somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আহমাদিনেজাদ কি সাদ্দাম ও ইরাক হতে শিক্ষা নিবেন?

৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :








এ যেন একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। প্রাচীন যূগ হতে বর্তমানে জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ধর্ম ও বিভিন্ন মত, সামাজিকতা, চালচলনগত সহ বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য থাকলেও বিশ্বের বহু জায়গা ও অঞ্চল এখনও সভ্য হতে পারেনি। কোন ব্যাক্তি বিশেষ বা মত বিশেষ নির্ভরশীল সম্পন্ন ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর কাছে সাধারণ মানুষ, সমাজ সহ গোটা রাষ্ট্র যূগ যূগ ধরে জিম্মি থাকতে পারে তা আজও বিদ্যমান। এদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া ভাল শাসকের নজির কম। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে এ সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। এক মালয়শিয়ার মাহাথির মোহাম্মাদ ছাড়া বাকী মুসলিম বিশ্বে যেখানে ভোট ব্যাবস্থা আছে সেখানে সংঘাত, হানাহানি, যুদ্ধ, অশান্তি, র্দূনীতি, অনিয়ম এবং অগণতান্ত্রিক পরিবেশ বিদ্যমান। এই মুসলিম বিশ্বের একটি দেশ ইরাকের একজন শাসক ছিলেন সাদ্দাম হোসেন। দীর্ঘ ২৪ বছর ভয়ভীতি দেখিয়ে, কারচুপি, অত্যাচার করে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তারপর ২০০৩ সালে বুশ জুনিয়রের আমেরিকা, বৃটেন ইরাক আক্রমণ ও দখল করলে সাদ্দাম শাসনামলের যাবনিকা ঘটে। সেই ১৯৭৯ সালে ইরাকের প্রেসিডেন্ট হয়ে তার বড় কোন ধরণের পদক্ষেপ (তা যতই ভুল বা অন্যায় হৌকনা কেন) দূরে থাকুক ছোট কাজেরও কোন ইরাকী যদি সমালোচনা করত হয় তাকে মরতে হয়েছে নতুবা জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়েছে অথবা দেশান্তরী হতে হয়েছে। সাদ্দামের ক্ষমতা গ্রহণের আগে একই বছর ১৯৭৯ সালে ইরানের আয়াতুল্লাহ রহুলুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লব ঘটে। রাজা শাহ পালেভির পতন ঘটিয়ে ইরান হয় ইসলামিক রিপাবলিক অভ ইরান। সে যাই হৌক ১৯৮০ সালে সাদ্দামের হঠাৎ করেই ইরানের সাথে পূর্ব হতে চলে আসা সীমানা সমস্যা এবং ইরাকে শিয়া বিদ্রোহীদের মদদ দানের অযুহাতে ২২শে সেপ্টেম্বর ইরানে হামলা চালিয়ে যুদ্ধ শুরু করেন। এটা ইরান-ইরাক যুদ্ধ নামে পরিচিত

http://en.wikipedia.org/wiki/Iran-Iraq_War

মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ এবং নেতৃবৃন্দ ১৯৭৯ সালের ইরানের বিপ্লবের পরে ইরাকের সাথে সম্ভাব্য সংঘাতের আভাস পায়। এক্ষেত্রে ঐ সময় ইরান যতটা না আগ্রাসী ছিল তার চেয়ে সাদ্দাম হাজার গুণ আগ্রাসী ছিলেন। তাই মুসলিম বিশ্বের অনেক নেতা সাদ্দামকে ইরান আক্রমণ না করার অনুরোধ করেন। জবাবে সাদ্দাম জানিয়ে দেন ইরান তিনি আক্রমণ করে সহজেই দখল করে নিবেন। তখনই অনেকে মনে করেন এই ব্যাটা অন্য দেশ ধ্বংস করবে এবং নিজে সহ ইরাকের বারোটা বাজাবে। স্রেফ সাদ্দামের বেওকুফীর জন্য ইরাক ও ইরানকে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তার পরিসংখ্যান নিম্নে তুলে ধার হল

Iran
500,000 to 1,000,000 dead Iranian government official figure of 188,015 soldiers, militia, and civilians killed;
Economic loss of more than US$500 billion

Iraq
Estimated 300,000 soldiers, militia, and civilians killed or wounded;
Economic loss of more than US$500 billion

দেখা যাচ্ছে প্রায় ১৩ লক্ষ লোক নিহত এবং উভয় পক্ষে ১০০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায় হয়েছে। সে যাই হৌক জাতিসংঘ, ও.আই.সির অনেক চেষ্টা তদবির করার পর প্রায় দীর্ঘ ৯ বছর পর এই যুদ্ধ বন্ধ হয়। হায়রে পেট্র ডলার! ইরাকের জনগণের অধিকার ক্ষূন্ন করে দুহাতে অর্থ ধ্বংস করেছেন সাদ্দাম এবং ইরানকেও বাধ্য করেছেন। ঐ যুদ্ধ চলাকালীন ১৯৮১ সালে ইরাকের তাম্মুজ(ফরাসী ভাষায় ওসিয়াক) নামক পরমাণু স্থাপনায় ইসরাইলী বিমান বাহিনী হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়

http://en.wikipedia.org/wiki/Operation_Opera

১৯৮৮ সালে যুদ্ধ শেষ হলে এর কিছু পরে সাদ্দাম ঘোষণা দেন যে ইরাক পুনরায় পরমাণু রিয়াক্টর বানাচ্ছে। যদি ইসরাইল আবার হামলা করে তো ইসরাইলকে রাসায়নিক এবং জীবাণু অস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। সে যাই হৌক ইসরাইল তেমন কিছু বলেনি। কিন্তু ইরান যুদ্ধে মদদ দেওয়া আমেরিকা এর নিন্দা জানায়। সেই সময় বুশ সিনিয়র বলেন সাদ্দাম নিজের এবং ইরাকের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন। পরবর্তী দুই বছরের মাথায় ১৯৯০ সালে ইরাকের সরকারী কর্মকর্তারা হঠাৎ দাবী করেন যে কুয়েত ইরাকের সীমানা হতে জ্বালানি তেল চুরি করছে। অথচ সুন্নী কুয়েত ইরাককে ইরানের সাথে যুদ্ধে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে সাহায্য করেছে

Click This Link

এ সময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ইরাকের এই দাবীকে সমর্থন করে বলেছিল এটা ন্যায্য। আর কোন সমস্যা হলে তারা ইরাকের সাথে আছে। অন্যদিকে আমেরিকা কুয়েতের পক্ষ নেয়। সে যাই হৌক জুলাই ১৯৯০ সালে যখন সাদ্দাম কুয়েত আক্রমণ এবং দখলের পরিকল্পনা নেয় তখন ইরাকের অনেক তরুণ সহ সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা তাতে আপত্তি জানান। সাদ্দাম তাদেরকে তোয়াক্কাতো করেনই নি বরং তাদের সবাইকে প্রাণদন্ড দেন। তারপর ২রা অগাষ্ট ১৯৯০ সালে কুয়েত দখল করলে সোভিয়েত ইউনিয়ন এমনই পল্টি দেয় ইরাকের পক্ষে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধতো দূর এমনকি জাতিসংঘর নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে ইরাকের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অবরোধে সমর্থন দেয়। আফগানিস্তানের পরাজয় সহ অর্থিনিতক দূরাবস্থার কারণে সে অর্থের কারণে আমেরিকার কাছে ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজেকে বিক্রি করে। যা বলা যায় ইরাকের বিনিময়ে সে আমেরিকার সাথে একটা বাণিজ্যিক ডিল করে। আমেরিকাও প্রেষ্টিজ ইসু হওয়ায় ঐ সময়ের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরে রাশিয়াকে ব্যাপক সাহায্য করে । এরপরের ইতিহাস আমরা অনেকেই জানি যে ১৯৯১ সালে মার্কিন-বৃটিশ নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী কুয়েতকে ইরাক হতে মূক্ত করলেও ইরাকের বিরুদ্ধে অবরোধ বহাল রেখে তার রাসায়নিক, জীবাণু এবং পরমাণু সহ সকল প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু তারপরেও আমেরিকা এবং ব্রিটিশদের সন্দেহ থেকেই যায়। তাই ২০০৩ সালে ইরাক দখল পূর্ব পর্যন্ত অবরোধ ইরাকের মত কোন দেশকে পঙ্গু করতে ৫ বছরের অবোরধ যথেষ্ঠ। সেখানে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশী অবরোধ ছিল। ইরাকের এই পরিণতি দেখে আরেক আরব দেশ লিবিয়ার ডিক্টেটর কর্ণেল গাদ্দাফির যেন হুশ হয়। তিনি এক সময় প্রবল আমেরিকা বিরোধী ছিলেন এবং প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। তিনিও তার রাসায়নিক-জীবাণু সহ মারাত্নক অস্ত্র তৈরির কর্মসুচী বাদ দেন। এখন তিনি পশ্চিমাদের কতটা প্রিয় পাত্র তা জানিনা কিন্তু তার বিরুদ্ধে পশ্চিমারা আর কোন অভিযোগ করে না। তাই ভেবেছিলাম এবার স্রেফ পুরোনো ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেই মধ্যপ্রাচ্যে আর বড় কোন সমস্যা থাকবে না(ইতিমধ্যে ইরাকের পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল)। ঐ ২০০৩ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন মোহাম্মাদ খাতেমী। তিনি গণতান্ত্রিক মনা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সহ ইরানী জনগণকে অনেক সুবিধা দিয়েছিলেন। তিনি ইসরাইলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ না করলেও প্রকাশ্যে ইসরাইল বিরোধী কিছু বলেন নি। ২০০৫ সালে যখন পোপ জন পল-২ মারা যান তখন ইসরাইলী সাবেক প্রেসিডেন্ট মোসে কাটসাভের পাশে বসেন এবং হ্যান্ডশেক করেন। এর জন্য ইরানে তার কঠোর সমালোচনা হয়। শুধু এটা নয় যেহেতু ইরানে ভোট সিষ্টেম ছিল, সিংহভাগ জনগণ যখন ইসলামের কঠোর বিষয় গুলোর কিছু শিথিল করার জন্য ভোট দিয়েছিল তখন ইরানের কট্টরপন্থীদের সাথে তার অনেক মতবিরোধ ঘটে। এ কারণেই কট্টরপন্থীরা ২০০৫ সালে কারচুপি, পেশী শক্তি এবং নির্যাতনের মাধ্যমে উগ্র আহমাদিনেজাদকে ক্ষমতায় বসানো হয়। ১৯৯৭-২০০৫ সালে খাতেমী ইরানী জনগণকে গণতন্ত্র এবং লিবার্টির স্বাদ দেন আহমাদিনেজাদ তার বিপরীত পথে চলা শুরু করেন। অথচ খাতেমীর সময় ইরানে ইসলামের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই। একে তো চুরি এবং বাহুবলে ক্ষমতায় আসা তার উপর কোন কারণ ছাড়াই অক্টোবর ২০০৫ সালে বলে বসেন "ইসরাইলকে বিশ্ব মানচিত্র হতে মুছে ফেলা হবে"। অথচ ঐ একই বছর তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ইসরাইলের সরকারী লিকুদ পার্টির প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল শ্যারণ গাজা হতে ইহুদী বসতি প্রত্যাহার শুরু করেন। শ্যারণ ইসরাইলকে ১৯৬৭ সালের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। আহমাদিনেজাদের হুমকিতে লিকুদ পার্টিতে মতবিরোধ দেখা দেয়। লিকুদ পার্টির যারা উদারপন্থী উচ্ছেদ কার্যক্রম চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিল তারা কট্টরপন্থীদের দ্বারা বাধার সম্মুখীন হন। কট্টরপন্থীদের দাবী ইসরাইলের নমনীয় ভাব যা জাতিসংঘ এবং আমেরিকান রোড ম্যাপ মোতাবেক অনুসরণ করলেও হঠাৎ ইসরাইলকে হুমকি নতুন কোন বিপদ ঘটাবে কিনা। দেখা গেছে খাতেমীর দীর্ঘ ৮ বছর যেখানে ইরান ইসরাইলকে অকারণে কোন হুমকি ধমকি দেয়নি সেখানে এই নতুন হুমকি কেন? এরই রেশ ধরে লিকুদ পার্টিতে ভাঙ্গণ ধরে। উদারপন্থীরা লিকুদ পার্টি হতে বেড়িয়ে গিয়ে নতুন কাদিমা পার্টি গঠন করে। আর ২০০৬ সালের জানুয়ারীতে হামাস ৪৩% ভোট পেয়ে ফিলিস্তিনের সরকারে আসে। আর এসেই বলা শুরু করে যে আমরা ইসরাইলকে স্বীকার করি না কিন্তু আলোচনা চাই। তখন ইসরাইলেও নতুন নির্বাচনে কাদিমা পার্টি লেবার পার্টির জোট সরকারও হামাসের এই আচরণে ফিলিস্তিনের সাথে শান্তি আলোচনা চালিয়ে যেতে আপত্তি করে। হামাসও ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদানে অনীহা জানিয়ে অনড় থাকে। তারপরেও প্রথমে শ্যারণ এবং পরে ওলমার্ট বসতী উচ্ছেদ অব্যাহত রাখেন। আর এর মধ্যে আহমাদিনেজাদ বলে বসেন ইসরাইলকে ধ্বংস করতে হামাস-হিজবুল্লাহই যথেষ্ঠ। সহজ অর্থেই উস্কানি। তাই হামাসের যেন তর সইল না। আহমাদিনেজাদের মন্তব্যের পরই বিক্ষিপ্ত ভাবে ইসরাইলে রকেট হামলা শুরু করে। ইসরাইলও তাদের IDF ও IAF এর মাধ্যমে পাল্টা জবাব দেয়। দেখা যায় হামাস যতনা ইসরাইলের ক্ষতিরা করে তার চেয়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিগণ বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এরপর জুন মাস ২০০৬এ হামাস ইসরাইলে ঢুকে ২ জন সৈন্য হত্যা করে গিলাত শালিত নামে একজন ষ্টাফ সার্জেন্ট কে অপহরণ করে। তারপরই ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এর পরের মাস জুলাইতে হঠাৎ কোন রকম উস্কানি ছাড়াই লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরাইলে প্রবেশ করে ৮ জন ইসরাইলী সৈন্যকে হত্যা করে এবং ৩ জনকে অপহরণ করে। অথচ জাতিসংঘ সহ অনেক দেশের দেন দরবার করার পর ইসরাইল ২০০০ সালে এই শর্তে লেবাননের বাফার জোন হতে সরে আসে যে লেবাননের কেউ বিশেষ করে হিজবুল্লাহ যেন ইসরাইলে হামলা না করে। লেবাননের সরকার জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা দেশ গুলোকে এই বলে আশ্বাস দেয় যে তারা ইসরাইলে বিরুদ্ধে লেবাননের কাউকে আক্রমণ করতে দিবে না। কিন্তু ২০০০ সালে ইসরাইল লেবানন ছেড়ে গেলে ইরান হিজবুল্লাহকে অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, উন্নত যুদ্ধ কৌশল দিয়ে সহায়তা করে আসছে। যদিও এটা খাতেমীর আমলেই শুরু হয় কিন্তু তার সরকার কখনও হিজবুল্লাহকে ইসরাইল আক্রমণের জন্য উস্কানি দেয় নি। কিন্তু আহমাদিনেজাদ আসাতে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। শ্যারণ যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আজ ইরানী কট্টরপন্থী আহমাদিনেজাদের কারণে সম্পূর্ণ বৈরী হয়ে গেছে। ইসরাইল আর হিজবুল্লাহকে তো নয়ই হামাসকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। ইসরাইলী সামরিক এবং বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের দাবী যে ইসরাইল যদি হামাস ও গাজার অবরোধ তুলে নিলেতো কথাই নেই বরং গাজায় আরো নতুন বসতি স্থাপন করা উচিত। ২০০৬ সালে যুদ্ধ শেষ হলে ইসরাইলী কোন অবরোধ না থাকায় হামাস গোপনে ইরান হতে অস্ত্র, রকেট ইত্যাদি নিয়ে মাঝে মাঝেই ইসরাইলে হামলা করত। যা ২০০৯ সালের ইসরাইল কতৃক অবরোধের কারণে হামাস আর কোন বড় ধরণের হামলা করতে পারছে না। তাই মার্কিন ওবামা প্রশাসন দিন বদল তথা পরিবর্তনের অনেক কথা মধ্যপ্রাচ্যের জন্য বলে ক্ষমতায় এলেও শান্তি প্রক্রিয়া বর্তমানে থমকে গেছে। স্বাধীন-সার্বভৌম ফিলিস্তিনের আশা এখন আপাতত অনিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছে। মজার কথা হল ফাত্তাহর নিয়ন্ত্রণাধীন পশ্চিম তীরে কোন সমস্যাই নেই। সেখানে ইসরাইল বা ফিলিস্তিনিরা কেউ কাউকে আক্রমণ করে না। গাজাতেও কিছু অস্ত্রধারী হামাসের জন্য গোটা গাজাবাসী জিম্মি। এই বছর ২০১০এ ইরান হিজবুল্লাহকে স্কাড ক্ষেপনাস্ত্র সরবারাহ করেছে এবং অক্টোবরে আহমাদিনেজাদ লেবাননে সফরে গিয়ে বলেছেন ইহুদীদের নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে হবে। আর হিজবুল্লাহ যথারীতি হুমকি ধমকি দিয়ে চলেছে। খাতেমীর সময় ইরান নিজ দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ রাখলেও(রাশিয়া হতে আনা হত) আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় এসেই তা ইরানেই চালু করেন। পশ্চিমাদের সন্দেহ ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি চলে এসেছে। ইরান যে সামরিক দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। ইরান রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল। রাশিয়াও ইতিমধ্যে ইরানকে বেশ কয়েক বার পূর্ণাঙ্গ অবরোধ এবং বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞার হাত হতে রক্ষা করেছে। তবে ২০০৮ থেকে বর্তমানে জর্জিয়া, চেচনিয়া সহ বেশ কিছু সমস্যা রাশিয়াকে ভাবিয়ে তুলেছে। এ বছর মার্চ ২০১০এ মস্কোতে আত্নঘাতী সন্ত্রাসী বোমা হামলার ঘটনাও ঘটেছে যাতে ৩৮ জন নিহত হয়

http://news.bbc.co.uk/1/hi/8592190.stm

এ বছর আমেরিকা, বৃটেন সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনেক রাশিয়ানকে গুপ্তচরাবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে

Click This Link

আর ইদানিং ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল অন্য পরাশক্তি চীনও দুই কোরিয়ার যুদ্ধাংদেহী আচরণের জন্য চাপে রয়েছে। এছাড়াও আরও অনেক কারণে কি রাশিয়া ও চীন নিকট ভবিষ্যত বা আর কয়েক বছর পর ইরানকে পূর্ণাঙ্গ অবরোধ হতে বাচাতে পারবে না। জাল বিছানো হয়েছে ২০০৫-০৬ সালে এখন ধীরে ধীরে গুটানোর পালা শুরু হয়েছে। ইরানের আহমাদিনেজাদ হয়ত সাদ্দামের মত আগে আক্রমণ করবেন না কিন্তু হিজবুল্লাহকে লেলিয়ে দেওয়া এবং নিজ দেশের পরমাণু কর্মসুচী এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে জাপান ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ইরানের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করেছে। যার দরুণ রাশিয়া, চীন এবং কিছু সমাজতান্ত্রিক দেশ বাদে মুসলিম দেশ সহ অন্যান্য সকল দেশ ইরানের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কমে আসবে। ঠিক যেমন ইরাক হতে ১৯৯১ সালে কুয়েত মূক্ত এবং অব্যাহত রেখে ২০০৩ সালে দখলের পূর্বে করা হয়েছিল। একটি দেশের অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্থ করলে তার জনগণ সহ গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাই ভেঙ্গে যায় অথবা চরম দূর্বল হয়ে যায়। ইরানের জনগণের বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১১ হাজার মার্কিন ডলারের বেশী যা বাংলাদেশের তুলনায় ২০ গুণের বেশী। ১৯৭৯ সালের পর অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ইরান এই অবস্থায় আসতে পেরেছে। যেখানে সৌদি ইসরাইলকে স্বীকৃতি না দিলেও তার প্রতি বৈরিতা করছে না সেখানে ইরান কেন গায়ে পরে যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইরান ইসরাইল বিরোধ নিয়ে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ না হলেও বড় ধরণের আঞ্চলিক যুদ্ধের আশংকা করা হয়েছে

http://rense.com/general83/irwar.htm

এর মূলেই রয়েছে আহমাদিনেজাদ সহ ইরানের কট্টরপন্থীরা। কথায় বলে Rome was not built in a day। ইরান বেশীর ভাগ মুসলিম দেশ গুলির তুলনায় অর্থনৈতিক ভাবে অনেক এগিয়ে। একজন ডিক্টেটর এবং মুষ্টিমেয় উগ্র গোষ্ঠীর জন্য(২০০৯ সালেও কারচুপি ও বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী) একটি দেশ ধ্বংসের পথে চলে যাবে সেটাকি বিশ্বের বিবেকবান মানুষের জন্য কাম্য? আজকে ইরাকে অনেকটা শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে এলেও এতটাই পিছিয়ে আছে যে ভাল একটা অবস্থান(১৯৮৮-৯০ কুয়েত দখলের পূর্ব পর্যন্ত) পৌছতে কমপক্ষেও ৫০ হতে ১০০ বছর লাগবে। আর ইরানের সাথে পাশ্চাত্যের যুদ্ধ বাধলে ইরানতো শেষ হবেই বরং সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ সকল দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। যার প্রভাব বাংলাদেশ সহ গোটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে পরবে। আমেরিকা, ইউরোপের উন্নত দেশ গুলো তাড়াতাড়ি দূরাবস্থা হতে পার পেলেও তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলো এক যূগ বা তারও বেশী সময় র্দূভোগ পোহাবে। আর মুসলিম বিশ্ব নিঃস্ব ফকির হয়ে অমুসলিমদের কাছে হাত পাতবে। তখন কি মুসলমানদের জন্য বিষয়টি সহজ এবং সুখকর হবে? কথায় বলে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। ইরান বর্তমানে যে ভাবে যাচ্ছে তাতে তার উপলদ্ধি হওয়া উচিত ২০০৩ সালে ইরাকে WMD না থাকা সত্তেও সেখানে স্রেফ সন্দেহের বশে হামলা চালিয়ে দেশটিকে দূরাবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। আর ইরান প্রকাশ্যে ইসরাইল বিরোধী বক্তব্য, উস্কানী, সন্ত্রাসী হিজবুল্লাহকে মদদ এবং পরমাণু কর্মসুচীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সেকি ইচ্ছে করেই পাশ্চাত্যকে আক্রমণে আহবান জানাচ্ছে না। ইতিমধ্যে উইকলিসের প্রতিবেদনে দেখা যায় সৌদি বাদশাহ নিজেই আমেরিকাকে ইরান আক্রমণে অনুরোধ করেছেন। এটা আসলে সৌদি না সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যর আরব দেশ গুলোও তাই চাচ্ছে। তারপরেও কি আহমাদিনেজাদ গংদের হুশ হবে না? আসলে এ জন্যেই বলে "ইতিহাসের পরম শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস হতে কেউই শিক্ষা নেয় না"। রাশিয়া, চীন যেখানে নিজেদের ঘর ও নিকট প্রতিবেশী এবং গ্লোবাল বাণিজ্য নিয়ে চিন্তিত, মুসলিম কোন দেশও পাশে নেই সেখানে তাদের কোন সাহায্য ছাড়া ইরান কি একা আমেরিাকা ও ইউরোপের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারবে? আমি সহ অনেকেই সাদ্দাম ও ইরাকের করুণ পরিণতি দেখেছি, তাই এখনও সময় আছে ইরানের জন্য জাতিসংঘ, অসলো প্রস্তাব ১৯৯৩ মেনে নেওয়া এবং নিজ দেশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসুচী বাদ দেওয়া। এটা যদি খাতেমীর আমলে রাশিয়া হতে করিয়ে আনলে সমস্যা হয় নাই তো এখন বা ভবিষ্যতে হবে কেন? আমাদের মুসলমান সহ মুসলিম রাষ্ট্র গুলির উচিত সময় থাকতে ইরানকে বোঝানো। পরে আফসো করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×