somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেম্পলার এবং ফ্রীম্যাসন by হারুন ইয়াহিয়া (২য় কিস্তি)

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম কিস্তি
ধর্মযোদ্ধা টেম্পলারদের মানসিকতা

টেম্পলারদের প্রকৃত পরিচয়, উদ্দেশ্য এবং তারা কিভাবে আসলো সে সম্বন্ধে জানতে হলে আমাদেরকে ধর্মযুদ্ধকালীন ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরাতে হবে। টেম্পলারদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাইটরা ধর্মযুদ্ধরত নাইটদের একটা দল যারা পবিত্র ভূমি রক্ষার অজুহাতে ফিলিস্তিনে ভ্রমণ করে এবং ঘাঁটি গেড়ে বসে।

যখন প্রথম ধর্মযুদ্ধ শুরু হয় তখন ইউরোপ কেবলমাত্র অন্ধকারযুগ থেকে উত্থিত হচ্ছে। একদিকে ছিল ক্ষুধা, দারিদ্রতা, অজ্ঞতা এবং ছোট ছোট রাজ্য ও সামন্তন্ত্রের মধ্যে কতৃত্ত নিয়ে বিরোধ অন্যদিকে উত্তর থেকে আসা একটানা বর্বরোচিত আক্রমণ ইউরোপকে বাসের অযোগ্য মহাদেশে পরিণীত করে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সংঘসমূহ যা তখন তৈরি হতে লাগলো তা মানুষের প্রয়োজন মিটানো এবং ইউরোপে শক্ত কত্তৃত্ত স্থাপনে যথেষ্ট ছিল না।
এই বিশৃঙ্খলার মাঝে ক্যাথলিক চার্চ তার ধর্মগুরু এবং কর্মচারীদের সহায়তার মাধ্যমে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠানে পরিণীত হোলো যা সাধারণ মানুষের উপর ব্যাপক খবরদারি করা শুরু করল।

চার্চের সদস্যরা তাদের উৎকৃষ্ট শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান ও উপলব্ধি অর্জন করেছিল যা তাদেরকে অজ্ঞ জনসাধারণ এবং অধিকাংশ অশিক্ষিত অভিজাত শ্রেণীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে সাহায্য করেছিল। তারা মাঝেমাঝেই তাদের আসল লক্ষ্য ভুলে যেয়ে পার্থিব ক্ষমতার প্রতি লোভাতুর হত এবং তাদের এই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে যেয়ে ইউরোপের অনেক রাজা এবং অভিজাতদেরকে চার্চের ক্ষমতাবলে অধিনস্ত করে নিয়েছিল।

ভ্যাটিকানের ক্ষমতার শীর্ষে থাকাকালীন পোপ দ্বিতীয় আরবান যুদ্ধ ঘোষণা করে। পবিত্র ভূমি যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে ছিল তা দখল করতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে পোপ দ্বিতীয় আরবানের উদ্দেশ্য ছিল খুব মহৎ ছিল খ্রিস্টানদের চোখে যে পবিত্র ভুমির নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে খ্রিস্টানদের কাছে। কিন্তু প্রথম ধর্মযুদ্ধ শুরু করা পোপ দ্বিতীয় আরবানের উদ্দেশ্য এই একটি বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি।

আগেই বলা হয়েছে পোপরা যে ভূমি নিয়ন্ত্রণ করত সবাইকে সংগ্রাম এবং অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করতে হত। প্রাচ্য থেকে আগত ব্যবসায়ীরা যেসব কাহিনী প্রচার করত তার বেশিরভাগ জুড়ে থাকত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমানরা কি বিপুল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী, এমন বিলাসদ্রব্য ও ফলমূল যা ইউরোপে কেউ কখনও দেখেনি। এই সমস্ত বিষয় ধর্মযুদ্ধের প্রভাবক হিসেবে দেখা দিল।

তখন পোপরা দখলদারিত্ত ও উপনিবেশের সংমিশ্রণের এক পরিকল্পনা করল যার ফলে তারা প্রাচ্যের সম্পদ কুক্ষিগত করতে পারে এবং সাথে সাথে আরও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারে। ফলশ্রুতিতে তারা ইউরোপে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিয়ে সার্বিক ক্ষমতা দখল করতে চাইলো তা করতে যেয়ে তারা খ্রিস্টানদের ১০০০ বছরের শান্তি, নম্রতা ও অহিংসের সংস্কৃতি দূরে সরিয়ে দিলো।

যুদ্ধের জন্য লোকবল সংগ্রহ করতে যেয়ে অ্যান্টি খ্রিস্টান কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করা গেলো যার ফলে ক্রুসেডারদের সহিংস, নির্দয় এবং অজ্ঞ আচরনের ব্যাপারে কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। পোপরা তাদের সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য তাদের হাতে থাকা সম্ভাব্য সকল উপায় অবলম্বন করল এমনকি চিহ্নিত দাগী আসামীদেরকেও সৈন্যদলে যোগ দেওয়ানো হল এই আশ্বাসে যে ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে তাদের সকল অন্যায় ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগেরই নিজেদের খ্রিস্টান ধর্মের মৌলিক মতবাদসমূহ সম্বন্ধে কোনও জ্ঞান ছিল না আর ইসলাম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা বলাইবাহুল্য।

সুতরাং বলা যায়, ধর্ম বা আদর্শের খাতিরে নয় ধর্মযুদ্ধের প্রধান নিয়ামক ছিল প্রাচ্যের ধনসম্পদ কুক্ষিগত করা। রাজারা এবং স্থানীয় অভিজাত সম্প্রদায় যারা প্রায় সবসময় একে অন্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকত তারাও তাদের সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ধর্মযুদ্ধে স্ব স্ব সৈন্য নিয়ে একসাথে বেরিয়ে পড়ল। এই শ্রেণী যাদের নিজেদের মধ্যে অন্তরকলহের কারণে কোনও একতা ছিলনা তারা নিজেদের উদ্যোগে এই যুদ্ধে যাচ্ছিল। এই সামন্ত জমিদারদের দলে অবধারিতভাবে তাদের দাসেরা ছিল যারা তাদের মুক্তির বিনিময়ে এই যুদ্ধযাত্রায় অংশ নিয়েছিল।

এই ধর্মযোদ্ধাদের মধ্যে যারা চার্চের পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তাদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। এই বিষয়ে একটি উৎসের বর্ণনা উল্লেখযোগ্যঃ
“ ফরাসী নাইটদের আরও জায়গার প্রয়োজন। ইটালীয় ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ...... এই যুদ্ধের একটা বড় অংশ সাধারণ গরিব জনগোষ্ঠী যারা তাদের জীবনের কষাঘাত থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যে এই অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিল”।

ঐসব ধর্মযোদ্ধাদের দেখে এক সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীর পরিবর্তে একটি অসংগঠিত, বিশৃঙ্খল এবং অনিয়ন্ত্রিত লোকসমাগম মনে হচ্ছিল। এরকম একটা বাহিনীর কাছ থেকে যেটা আশা করা যায় তারা তা’ই করেছিল, প্রথম ক্রুসেডেই তারা ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত ধ্বংসযজ্ঞ সংগঠিত করে। জেরুজালেম দখল করার পরপরই তারা জনগোষ্ঠীর প্রায় সিংহভাগ হত্যা করে ফেলে যার বেশিরভাগই ছিল মুসলিম এবং ইহুদী। ইতিহাসের বর্ণনা থেকে জানা যায় এই হত্যাযজ্ঞে প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ নিহত হয়। সত্য কথা বলতে এই নাইট টেম্পলারদের স্থপতিরা চার্চের প্রথাগত শিক্ষায় শিক্ষিত ছিল না। এই ধর্মযোদ্ধাদের বেশিরভাগই অজ্ঞ ও ইতরপ্রকৃতির, যারা এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল কোন মহৎ উদ্দেশ্যে নয় বরং রোমাঞ্চ, ধনসম্পদ, সম্মান এবং খ্যাতি অর্জনের জন্য। যাইহোক এই ফ্রেঞ্চ অভিজাতরা তাদের সংগঠন সৃষ্টির অল্প সময়ের মধ্যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্যে প্রকাশ করে যা মোটেও খ্রিস্টানসুলভ ছিলনা বরং তাতে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন অসৎ লক্ষ্যের আভাস পাওয়া যায়। এই সৈন্যসকল যাদের উদ্দেশ্য এবং লোভ ছিল নিজেদের ভয়াবহ দারিদ্র দূর করা; তারা খুব শীঘ্রয় মধ্যযুগের ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ এবং ভয়ঙ্কর শক্তিতে পরিনিত হয়।
৩য় কিস্তি
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×