সদস্য আছে, যারা অনেক দূরে নিজস্ব জীবনে। কারো সাথে যোগাযোগ নেই, তবুও সবাই সবার কিভাবে জানি খোঁজ রাখি। এর মধ্যে হারিয়ে গেছে অনেকেই টুনি-বস্তি-খ্যাত-রাশা-ভূত-রাশেক-ইতি-তেইল্লাচোরা-ঐশি-কাউলা-শট সার্কিট-মৌ-তারেক........ আমার খেলার সাথীদের খুব মিস করি। খুব ইচ্ছে করে কে কেমন হয়েছে, কত বড় হয়েছে, কি করছে ইত্যাদি খোঁজ করি।
কিন্তু আমার এই ইচ্ছা টা কে আমি আর পূরণ করতে চাই না। পুরোনদের সাথে আর দেখা করতে চাই না থাকুক না যে যার মতো...আমিও না হয় আজ থেকে আরেকটু স্বার্থপর হই আরো একটু অমানুষ হয়ে উঠি!
পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকুক সবাই, ভালো থেকো....
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ৯:৪৮
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×