somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেম্পলার এবং ফ্রীম্যাসন by হারুন ইয়াহিয়া (৩য় কিস্তি)

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম কিস্তি
২য় কিস্তি
দৃষ্টিপটে টেম্পলাররা

যারা প্রথম ক্রুসেডে যোগদান করে তারা ১০৯৯ সালে জেরুজালেম বিজয় করে এবং ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। যুদ্ধ শেষে যখন বেশিরভাগ সৈন্য ইউরোপের উদ্দেশ্যে জেরুজালেম ত্যাগ করছিল তখন কিছু ফ্রেঞ্চ অভিজাতদের নেতৃত্বে একদল ক্রুসেডার এবং কিছু সৈন্য সেখানে থেকে যেতে মনস্থ করল। আপাত দৃষ্টিতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পবিত্র ভুমিতে যেসব খ্রিস্টান তীর্থযাত্রী যায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং একই সাথে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করা। যদি এই দখলদারিত্তের সামগ্রিকতা বিচার করা হয় তাহলে বোঝা যায় যে যদিও কিছু সৈন্য এবং যাজকরা আদর্শগতভাবে সঠিক ছিল কিন্তু ব্যাপকার্থে এটা একটা অজুহাত ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।

আগেই বলা হয়েছে, প্রথম ক্রুসেডের সাথে সাথে পশ্চিমের ঔপনিবেশ শুরু হয়ে যায়। তখনই প্রথম কিছু পশ্চিমা এবং স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে বিরোধ শুরু হয় যার ফলাফল এমনকি বর্তমান আধুনিক সময়েও বিদ্যমান। ক্রুসেডাররা তাদের হত্যাযজ্ঞের সপক্ষে যেসব যুক্তি দেখান তা মোটেও গ্রহণযোগ্য না। জেরুজালেমের তীর্থযাত্রার পথগুলো মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং সেগুলো সবসময়ই নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য খোলা ছিল এবং জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তি ও সহনশীলতার সাথে দিনানিপাত করছিল। কিন্তু তারপরও টেম্পলাররা নির্বিচারে মুসলিম, ইহুদী এমনকি স্থানীয় খ্রিস্টানদেরকেও হত্যা করতে পিছপা হয়নি।

১০৯৯ সালে জেরুজালেম রাজ্যের প্রতিষ্ঠা হয় যা আন্তিয়খ-উরফা (Antioch-Urfa) পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। কুড়ি বছর পর হুগোস ডি পায়েন্স (Hugues de Payens) এর নেতৃত্বে নয় জন ফ্রেঞ্চ নাইট জেরুজালেমের শাসক দ্বিতীয় বল্ডয়িন (Baldwin II) এর কাছে উপস্থিত হয় এবং নিজেদেরকে জেরুজালেম ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী পথের তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তা প্রদানের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ঘোষণা করে। জেরুজালেমের রাজা কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং এইভাবেই টেম্পলারদের উত্থান শুরু হয়। নাইটরা নিজেদেরকে “ক্রাইস্টের অসহায় সহযোদ্ধা” উপাধি দিয়েছিল কিন্তু অসহায় কথাটি তাদের আচরণের সাথে ছিল একদম বেমানান । তারা সবসময়ই সম্পদের ব্যাপারে প্রচণ্ড পরিমাণ লোভী ছিল যদিও এই উপাধির মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ছদ্মাবরনে রেখেছিল। তারা শুধু তাদের নামের মধ্যে ধোঁকাবাজি সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং তারা নিজেদেরকে এমন ধরনের ধর্মযোদ্ধা ভাবমূর্তি তৈরিতে নিবেদিত ছিল যাতে মনে হয় তারা সকল ধরনের পার্থিব লোভলালসা ত্যাগ করেছে। যাইহোক পরবর্তী পরিচ্ছদে আপনারা আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন যে, খুব শীঘ্রই এই নাইট টেম্পলাররা এমন এক বস্তুবাদী সংগঠনে রূপান্তরিত হয় যারা সবধরনের ধর্মীয় মূল্যবোধকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয় তারা এক ধর্মবিরোধী শক্তিতে রূপ নেয়।

জেরুজালেমের রাজা বল্ডইয়ন ২য় (Baldwin II) নাইটদেরকে অনেক সুবিধাদি প্রদান করেছিলেন, এছাড়াও বর্তমান আল আকসা মসজিদের স্থানসহ (যা টেম্পল মাউন্ট নামেও পরিচিত) বৃহৎ এলাকা যেখানে একসময় সলোমানের টেম্পল অবস্থিত ছিল তা নাইটদের বরাদ্দ দেন।

এই নাইটদের তোষণের পিছনে সন্দেহাতীতভাবে রাজা বল্ডইয়নের কিছু নিজস্ব স্বার্থ ছিল। নাইটদের প্রদান করা ঐ এলাকাতে মুসলিমদের প্রভাব বৃদ্ধির কারণে তাঁর রাজত্ব শঙ্কা এবং ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। সুতরাং, অভিজ্ঞ নাইটদের উপস্থিতি এবং তাদের কিছু পবিত্র স্থানে পাহারা বসানো তাঁর রাজত্বের জন্য সুফল বয়ে আনল। কিন্তু নাইটদের সংখ্যা খুব বেশী ছিল না। এই অবস্থায় রাজা বল্ডইয়ন এবং টেম্পলারদের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার Hugues de Payes নাইট টেম্পলারদের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়। এরই সূত্রধরে পর্যায়ক্রমে তারা পোপদের সমর্থন আদায় করার মধ্যদিয়ে টেম্পলারদের পথ পরিষ্কার করে।

১১২৭ সনে রাজা বল্ডইয়নের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দুজন টেম্পলার সেন্ট বারনার্ডের শরণাপন্ন হয় যিনি তখন পোপদের উপর প্রবল প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁর জীবদ্দশায় বারনার্ড খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ভিতর অতি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত ব্যক্তি হিসাবে পরিচিত ছিলেন।

বারনার্ড যিনি সকল দরজা উন্মুক্তকারী হিসাবে পরিচিত ছিলেন তিনি সিস্টারসিয়ান সংঘের (Cistercian Order) প্রতিনিধিত্ব করেন, যা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী সংঘগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় সংঘ।এছাড়াও এই সংঘের সদস্যরা ক্যাথলিক চার্চের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিল।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×