somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭১ এর গণহত্যা ও একটি স্বাধীন জাতির জন্ম

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে করুন এক দিন।সে রাতে মানবতার ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্টতম উপায়ে নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কাপুরুষোচিত নির্মম গনহত্যা চালায় বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনি।
৭০ এর নির্বাচনে হেরে গিয়ে বাঙ্গালির উপর এমনিতেই ক্ষ্যাপা ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।যত রাগ ক্ষোভ ছিল তার পুরোটাই উগরে দেয়ার জন্য অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আঁটঘাট বেঁধেই তারা হামলা চালিয়েছে ঘুমন্ত বাঙ্গালির উপর।এদেশের রাজনৈতিক নেতা,সচেতন তরুন প্রজন্ম আর প্রতিবাদী মানুষগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ স্থানে(যেমন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,ইপিয়ার,রাজারবাগ পুলিশ লাইন) হামলা চালায়।ইতিহাসের জঘন্যতম এই হামলার একটা গালভরা নামও দেয় তারা যা অপারেশন সার্চলাইট নামে অভিহিত।

২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ এ পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে গৃহীত প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মার্চের শুরুতে ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের মূল পরিকল্পনা তৈরি করেন।পাকিস্তানী পরিকল্পনাকারিদের গৃহিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপারেশনের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন অংশ এবং স্বশস্ত্র বাহিনীর যারা সামরিক শাষনকালে আওয়ামী লীগকে সমর্থন জুগিয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। অপারেশনের সর্বোচ্চ সার্থকতার জন্য ধুর্ততা, চমকে দেয়া, প্রবঞ্চনা, এবং দ্রুতগতি ইত্যাদি বিষয়ের উপর জোর দেয়া হয়। নির্বাধ এবং সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। সাধারণ জনবসতি এবং হিন্দু এলাকাগুলোতে অনুসন্ধান এবং আক্রমণের কর্তৃত্বও প্রদান করা হয়।সেই পরিকল্পিত হামলার সাফল্যের জন্য হানাদারদের নেয়া পদক্ষেপগুলো......


১. সারা পূর্বপাকিস্তানে একযোগে অপারেশন শুরু করতে হবে।
২. সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষকদের গ্রেফতার করতে হবে।
৩. ঢাকায় অপারেশন ১০০% সফল হওয়া বাধ্যতামূলক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল এবং তল্লাশী করতে হবে।
৪.সেনানিবাসকে সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনে উন্মুক্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অস্ত্র ব্যবহারের কর্তৃত্ব প্রদান করা হয়।
৫.টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও ও টেলিগ্রাফ সহ সকল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।
৬.সকল পূর্বপাকিস্তানী (বাঙালি) সৈন্যদলকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেড়ে নিয়ে নিস্ক্রিয় করে দিতে হবে।
৭.আওয়ামী লীগের মনে ভূল ধারণা সৃষ্টি করে তাদের ব্যস্ত রাখার জন্য ইয়াহিয়া খান আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অভিনয় করবেন। এমনকি ভুট্টো যদি আওয়ামী লীগের প্রস্থাবে রাজি হয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন, তবুও ইয়াহিয়া আলোচনা চালিয়ে যাবেন।

পরিকল্পনায় পূর্ব নির্ধারিত আক্রমণাত্মক অপারেশন পরিচালনার জন্য চিহ্নিত স্থানগুলো ছিল- ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর এবং সিলেট। এসব স্থানে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের সমাবেশ বেশি ছিল। পূর্বপাকিস্তানের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সৈন্যদল এবং প্যরা মিলিটারি বাহিনীরা তাদের নিজ নিজ এলাকা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে রয়ে যাবে এবং প্রয়োজন হলে অন্যান্য স্থানে প্রাথমিক অপারেশনের সময় শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যোগ দেবে। ঢাকা সম্পুর্ন নিরাপদ হলে পাকিস্তানের ৯ম এবং ১৬তম ডিভিশনের সৈন্যরা শক্তিবৃদ্ধির জন্য বিমান যোগে ঢাকা চলে আসবে।

৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশবাসীকে একটা মেসেজ দিয়েই রেখেছিলেন যার মর্মকথা ছিল সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়েই মুক্তি ছিনিয়ে আনতে হবে,আক্রান্ত হলে প্রতিরোধ করতে হবে।বীরের জাতি,অত্যাচার হামলায় দমে যাওয়ার পাত্র নয়।সেই ভয়াল রাতের আক্রমন-হত্যা বাঙ্গালিকে আরও ক্রুদ্ধ করে তোলে যার ফলে তারা প্রবল প্রতিরোধ তৈরী করে যা হানাদাররা ভাবতেও পারেনি।
এই ভয়াবহ গণহত্যা ১৯৭১ এর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায় এবং বাঙালিরা দখলদারী পাকিস্তানী বাহিনীকে বিতারিত করার সংগ্রামে লিপ্ত হয়।সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ নিজের মাতৃভূমিকে শত্রমুক্ত করার মরনপন লড়াইয়ে অবতীর্ন হয় কিন্তু এদেশের কিছু কুলাঙ্গার পাকিস্তানীদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের মানুষের উপর হত্যাযজ্ঞ-লুন্ঠন চালায়,বিশেষ করে এদেশের সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম অত্যাচার চালায়।

দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রামের ফলে,অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দুই লক্ষ কিংবা তারও বেশি মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় কাংখিত স্বাধীনতা।আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড এবং লাল সবুজের পতাকা।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৩:৩৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×