somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গাজর উৎসব চলছে :: পিছিয়ে যাবার নেই মানে

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পড়ালেখা করেছিলাম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিঙ ও বায়োটেকনোলজিতে। ভালবেসে। পুষ্টি এবং শক্তির প্রবাহ সম্পর্কে ভাল ধারণা পড়ালেখার দিক থেকেই একটু অন্যভাবে এসেছে। তার বাইরে সূফিত্ব বা ধ্যানবিদ্যার দিকে ঝোঁক থাকায় শরীর মনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নিয়ে ভাবতে হয় ঘাঁটতে হয়।
গাজরের কেজি পনের-বিশ টাকা মানেই স্বাস্থ্য উৎসব চলছে। সারা বছরে আমার সবচে এক্সাইটিং খাবার হল গাজর, কাঁঠাল আর তরমুজ। এই তিনটার যখনি সিজন আসে তখনি মনে হয় মাইক লাগিয়ে মার্কেটিং করি। গাজর তো আর হরলিক্স কোম্পানি তৈরি করেনি, বা ইউনিলিভারের প্রোডাক্ট নয় ওটা, যে চিল্লিয়ে কেউ আমাদের খাওয়াবে।

এক কথায়, প্রকৃতির বেস্ট সেইফ পাওয়ারহাউস কী? গাজর ও তরমুজ।

কোন্ খাবারটা মেশিনের মত শক্তি দিবে? গাজর।
কোন্ খাবারটা খেয়ে ওজন কমাতে নিয়ে দুর্বল হওয়ার সম্ভাবনা নেই? এটাই।

গাজর দৃষ্টিশক্তি বাড়াবে।
কমাবে ক্যান্সারের সম্ভাবনা।
বয়স বাড়ার হার কমিয়ে তরুণ রাখবে এবং অনেকটা তরুণ করেও তুলবে। পেশির প্রাকৃতিক ক্ষয় কমাবে।
ত্বক করবে সতেজ, সুন্দর, সুস্বাস্থ্যময়। ভিতর থেকে এবং বাইরে থেকে।
ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমাবে।
কমাবে আধুনিক গণরোগ, হৃদরোগ।
রক্তচাপ কমাবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবো।
শরীরকে ভিতর থেকে কোষ-কলা-প্রত্যঙ্গ লেভেলে বিষমুক্ত করবে।
দাঁত-মাড়ি করবে সুস্থ।
স্ট্রোক থেকে বাঁচাবে।
ডায়াবেটিস, আরেক আধুনিক রোগ, আধুনিক মানুষ এ রোগ থেকেও দূরে চলে যাবে অনেকটা।
হজমে এমন সহায়তা করবে এবং পাকস্থলি ও এর আশপাশের অঙ্গের এমন সুবিধা করবে যে, তার ফলে শুধু কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে যাবে ২৪%।
গাজরের অ্যান্টি-সেপটিক গুণাগুণও উল্লেখ্য। তবে তা শরীরের ভিতরেও ব্যবহার করতে কোন মানা নেই। কোনও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি তো বানাচ্ছে না!

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মানে গাজর, গাজর মানে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। ক্যান্সার সরায় এমনকি সারায় এই উপাদানগুলো। শরীরের ক্ষয়রোধ এমনকি পূরণ করে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। বয়স বাড়া বন্ধ করে। তারুণ্য তৈরি করে। স্বাস্থ্য-সচেতন মানুষের কাছে এন্টি-অক্সিডেন্ট হল আলাদীনের চেরাগের মত। বিটা ক্যারোটিন হল বিখ্যাত এন্টি-অক্সিডেন্ট। গাজর হচ্ছে বিটা ক্যারোটিনের আস্তানা। শুধু বিটা কেরোটিন কেন? ক্যারোটিনেরই আস্তানা। ক্যারোটিন শব্দাটা এসেছেই ক্যারোট থেকে। বিটা ক্যারোটিন, আলফা ক্যারোটিন বা ক্যারোটিন এ, লিউটেইন জিয়াজ্যানথিন ভরপুর। হাইড্রোক্সিসিনামিক এসিড তথা ক্যাফেয়িক, কমারিক, ফেরোলিক এসিড ও সায়ানিডিন-মালভিডিন সমৃদ্ধ।


গাজরের ২% অ্যানার্জি আমাদের ছোটাবে, ৭% কার্বোহাইড্রেড ভাত-রুটির বিকল্প হবে, ১.৫% প্রোটিন মাছ-মাংসের চাপ কমাবে, ১% চর্বি শুধু প্রয়োজনটুকু মেটাবে, ৭% ডায়েটারি ফাইবার ঝাঁট চালিয়ে পরিষ্কার করবে শরীরের ভিতরটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মত।

গাজর মানে ভিটামিন, ভিটামিন মানে গাজর। ৫৫৭% ভিটামিন এ, ১১% ভিটামিন কে, ১০% করে ভিটামিন সি ও পাইরিডক্সিন, থায়ামিন, নিয়াসিন ও প্যান্টোথেনিক এসিড ৬% করে, ফলেট ও রাইবোফ্ল্যাবিন ৫% করে।

গাজরের খনিজ উপাদানও চমকে দেয়ার মত। সোডিয়াম ও পটাসিয়াম মিলে প্রায় ১০%। ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য পূরণ করবে অসাধারণভাবে। ৬% ম্যাঙ্গানিজ, ৫% করে কপার ও ফসফরাস, আয়রন ৪%, ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক প্রায় ৩% করে।

গাজরের এত্তো গুণ কীভাবে?
আসলে মাটির তলার যে জিনিসগুলোকে আমরা সবজি বলি সেগুলো আদতে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত মূল। গাজর মাটি থেকে বিপুল শক্তি সঞ্চয় করে রাখে। যোগানের মত করে। প্রস্তুত অবস্থায়। এই শক্তিটাই উপরের পুরো গাছে যোগান দেয়।

খাবার বেলায়:
আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে কুইজিন হল ঐশী একটা বিষয়ের মত। যেন বেহেস্ত থেকে ঠিক হয়ে এসেছে কীভাবে কোন্টা খেতে হবে এবং কোনটার সাথে কী খেতে হবে । কোনটা কীভাবে রাঁধতে হবে। এইসব মেইনটেইন করার কিছু নেই।

শুরতে বা কম খেলে কাঁচাই খান। ছিলে, মাথাটা ফেলে। ইচ্ছা হলে জুস করে। শুধু শুধু গাজর খাবার নাম করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল চিনি লবণ তেল ঝোল মসলা মেশানোর কোন দরকার নাই। চিবিয়ে বেশি খাওয়া যায় না, ছোট টুকরা করে খান বা জুস করে খান। সালাদে কাঁচা বা তরকারিতে সিদ্ধ করে। যে কোন সবজি, শাক, খিচুড়ির ভিতর দিয়ে দিন গাজর। এমনকি মাছ মাংসের তরকারিতেও দিতে নেই মানা। ডালে দিলেই বা কে কী বলবে? সুবিধা এক্সট্রিমলি নিবেন? ভাত ফোটার আগে সেখানে অনেকটা গাজর টুকরো করে দিয়ে দিলে কেউ আপানকে মারতে আসবে না। বড়জোর না বুঝে হাসতে পারে, অজ্ঞতার হাসিকে উপেক্ষা করুন। যতদিন সিজন আছে, অরুচি না এলে প্রতি বেলা প্রতি খবারের তিন ভাগের একভাগ এমনকি অর্ধেকও গাজর রাখতে পারেন নানা ফর্মে। গাজরের হালুয়ার তো তুলনা নাই। তবে এতে তেল ঘি মসলা চিনি এড়ানো উচিত।

শুধু কাঁচা বা শুধু সেদ্ধ খাওয়ার কোন দরকার নেই। তেমনি শুধু আস্ত চিবানো বা শুধু জুস করারও দরকার নেই। খাবারের একেকটা অবস্থানের একেকটা শরীরবৃত্তীয় সুবিধা আছে। সুবিধা নিতে গেলে যেহেতু আমরা অনেকটাই খাবো, বিভিন্নভাবে খাওয়াই ভাল। রান্না বা সেদ্ধ করার বেলায় মাথায়র রাখতে হবে, পুষ্টি নষ্ট তো সবই নষ্ট। অতিসেদ্ধ না করে আধাসেদ্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে যে আইটেমের সাথে রান্না হচ্ছে সে আইটেম চুলা থেকে নামানোর কয়েক মিনিট আগে শাক সবজি ও মূল দেয়া উচিত।

আধসেদ্ধ গাজর বা আরো নানা শাকসব্জির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেড়ে যায়। সেদ্ধ করার কারণে এর পুষ্টিগুণ ব্যবহারের সম্ভাবনাও বেড়ে যায় শরীরে।

দুটা সতর্কতা:

এ সতর্কতা সবকিছুতেই। কীটনাশক ও সার। গাজরের উপরটা কেটে ফেলাই ভাল। অনেকটা ছিলে ফেলার মত। আর গাজরটা ছিলে নিলেও ভাল। মানুষজন অকারণে কীটনাশক ব্যবহার করে। মাটির তলায় থাকে বলে এতে কীটনাশক থাকার সম্ভাবনা যে কোন শাক সব্জি ও ফল থেকে কম। আর ছিলে নিলে মাটির বাড়তি সারটুকু কিছুটা এড়ানো যায়। গাজর সিজনেরটা সিজনে খাওয়াই ভাল। তাতে প্রিজার্ভেটিভের ভয় নাই।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৬
২৪টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×