মার্কেটিং এ নেগেটিভ মার্কেটিং বলে একটা ব্যাপার আছে। নেতিবাচকতাও বিজ্ঞাপন হতে পারে। যেমন ধরুন রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর দেশে বিদেশে প্রচার হয়ে গেলো যে বাংলাদেশ নামক দেশটি পোষাকশিল্পে এতো উন্নত। এই প্রচারনার ফলে কিন্তু প্রচুর নতুন ক্রেতা আকৃষ্ট হলো বাংলাদেশের পোষাকের প্রতি। আমি পরিসংখ্যানিক তথ্য না দিতে পারলেও কমনসেন্স থেকে বলতে পারি হুমায়ুন আজাদের উপর হামলা তার মতাদর্শকে আরো তীব্রভাবে বিজ্ঞাপিত করেছে। ফলাফলটা দাড়িয়েছিল মিশ্র। পক্ষের দলে আরো একটা বড় অংশ যুক্ত হয়েছে আর বিপক্ষ দলেও কিছু নতুন সদস্যের আগমন ঘটেছে। এতে কি দাড়িয়েছে? ইন-গ্রুপ আউটগ্রুপ বলে দুটো দল তৈরী হয়েছে। মানে তোমরা বনাম আমরার টানাপোড়েন তীব্র হয়েছে। অর্থ্যাৎ, জাতিগত বিভক্তি বেড়েছে। অথচ পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে যদি সমালোচনাকে মেনে নেয়া বা ডিফেন্ড করার কালচার তৈরী হতো, তাহলে কিন্তু এমনটা হবার সুযোগ থাকতো না। পশ্চিমে আজকাল ইন্টার রিলিজিয়াস ডায়লগ হয়, যাতে করে দ্বন্দ কমে যায়, সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়। অথচ আমাদের সমাজে হাটিংটনের ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন তত্ত্বটিই বরং প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।
জানিনা কোন ইশারায় মুক্তমনা এখন বন্ধ রয়েছে। সরকার কি তদন্তের নামে মুক্তমনা বন্ধ করে দিলো? মানুষের বোধ বিবেচনার জায়টুকোও কি হরণ করতে হবে? নেগেটিভ বিজ্ঞানপন হয়ে যেতো মুক্তমনার? হবেই তো। আজ হোক, কাল হোক মানুষ কিন্তু মুক্তমনা পড়বেই। আমার নিজের কাছেও মুক্তমনার অজস্র লেখার পিডিএফ আছে। আমি জানিএমন অনেকের কাছেই আছে। কিন্তু জনগনের একটা বিরাট অংশ কিছু না পড়ে, না জেনেই ধরে নেবে যে অভিজিৎ রায় ঘোরতর নাস্তিক ছিলেন যিনি ধর্মকে আক্রমন করতেন নোংরাভাবে।
অথচ অভিজিৎ দা'র লেখাগুলো আরো বেশি বেশি পড়া দরকার যে কারো, হোক সে আস্তিক হোক সে নাস্তিক, হোক সে সংশয়বাদী।
ছোটভাই সুব্রতশুভ কে গ্রেফতার করার সময় অবাক হয়েছিলাম। শুভর লেখায় আমি কখনই কোন উগ্রতা পায়নি। পেয়েছি শাণিত যু্ক্তি। আর অভিজিৎ দা'র লেখায় তো ছিল সুদক্ষ গবেষকের ছোয়া। বিবর্তনবাদ, সমলৈঙ্গিকতা, বিবর্তনীয় মনোবিদ্যাসহ অজস্র সময়োপযোগী লেখা তিনি আমাদের দিয়ে গেছেন।
মুক্তমনা বন্ধ করে দিয়ে এটাই প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে যে অভিজিৎ রায় একজন কুরুচিপূর্ণ, ধর্মবিদ্বেষী নোংরা মানুষ এবং তার হত্যাকান্ড একটি স্বাভাবিক ঘটনা যা তার প্রাপ্য এবং তা অনুচ্চারনীয়ভাবে সমর্থনযোগ্য, ব্যাক্তি এবং রাষ্ট্র দ্বারা।
'বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখ দ্বিতীয় বিদ্যায়।
বরং বিক্ষত হও প্রশ্নের পাথরে।
বরং বুদ্ধির নখে শান দাও, প্রতিবাদ করো।'
একটি জাতি যদি এই বাক্যাবলী ধারন করতে পারে মননে তবেই অন্ধকার দূর হবে। আর নইলে তলিয়ে যাবো নিজেরাই নিজেদের রক্ত ঝরিয়ে, মাংস খেয়ে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


