somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুতুড়ে: আটলান্টিস (পর্ব: ১)

১৪ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজেদের সংলাপে তিমাউস এবং ক্রিটিয়াস নামের দুই গ্রীক একটা গল্প বলেছিল...... সংলাপগুলো তাদের মুখে প্রতিধ্বনিত করেছিলেন বিখ্যাত দার্শনিক প্লেটো (৪২৭-৩৪৭ খ্রীঃপূঃ)। গল্পটি একটি শহরের...... নাম আটলান্টিস । সত্যিও হতে পারে টাইপের গল্পটিতে একটি সভ্যতার কথা বলা হয়েছিল যেটা কিনা হঠাৎ সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যায় । শুধু সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র আটলান্টিস নগরটাই নয়, ওটাকে যে ধারণ করেছিল সেই মহাদেশটাও নগরীর সঙ্গী হয় সমুদ্র তলদেশে । যদিও এটার ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই এবং যুগে যুগে গল্পটি চরম সমালোচনার মুখে পড়েছে...... তবুও আটলান্টিস হয়ে আছে মানুষের মনের বিখ্যাত আলেয়া ।

প্লেটোর গল্প


প্লেটোর মতে, প্রায় ১২,০০০ হাজার বছর আগে পিলারস অফ হেরাকলেসের ( যা বর্তমানে দ্যা স্ট্রেটস অফ গিব্রাল্টার নামে পরিচিত ) পশ্চিমে বাস ছিল শৌর্যে-বীর্যে অনন্য এক জাতির, আটলান্টিস । এই দ্বীপের বাসিন্দারা ইউরোপ ও আফ্রিকার এক বিরাট অংশ শাসন করত । ক্ষমতার প্রতি তাদের ছিল প্রবল আকাংক্ষা (!!!!! তার মানে কি ক্ষমতালোভী...... ক্ষমতার লোভ কারই বা নেই) । এই লালসায় তাদের সর্বনাশ ডেকে আনে...... তারা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এথেনিয়ান্সদের সাথে, প্লেটোর ভাষায় যারা ছিল অস্বাভাবিক রকমের সাহসী এবং কৌশলী । গ্রীক যোদ্ধারা মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করতে থাকে ( গ্রীকরা হয়তো ভেবেছিল আটলান্টিসদের সাথে পেরে ওঠা তাদের কম্ম না...... যা আছে কপালে মরলে ওদের নিয়েই মরব.........একান্তই আমার চিন্তাভাবনা...... ভিত্তিহীন)। সবাইকে অবাক করে (আমাকে সহ) এথেন্স পরাস্ত করল সেই পরাশক্তিকে । শুধু পরাস্ত করেই ক্ষান্ত হল না... সাধারণ গ্রীকদের পর শুরু হল গ্রীক দেবতাদের খেল...... গ্রীক দেবগুরু জিউস (এক কথায় দেবতাদের ক্যাপ্টেন) প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করে নিক্ষেপ করল আটলান্টিসের দিকে । ব্যস ...... তলিয়ে গেল সম্পূর্ণ সভ্যতা...... সমাপ্ত ঘটল এক অধ্যায়ের...... সূচনা হল এক আলেয়ার ।

এ সবই প্লেটোর ভাষ্য ( বন্ধনীর ভিতরের কথাগুলো ছাড়া...... ওগুলো বিখ্যাত দার্শনিক সব্যসাচী প্রসূনের :-B ) যেটা তিনি শুনেছিলেন আরেক পন্ডিত পরিব্রাজক সোলোনের (৬৩৯-৫৫৯ খ্রীঃপূঃ) কাছে।

এবার আসি সোলোনের কথায়...... সোলোন ৫৭১-৫৬১ খ্রীঃপূঃ এই দশ বছর চষে বেড়িয়েছেন ঈজিপ্ট এবং তার আশপাশের এলাকা । ধারণা করা হয়, নীল নদের তীরবর্তি ঈজিপ্টের রাজধানী সাইসের কোন এক মন্দিরের শিলালিপি থেকে তিনি প্রথম আটলান্টিস সম্পর্কে জানতে পারেন ।

এখানেই লাগল খটকা...... ঈজিপ্টশিয়ানরা কোন উৎস থেকে আটলান্টিসের খবর পেল সেটা আজো রহস্যাবৃত আর প্লেটোর ক্রোনোলজি অনুযায়ী ঈজিপ্টশিয়ান সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে আটলান্টিস বিলুপ্তির আরো ৫০০০ বছর পর। আবার আলেয়ার খেলা......
আটলান্টিসের বর্ণনা মূলত উঠে এসেছিল প্লেটোর বর্ণিত গ্রীক বীরত্বগাঁথার দুটি সংলাপে। বীরগাঁথা হলেও রচনাটা ছিল মূলত আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে এথেন্স এবং আটলান্টিসের মধ্যকার তুলনামূলক পর্যালোচনা। প্রথম সংলাপটি ছিল তিমাউসের, যেখানে এথেন্স বনাম আটলান্টিসের যুদ্ধ পূর্ববর্তী গ্রীক ইতিহাস বলা হয়েছে। আর দ্বিতীয় সংলাপে (ক্রিটিয়াসের সংলাপ) ছিল আটলান্টিসের কথা। ধারণা করা হয়, তৃতীয় আরেকটি সংলাপ ছিল প্লেটোর পরিকল্পনাতে যেটা কোন এক অজানা কারণে তাঁর লেখায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। (কারণটা না হয় আমরা ফেলু মিত্তির স্টাইলে সমাধানের চেষ্টা করব)

প্রথম বিতর্ক

প্লেটোর বক্তব্যতে এথেন্সকে নিয়ে মাতামাতি একটু লক্ষণীয় (পার্সেয়ালটি ভাইরাসে আক্রান্ত)। এথেন্সকে আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাঁর চেষ্টার অন্ত ছিল না। এর যে বিরুদ্ধ মত ছিল না তা কিন্তু নয়। বরং এ দলে ছিল স্বয়ং প্লেটোর সর্বসেরা ছাত্র এরিস্টটল যাঁরা খোলাখুলি প্লেটোর বক্তব্যের সমলোচনা করেছেন। একটি বিশাল জনগোষ্ঠির কাছে গ্রীসকে একটা আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিয়মান করার জন্য প্লেটো কিছু মনগড়া তথ্য (তারমানে আটলান্টিসের অস্তিত্ব!!!! ) উপস্থাপন করেছিলেন বলেও অভিযোগ আছে। এই মনোবৃত্তিই সম্ভবত তাঁর রচনায় তৃতীয় সংলাপটির অনুপস্থিতির কারণ। দ্বিতীয় সংলাপটিতেই প্লেটোর অনেক জারিজুরি ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। সেখানে তিনি ক্রিটিয়াসের মুখে আটলান্টিসের এমনি মনোমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছিলেন যে, তাতে মনে হয়েছিল এটা পার্থিব কোন জায়গা না...... এর অবস্থান আমাদের চেনা জগতের বাইরে। তৃতীয় সংলাপটিতেও সম্ভবত আটলান্টিস সম্পর্কিত কিছু তথ্য উঠে আসছিল যে কারণে প্লেটো সচেতনভাবে তা অসমাপ্ত রাখেন......... সম্ভবত তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আটলান্টিস সম্পর্কিত তাঁর জ্ঞানের উৎস সম্পর্কে তিনি প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন যার যোগ্য উত্তর তাঁর কাছে নেই। তাঁর এই হঠাৎ থেমে যাওয়ায় জন্ম দিল আটলান্টিস অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম বিতর্কের। যে বিতর্ক এখনো থামেনি...... চলছে তো চলছেই ।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৫:৩০
২৫টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×