somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই টিকিটে হাফ ছবি

০১ লা মার্চ, ২০১১ দুপুর ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইশতিয়াক মূলত তিন ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। জিন্সের দোকান, প্রকাশনা ও সিজনাল। সিজনাল ব্যবসার ব্যাপারটা একটু পরিষ্কার করি। শেয়ারবাজারের রমরমার সময় ওর টাকা খালেক স্পিনিং মিলে ঘুরপাক খাচ্ছিল। ওখানে ধস নামায় অন্যদের মতো ইশতিয়াক আহমেদ মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েনি। গোটা বিনিয়োগ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ঢেলে দিয়েছে, এটাই সিজনাল ব্যবসা। কাজেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দিন সকালে ও আমাকে একটা টিকিট দেখিয়ে বলল, আজকের অনুষ্ঠানে যাইবেন না? আমি তো অনেক কষ্টে একটা টিকিট পাইলাম।
আমি বললাম, পৃথিবীর তিনটি বিষয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
এক. ক্রিকেট, দুই. ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, তিন. ক্রিকেটের সমাপনী অনুষ্ঠান। ইশতিয়াক বোঝাল, আহা, এটা আগ্রহের বিষয় না। এটা হচ্ছে নিজেকে একটা ঐতিহাসিক দুর্লভ মুহূর্তের সঙ্গে যোগ করার বিষয়। আপনি যখন বুড়ো হবেন, তখন আপনার নাতি-নাতনিরা যদি জিগায়, যখন বিশ্বকাপ হয়েছিল তখন তুমি কত বড় ছিলা? তুমি স্টেডিয়ামে গেছিলা? কী জবাব দিবেন?
আমার মনে পড়ে যায়, আমিও আমার নানাকে শুধিয়েছিলাম, একাত্তরে...।
আমি চোখের সামনে পরিষ্কার দেখলাম, এক দঙ্গল নাতি-নাতনি আমার সামনে বসে আছে। তারা বলছে, নানা, গল্পটা বলো না...
আমি ইশতিয়াককে বললাম, ভাই, আমি অনুষ্ঠান দেখব। টিকিট জোগাড় করে দাও...
ভাই, সম্ভব না। আপনে চাইলে নারায়ণগঞ্জের যেকোনো পার্টির এমপি ইলেকশনের টিকিট ম্যানেজ কইরা দিতে পারমু। কিন্তু এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিট লাখ টাকা দিলেও পাইবেন না। ভাই, আমারে মাপ করেন।
আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল। নানা জায়গায় ফোন দিতে শুরু করলাম। সবার একই ভাষ্য, আগে কেন বললেন না?
একজন বলল, একটা এক্সট্রা টিকিট ছিল আমার হাতে। একটু আগেও যদি বলতেন দিতে পারতাম। বললাম, কতক্ষণ আগে বললে দিতে পারতা...
এই এক সেকেন্ড আগে...
এক সেকেন্ডে তোমার টিকিট নাই হইয়া গেল...
ভাই, দিনকাল এখন যা ফাস্ট হইছে...
(যে এই কথাটা বলছে, তার নাম প্রকাশ করলাম না। তাহলে লেখাটা ছাপা না-ও হতে পারে।)

অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে ইশতিয়াক খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে জানাল, ভাই, পাওয়া গেছে, জলদি দুই হাজার ট্যাকা দ্যান।
আমি অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে দুই হাজার টাকা অ্যাডভান্স উঠিয়ে ইশতিয়াকের হাতে দিলাম। ও বলল, আরও পাঁচ শ দ্যান।
কেন?
যে টিকেট নিয়া আসব, তার সিএনজি ভাড়া দিতে হবে।
সিএনজি ভাড়া পাঁচ শ টাকা?
ভাই, এটা একজনের ভাড়া না। উনি সিএনজি নিয়া যে জায়গায় আসবেন, আমারও সিএনজি নিয়া ওই জায়গায় যাইতে হবে।
এরপর আমি ক্ষীণ গলায় বললাম, দুইজনের সিএনজি নেবার দরকার কী? উনাকে এখানে আসতে বলো।
এই কথা বলায় ইশতিয়াক যে ভঙ্গিতে আমার দিকে তাকাল, আমি আর কথা না বাড়িয়ে আবার ছুটলাম। এবার পিয়নের কাছ থেকে টাকা ধার করলাম।
টাকা নিয়ে ইশতিয়াক ছুটে বেরিয়ে গেল। এবং কী আশ্চর্য, ইশতিয়াক বেরিয়ে যাওয়ার পর আমার মনে পড়ল ওই গল্পটার কথা। এক রাজার কাছে একজন এসে বলল, আমাকে যদি এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেন, তাহলে আমি আপনাকে এক মাস পর এমন একটা ঘোড়া দেব যেটা ডানা মেলে আকাশে উড়বে। রাজা তাকে টাকাটা দিয়ে দিলেন। পরের সপ্তাহে রাজা দেখলেন রস+আলোতে বর্ষসেরা বেকুব লোকদের একটা তালিকা ছাপা হয়েছে। সেখানে এক নম্বরে রাজার নাম।
গল্পটা মনে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ইশতিয়াককে ফোন দিলাম। মোবাইল ফোনে রিং হয়, কেউ ধরে না। এক মিনিট পর আবার ফোন দিলাম। মোবাইল ফোন বন্ধ।

২.
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার এক মিনিট আগে অন্য উপায়ে একটি টিকিট ম্যানেজ করে লাইনে দাঁড়ালাম। ততক্ষণে গেট বন্ধ। শুনলাম, পিএম নাকি এখন ঢুকবেন, সিকিউরিটির কারণে আপাতত গেট বন্ধ। আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। পেছনে দাঁড়ানো একজন আমার কাঁধে হাত রেখে পরিষ্কার ইংরেজিতে বললেন, ডোন্ট ওরি। যেহেতু টিকিট আছে, কাজেই একটু সময় লাগলেও ঢুকতে পারবে। দেখো তোমার টিকিটে সিট নাম্বার দেওয়া আছে। এর মানে কী? তোমার জন্য একটি আসন বরাদ্দ আছে। ওটা ফাঁকাই আছে তোমার অপেক্ষায়। কথাটা বলে তিনি নিজের টিকিট বের করে দেখিয়ে মুচকি হাসলেন।
বললাম, ভাই, আপনি কী করেন?
উনি বললেন, স্যরি, তোমার কথা বুঝতে পারছি না। তুমি কি ইংরেজিতে বলবে...
তখনই আমার ভুল ভাঙল। উনি
বিদেশি। জিজ্ঞেস করে জানলাম মালয়েশিয়ান। ক্রিকেট দেখার জন্য বাংলাদেশে এসেছেন। আশ্চর্য, মালয়েশিয়ানদের চেহারা বাঙালিদের মতো হয়? একটু পরে একই ভুল পুলিশ ভাইয়েরা করলেন। ভিড় বেড়ে যাওয়ায় তারা মৃদু লাঠিচার্জ করে গেট থেকে আমাদের হটিয়ে দিলেন। আমি অভিজ্ঞ, এ জন্য দৌড়ে রক্ষা পেলাম। ওদিকে এই মালয়েশিয়ান ব্যাটা তো বাংলাদেশে নতুন এসেছে আর পুলিশ ভাইয়েরাও তার চেহারা দেখে বোঝেননি উনি বিদেশি। কাজেই সামান্য একটা ভুল বোঝাবুঝি ঘটে গেল। মালয় ব্যাটা রাগে কাঁপতে কাঁপতে টিকিট (যেখানে সিট নাম্বার দেওয়া আছে) নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সোজা দক্ষিণ দিকে। ওদিকে ওনার হোটেল, আবার আরেকটু গেলে এয়ারপোর্টও।
আমি সেই অন্তিম সময়ে ইশতিয়াককে আবারও ফোন দিলাম। অবাক কাণ্ড। এবার ও ফোনটা ধরল। বললাম, টিকিট কই?
আমার কাছে।
তুমি কই?
স্টেডিয়ামের ভেতর।
টিকিট দাও...
ভেতরে আইসা নিয়া যান...
টিকিট ছাড়া আমি ভেতরে আসব কীভাবে?
ভাই, আমি কী করমু। দাঁড়ান দেখি কী করা যায়।
ওর মোবাইল ফোন আবারও দীর্ঘক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।

৩.
অবশেষে সন্ধ্যা সাতটায় ঢুকতে পারলাম। ততক্ষণে অনুষ্ঠান অর্ধেক শেষ। মানুষ এক টিকিটে দুই ছবি দেখে। আমি দুই টিকিটের দাবিদার হয়ে অর্ধেক অনুষ্ঠান দেখলাম। তবুও চোখ জুড়িয়ে গেল। অসাধারণ অনুষ্ঠান, ধন্যবাদ বাংলাদেশ।
১৩টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×