তূর্কী খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সূচনাকারী শরীফ হুসাইন।
আরব বিদ্রোহে ব্যাবহৃত লা কেমেল।
ইদানিং একটি কথা আমাকে যথেষ্ঠ প্রভাবিত করেছে। আর তা হল অর্ধেক সত্য মিথ্যার চেয়েও ভয়ংকর, শঠতা ও প্রতারণা মূলক।
http://en.wikipedia.org/wiki/Half-truth
ইসরাইলের সাথে আরব ও বাকী মুসলিম বিশ্বের বিরোধ নিয়ে খোদ মুসলিম বিশ্বেই অর্ধেক সত্য প্রচলিত যা আক্ষরিক অর্থেই শঠতা এবং প্রতারণা। যার মাধ্যমে এই বিরোধের শুরু হতে বর্তমানে সাধারণ মুসলমানদেরকে তাদের একেবারে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সিংহভাগ অংশ হতে অন্ধকারে রেখে প্রতারণা করা হচ্ছে। পরিণাম ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের বিরোধ মিটছে না। বলা হয় যে ইহুদীরা পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে বৃটেন ও আমেরিকার সহায়াতায় ফিলিস্তিনের বড় একটা অংশ দখল করে তাদের ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু বৃটেন ও আমেরিকা চাইল আর ইসরাইল রাষ্ট্র হয়ে গেল........তো কি তাদের কাছে আলাদ্দিনের চেরাগ ছিল নাকি? বিশেষ করে বৃটেন কি জোর করে আরব ভূমি দখল করে নিয়েছিল নাকি আরবরাই ব্রিটিশদের কে মহব্বতের খাতিরে ডেকে নিয়েছিল? আরবগণ দীর্ঘদিন তূর্কীর উসমানিয়া খেলাফতের শাসনে ছিল।
http://en.wikipedia.org/wiki/Ottoman_Turks
কিন্তু এক সময়ে তারা আর উসমানিয়া খেলাফতের শাসন মানতে চাইছিল না।
http://en.wikipedia.org/wiki/Arab_Revolt
যদিও আরবদের জাতিগত ও ভাষা-সংস্কৃতিগত কিছু দাবী দাওয়া যূক্তি সঙ্গত ছিল। বিষয়টি ১৯০৮ সালের নির্বাচনে তূর্কীর উসমানিয়া সংসদের কিছু উদার দৃষ্টি ভঙ্গি তথা সংবিধানের কিছু পরিবর্তন সত্ত্বেও আরবদের কিছু গোত্রগত চাহিদা যা আমি মনে করি বাদশাহী তথা রাজতন্ত্র ও আরাম আয়েশের বিষয়টি চলে আসে। স্পষ্টতই উসমানিয়া খিলাফত এবং এক ইসলামী রাষ্ট্র ব্যাবস্থা(Pan-Islamism) আরবদের জাতীয়তাবাদের প্রবল প্রতিদ্বন্দী ছিল। ;
http://en.wikipedia.org/wiki/Pan-Islamism
তাই সেই সময়কার আরব নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশদের সহায়তায় উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে নিজেদেরকে আলাদা করে। যা গাদ্দারি তথা বিশ্বাস ঘাতকতা করে। এরই উপর হলিউডে চলচিত্র নির্মিত হয় Lawrence of Arabia;
http://www.imdb.com/title/tt0056172
দুঃখের বিষয় আজও এই মূভিটি মুসলিম বিশ্বে আনন্দের সাথে দেখে। এর মাধ্যমে আরবরা স্বাধীন হলেও মূল ক্ষমতা থাকে ব্রিটিশদের কাছে। ঠিক যেমন ১৭৫৭ সালে বেঈমান মির্জাফর ভেবেছিল সেই বুঝি বাংলা শাসন করবে। সেই সকল আরব নেতৃবৃন্দের কখনই মনে ছিল না যে ব্রিটিশ এমনই একটা রাজ্য যাকে বলে The empire on which the sun never sets
Click This Link
এই ব্রিটিশ যেখানেই গেছে সেখানেই Divide and rule তথা শঠতা, প্রতারণা জঘণ্যতম উপায়ে বিভিন্ন দেশ দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করেছে। তারা আরও বলত Everything is fair in love and war। আক্ষরিক অর্থেই আরবরা শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দিয়েছিল। শিয়ালের কাছে বর্গাকৃত মুরগী ফেরৎ পাওয়ার আশা করা যায়?
কেন ব্রিটিশরা ইসরাইল নামক ইহুদী রাষ্ট্র গড়তে দিল?
তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তুমুল ভাবে চলছিল। ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনী RAF কৃতিত্বের সাথে জার্মান নাৎসী বাহিনীর আগ্রাসন ঠেকিয়ে আসছিল। কিন্তু একটা সময়ে রসদ তথা বিস্ফোরক বানানোর মূল্যবান রসায়ন উপাদান Acetone এসিটোনের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে রাজকীয় বিমান বাহিনীর নাৎসীদের মোকাবেলায় অনেকটা সমস্যায় ফেলে দেয়। বিষয়টি ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সরকারও দূঃশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। ঠিক তখনই একজন ইহুদী রসায়নবিদ চেইম আজরিয়েল ভাইজমান Chaim Azriel Weizmann, ABE-process তথা Acetone-butanol-ethanol fermentation প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম এসিটোন তৈরিতে সমর্থ হন;
Click This Link
যার দরুণ ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনী ঘুড়ে দাড়ায়। পরবর্তীতে জার্মানদের পরাজয় ঘটলে ব্রিটিশ রাজ ভাইজমানকে জিজ্ঞাসা করে যে আপনি কি পুরস্কার চান? জাববে ভাইজমান বলেন যে আমার ব্যাক্তিগত
ভাবে চাওয়ার কিছু নেই। তবে যেহেতু আমাদের ই্হুদীদের কোন দেশ নেই তাই যদি এ ব্যাপারে সহায়তা করেন তো আমি চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব। উল্লেখ্য লরেন্স অভ আরাবিয়ার পর ১৯২০ সাল হতেই ব্রিটিশদের সহায়তায় Zionistদের তৎপড়তা ফিলিস্তিনে গড়ে উঠে। এই ভাইজমানই পরবর্তীতে ইসরাইলের প্রথম প্রেসিডেন্ট হন;
চেইম ভাইজমান
http://en.wikipedia.org/wiki/Chaim_Weizmann
আরও উল্লেখ্য যে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৩৭ সালে ফিলিস্তিনের গ্রান্ড মুফতি মোহাম্মাদ হাজ আল হুসাইনী বার্লিনে গিয়ে হিটলারের সাথে দেখা করে থার্ড রাইখ তথা তৃতীয় সম্রাজ্যের প্রতি একাত্নতা প্রকাশ করেন। আর অনুরোধ করেন Zionistদের ই্হুদী রাষ্ট্র যাতে গড়ে না উঠে সে জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সামরিক সহায়তা দিতে।
Click This Link
ব্যাস আর যায় কোথায় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সমাপত্তির পর ব্রিটিশের কোপানলে পরে ফিলিস্তিন। র্দূভাগ্যের বিষয় যূগ যূগ ধরে আরব বিদ্রোহ তথা গাদ্দারি, ব্রিটিশের সাথে ও পরবর্তীতে নাৎসীদের সাথে মহব্বত আড়াল করা হচ্ছে। অর্ধেক সত্য প্রকাশের মাধ্যমে এক তরফা ইসরাইলকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। ভাবখানা এমন যে ইসরাইল উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। কিন্তু তাদেরকে কারা বসালো কিভাবে ঘটল সেটা মুসলিম বিশ্বের সিংহভাগ নেতৃবৃন্দ মুখে আনতে নারাজ। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে ৫ পরাশক্তির সর্ব সম্মতিক্রমে ফিলিস্তিনকে ভেঙ্গে ইসরাইল নামক ই্হুদী রাষ্ট্রের অনুমোদন দেওয়া হয়;
Click This Link
যা প্রস্তাবিত ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অনুরুপ;
Click This Link
উল্লেখ্য মার্ক্স-লেলিনবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ ষ্ট্যালিনও ইসরাইল প্রতিষ্ঠায় সমর্থন দেন;
Click This Link
কিন্তু আরব নেতৃবৃন্দের তখন এটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই তারা ১৯৪৮ সালের পর হতে ইসরাইলে হামলা চালাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৭ সালে ইসরাইল মার্কিনিদের সমর্থনে ফিলিস্তিনের বাকী অংশ সহ সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। আরব নেতৃবৃন্দ অনেক যুদ্ধ দেন দরবার করেও ফিলিস্তিনকে মূক্ত করতে পারেনি। কারণ ইসরাইলের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা পরিষদে কোন ব্যাবস্থা নিতে গেলেই মার্কিনিরা ভেটো দেয়। শেষমেশ পিএলও নেতা মরহুম ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরাইলীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়। সৌদি আরবও মেনে নেয়, কারণ পূর্ব পুরুষের দ্বায়বদ্ধতা বলেতো কথা। তার জন্যই ১৯৯৩ অসলো প্রস্তাবিত শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অথচ ১৯৪৮ সাল হতেই যদি আরব নেতৃবৃন্দ ইসরাইলকে মেনে নিত তো ১৯৬৭ সালে ইসরাইল বাকী আরব ভূমি দখলের সুযোগ পেত না। আজকে মসজিদুল আকসা তথা বায়তুল মুকাদ্দাস সহ পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের অন্তর্ভূক্ত থাকত। শান্তি চুক্তিকারী রবিন অনেক চেষ্টা করেছিলেন ইসরাইলকে ১৯৬৭ সালের পূর্বাবস্থায় তথা ফিলিস্তিন ভুখন্ডে জোড় পূর্বক গড়ে উঠে ইহুদী বসতি সরিয়ে নিতে। কিন্তু হামাসের ১৯৯৩ সালের শান্তি চুক্তির পরও ইসরাইলে হামলা চালানো অব্যাহত রাখলে রবিনকে উগ্র ইহুদীদের হাতে প্রাণ দিতে হয়। তারপরেও ২০০৫ সালে কট্টর লিকুদ পার্টি ভেঙ্গে নব গঠিত কাদিমা পার্টি যখন ইসরাইলের ক্ষমতায় আসে তখন তারা ১৯৬৭ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে;
Click This Link
আর কাদিমা পার্টির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ১৯৬৭ সালের পূর্ব ইসরাইলকেই তার রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল বলেছিলেন;
Click This Link
কিন্তু এর পরবর্তীতে ইরানের কট্টরপন্থী আহমাদিনেজাদের উগ্র বক্তৃতা, ফিলিস্তিনে হামাস ক্ষমতায় এসে এবংঙ লেবাবননী হিজবুল্লাহ ইসরাইলে হামলা শুরু করলে কাদিমা পার্টির পক্ষে আর অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি। যে উদারপন্থী ইসরাইলীদের সমর্থনে কাদিমা পার্টি ক্ষমতায় এসেছিল হামাস-হিজবুল্লাহ ও আহমাদিনেজাদের আত্নঘাতী ভূমিকায় লিকুদ পার্টি জোটের সরকারে এসে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ১৯৬৭ সালের পূর্বের ফিলিস্তিনকে মানতে নারাজ। একবার যদি হামাস-হিজবুল্লাহ ও ইরান ২০০৫ সালে সংযত আচরণ করত তো ২০০৫ সালেই অসলো শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হত। তবে মুসলিম বিশ্বে কারোই সৎ সাহস নেই এই সকল সত্য ও যুক্তিপূর্ণ বিষয় গুলি তুলে ধরার। তাই ব্লগের সকল শান্তিকামী ব্লগারদের কাছে অনুরোধ আমরা প্রস্তাবিত অসলো শান্তি চুক্তির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


