somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্যান্সারে আক্রান্ত নাহিদ জাহান লিনা। তার ছোট্ট একটি ফুটফুটে মেয়ে আছে। তার বয়স ৫ বছর। আসুন ছোট্ট মেয়েটিকে মাতৃহারা হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করি

১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ওর নাম নাহিদ জাহান। ডাকনাম লিনা। আমাদের বন্ধু। আমাদের প্রিয় সহকর্মী। হাসিখুশি, চঞ্চল, উচ্ছল ও বন্ধুবৎসল লিনা হঠাৎ করেই ২০০৯ সালের অক্টোবরে আক্রান্ত হলো স্তন ক্যানসারে। ওর এত বড় অসুখের খবর পেয়ে ওকে দেখতে যাওয়ার আগে আমরা অস্থির হয়ে ভাবছিলাম, কেমন করে ওর চোখের পানি মোছাব, এই দুঃসময়ে কী বলেই বা ওকে সান্ত্বনা দেব। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, লিনাই উল্টো আমাদের সান্ত্বনা দিয়ে, প্রচণ্ড সাহস, ধৈর্য আর শক্তি নিয়ে হাসিমুখে ক্যানসারের মুখোমুখি হলো। ভাবখানা এমন যে, ‘দেখো, ক্যানসার নিয়ে তোমরা এত লেখালেখি করেও এই ঘাতক রোগকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারো না, আর আমি!’ ওকে আমরা অবাক হয়ে দেখি। কী সাহস...কী মনোবল...। ক্যানসার ধরা পড়ার কিছুদিন পরেই অপারেশন হলো লিনার। কেটে ফেলতে হলো বুকের একটি পাশ। চলল দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক কেমোথেরাপি। লিনার মুখের উজ্জ্বল হাসিটি তবু ম্লান হলো না। কেমোর ফলে ওর মাথার চুল পড়ে গেল। লিনা হাসিমুখে পরচুলা মাথায় পরে অফিসে হাজির।
আমাদের বলল, ‘ক্যানসার হয়েছে তো কী? আমি অন্য সব সারভাইভারকে খুঁজে বের করছি। সবার জন্য অনেক কাজ করতে হবে।’
আমরা হতবাক হই। বন্ধুর হাতে হাত রাখি। বলি, আমরা সবাই তোমার লড়াইয়ের সাথি হব। লিনা শুধু মুখে মুখে নয়, কাজেও ক্যানসারে আক্রান্তদের পাশে এসে দাঁড়াতে শুরু করল। স্তন ক্যানসারের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সংসদ ভবনের সামনে শোভাযাত্রা হবে। লিনা তার অসুস্থ শরীর নিয়েও সেখানে উপস্থিত। নতুন কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছে, তাকে কোথায় যেতে হবে, কী চিকিৎসা নিতে হবে—সব পরামর্শ দিতে লিনা হাজির। যেন লিনা হার মানতে জানে না। ক্যানসার যেন সত্যিই পরাজিত হবে লিনার কাছে।
নাহিদ জাহান লিনা গবেষক হিসেবে একুশে টেলিভিশনে কাজ করেছে, নিউজ রুম সমন্বয়ক হিসেবে এটিএন বাংলায় এবং অ্যাসাইনমেন্ট প্রডিউসার হিসেবে কাজ করেছে বন্ধ হয়ে যাওয়া টিভি চ্যানেল সিএসবিতে। এখন কাজ করছে এনটিভিতে। ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতি করেছে লিনা, যুক্ত থেকেছে সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে।
সেই লিনা ক্যানসারের প্রথম ধাক্কাটা ভালোই সামলে নিয়েছিল। দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে ওর পায়ের হাড়ে আবার ফিরে এসেছিল ক্যানসা। সেই ক্যানসার সারাতে আবার ইনজেকশন, আবার রেডিওথেরাপি। তার পরও লিনা হতাশ হয়নি, চিকিৎসা শেষে আবার ফিরে এসেছিল হাট-বাজার-অফিস, আড্ডা আর পলাশ-আনাকে নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে। বুকের ব্যথা, পায়ের টনটনানি, তীব্র মানসিক চাপ—সব নিয়েই লিনা ছুটছিল তার সাড়ে চার বছর বয়সী মেয়ে আনাকে স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য। লিনার জীবনটা যে এখন আনাকে ঘিরেই। ছোট্ট আনা জানে না, মায়ের বুকের ডান পাশটা কেটে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসকের কড়া নিষেধ, ভারী কিছু তোলা যাবে না, আনাকে কোলে নেওয়াও বারণ। আমাদের মনে পড়ে, স্তন ক্যানসারের সঙ্গে কঠিন যুদ্ধের দিনগুলোর কথা বলে যে লিনা একবারও কাঁদেনি, সেই লিনার চোখে ততবার পানি আসে যতবার ও বলে, ‘আনাকে একটু কোলে নিতে পারি না। মেয়েটা ছটফট করে।’
এভাবেই চলছে লিনার জীবন। অফিস ও সংসার সামলানোর পাশাপাশি সঙ্গী ক্যানসারের সঙ্গে মানিয়ে চলার অপরিসীম চেষ্টা। কিন্তু ক্যানসারের মতো সর্বগ্রাসী রোগকে পরাজিত করা তো সহজ কাজ নয়। নইলে দুদিন আগে করা ল্যাব টেস্টের রেজাল্টে কেন থাকবে ক্যানসারের আবার পূর্ণোদ্যমে ফিরে আসার খবর, কেন চিকিৎসকেরা আবার জানাবেন, নতুন করে কেমো নিতে হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে চিকিৎসা।
যাঁরা এই লেখা পড়ছেন, প্রিয় পাঠকেরা, তাঁদের বলছি, আমরা যারা সাংবাদিক, প্রতিদিন যারা পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করি, তারাই যেন হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়ি দীর্ঘদিনের সহকর্মী লিনার ক্যানসারের কাছে। এত দিন কত অচেনা মানুষের খবর দিয়েছি, কত দূরের মানুষের সমস্যার কথা জানিয়েছি। এবার নিজেদের এত কাছের, এত চেনা মানুষটির খবর হয়ে যাওয়াটা বুঝতেই অনেক সময় লেগে গেল। মাঝখানে চলে গেল দুই বছর।
লিনার এত দিনের লড়াইয়ের সঙ্গী ছিলাম আমরা। আমরা নিজেরাই নিজেদের সামর্থ্যে, নিজেদের পরিচিত বলয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিয়ে লিনার সঙ্গে ছিলাম। এবার ক্যানসারের আক্রমণ প্রতিহত করতে আমরা হাত বাড়াচ্ছি আপনাদের দিকে। এই দফায় ওর চিকিৎসার জন্য যে টাকা দরকার, তা বন্ধু-সহকর্মীদের বেতনের টাকায় পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রিয় পাঠক, আমরা চাই, লিনার জন্য আমাদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা আপনিও ধরুন। আমরা চাই, লিনা বাঁচুক। আনাকে কোলে নিতে না পারলেও অন্তত ওর হাত ধরে হাঁটতে পারুক লিনা।
Amader bondhu Nahid Jahan Lina'r Meyetir Boyos Matro 5. Operation er Poro Lina Abaro Osustho Hoye Poreche. Cancer er Sathe Juddho Kore Beche Thaka Linar Meyeti Ekhono Bujhte Sekheni Cancer Ki Ebong Ma ke Hariye Felar OnuVuti Kemon. Amra Sisutike ei Tikto Oviggotar Sathe porichito Hote Dibona. Asun or Pashe Darai.
'' Nahid Jahan Lina
Standard Chartered Bank AC no: 183411044''
লিখেছেন: মুন্নী সাহা, শাহনাজ মুন্নী, ফারজানা রূপা, নাদিরা কিরণ, তামান্না মজুমদার, সুলতানা রহমান, শামীমা বিনতে রহমান, মেহেরুন রুনি, ইবতেশাম মৌ, জাহানারা পারভীন, মোহসীনা লাইজু।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১:৫৬
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×