somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুলিশ_ও_সাধারন_জনগণ-২

২৩ শে মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
একজন আলাউদ্দিন.....


আলাউদ্দিন, গ্রামের একজন সহজ-সরল অল্প শিক্ষিত ছেলে। বয়স ৩০+ হবে। বিয়ে করেছেন, ঘরে একটি ছেলে ও দুটি কন্যা সন্তানও আছে।

অল্প শিক্ষিক হওয়ায় এবং আর্থিক অসচ্ছলতার কারনে ভালো কোন চাকুরী বা ব্যবসা করতে পারেনি। চাকুরী নিয়েছেন একটি প্রাইভেট নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহকারী কোম্পানীতে। মাসিক বেতন ৮-৯ হাজার টাকার মত। এতে নিজের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

বাড়িতে বাবা-মা ও স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করলো বিদেশ যাবে। কিন্তু টাকা পাবে কোথায়? সবশেষে স্বীদ্ধান্ত হলো বিদেশ যাওয়ার পুরো টাকা সুদে আনবে তারপর বিদেশ গিয়ে তা পরিশোধ করবে।

এলাকার অনেক লোক বিদেশ নিয়েছে এমন একজন বিদেশ নেয়ার এজেন্ট (দালাল) এর খোঁজও মিলে গেল। সেই এজেন্টও (দালাল) আবার আত্মীয় হয়, সম্পর্কে বেআই। যাইহোক, দালালের সাথে চুক্তি হলো ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় সৌদী আরবে নিবে। ভিসা হওয়ার আগে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। বাকীটা পৌছানোর পরে দিতে হবে। পাসপোর্ট সহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলো।

কয়েকদিন পরে এজেন্ট(দালাল) ফোন করে বললো পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে হবে তাই আবেদন করেছে অনলাইনে। বাড়ীতে পুলিশ আসলে যেন ৫০০-১০০০ টাকা তাদের হতে ধরিয়ে দেয়।

কয়েকদিন পর পুলিশ ফোন দিয়ে থানায় দেখা করতে বললো। যদিও থানা থেকে আবেদনকারীর বাড়ীতে তদন্তে আশার নিয়ম। আলাউদ্দিন পুলিশের ফোন পেয়ে বাবাকে নিয়ে বাড়ি থেকে প্রায় ৩-৪ কিঃ মিঃ দুরে থানায় উপস্থিত হওয়ার পর....

তদন্ত অফিসার: কোন দেশে যাবেন?

আলাউদ্দিন: স্যার সৌদী আরব যামু।

তদন্ত অফিসার: (রুক্ষ স্বরে) ক্লিয়ারেন্স করতে খরচ আছে জানেন?

আলাউদ্দিন: স্যার খরচ তো ব্যাংকে জমা দিছি।

তদন্ত অফিসার:‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ ধুর বেটা ওতে কি ক্লিয়ারেন্স হয়ে যায়......?

আলাউদ্দিন পকেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে স্যার নেন।

তদন্ত অফিসার: (রুক্ষ স্বরে) তুমি কি আমার সাথে ফাইজলামী করো? বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

আলাউদ্দিন তার বাবাকে নিয়ে প্রায় সারাদিন বসে থেকে অন্য রুমে গিয়ে বাকী স্টাফদের নিকট জানতে চাইল......

স্যার ওই স্যারে কই গেল? একজন উত্তর দিল কে বংশী সাহেব? হেরে আজকে আর পাইবেন না, কাল আসেন।

আলাউদ্দিন নিরুপায় হয়ে বাবাকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। বাড়ী যেতে প্রায় সন্ধা হয়ে গেল।

পরের দিন.... আলাউদ্দিনের বাবা একটি ছোট দোকান করে, তার উপর গতকাল বন্ধ ছিল, আবার বাবার শরীরটাও বেশী ভালো যাচ্ছে না। শশুরকে নিয়ে থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল আলাউদ্দিন।

পথে দেখা হলো এলাকার এক পাতি নেতার সাথে.....

নেতা: কি মিয়া আলাউদ্দিন কই যাও?

আলাউদ্দিন: থানায় যাই, একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর লাইগ্গা আবেদন করছি, পুলিশে ঘুরাইতাছে।

নেতা: তা টাকা-পয়সা কত দিছো?

আলাউদ্দিন: ৫০০ ব্যাংকে জমা দিছি আর ৫০০ পুলিশরে দিছিলাম নেয় নাই, আজকে যাইতে কইছে।

নেতা: ওইয়াতে কি আর কাম অইবো.....? আমরাই তো করতে যাইয়া দুই-আড়াই আজার দিয়া আইছি। যাও দেহ কি কয়।

আলাউদ্দিন শশুরকে নিয়ে আবার থানার দিকে এগোতে লাগলো।

অতপর থানায় পৌছানোর পর............

একরুমে একসাথে অনেকজন পুলিশ বসে আড্ডা দিচ্ছে, আলাউদ্দিনকে দেখে একজন তদন্ত অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো বংশী সাহেব আপনার মক্কেল আইছে।

তদন্ত অফিসার: অন্যদের উদ্দেশ্য করে, আরে এই মিয়া আমারে ৫০০ টাকা দেয় ক্লিয়ারেন্স এর জন্য, আপনারাই বলেন এইয়াতে কি কাম অয়?

উপস্থিত একজন পুলিশ সদস্য বলে উঠলো এখানে আমাগো খরচই তো তিন হাজার- পয়ত্রিশ্য টাকা। উপস্থিত অন্য এক পুলিশ সদস্য আলাউদ্দিনকে কাছে ডেকে আস্তে করে বললো আপনি পয়ত্রিশ্য দিয়ে দেন কাজ হয়ে যাবে।

আলাউদ্দিন নিরুপায় হয়ে ৩৫০০ টাকা তদন্ত অফিসারের হাতে দিয়ে, দুইদিন পরে এসপি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স পাওয়ার আশ্বাস নিয়ে শশুরকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।

দুইদিন পর আলাউদ্দিন এসপি অফিস থেকে ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে গেলে.....

আলাউদ্দিন: স্যার আমার নাম মোঃ আলাউদ্দিন, আমি একটা পুলিশ ক্লিয়ারেন্স করতে দিছিলাম, ওইডা নাকি আপনার কাছে, আমি নিতে আইছিলাম।

ক্লিয়ারেন্স প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ: আবেদন করছেন কবে? লগে ভোটার আইডি কার্ড আনছেন?(রুক্ষ স্বরে)।

আলাউদ্দিন: স্যার তিন-চাইরদিন আগে, ভোটার কার্ড আনছি স্যার।

পুলিশ: ছয়শো টাকা দেন।

আলাউদ্দিন: ছয়শো কিয়ের স্যার? আমিতো ব্যাংকে আর থানায় টাকা দিছি।

পুলিশ: ওইখানেরটা ওখানে দিছেন, এখানকারটা এখানে দিতে হবে।

আলাউদ্দিন: স্যার আমি গরিব মানুষ, একটু কম দিলে অয়না?

পুলিশ: গরিব হলে আমি কি করবো? টাকা ছাড়া কাজ হবে না, মিয়া বিদেশ যাইবেন আবার গরিব মানুষ সাজেন.......... দেন দেন টাকা দেন।

আলাউদ্দিন আবারও নিরুপায় হয়েয়ে ৬০০ টাকা দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ী আসলো।

এই পর্যন্ত যা খরচ হলো সব টাকাগুলোই আলাউদ্দিন সুদে এনেছে। পরেরদিন সে চলে গেলল তার কর্মস্থলে। খরচ হওয়া টাকার সুদ পরিশোধ করে রাখতে হলে আয় করতে হবে যে।

এখন আলাউদ্দিন বিদেশ যাওয়ার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে..............

[বিঃদ্রঃ সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা]
মোঃ পলাশ খান
১৮/০৩/২০১৯ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১:০১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×