আমাদের পাড়ায় একটা কসাইখানা আছে। নাম, ক্যামেলিয়া গোশত বিতান। নামকরণ এবং স্লোগানের ব্যাপারে আমরা যে কতখানি পারদর্শী হতে পারি , তার আরেকটি নিকটতম উদাহরণ হচ্ছে সচলায়তন ব্লগ। এর স্লোগানও যথারীতি শ্রুতিমধুর - চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির।
সচলায়তনের ব্লগার, মডারেটর এবং মালিক হিমু নেভারেস্ট সিরিজ লিখছেন কয়েক মাস ধরেই। এই সিরিজের মূল বাণী হলো, মুসা এভারেস্টে উঠে নাই, সে জাতির সাথে প্রতারণা করেছে। এই ভয়ংকর অভিযোগটির স্বপক্ষে আজ অব্দি দূর্বল কিংবা সবল কোনও প্রমাণই তুলে ধরতে পারেননি হিমু। যেখানে সব মিলিয়ে নেভারেস্ট সিরিজের ৬ কী ৭টি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।
যদিও , হিমু আমাদের ধারাবাহিকভাবে আশ্বাস এবং প্রলোভন দেখিয়েছেন যে, নেভারেস্টের শেষ পর্বে দারুন একটা প্রমাণ তিনি দেখাবেন। ব্লগের পাঠককুল এবং আমি নিজেও সেই দারুন প্রমাণের অপেক্ষায় ছিলাম।
কয়েক মাসের সেই দীর্ঘ এবং রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান শেষমেষ হয়েছে। অবশ্য প্রতীক্ষার অবসান হিমু করেননি, করেছেন সচলের আরেক প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার জলদস্যূ। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ৭.১৯ মিনিটে তিনি একটি পোস্ট দিয়েছেন। এই আপাত নিরীহ পোস্ট নেভারেস্ট সিরিজের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছে। হিমুর ঝোলায় লুকিয়ে থাকা তুরুপের তাসটি বেরিয়ে গেছে এবং আমরা সবিস্ময়ে দেখছি, যেটিকে এতোদিন যাবৎ তুরুপের তাস বলে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল , সেটি আসলে একটি নিরীহ জোকার কার্ড ছাড়া আর কিছুই না। ব্লগার জলদস্যুকে অভিনন্দন। ( হিমু নিজেও জলদস্যু,তবে সেটা হাটুপানির, এটা তার প্রোফাইলে লেথা আছে। )
এই সময়ে খুব স্বাভাবিক কারণে হিমুর মাথা খারাপের মতো হয়ে গেল। ওই পোস্টের ১নং মন্তব্যে তিনি স্বীকার করলেন, যাকে তিনি এতদিন রাজস্বাক্ষী ভেবে এসেছিলেন, তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন যে , মুসা এভারেস্টে উঠেছে। হতবুদ্ধি, হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হিমু - এই সময় পাঠকদের নজর অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেবার জন্য তড়িঘড়ি করে আরেকটি প্রায় নেভারেস্ট দিলেন। তাতেও কাজ হল না দেখে, পেচানোর শেষ চেষ্টা করতে গিয়ে আবারও ধরা খেলেন। ( দেখুন ২ নং মন্তব্য )
হিমুর লুঙ্গি খুলে যাওয়ার এই অন্তিম সময়ে আমি তার পাশে দাঁড়ালাম। তাকে পরামর্শ দিলাম, সত্যটাকে মেনে নিয়ে সেটাকে স্বীকার করে নিতে। এতে লজ্জার কিছু নেই। বরঞ্চ একজন ব্লগার হিসেবে কেবল নয়, একজন মানুষ হিসেবে তিনি অনেক উঁচুতে উঠে যাবেন।
আমার এক কালের সহপাঠী হিমু যথারীতি তার স্বভাবধর্ম অনুসারে আমার সাথে মুলামুলি শুরু করলেন। আমাকে ঘায়েল করার জন্য নানা কূটতর্কের অবতারণা করলেন ( দেখুস মন্তব্য নং ৮) । আমি ধৈর্য্য ধরে একে একে সব প্রশ্নের জবাব দিলাম ( মন্তব্য নং ৯, ১১) । সারা রাত ধরে তিনি জেরা করলেন, আমি তাকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে জবাব দেয়া চালিয়ে গেলাম। সকাল ৭ টার দিকে তিনি ‘তর্ক চলবে’ বলে কয়েক ঘন্টার ব্রেক চাইলেন।
ইতিহাসে এই প্রথম বারের মতো তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষ্যামা দিলেন। দেখুন ১২ নং মন্তব্য।
আমাকে জেরা করতে গিয়ে তিনি নিজেই হাঁপিয়ে গেলেন।
যাই হোক , মানবিকতার খাতিরে বেশ কয়েক ঘন্টার ব্রেকই দেয়া হল। দুপুরে আবার আমাদের কথপোকথন শুরু হলো। আমার একটি বক্তব্যের পর, তিনি তার কথা বললেন। আমি পাল্টা উত্তর দিলাম। এরপর তিনি যেই কান্ড করলেন, সেটার সাথে ‘ভয়শূন্য চিত্ত ’ আর ‘উচ্চ শিরের’ গল্পটি মেলে না। তিনি আমার কমেন্ট প্রকাশ বন্ধ করে দিলেন। আমার বক্তব্য বন্ধ করলেন, কিন্তু তার বক্তব্য এক তরফা চালিয়ে গেলেন এবং এখন পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমি এই দুঃখজনক এবং কলংকজনক ব্যাপারটিকে সত্যের জয় হিসেবেই দেখতে চাই। তিনি বুঝতে সমর্থ হয়েছিলেন যে, ক্রমাগত মিথ্যার ভীড়ে - বিনীত কয়েকটি সত্যের সামনে এসে তিনি কোনঠাসা হয়ে গেছেন, আমার মুখ বন্ধ করা ছাড়া , তার আর কোনও উপায় নেই।
আমার মুখবন্ধ করার পরও আমি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি , এই বিশ্বাসে যে, সচলের আরও অন্য মডারেটর আছেন। তারা নিশ্চয়ই ব্যাপারটি দেখবেন।
অপেক্ষার ২৪ঘন্টা পূর্ণ হলো, এখন আমি প্রতিবাদ না করলে ২০৪৩ সালে গিয়ে হয়তো আমাকে লিখতে হবে , তেত্রিশ বছর কাটলো ....কেউ কমেন্ট প্রকাশ করেনি।
আসলে স্বৈরাচার হওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্রের প্রধান হতে হয় না। ছোট্ট একটা পৌরসভার ক্ষুদে চেয়ারম্যান, দুই রুমের ক্ষুদ্র একটি অফিসের ছোট্ট মালিকও স্বৈরাচার হতে পারেন। স্বৈরাচারিতাও এক ধরণের আদর্শ যেটা মনে মনে অনেকেই লালন করেন। সচলের স্লোগানটি সুন্দর স্লোগানের আড়ালে রয়েছে ওই স্বৈরাচারী আদর্শটি। ফলে স্লোগান যাই থাকুক না কেন, ব্যাপারটি আসলে চিত্ত যেথা মডারেটেড, নিত্য যেথা শিরচ্ছেদ।
প্রিয় সচল মডারেটর ,শির কতটা উচু হলে আপনি ক্যাঁচ করে সেটিকে কেটে দ্যান,মাপটা আমাকে জানাবেন কী?
আমি জানি না, হিমুর মন্ত্রী সভার সদস্য,সচলের অপরাপর মডারেটররা কী করবেন? এরশাদের সহযোগী মওদুদ আহমেদ, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের ভূমিকা নেবেন , নাকি অন্য কোনও ব্যাপার হবে ?
যাই হোক।
যেসব পাঠক হঠাৎ করে আমাকে বাকরুদ্ধ দেখে থমকে গেছেন , ভাবছেন কী হলো , তাদের জন্য ব্যাপারটি শেয়ার করলাম।
তাদেরকে আরও জানাতে চাই, হিমুকে দেয়া সেইসব অপ্রকাশিত এবং অকথ্য বক্তব্যগুলি আমি একে একে এখানে পেশ করবো।
মহামান্য হিমু,
আপনারও যদি কোন প্রতিউত্তর থাকে, তাহলে আপনিও এসে এখানে যোগদান করতে পারেন। এমনকি সালিশ কিংবা জেরাও করতে পারেন। একরাত, একদিন আপনার ব্লগে হত্যে দিয়ে পড়ে ছিলাম, সুবিধা করতে না পেরে মুখ চেপে ধরেছেন, তবুও শেষমেষ আমি বাংলা ব্লগিংয়ের জয়গান গাইতে চাই। আপনি আমার ব্লগে আসুন, কোনও উত্তর জানা না থাকলে অক্ষমতা স্বীকার করে নেবো, আপনার মন্তব্য আটকে রাখবো না, আপনার মুখও চেপে ধরবো না। নিজ নিকে অথবা অন্য যেকোনও নিকে ( এক কিংবা একাধিক) অথবা আপনার ভাইব্রাদারদের নিকে প্রশ্ন করতে পারেন, প্রশ্নের উত্তরও দিতে পারেন। কোনও বাঁধা নেই। সকল স্বাধীনতা আপনাকে দেয়া হল।
বাংলা সিনেমায় দেখা রুবেলের একটি ডায়লগের কথা মনে পড়েছে। আপনি যদি এক বাপের সন্তান হন, তাহলে .... এটা বাংলা সিনেমা নয়, বাংলা ব্লগ। কাজেই ওভাবে আমি বলতে পারি না, চাইও না। ন্যুনতম সততা থাকলে, আসুন কথা বলি।
অনুগ্রহ করে ভিওআইপিতে ফোন দেবার চেষ্টা করবেন না। যা বলার, ব্লগেই সবার সামনে কথা হোক, সবাই দেখুন আপনার চেহারা, আমার চেহারা এবং মুসা ইব্রাহীমের চেহারা।
প্রিয় ব্লগার, গতকাল ছিল একটি কালো দিবস। মুখ বন্ধ করে দেবার দিন। আজ ১০.১০.১০ দিনটিকে আমি মুখ খোলার দিন হিসেবে পালন করতে চাই। বাংলা ব্লগ প্রমাণ করলো, এখানে কাউকে মুখবন্ধ করে রাখা যায় না। নিজের পাড়ায় আপনার শির কেউ কেটে ফেললেও, সেই শির আরও উন্নত হয়ে দাঁড়াতে পারে বৃহত্তর কোন পরিসরে , কোনও ছেলে ভোলানো স্লোগান ছাড়াই।
চিত্ত যেথা মডারেটেড : মুসা বিতর্ক অবসানের দিকে এবং বাংলা ব্লগের ১০.১০.১০ বিজয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৪১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...
বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।
১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।