somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা নববর্ষ : বাঙ্গালী সাংস্কৃতির উৎস

১৪ ই এপ্রিল, ২০০৮ সকাল ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা সন ঠিক কখন, কীভাবে প্রচলিত হয়েছিল তা এখনো একেবারে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে নাই। তবে নানা পরোক্ষ প্রমাণে মনে করা হয়- সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তন করেছিলেন। সম্রাট আকবর যদি সরাসরি বাংলা সন প্রবর্তন নাও করে থাকেন, তবু এমন প্রচলনে যে তাঁর পরোক্ষ অবদান আছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সম্রাট আকবর সর্বভারতীয় ইলাহি সন প্রবর্তন করেছিলেন। বাংলা সন সেই ইলাহি সনের প্রত্যক্ষ প্রভাবেই প্রচলিত হয়েছে। সেজন্যই অধিকাংশ পণ্ডিত এবং খ্যাতনামা ব্যক্তি মনে করেন যে বাংলা সন সম্রাট আকবর বা কোনো মুসলমান রাজা-বাদশা বা সামন্ত প্রভু প্রচলন করেছিলেন। এদের উড়িষ্যার বিখ্যাত ঐতিহাসিক কাশিপ্রসাদ জয়সোয়াল মনে করেন আকবরই বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রবর্তক। বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা মনে করেন আকবরের তায়িম-ই-ইলাহি বা ইলাহি সন হল বঙ্গাব্দের মূলে। অন্যদিকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেনও তাঁর মিলেনিয়াম বক্তৃতায় (দিল্লী ২০০০) সম্রাট আকবরকেই বাংলা সনের প্রবর্তক হিসাবে অভিহিত করেন। সাল তারিখের ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি করেছেন এমন একজন ধীমান গবেষক পলাশবরণ পাল বাংলা সনের নানা সমস্যা নিয়ে বিতর্ক করতে গিয়ে বলেছেনঃ ‘কুড়ি পঁচিশ বছরের আগে বঙ্গাব্দ শব্দটার চলছিলো না, তখন বলা হতো শুধুই ‘সাল’ বা ‘সন’। এইখানে মনে রাখতে হবে, সাল কথাটা ফার্সি, সন কথাটা আরবী। এ থেকে মনে হয়, হিজরী ক্যালেন্ডার থেকেই কোনোভাবে উদ্ভুত আমাদের বাংলা অব্দ বা বাংলা সাল।

বাংলা সনের ইতিহাস ও এর উদ্ভবের বিষয়ে বিতর্ক থাকলেও বাঙালির ইতিহাস ও তাদের জীবনমাত্রায় এই সনের প্রভাব ছিলো ব্যাপক ও গভীর। কৃষ্টিভিত্তিক গ্রামীণ বাংলাদেশে উৎপাদনমুখী সকল কর্মকাণ্ডে বাংলা সনের ছিলো একচ্ছত্র আধিপত্য। ফসল বোনা, ফসলের সময়ভিত্তিক যত্ন বা পরিচর্যা, ফসলকাটাসহ যাবতীয় কৃষিকাজ বাংলা সন তারিখ অনুযায়ী নিষ্পন্ন করা হতো। সেই সঙ্গে ভাল ফসল ঘরে উঠলে বাঙালির বার মাসের তেরো পার্বনও উদ্‌যাপিত হতো বাংলা পঞ্জিকার দিনক্ষণ হিসাব করে। বাংলায় হরেক রকম মেলার দিন তারিখও নির্ধারিত ছিলো বাংলা সনের সঙ্গে। শুধু ফসল আর উৎসব না, বাঙালির অর্থাৎ বাঙালি কৃষকের পারিবারিক এবং সামাজিক কাজকর্ম, শুভদিন, বিবাহ, জন্ম-মৃত্যুসহ জীবনের সকল বিষয়েই বাংলা সন ছিলো একক ও অনন্য। গ্রামীণ মানুষ বাংলা সন তারিখের যেমন হিসেব কষে জীবনযাত্রা নির্বাহ করতো তার সঙ্গে চাঁদের হিসাবটাও ছিলো মুখ্য। অমাবশ্যা, পূর্ণিমা সংক্রান্তি এবং তিথি-নক্ষত্রের ব্যাপারও আধুনিক দৃষ্টিতে নিরক্ষর, কিন্তু জীবনের পাঠশালায় কঠোর প্রশিক্ষণে ঝুনো হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য ছিলো দৈনন্দিন জীবনে দিক-নির্দেশিকার মতো। বাঙালির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক জীবনকেই শুধু বাংলা সন সবল ও সক্রিয় করেনি তার নিজস্ব ঘরোয়া ও সামাজিক জীবনবৃত্তের মধ্য থেকে তার বিশ্বদৃষ্টি গঠনেও বাংলা সন-নির্ভর সাংস্কৃতিক, দার্শনিক ও মনস্তাত্তিক উপাদানসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে বৃহত্তর সমাজ, স্থানীয় সরকার, জমিদার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেও সহায়ক হয়েছে। ইংরেজ আমল থেকে প্রায়ন্ধ একাল পর্যন্ত জমিদারের খাজনা দেবার ব্যাপারে বাংলা সনই ছিলো হিসাব-কিতাবের মাধ্যম। গ্রাম-বাংলার মৌলিক অর্থকরি, উৎপাদনমূলক এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনাগত কার্যাদি এবং প্রজা ও জমিদার-সরকারের মধ্যে খাজনা, জমি কেনাবেচাসহ সকল কাজ অর্থাৎ প্রজা সাধারণ ও জমিদার বা সরকারের মধ্যে আর্থিক, আইনগত ও প্রজ্ঞাপনমূলক কাজসমূহ বাংলা ভাষা ও বাংলা দিন তারিখকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পন্ন করাই ছিলো প্রথাসিদ্ধ নিয়ম।

বাঙালির কৃষিনির্ভর ওই জীবনে গ্রামীণ বাংলাদেশের সামাজিক পরিবর্তনের ধারা ছিলো খুবই শ্লথ। নদী-নালা, খাল-বিলের বিপুল বিস্তার, যাতায়াত ব্যবস্থার দুর্গতি এবং নগদ পয়সার অভাবে জনজীবন ছিলো স্তিমিত, মানুষের মধ্যে এক ধরনের জ্ঞাত্য বিরাজ করছিলো। বাঙালির বাংলা সন যেমন ফসলি সন তাদের জীবনেও ছিলো ফসলের মৌসুমের উষ্ণতা, উচ্ছলতা। বর্ষাকালে ধান-পাট কাটা হলে তা বিক্রি করে যে নগদ পয়সা হাতে আসতো তা দিয়েই বছরের নতুন কাপড় কেনা খাজনার পাট চুকানোর পর কটা মাস অলস সময় কাটানো। শীতকালের আমন ধান ঘরে উঠলে আবার পিঠা-পুলি খাওয়া, নবান্ন উৎসব, নানা রকম মেলার আয়োজন, যাত্রা, জারি-সারি, রামায়ন, গম্ভীরা কীর্তন, পালার আসর, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, লাঠি খেলা, মেয়েদের গার্সি উৎসব, সহেনা উৎসব, ছেলেদের দাড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট, বাণখেলা, হাডুডু খেলার জমজমাট আনন্দ-ফূর্তি। এরপর বড়ো আকারের চৈত্র সংক্রান্তির মেলা এবং ১লা বৈশাখের ভোরে কৃষক পরিবারের পারিবারিক আমানি উৎসবন্ধ যার লক্ষ্য সারা বছরের শান্তি, সুখ, সমৃদ্ধি এবং উৎকৃষ্ট ফলনের আকাঙ্ক্ষা। পরে সারাদিন ধরে হালখাতা উৎসব, নানা জায়গায় বড়ো ধরনের মেলা। তাতে গ্রামীণ মৃৎশিল্প ও কারুপণ্যের বিকিকিনি। বিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, সার্কাস, বক্স সিনেমা। এই নিয়েই গ্রামীণ মানুষের সেকি আনন্দ! পুতির মালা, বাঁশি, কাঠ-বাঁশের খেলনা, নবান্ন, কদমা, হাওয়ার মিঠাই দিয়েই হাসি ও সুখের আভা ফোটানো যায় অল্পে তুষ্ট গ্রামীণ নারী ও শিশুর মুখে।

পাকিস্তান আমলে বাঙালি কৃষকজীবনের এই মৌলিক উৎসব পার্বনের বিষয়টিকে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়। কারণ গ্রাম-বাংলার এই সংস্কৃতি ছিলো সংকর সংস্কৃতি বা মিশ্র সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিতে হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসী এবং মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছিলো। এই সমন্বিত সংস্কৃতিকে পাকিস্তানী শাসক এবং তাদের এদেশীয় ধ্বজাধারী এবং নব-উত্থিত মুসলিম বাঙালি মধ্যবিত্তের একটা অংশ সরকারি পর্যায়ে এবং সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং পাকিস্তানী তথা মুসলিম-আদর্শের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রচার চালাতে থাকে। এই প্রচার যে বিফলে গেছে তা বলা যায় না। তৃণমূল পর্যায়ের অনেক লোকউৎসব যেমন উপযোগী সামাজিক পটভূমি ও ফাংশন না থাকার জন্য বিলুপ্ত হয়েছে বা বিলুপ্তির পথে রয়েছে তেমনি এধরনের বিরোধী প্রচারেও ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে গেছে। ময়মনসিংহের ভাটি অঞ্চলের বিখ্যাত ষাঁড়ের লড়াই, মুন্সিগঞ্জ-মানিকগঞ্জের গরুর দৌড়, কীর্তন-রামলীলা-কৃষ্ণলীলা, দিনাজপুরের নেকমর্দের বিখ্যাত বৈশাখী মেলা, কোনো কোনো অঞ্চলের চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও চড়ক উৎসব, হালখাতার সেই ধর্মীয় আবহ, নিষ্ঠা, ধূপধুনোময় পরিবেশ এখন খুব একটা দেখা যায় না। লক্ষ্মীদাতা গণেশের মূর্তিতে সিঁদুর, কাছেপিঠে তুলসীপাতা হিন্দু দোকানেও এখন সব সময় দেখা যায় না। আগে মুসলমান দোকানের হালখাতা উৎসবেও সমন্বিত ঐতিহ্যের যে ছাপ পড়তো বাংলাদেশের সামাজিক জীবনে এখন আর তা আর দেখা যায় না।

বাংলা সন ও বাঙালির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির অবস্থান বর্তমান বাংলাদেশ আর আগের মতো নেই। এখন কৃষক পরিবারের সন্তানেরা লেখাপড়া শিখছে। গ্রামীণ অর্থনীতির মধ্যে নানা উপাদান যুক্ত হয়ে অনেকটা প্রাণ সঞ্চার হয়েছে এবং এতে অনেকের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, হাতে নগদ পয়সা আসার উৎস সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জীবনধারার পরিবর্তন ঘটেছে, বদলেছে ঘরবাড়ির ধরন, আসবাবপত্র, তৈজষপত্র এবং সামাজিক রীতি-নীতি ও অভ্যাসের। এই পরিবর্তনের ফলে বাঙালির ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির উপাদান এবং জীবনযাত্রার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত বাংলা সনও আর এখন একাধিপত্য করতে পারছে না। এদের সন্তানাদি এখন গ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য বা অন্য যে কাজই করুক না কেন তার সঙ্গে বাংলা সনের সম্পর্ক আগের মতো ওতপ্রোৎ নয়। বরং গ্রাম-জীবনের নতুন ধারা যা শহরে বাস যা বিদেশে চাকরি-বাকরির সুবাদে এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন হিসাবে খৃষ্টীয় সনের ব্যবহার বেড়েছেন্ধ বাংলা সন হয়তো গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে সাবেক কালের জীবনধারায় অভ্যস্থ গৃহকর্ত্রীর কাছে। গ্রাম বাংলায় ব্যাপক সংখ্যক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা চালু হওয়ায় জীবনধারায় নানা পরিবর্তন এসেছে। বিদেশী শব্দ, পাশ্চাত্য জীবনধারার নানা উপকরণ, জিনস্‌-এর প্যান্ট এবং কোকাকোলা ঢুকে গেছে গ্রামে। টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, অসংখ্য দোকানপাট, ঢাকার জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র, বাস-ট্যাক্সি-অটোরিক্সা, ভিডিও ফিল্ম, হিন্দি সিনেমা ইত্যাদির ব্যাপক প্রভাবে আগের কালের সংস্কৃতি অনিকেত ও উন্মুল হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলা সনও বাঙালি সংস্কৃতি প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়েছে। এখন আর আগের মতো বাংলা দেয়াল পঞ্জিকা দেখা যায় না। কচিত কখনো কৃষি ব্যাংকের পঞ্জিকায় রোমান ক্যালেন্ডারের অক্ষরের নিচে বাংলা সংখ্যাও লেখা থাকে। আসলে গ্রাম-বাংলা এখন এক ক্রান্তিকালের মুখে। পুরনো সংস্কৃতি ও জীবনধারা ভেঙে গেছে কিন্তু নতুন সংস্কৃতিরও বুনিয়াদ পাকা হয়নি।

ওপরে আমরা ঐতিহ্যগত বাংলা সংস্কৃতির ধারার রূপান্তরের একটা চিত্র উপস্থাপন করেছি। ওই ধারাটি সেখানে এসে পৌঁছেছে তাতে তেমন কোনো ইতিবাচক ও জীবনীমুখী সুস্থ সমন্বয় আমরা দেখি না। বরং বলা যায় এক ধরনের ধুমধাড়াক্কা- প্রব বিনোদনশৈলী গ্রাম-বাংলাতেও পল্লবিত হয়ে ওঠছে। তবে আশার কথা হলো ঐতিহ্য ও লোকজ বিষয় আসয়ের একটা রীতি হলো সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে তা নিজেকে খাপ-খাইয়ে নেয়ন্ধ নতুন বা ভিন্নরূপে তা নিজেকে বিন্যস্ত করে। এবং এর আর একটি বিকাশ বা নব-নির্মাণের ধারার মধ্যে এক ধরনের চক্রমন পদ্ধতি কাজ করে। নগর থেকে শুরু হয়ে কোনো শিল্পরীতি গ্রাম-বাংলার লোকজ রীতিতে বিন্যস্ত হতে পারে। আমার গ্রামীণ কোনো ভাব, লোকজ শিল্পধারা শহওে এসে জাতীয় সংস্কৃতির নব-নির্মাণে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সংস্কৃতিন্ধ তা লোকজই হোক, আর নাগরিক দৃষ্টিতে মানসম্পন্নই হোকন্ধ তার বিবর্তন বা রূপান্তর ঘটে তাই ‘আবহমানকালের’ সংস্কৃতি বলে কিছু নেই। ফলে লোকজ সংস্কৃতির সমৃদ্ধির ধারাকে সব সময়ে স্থিতাবস্থায় ধরে রাখা বা পাওয়া সম্ভব না।

বাংলা সন ও বাংলা নববর্ষের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি কীভাবে ঘটেছে আমরা সেদিকে নজর দিতে পারি। পাকিস্তান আমলে পূর্ব-বাংলার বাঙালিরা বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তক একথা বলেও পাকি-শাসকচক্রের মন ভুলানো যায়নি (স্মর্তব্য, পাক-আমলে নির্মিত ঢাকার মোহাম্মদপুরের নানা রাস্তার নাম প্রধানত মোগল সম্রাটদের নামে করা হলেও আকবরের নামে কোনো রাস্তার নাম নেই। কারণ তিনি পাকিদের না-পছন্দ মিলিত সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন)। তবে তখন বাংলা সন ও নববর্ষের উৎসব বাঙালিদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় তা এক নতুন জাতীয়রূপ ও তাৎপর্য লাভ করেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ফলে বাঙালির যে নতুন ধর্মীনিরপেক্ষ ও নৃতাত্ত্বিক জাতীয় আন্দোলন দানা বেধে উঠে বাংলা সন বাংলা নববর্ষ উৎসব ও তার আনুষঙ্গিক উপাদানসমূহ তাতে নতুন গতিবেগ সৃষ্টি করে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব-বাংলার সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিশাল বিজয় এই নতুন বাঙালি জাতীয়তাবাদ জনগণের নির্বাচনী ম্যান্ডেটে জনসমর্থন ও রাজনৈতিক বৈধতা লাভ করে। পূর্ব-বাংলার নবজাগ্রত নগরবাসী বাঙালি মুসলমান সমাজ নিজস্ব স্বাদেশিক ঐতিহ্য অনুসানের উদ্দেশে এবং বাঙালি জাতিগঠন ও জাতীয়তাবাদের বিকাশে বাংলা নববর্ষ ও পয়লা বৈশাখকে সামনে আনে। ফলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে বাংলা নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ হয়ে ওঠে এক মহান জাতীয় উৎসবের দিন। বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে এমন একটি ধর্ম-নিরপেক্ষ সর্বজনীন উৎসব-দিনের তখন তীব্র প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছিলো। গ্রাম-বাংলার কৃষি ও ক্ষুদ্র-ব্যবসা-বাণিজ্যের এক লোকজ উৎসব এভাবেই জাতীয় বিকাশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক মাত্রা লাভ করে এবং জাতীয় সংস্কৃতির মুক্তধারা সৃষ্টির এক প্রতিবাদী উৎসবেরও রূপ লাভ করে। বৈশাখের এই নাগরিক উত্থান এবং সার্বজনীন জাতীয় উৎসবের রূপ নির্মাণে অনুঘটকের কাগজটি করে ছায়ানট নামের সাংস্কৃতিক সংগঠনটি। এদেরই প্রয়াসে বাংলা নববর্ষ এখন শুধু বিশাল সার্বজনীন জাতীয় উৎসবই নয়। রাজনৈতিক ভণ্ডামি ও শঠতার বিরুদ্ধে এক মোক্ষম প্রতিবাদের উৎসবও। এই উৎসবে ১৯৮৯ থেকে মুক্ত মিছিল গ্রাম-বাংলার লোক মিছিলের (মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার সাহরাইল গ্রামের সিদ্ধা বাড়ীর প্রাচীন মেলায় এমন মিছিল বের হতো) মুখোসকে যে রাজনৈতিক ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয় তা সনির্ভর ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।


কৃতজ্ঞতা : শামসুজ্জামান খান, সাবেক পরিচালক - বাংলা একাডেমী, সাবেক মহাপরিচালকঃ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও জাতীয় জাদুঘর।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৮ রাত ২:৪৭
১২টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×