somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ম্যাচুউরিটি

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বন্ধুদের চায়ের কাপের ঝড় থেকে পারিবারিক আড্ডা কিংবা অফিসের মিটিং, প্রায়ই আপনি আপনার কাজ দ্বারা ম্যাচুউর ইম্যাচুউরের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিবেন। ঠিক কি করে বুঝবেন আপনি এখনো ম্যাচুউর নাকি ইম্যাচুউর?? নিচের লেখাটির সাথে মিলিয়ে নিন তো আপনাকে!

১. অহেতুক তর্কে লিপ্ত না হওয়া:

একজন ম্যাচুউর আর ইম্যাচুর মানুষের তফাৎটা এখানেই। মানুষ সবসময় তর্কে জিততে চায়। কিন্তু তর্কে জিততে হলে সবসময় তর্ক করতে হয় না। বুদ্ধিমান মানুষ সবসময় অন্যকে জিততে দেয়।

“You can’t argue with stupidity” – – Jermaine Jackso

ধরুন, কেউ একজন ভুল কিছু নিয়ে তর্ক করছে, আপনি তাকে ভুলটা ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু তিনি মানতে নারাজ। তিনি তার ধারনাতেই অটল থাকতে চান। এক্ষেত্রে একজন ইম্যাচুউর মানুষ তার সাথে তর্ক করতেই থাকবে, এবং একজন ম্যাচুউর মানুষ তাকে এড়ায় গিয়ে বলবে, “হ্যা ভাই, আমার জানার ভুল থাকতে পারে, বোধ হয় আপনিই ঠিক।”

২. কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:

মনে করুন, কেউ আপনার কোন উপকার করল। আপনি যদি তাকে বলেন, “আমার যে কি ভালো লাগল আপনি আমার জন্য এতটা করলেন!” কিংবা বললেন “আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাব!” দেখুন ব্যাপারটা আসলে কিছুই না, কিন্তু মুখের দুটো কথাই অনেক কিছু। আপনার সাহায্য কর্তা আপনাকে আবার পুনরায় সাহায্য করতে চাইবে।

“Feeling gratitude and not expressing it is like wrapping a present and not giving it” – William Arthur Ward

তারচেয়েও বড় কথা যখন আপনার কোন কাজের জন্য, আপনার প্রতি কেউ কৃতজ্ঞ থাকবে তখন আপনারো মনে হবে, আপনি সঠিক মানুষকেই সাহায্য করেছেন। এবং ম্যাচুউর মানুষজন এই গুনটি খুবই চমতকার ভাবে রপ্ত করেন।

৩. ক্ষমা করা:

ক্ষমা মহৎ এর লক্ষন একথা আমরা কমবেশি সবাই পড়ি, কিন্তু মানি কজন! একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা কখনোই দেখে না, একটা মানুষ কেন ভুল করল। সে সবসময় এটা দেখতে সচেষ্ট থাকে যে, সেই মানুষটা এই ভুল কোন পরিস্থিতিতে করল।

আর একজন ইম্যাচুউর মানুষ কখনোই ক্ষমা করতে জানে না। সে সবসময় ভাবে যে ভুল করে সে ছোট হয়ে যায়, তাই তাকে আর কখনোই দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া যাবে না।

“The weak can never forgive. Forgiveness is the attribute of the strong” – Mahatma Gandhi

সবসময় একজন বুদ্ধিমান মানুষের উচিত, অন্যের প্রতি সহানূভুতিশীল হওয়া তাকে বোঝা, এবং তাকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া। নাহলে সে কোনদিন আরেকজন ম্যাচুউর মানুষে পরিণত হতে পারে না।

৪. অন্যের জন্য চিন্তা করা:

একজন ম্যাচুউর মানুষ সবসময় অন্যের জন্য চিন্তা করে। একটা কাজ করার আগে, সেই কাজটা তার আশেপাশের মানুষের মানুষের উপর কি প্রভাব পড়বে তাও চিন্তা করে।

একটু লক্ষ করলেই দেখবেন, একজন ম্যাচুউর মানুষ কখনোই পাবলিক প্লেসে সিগারেট ধরাবে না কারণ তা সেখানকার মানুষের জন্য হ্মতিকর হতে পারে। আর একজন ইম্যাচুউর মানুষ সবসময় নিজের চিন্তা করে, নিজের কাছে যেটা ভাল মনে হয় সেটাই করে। কিন্তু এটা আমাদের সবসময় বোঝা উচিত, আমার কাছে যা ভাল অন্য কারো জন্য তা ক্ষতিকর হলেও হতে পারে।

৫. পরিবর্তকে মেনে নেয়া:

আমেরিকায় যখন প্রথম রেললাইন বসানো হয়, তখন আমেরিকার একদল কৃষক বিদ্রোহ ঘোষনা করেন। তারা কর্তৃপক্ষকে বলেন, ট্রেনের বাঁশির শব্দে তাদের গরু গুলো ছোটাছুটি করে হাত পা ভেংগে ফেলছে। তাই তারা রেললাইন চায় না। আজ আমেরিকা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে একটা অথচ চিন্তা করা যায়! একসময় তাদের দেশের জনগনই ট্রেন চাইত না। যদি এমন হতো তারা কোনদিনই ট্রেন মেনে নিতে পারছে না। তখন কখনোই আমেরিকার উন্নতি সম্ভব হতো না। ট্রেন থেকে মেট্রো, মেট্রো থেকে প্লেন এর সফর তারা মেনে নিয়েছে আর এভাবেই ক্রমান্বয়ে আজ আমেরিকা এত উন্নতির শীর্ষে। কাজেই উন্নত হওয়ার জন্য পরিবর্তন খুবই দরকার।

“Intelligence is the ability to adapt to change” – Stephen Hawking

একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা জানে যে পরিবর্তন কতটা দরকার। তাই সে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু একটা ইম্যাচুউর মানুষ সবসময় পরিবর্তনে ভয় পায়।

৬. দায়িত্বশীল হওয়া:

যখন আপনি দেখবেন আপনি দায়িত্ব নিতে শিখবেন, তখন মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করতে চাইবে। মানুষের ভরসা অর্জনের জন্য দায়িত্বশীলতা অনেক বড় একটা গুন।
ধরা যাক, আপনার কোম্পানিতে প্রতিদন্ধী দুজন। তারা দুজনেই প্রোমোশনের জন্য যোগ্য । এখন আপনি কাকে প্রোমশন দিতে চাইবেন! অবশ্যই যে বেশি দায়িত্বশীল তাকে। দায়িত্বশীলতার মধ্য দিয়ে আপনি আপনার সাফল্যের দিকে কয়েক ধাপ এগিয়ে যান।

“The price of greatness is responsibility” – Winston Churchill

একজন ম্যাচুউর মানুষ এটা জানেন তাই তিনি সব সময় দায়িত্বশীল হন। যে কাজ শুরু করেন সেটী ঠিকভাবে শেষ করেন। তারপর অন্য কাজে হাত দেন। কিন্তু একজন ইম্যাচুউর মানুষ তার কাজের প্রতি একটা গুরুত্বশীল হন না, সে কাজ হেলায় ফেলে রাখে। পরিণামে সে তার লক্ষ্যের থেকে কয়েক ধাপ পিছিয়ে যান।

৭. গুরুত্ব দেওয়া:

একজন ম্যাচুউর মানুষ সবসময় একজন ভালো শ্রোতা হন। সে সব সময় সচেষ্ট থাকেন সামনের মানুষ কি বলে তা জানার জন্য। যখন আপনি কাউকে তার কাজ বা কথার গুরুত্ব দেন তখন সেই মানুষটাও আপনার কাজ বা কথার গুরুত্ব দিতে শুরু করে।

তাই গুরুত্ব পেতে হলে, গুরুত্ব দিতে হয় এটা একজন ম্যাচুউর মানুষ জানেন। কিন্তু একজন ইম্যাচুউর মানুষ সব সময় নিজের কথাটাই জাহির করতে চায়। নিজের কথাই সবসময় শুনায় এবং ভাবতে থাকে যে তার কথাই ঠিক। একজন মানুষ যে সবসময়ই ঠিক হতে পারে না এটা একজন ম্যাচুউর মানুষ জানেন।

নিজের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করানোও কিন্তু এক ধরনের ম্যাচুউরিটির লক্ষণ!
এবার তাহলে মিলিয়ে বলুনতো আপনি কোন পর্যায়ে পড়েন??
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৮:০৮
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×