somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরীবের কথা : দারিদ্রের লক্ষণ এবং প্রকরণ - প্রস্তাবনা

১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি জন্মসূত্রে গরীব।
দরিদ্র না বলে ইচ্ছে করেই গরীব শব্দটা ব্যবহার করলাম । কারণ দরিদ্রের চেয়ে গরীব শব্দটা একটু বেশি মর্মান্তিক। গরীব শব্দটার মধ্যে একটা আলাদা মায়াভাব আছে। অন্যদিকে দরিদ্র শব্দটা বেশ অভিজাত, রাশভারি, এনজিও এবং সুশীল সমাজের খুবই প্রিয় এই শব্দ।
আমি গরীব হয়ে জন্মেছি-এর পেছনে আমার কোনও অবদান নেই। তবে এখনো যে আমি গরীবই রয়ে গেছি- এটাকে বোধহয় আমার ব্যর্থতা বলা যেতে পারে।

কবি নজরুল গরীব ছিলেন। তার একটি বহুল প্রচারিত কবিতার লাইন - হে দারিদ্র , তুমি মোরে করেছো মহান। এই লাইনটা বাঙালি মধ্যবিত্তের ভীষণ প্রিয়। মানুষের ধর্মই হচ্ছে, সে সব কিছুতে একটা সাত্ত্বনা খোঁজে। কবি নজরুলের এই লাইন গরীব মানুষকে প্রবোধ দেয়ার জন্য যথেষ্ট কার্যকরী। যদিও, দারিদ্র কখনো মানুষকে মহান করেনা, দারিদ্র মানুষকে প্রতিনিয়ত অপমান করে, লাঞ্জিত করে। দারিদ্রের সবচেয়ে খারাপ দিক হচ্ছে, এটি মানুষকে খুব ছোটো করে দ্যায়।

এদিকে আবার আমি সাইজেও খুব ছোট। সাথে আছে জন্মসূত্রে পাওয়া এবং কর্মফলে ভোগ করা দারিদ্র। ফলে মানুষের সামনে দাড়ালে নিজেকে আরও ছোট মনে হয়। সেই ছোটো ভাবটা কাটানোর জন্য মাঝে মাঝে আমি আয়নার সামনে দাড়াই। নিজেকে প্রতিদিন মাপি। মনে হয়, একদিন আমি অনেক বড়ো হবো, উচ্চতায় ছাপিয়ে যাবো সবাইকে। আমার আর বড়ো হওয়া হয় না। আমার কাছের মানুষরা দেখে আমি চুইংগামের মতো বড়ো হবার চেষ্টা করছি, কিন্তু হতে পারছি না। বাবা আমার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন আমরা ....আমাদের দেখা হয় না কিছুই। গরীব মানুষের এই একটা বৈশিষ্ট্য, তারা প্রতিনিয়ত বড়লোক হবার স্বপ্ন দেখে। এই স্বপ্নই তাদের বাঁচিয়ে রাখে।


গরীবের আরেকটি বৈশিষ্ট হচ্ছে, হ্যাংলামি। রাস্তায় ভালো গাড়ি দেখলে, কারো ভালো বাড়ি দেখলে, তাদের চোখ টাটায়। তাদের বুকের ভেতরে খুব নীরবে একটা ঈর্ষার আগুন জ্বলে। সেই আগুনটা কেবল নিজেকেই পোড়ায়। বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেনী যে খুব পরশ্রীকাতর হয়, এর মূলে রয়েছে দারিদ্র, আর কিছু না। ধনের দিক থেকে দরিদ্র মানুষরা ক্রমাগত মনের দিক থেকেও দরিদ্র হতে থাকে।

গরীব মানুষরা খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এজন্য তারা খুব ক্ষুধাকাতর হয়। একজন বড়লোক যেখানে আধা প্লেট ভাত সবজি দিয়ে অবহেলায় খায়, সেখানে একজন গরীব মানুষ পাঁচ প্লেট ভাত খেয়েও পেট ভরে না। কারণ, ওই নিরাপত্তার অভাব। তাদের মাথায় কাজ করে , আজ তো খাচ্ছি, কাল কী খাবো ? ভবিষ্যত নিয়ে এই সংশয় তাদের ক্ষুধাকে বাড়িয়ে দেয়। একটি ধনী পরিবার এবং সম সংখ্যক সদস্য বিশিষ্ট দরিদ্র পরিবারের মাসিক চালের পরিমাণ ইচ্ছে করলেন যে কেউ মেপে দেখতে পারেন। গরীবদের চাল, আটা - ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খরচ হয় (যদি সামথ্যে থাকে)।

দরিদ্র মানুষের আরেকটি মজার দিক হচ্ছে- তারা বেশ ভীতু এবং অস্থির স্বভাবের হয়। লিবিয়ায় যুদ্ধ লাগলে, শেয়ারের দাম হঠাত কমলে বা বাড়লে, ক্রিকেটে বাংলাদেশ খারাপ কর্লে, তারা বেশ উত্তেজনা বোধ করে। এর কারণ কী? গরীবদের হাতে প্রচুর সময় থাকে, এজন্য তারা প্রয়োজনীয় -অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে। ধনীরা খুব বেশি ভাবেনা, তারা কাজ করে ফেলে। কাজ করার জন্য যে মূলধন এবং সুযোগসুবিধা দরকার, সেটি তাদের আছে। আমি গরীব, হাতে অফুরন্ত সময় তাই এই বিষয়টা নিয়ে ভাবছি । ভেবে কিছু পেলে আপনাদের জানাবো। এখন যাই। সকালে অফিস আছে। চাকরি গেলে আবার খবর আছে ....তার আগে বানার্ড শ'র একটা লাইন বলি, The greatest of evils and the worst of crimes is poverty.

যাই কই ?

( চলতে পারে। চললে দারিদ্র নিয়ে সত্যিকারের কিছু গল্প শোনাবো। এই নোটের মতো থিওরি কপচাবো না। এটাকে একটি আগামী নোটের preface বলা যেতে পারে।)

দ্বিতীয় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ১:৫৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×