somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশুরা খুবই দুষ্ট। খুব।

১৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বেশ কয়েক মাস আগের কথা।

একটা টিভি অনুষ্ঠানে আমাকে 'অতিথি' হিসেবে দাওয়াত দেয়া হলো। আমি তো খুশিতে আত্নহারা। জীবনে এই প্রথম কেউ আমাকে টিভিতে ডাকলো। আমি একটা টক শো'র অতিথি। বিরাট মান ইজ্জতের বিষয়। টক শোর বিষয় : ভূত এবং এর ভবিষ্যত। টক শো-তে ভূত নিয়ে গবেষণা করেন এমন লোকজন থাকবেন, ভূত সাহিত্যের চর্চা করবেন -এমন খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিকও একজন থাকবেন। অবশ্য সেই টক শো-তে আমার রোল কি হবে- আমি ঠিক নিশ্চিত না।
তবুও আমি মহাখুশি হয়ে টক শো'র জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আমাকে অতিথি করার রহস্য খোলাসা হলো। আমি রবি হিসেবে নয়, টক শো-তে একজন ভূত হিসেবে উপস্থিত হবো।
এই ধরণের বেইজ্জতি অফারে আমি বেঁকে বসলাম। কিন্তু টিভির প্রোডিউসার আমাকে হাতে পায়ে ধরে বসলেন, বস, আপনি না করবেন না।, আমাদের আর কোনো অলটারনেটিভ নেই। হাতে সময় আছে মাত্র এক ঘন্টা। এই ঘন্টায় আমি একটা ভূত কোথায় পাবো, আপনিই বলেন?

প্রোডিউসারের কাতর অনুনয়ে আমি গলে গেলাম। মুখে কালিঝুলি মেখে টিভি ক্যামেরার সামনে বসে গেলাম।

পরদিন আমার মেয়ে স্কুলে গেল। তার এক বান্ধবী তাকে বলল, তোর বাবার চেহারা এমনিতেই ভূতের মতো। নতুন করে কালিটালি না মাখলেও চলতো।
আমার মেয়েও তার বান্ধবীর সাথে একমত।
বাসায় ফিরে দুই বোনের সেকি হাসাহাসি।

আমার দুই কণ্যা এবং তাদের সকল বান্ধবীকুলের উপর আমার বিশ্বাস জন্মালো, এরা দুধর্ষ, দুষ্টু এবং মানহানিকর।

গত শুক্রবার সোফায় শুয়ে আনমনে টিভি দেখছি। পেছন থেকে হঠাৎ একটি তরুণী কন্ঠ বলে উঠলো, এই তোমার চোখ এতো কালো ক্যানো?
তাকিয়ে দেখি, পিচ্ছি একটি মেয়ে। আমার বড়ো মেয়ের চেয়েও ছোট।
সে আবারও বলল, অ্যাই, তোমার চোখ কালো ক্যানো? কি হছৈ?

একটা পুঁচকি মেয়ে। আমি তার বাবার বয়সী। প্রথমে সালাম দেবে, তারপর আংকেল বলবে, তা না, সরাসরি তুমি বলে সম্বোধন। আমি এই শিশুর বেয়াদবিতে স্মম্ভিত হয়ে গেলুম।
কর্কষ গলায় বললাম, কে তুমি? তারপর গলায় চড়িয়ে বললাম, এই মেয়ে কে?
আমার কণ্যা এসে বলল, গাধার মতো চিল্লাচ্ছো ক্যানো? ও আমার ফ্রেন্ড।
সেই মেয়েটি বলল, তোমার বাবা পাগল নাকি?
আমার বেয়াদব কণ্যা অবলীলায় উত্তর দিলো, একটু।
আমি পুরোপুরি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লাম।

মুসাপুত্র রাইদের জন্মদিনে গেছি। ভাবলাম এভারেস্টজয়ী এই শিশুপুত্রটিকে এই বিশেষ শুভদিনে কিছু উদ্দীপনামূলক কথা বলা দরকার।
বললাম, রাইদ, কেমন আছো? মনে রাখবে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কাজেই বেশি বেশি খাবে, খেলে শক্তি বাড়বে। বাবার মতো আরও উচুঁ পাহাড়ে উঠতে পারবে।
বাচ্চাটি খুব মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুনছে। আমার মনে হলো, বেয়াদব এবং দুষ্টমতি শিশুদের ভীড়ে এই শিশুটিই ব্যতিক্রম। কাজেই আমি আমার বক্তৃতার তোড় বাড়িয়ে দিলাম। বললাম, আমাদের সবাইকে শক্তিশালী হতে হবে। এই জাতির দরকার বলবান মানুষ, বলবান শিশু। দেখি তো তোমার শক্তি কেমন?

মুসাপুত্র কোনো প্রস্ততি এবং পূর্বাভাস ছাড়াই কুংফু স্টাইলে একটা পাঞ্চ মারলো। আমার শরীরের খুব বেকায়দার জায়গায় সেটি লাগলো। ব্যাথায় গোটা জগত কালো হয়ে এলো। চিৎকার দিতে গিয়েও শেষ মুহুর্তে সামলে নিলাম। চিৎকার দিলে, মুসা ছুটে আসবে। আমার অসুখবিসুখের ব্যাপারে মুসা খুব সিরিয়াস। কাজেই সে ব্যস্ত হয়ে ক্ষতস্থানে বরফটরফ ঘষার চেষ্টা করবে। সেটা হবে আরও বেইজ্জতিকর বিষয়।
কাজেই হাসি হাসি মুখে এই অকথ্য যন্ত্রণা সহ্য করা ছাড়া অন্যকোনো উপায় রইলো না।

সেই থেকে বাচ্চাদের কাছ থেকে আমি শতহস্ত দূরে থাকি।

আরেক বন্ধুর বাসায় গেছি। তার শিশুপুত্র আরশান দারুন শান্তশিষ্ট, একেবারে দেবশিশু। আনমনে ''ডোনালডাক'' দেখছে। মনে হলো এই শিশুটি অন্যদের মতো নয়, কাজেই একটু ভাব জমানো যেতেই পারে। ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া বাচ্চা কাজেই ইংরেজি লাইনেই এগুনো বোধহয় ঠিক হবে। মনে মনে ইংরেজি একটা বাক্য গুছিয়ে নিয়ে বললাম, হাই আরশান, হাউ আর ইউ?
কোনো উত্তর নেই।
বোধহয় আমার ইংরেজি বোঝে নাই।
একটু ইংলিশ একসেন্টে বললাম, হাই, আড়সান, হাউ আর ইউ?
এবারও নিরুত্তর।
এবার পুরো ব্রিটিশ স্টাইলে বলাম, হেই, আর্সা, হাউ আর য়ু?

আরশান মুখ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর খুব শান্তস্বরে বলল, ইউ শাট আপ, ডোন্ট ড্রাইভ মি ক্রেইজি।

শিশুরা খুবই দুষ্ট। খুব।
২৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×