somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা ৯০' দশকের পোলাপান

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমরা যারা "90's Kid [ মোটামুটি যাদের জন্ম ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ এর মধ্যে ] আমরা হচ্ছি, পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান প্রজন্ম। আমি প্রায়ই অবশ্য আমাদেরকে 'গত প্রজন্মের শেষ বংশধর' বলে থাকি। পৃথিবীর বিশাল বিশাল অগ্রগতি-গুলোর চাক্ষুস সাক্ষী আমরা।

আমাদের ঘরে মায়ের হাতে বানানো হাতপাখা ছিলো। মেলা থেকে কেনা রঙ্গিন তালপাতার পাখাও ছিলো। আমাদের প্রিয় চকলেটের নাম-মিমি চকলেট। লজেন্স বলতে নীল রঙের পলিথিনে মোড়ানো নাবিস্কো লজেন্স। ১ টাকায় চারটি পাওয়া যেত। পঞ্চাশ পয়সা করে যেগুলোর দাম ছিলো সেগুলোর স্বাদ ছিলো ঝাল। ডোরাকাটা কালো পলিথিনে মোড়ানো থাকতো।


ছবিঃ গোল্লাছুট খেলার একটি দৃশ্য

আমাদের শৈশবে আমাদের প্রিয় খেলা ছিলো গোল্লাছুট, দাঁড়িয়াবান্দা আর কাঁনামাছি। আমাদের বড় হওয়ার সাথে সাথে বড় হয়েছে টেকনোলজি। পৃথিবীতে 'Technology Revolution' -এর সবচেয়ে বড় সাক্ষী আমাদের প্রজন্ম। তখনো কম্পিউটার গেমস আসেনি... জন্মদিনে আমাদের সবচেয়ে উপহার হতো ভিডিও গেমস। প্রিন্স হয়ে ড্রাগনকে মারতে পারাই তখন জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়াতো।

আমাদের শৈশবটা সাদাকালো নিপপন টিভি'র সাথে এন্টেনা ঘুরিয়ে কেটেছে। অনুষ্ঠান যাই হোক টিভি পেলেই সামনে বসে পড়তাম। লুকাস ব্যাটারি তখন শুধু গাড়ির ব্যাটারি ছিলোনা। রাত আটটার বাংলা সংবাদ দেখার জন্যে আব্বার জন্যে ব্যাটারীতে চার্জ রাখতে হতো। তারপর বিটিভি'র সাথে ইটিভি পেয়ে যেন মনে হলো- পরিবারে নতুন কোন সদস্য এসেছে! শুক্রবার তিনটা বিশে দেখানো বাংলা মুভির জন্যে কত শুক্রবার যে দুপুরের ঘুমকে হারাম করে বকা শুনেছি হিসেব নেই। ছবির প্রেম রোমান্স না বুঝলেও শেষ দৃশ্যে যে একটা 'লাস্ট মাইর' থাকতো এটার জন্যেই ছিল অধির আগ্রহে বসে থাকা। সব সময় নায়কের পক্ষে থাকতাম। আর নায়কেরাও হতাশ করতো না...সকল মুভিতেই 'তামা পাহাড়ে চলে আয়' টাইপের একটা দৃশ্য থাকতো এবং নায়কই জিততো।


ছবিঃ নায়ক আবদুল খায়ের জসিম উদ্দিন ছিলেন তখনকার একমাত্র একশন হিরো

পুরো এলাকা জুড়ে তখন শুধু একটা রঙ্গিন টিভি থাকতো- যাদেরকে আমরা বনিয়াদি ঘর বলতাম! তাদের পরিবারের একজন সদস্য নিশ্চিত ভাবে বিদেশে থাকবে।
আমাদের প্রত্যেকের বাসায় টেলিভিশন থাকুক আর না থাকুক প্রতেকের বাসায় অন্তত একটা করে রেডিও থাকতো। ঢাকা 'ক' বা 'খ' র তিব্বত ঘামাচি পাউডার অনুরোধের আসরের দ্বরাজ গলার উপস্থাপকের কণ্ঠ শুনার জন্যে প্রতিদিন অপেক্ষা করতাম। 'হক ব্যাটারি হক ব্যাটারি- সাতশ ছিয়াশি' কিংবা 'আলো আলো বেশী আলো, শব্দে শব্দে মন মাতালো'র বিজ্ঞাপন শুনে আমাদের মন মাততো। আমাদের স্কুল ব্যাগে কাঠের রং-পেন্সিলের সাথে সানলাইটের নষ্ট ব্যাটারিগুলোও থাকতো।



আমাদের শৈশবের নায়ক বলতে মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান কিংবা হাসিবুল হোসাইন শান্ত। ৯৯ এর বিশ্বকাপে পত্রিকায় ছাপানো ১৮ জনের স্কোয়াডকে পত্রিকা থেকে কেটে পড়ার টেবিলে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছিলাম। ওনাদেরকে একদিন বাস্তবে দেখার স্বপ্ন দেখতাম প্রতিনিয়ত। হারলে কেঁদে দিতাম... পাকিস্তানের সাথে জিতার পর না বুঝেই কেঁদে দিছিলাম।


ছবিঃ বিশ্বকাপ স্কোয়াড ১৯৯৯ইংরেজি

দু'হাজারের দিকে গ্রামীন ফোন আসলো। বাসায় একটা মোবাইল আসলো। জিরো ওয়ান সেভেন সিরিজের। তখন একঘরের মধ্যে পাঁচটা মোবাইল ছিলোনা...বরং পাঁচ ঘর মিলে ছিলো একটা টেলিফোন নাম্বার। বাবা-মা'রা নিজের ঘরে টিএন্ডটি নাম্বার না থাকলে বাচ্চাদেরকে আশে-পাশের কারো বাড়ির নাম্বার মুখস্ত করাতো। যেন বাচ্চা হারিয়ে গেলে খুঁজে পাওয়া যায় সহজেই।

তখনো কোন প্রিয়ার সাথে দেখা না পেলেও আসিফের 'ও প্রিয়া তুমি কোথায়' এলবামের সবগুলা গান মুখস্ত ছিলো। ঘরে ঘরে ক্যাসেট প্লেয়ার ছিলো। আঙ্গুল কিংবা পেন্সিল দিয়ে এলবামের ফিতা ঘুরিয়ে একই গান বারবার শোনার প্রচলন ছিলো। বিদেশীর বউ'রা জামাইয়ের কাছে ফিতাওয়ালা ক্যাসেডের রেকর্ড করে পাঠাতো।


ছবিঃ ক্যাসেড প্লেয়ার

২০০৬ সালের দিক ঘরে কম্পিউটার আসলো। বন্ধুরা বিকেলে বাসায় চলে আসতো গেইম খেলতে। Dx Ball 2 , Road Rash কিংবা হাউজ অব ডেড ছিলো সবচেয়ে জনপ্রিয় গেইম। স্কুল ফাঁকি দিয়ে ভিডিও গেইমের দোকানে খেলার কথা আর নাই'বা বলি। ভিডিও গেইমসের দোকানে ধরা পড়ে বাসায় বকুনি খাইনি এমন ছেলে খুঁজে পাওয়া প্রায় দুষ্কর।


ছবিঃ রোডর‍্যাশ গেইমসের এই ছবি আপনাকে নস্টালজিক হবেন নিশ্চিত

তারপর আমরা আরেকটু বড় হলাম! হঠাৎ করে পৃথিবীর যেন কি হলো। সবকিছু দ্রুত বদলাতে থাকলো। এতো দ্রুত বদলালো যে আমাদের আবেগের জায়গা বলে কিছু আছে এমনটা খুঁজে পেতেই কষ্ট হয়ে যায়। তারপরও আমরা ভাগ্যবান যে আমরা দুইটা প্রজন্মকেই একসাথে দেখেছি। সাদাকালো পাঞ্জাবি পরা প্রজন্ম এবং 'ইয়ো ইয়ো' টাইপের মাল্টিকালারের প্রজন্ম।


আমরা "90's kid...আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান প্রজন্ম :) and we proud to be a 90's kid।



'সাইফ ভাই' থেকে ।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৫৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×