somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যার হোতা কারা ছিল???

৩০ শে জুন, ২০১০ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০লক্ষ শহীদের তাঁজা প্রাণ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালি জাতি। ৭১’ সালের ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ।
পৃথিবীর বুকে জন্ম নিলো লাল-সবুজের পতাকা আবৃত একটি দেশ। যার নাম বাংলাদেশ। আর এই দেশের জাতীয় সংগীত হলো_আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা চালানো হয়।
২৫ মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শুরু করা অপারেশন সার্চলাইট নামক ধ্বংসযজ্ঞ বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত চলে।
বিজয়ের মাত্র ২দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বুঝতে পেরেছিল, তাদের পরাজয় অনিবার্য।
ওরা আরো মনে করেছিল যে, বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা বেঁচে থাকলে এ মাটিতে ওরা বসবাস করতে পারবে না। তাই পরিকল্পিতভাবে জাতিকে মেধাহীন করতে দেশের এসব বরেণ্য হাজার হাজার শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের বাসা ও কর্মস্থল থেকে রাতের অন্ধকারে পৈশাচিক কায়দায় চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হত্যা করে।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের হত্যাকাণ্ড ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক জঘন্য বর্বর ঘটনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তিকামী মানুষকে স্তম্ভিত করেছিল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকম পরিসংখ্যান প্রচলিত রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এনাসাইক্লোপেডিয়া ও বইতে এই সংখ্যাটিকে ২,০০,০০০ থেকে শুরু করে ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাটিকে ৩০,০০,০০০ হিসেবে অনুমান করা হয়। যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে। যারা সে সময় দেশত্যাগ না করলে হয়তো গণহত্যার শিকার হত।
স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে রাজাকার আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী পাকিস্তান আর্মির নির্দেশে বাংলাদেশের প্রায় ১০০০ জন বুদ্ধিজীবীকে - যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী - ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে।
পাকিস্তানের পদলেহী বাংলাদেশী বিশ্বাসঘাতক রাজাকারের দল ডিসেম্বরের শুরুতেই যুদ্ধের পরিণতি বুঝতে পেরে স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির পথ বন্ধ করে দেয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে বহুসংখ্যক বাঙ্গালি নারী সম্ভ্রম হারায়। যার সঠিক সংখ্যা আজো জানা যায়নি। তথ্য প্রমাণ অনুসারে ধারণা করা হয় প্রায় ২,০০,০০০ নারী মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষিত হয় এবং তাদের গর্ভে অনেক যুদ্ধশিশু জন্ম নেয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে পাকিস্তান আর্মি বহু সংখ্যক মেয়েকে ধরে নিয়ে যায়। যাদের অধিকাংশই ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ পরিবারের মেয়ে। কিন্তু স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ছাড়াই আমরা অনেক কষ্ট নিয়ে ৩৯ তম বিজয় দিবস পালন করছিলাম।



মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে_সিপিবি

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মনজুরুল আহসান খান ও সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাম্প্রদায়িকতা-সাম্রাজ্যবাদ-লুটপাটতন্ত্র প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। আজ এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার সঠিক দিনক্ষণ জানার জন্য অপেক্ষা করছে।
দেশবাসীর এক্যবদ্ধ দাবি ও মহাজোট সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী এই ঘাতকদের বিচারের জন্য আর সময় ক্ষেপণ করা উচিৎ হবে না বলে জানান।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৩০লক্ষ শহীদের তাঁজা প্রাণ ও দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল বাঙালি জাতি। কিন্তু স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ’৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। সম্ভব হয়নি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সাম্প্রদায়িকতা-সাম্রাজ্যবাদ-লুটপাটতন্ত্র প্রতিরোধ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবেনা বলে জানান।



যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই দেশকে জঙ্গিবাদ মুক্ত করতে হবে_রাশেদ খান মেনন

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমেই দেশকে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদের বিপদমুক্ত করতে হবে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরাই দেশে উগ্র ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিস্তার করেছে। আজ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড খান মেনন একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক স্বৈরতন্ত্র এবং বিএনপি-জামাত জোট সংবিধানকে কাটাছেড়া করে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করেছিল।
তারাই দেশকে নব্য পাকিস্তানে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশকে একটি ‘মডারেট মুসলিম ডেমোক্রেটিক’ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করিয়েছিল।
তিনি বলেন, এরাই পঁচাত্তর-পরবর্তী খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে, পুনর্বাসন করেছে।
আজ আবার আমরা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় ফিরতে শুরু করেছি।
তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী চক্রের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দেশজুড়ে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতা চলছে। মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক চক্রান্তের সমূল বিনাশ করতে হলে অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবিতে জনগণকে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

http://www.biplobiderkotha.com
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১০ রাত ১২:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×