somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড়ের রানী শিমলা তে চিলেরা

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা থেকেই মায়ের অনেক আজ্ঞাবহ ছিলাম আমি ৷ মা দেখতো সারাদিন স্টার প্লাস এর হিন্দী সিরিয়াল বাধ্যগত সন্তান হিসেবে পাশে বসে বসে আমিও দেখতাম! তখন থেকেই পরিচয় শিমলার সাথে ৷ শিমলা ছিলো সিরিয়াল এর জাতীগত মধুচন্দ্রিমার জায়গা ৷
তখন অবশ্য শিমলা শহরটাকে অধরাই মনে হতো!! সেদিনও যে শিমলা পৌছেছিলাম নিজেকে বিশ্বাস করাতে অনেক টা সময় লেগেছিলো ৷
শিমলার নতুন বাস স্টেশন থেকে আগামী ৩ দিনের জন্যে একটা জ্বীপ ভাড়া করে নেই আমরা ৷ জ্বীপে চড়ে হোটেলের কাছে এসে নামি যখন তখন শিমলা শহরে ৮ টা বাজে ৷
ততক্ষনে প্রথম হোচট টা খেলাম, বাস স্টেশন এই ট্যুরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাগ টা ফেলে এসেছি ৷ সেই ব্যাগেই তাবু,স্লিপিং ব্যাগ আরও অনেক কিছু ৷ দুজন চলে যায় আবারও বাস স্টেশন এ, আমরা হোটেলে চলে যাই ৷ হোটেলের মালিক আশ্বাস দিয়েছিলো ব্যাগ হারাবে না বলে, ঠিক সেরকম টাই হয়েছে ৷ ব্যাগ তার অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র হেরফের হয়নি ৷
হোটেলের ব্যালকনি থেকে পুরো শহরটাই দেখা যায়, অসাধারণ লাগছিলো সবকিছু দেখতে ৷


সকাল ৬ টার সময় উঠে গেছি ঘুম থেকে ৷ স্নিগ্ধ এক শহর শিমলা, ঠান্ডা হিম বাতাস ৷ চারপাশে পাহাড়, ৭০০০ ফিট উপরের শহর ৷ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিলস্টেশন শিমলা ৷ পরিষ্কার একটি শহর, ভারতে এটি আমার দ্বিতীয় হিলস্টেশন এ আসা ৷ হিলস্টেশন গুলোর বৈশিষ্টই অন্যরকম, ভালোলাগার মতো, প্রেমে পরার মতো ৷


চলে গেলাম শিমলা রেলওয়ে স্টেশন এ ৷ কালকা থেকে প্রতিদিন পাহাড়ী আকা বাকা পথ পেরিয়ে টয় ট্রেন চলে শিমলা পর্যন্ত ৷ স্টেশন টা এমন যায়গায় করা যেখান থেকে শহরের চারপাশেই দেখা যায় ৷ স্টেশন টাও আশ্চর্যজনক পরিষ্কার ৷ যেদিকে তাকাই সেদিকেই স্বপ্ন, মনে হচ্ছিলো এত এত স্বপ্ন কেনো চারপাশে!


স্টেশন থেকে ফিরে চলে যাই শিমলা শহরের বিখ্যাত মল রোড এ ৷ মল রোড কে ঘিরেই শিমলার সকাল দোকান ৷ মল রোড থেকে একটু সামনে হলো স্ক্যানডাল পয়েন্ট ৷ স্ক্যানডাল পয়েন্ট মল রোড ও দা রিজ চার্চ এর রোড একত্রিত করেছে ৷ শিমলার এই যায়গাটিতে এসে প্রতিটি মানুষ বাধ্য একে ইউরোপ এর সাথে তুলনা করতে ৷ অন্যরকমের সৌন্দর্য, স্থাপনা গুলোতে একধরনের আভিজাত্যের ছাপ ৷ এখানে ছিলো মাহাত্না গান্ধী পয়েন্ট, যেখান থেকে শহরের নিচু প্রান্ত গুলো দেখা যায় ৷


১১ টা দিকে আমরা রওনা দেই কুফরীর পথে ৷ আমাদের সাথে আছে দেবেন্দ্র, আমাদের ড্রাইভার ৷ কুফরীর পথে যেতেই পরে গ্রীন ভ্যালি নামক এই যায়গা টি ৷ যেদিকে তাকাই শুধু পাইন গাছের বন ৷


শিমলা থেকে কুফরীর দূরত্ব ২০ কিলোমিটার ৷
পথেই আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নেই, ভ্রমনের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার ছিলো এটি ৷


কুফরী মূলত এডভেন্চার ভ্যালি ৷ সেখানে গিয়েই আমরা ঘোড়া ঠিক করে নেই ফাগু ভ্যালি তে যাওয়ার জন্যে ৷ সবার জীবনের প্রথম ঘোড়ায় চড়া এটি ৷ পুরো রাস্তায় কাদা মাখা, ঘোড়া উপর দিকে উঠছিলো ৷ প্রথমে অতোটা কমফোর্ট রাইড হয়নি ৷ ফাগু ভ্যালি পৌছাতে সময় নিয়েছিলো ৩০ মিনিট ৷


ফাগু ভ্যালি তে গিয়ে একটি জ্বীপে করে আনরা চলে যাই এডভেন্চার পয়েন্টে ৷ সবার প্রথমে ছিলো যিপলাইন৷ আমাকে দিয়েই শুরু, পাহাড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়া!! অসাধারন লাগছিলো, একে একে সবায় যিপলাইল শেষ করে চলে যাই আমরা ভ্যালি ক্রসিং এ ৷ ভ্যালি ক্রসিং টা সম্পূর্ন পেরেছিলো মাত্র ৩ জন, আমি অর্ধেকের একটু বেশী গিয়েই চলে এসেছিলাম ৷
ভ্যালি ক্রসিং শেষে চলে যাই রোপ ক্লাইম্বিং এ, যেটাতে রোপ ক্লাইম্ব করার পর একটা ছোট ফ্রি ফল!! এটাতে সক্ষমতার হার আরও কম মাত্র ২ জন আমরা সম্পূর্ন শেষ করতে পেরেছিলাম, বরাবরের মতোই আমি পারিনি :-P
তারপর ছিলো ব্যালেন্স রোপ ক্রসিং, সেটা তো আমি করিইনি :-P ৷ বাশ আর দড়ির সমন্বয়ে একটা ব্রীজ ছিলো, যেটা পেরিয়ে ৮০ ফিট এর একটা ফ্রি ফল ৷ এটাতে সফল হওয়া ছাড়া উপায় নেই,কেননা ব্রীজ এ চড়লে ফিরার পথ ফ্রি ফল এই শেষ হয় ৷ সবগুলো এক্টিভিটি শেষ করতে করতে প্রায় শেষ বিকেল ৷


জ্বীপের কাছে ফিরে এসে অবাক, দূরে বরফ ঢাকা হিমালয় দেখা যাচ্ছে!! ঐ দূরে উত্তরাখান্ড এর গারহাল হিমালয় রেন্জের সর্বোচ্চ পিক নান্দা দেবী(ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ) দেখা যাচ্ছিলো ৷


ফিরার পথে ঘোড়ায় চড়ে ভালোই লাগলো, তারেক ভাই তো এমন ভাবে ঘোড়া চালিয়েছে যে পুরো কুফরীর মানুষ বাহ বাহ দিচ্ছিলো!! তারেক ভাইয়ের ঘোড়ার ছুটে চলা দেখে রেজওয়ান ভাই এর ধপাস!! আর কাদায় গড়াগড়ি রেজওযান ভাইয়ের! ! :-P
স্বপ্নীল একটা দিন পার করে আমরা রওনা দিলাম মানালীর পথে, গাড়ী ছুটছে মানালী ৷ জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনের অপেক্ষায় ♥ ৷


আগামী পর্বে থাকবে কুল্লু ও মানালীর গল্প ৷
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×