somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - এইখানে ভালবাসা অপেক্ষা করে

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-তুমি ভালোবাসতে জানো না
--তবে শিখিয়ে দাও
-ভালোবাসা তো বর্ণমালা না যে শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়া যায় !
-তাহলে ?
-তবে আর কি ? আজ থেকে তোমার লাইন আমার লাইন আলাদা


শিপলু চমকে ঘুম থেকে উঠলো । সারা গা বেয়ে ঘাম । গেঞ্জি ভিজে গায়ের সাথে লেপটে আছে । ফ্যান হা করে শিপলুর দিকে তাকিয়ে আছে । কারেন্ট নেই ।

রাখীকে নিয়ে শিপলু এই বাজে স্বপ্ন কেন দেখল ? তাদের ভিতরে তো কোন সমস্যা নেই ! গতকাল বিকালেও তারা একসাথে বিপিন পার্কে বহুক্ষণ বসে ছিল । যতক্ষন রাখী তার পাশে ছিল তার মাথা শিপলুর ডান কাঁধে দিয়ে রেখেছিল । রাতে রাখীর সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে । রাখী তাকে চমৎকার দুটো নজরুল সংগীতও শুনিয়েছে । ‘ মোর ঘুম ঘরে এলে মনোহর ‘ আর ‘ খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু ‘
চমৎকার পরিবেশে দুজনে পরস্পরকে মিহি স্বরে গুড নাইট হানি বলে ঘুমোতে গেছে । এর মাঝে হঠাৎ ‘ আজ থেকে তোমার লাইন আমার লাইন আলাদা ‘ ধরনের স্বপ্নের হেতু কি !
তবে তাদের ভিতরে আসলেই কোন সমান্তরাল সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে । অথচ তারা কেউ টের পাচ্ছে না ? কিন্তু এমনটাই বা কেন হবে ?

মাথাটা দপদপ করছে । শিপলু ঘড়ির দিকে তাকাল । ৩টা বেজে ৪০ মিনিট । রাত প্রায় শেষের দিকে ।

এখন আর ঘুম হবে না । শিপলুর তেষ্টা পাচ্ছে । জিবহা যেন শুকিয়ে কাঠ । আগুনের তপ্ততা নিয়ে সে পানি চাচ্ছে । এক সমুদ্র পানি ।
ডেস্কটপের পাশে এক বোতল পানি রাখা আছে । শিপলুর উঠতে ইচ্ছে হচ্ছে না । তার ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে তেষ্টা পেলে বোতলটার মুখ যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার মুখে সাথে মিলে যেত । বেশ হতো ।
তেষ্টা বাড়ছে । শিপলু বিছানা ছেড়ে উঠলো । পানির বোতল খুলে ঢক ঢক করে আধ বোতল পানি এক চুমুকে শেষ করে দিল ।

রাখীকে কি এখন ফোন করা ঠিক হবে ? নিশ্চয়ই ঘুমোচ্ছে । রাখী আদর্শ মেয়ে ।
early to bed early to rise makes a man healthy wealthy and wise এই নীতি রাখীর জন্য আবিষ্কৃত !
রাখী ঘড়ি ধরে ঠিক ৯ টায় রাতের খাবার খায় । তারপর শিপলুর সাথে এক কখনো দেড় ঘণ্টা ফোনে কথা বলা । ঘড়িতে ১১.৩০ বাজা মানেই - টা টা বাই বাই কাল যেন দেখা পাই । রাখী ঘুমে । উঠবে খুব ভোরে । ৫ টা ।

শিপলু টর্চ নিয়ে রান্নাঘরে গেল । এই মুহূর্তে এক মগ কফি গলায় নামালে মন্দ হয় না । মাথার দপদপানিটা সেরে যেতো ।
শিপলু যথাসম্ভব আস্তে ধীরে কফি বানাচ্ছে । মা’র ঘুম পাতলা । অল্প খুটখাট শব্দ শুনলেও তিনি জেগে উঠে বলেন
-- কি হয়েছে শিপলু ? ঘুম হচ্ছে না বাবা ? শরীর খারাপ লাগছে ? দেখি তো কপালটা !
আর যদি দেখে শিপলু রান্নাঘরে ব্যাস আঁচল কোমরে গুঁজে বলবেন
--ওমা , তুই রান্নাঘরে কি করছিস ! যা রুমে যা ... যা লাগবে আমি আমি নিয়ে আসচ্ছি । তা লাগবেটা কি ?
তারপর চিন্তিত মুখে প্রশ্ন করবেন -- আচ্ছা এতো রাতে কফি খেতে চাচ্ছিস , সমস্যা হবে না তো !
শিপলু’র মা এমনটাই করেন । সবসময় ঠিক এমনটাই ।

ছেলেকে নিয়ে প্রশ্ন করতে তিনি ক্লান্ত হোন না । মজার বিষয় হল প্রশ্নের বিনিময়ে তার যথাযথ উত্তর চাই না । চাই একের পর এক প্রশ্ন । কারণ উত্তর তিনি নিজেই বসিয়ে নিতে জানেন ।

--তোর তাহলে জ্বর ? আমাকে জানাবি না ? আমি কি মরে গেছি ? তোর বাবা স্বার্থপরের মতো নিজের বুঝ বুঝে আগেভাগে কেটে পড়েছেন । তাই বলে কি আমিও এমনটা করবো ? কক্ষনো না ।
মা এই সময় কাঁদবেন । কাঁদতে কাঁদতে এক হাতে কফির মগ অন্যহাতে আধবালতি পানি টেনে টেনে ছেলের রুমে নিয়ে আসবেন ।

--নে , এইবার বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড় । আমি মাথায় পানি ঢেলে দিচ্ছি । তার আগে তুলো দুটো কানে গুঁজে নে তো

এতো কাহিনী অথচ কারণ বেশি কিছু নয় । রাতে একটু কফি খেতে চাওয়া । এতটুকুই । তার জন্য এতো হুলুস্থুল ।
কোন মানে হয় না । সত্যি ই এসবের কোন মানেই হয় না । মা ‘ টা দিন দিন অসহ্য হয়ে যাচ্ছে । বাবা মারা যাবার পর থেকেই মা যেন আরও খুব বেশি পরিমানে পসেসিভ হয়ে গেছেন । উঠতে বসতে তিনি শিপলুকে চোখের সামনে দেখতে চান । নিজের মতো একমাত্র ছেলের বিপদ ইমাজিনেশনে সাজিয়ে তিনি অনর্থক প্রতিকারে নেমে যান । উনিশ বছরের শিপলুর যে সম্পূর্ণ আলাদা এক জগত আছে , তার সেই জগতে রাখী নামের ভারী চশমাধারী নিয়ম সচেতন এক মেয়ে আছে , সেটা মা কি করে বুঝবে ?

শিপলু কফির মগ হাতে রুমে আসলো আর তখনি কারেন্ট চলে আসলো । কফিতে চিনি বেশি হয়ে গেছে । টর্চের আলোতে ঠিক মতো আন্দাজ করা যায় নি । খেতে বিশ্রি লাগছে । আবার রান্নাঘরে গিয়ে নতুন আরেক মগ বানাতেও ইচ্ছা করছে না ।

--কি’রে কফি ভালো হয় নি ! খাচ্ছিস না যে
মা শিপলু’র পিছনে দাড়িয়ে । কখন আসলো শিপলু বলতে পারবে না । দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিপলু বলল
-- ‘ তুমি কি রাতে এক ফোঁটাও ঘুমাও না ? আমি তো তেমন শব্দ করলাম না । তাও জেগে উঠলে ? ‘
মা কিছু না বলে বিছানার কোনায় বসে মুচকি হাসলো ।

মা ‘কে ক্লান্ত দেখাচ্ছে কি ! শিপলু ভেবে রেখেছিল আর কিছুক্ষন পর সে বাইরে বের হবে । যাবে রাখীদের বাসায় । রাখী ভোরে ছাঁদে কিছুক্ষন দাড়ায় । শিপলু’র ইচ্ছা ছিল সে রাখীদের ছাদের বিপরীত পাশের রাস্তায় দাড়িয়ে থাকবে । রাখী ছাঁদে উঠে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে শিপলুকে দেখে অবাক হয়ে যাবে । নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে । মেয়েরা সময়ে অসময়ে রোমান্টিসিজম দেখতে পছন্দ করে । মেয়ের বয়ফ্রেন্ড ভোরে তার বাসার সামনের রাস্তায় দাড়িয়ে আছে । কারণ রাতে ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে বাজে স্বপ্ন দেখেছে । তাই ভোরে মেয়েটির কাছে ছুটে এসেছে । বিষয়টা যথেষ্ট রোমান্টিসিজমে টুইটুম্বর । এখন রাখীকে একটা ভরভুর ধাক্কা দেয়া দরকার । শিপলু’র মন বলছে তাদের সম্পর্কে নতুন করে রোমান্টিসিজমের ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন । না হলে আজ শিপলু এতো ভয়ংকর বাজে স্বপ্ন দেখত না ।
--“ আজ থেকে তোমার লাইন আমার লাইন আলাদা “

স্বপ্ন তো অবচেতন মনের ই বহিঃপ্রকাশ । তাহলে কি তাদের সম্পর্কে ‘ একটা সূক্ষ্ম আলাদা আলাদা গন্ধ এসে যাচ্ছে । না । কোন মতেই আসতে দেয়া যাবে না । শিপলুর আরও বেশি কেয়ারিং হতে হবে রাখীর ব্যাপারে । রাখী মুখ ফুটে কিছু বলে না । কিন্তু সে হয়তো শিপলুর কাছে আরও বেশী কিছু প্রত্যাশা করে । শিপলু রাখীর প্রত্যাশা পূরণ করবে । সেটা যে ভাবেই হোক না কেন ।

--এতো , কি ভাবছিস রে
শিপলু দেখলো মা গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে । রাখীর দেয়া অফ ওয়াইট গেঞ্জিটা পড়তে গিয়ে সে এই কথাগুলো ভাবছিল । গেঞ্জি গায়ে দিতে আর মনে ছিল । এতক্ষন খালি গায়ে গেঞ্জি হাতে শিপলু বসে !
মা নিশ্চয়ই ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন । শিপলু’র লজ্জা লাগছে । মা টের পেয়ে যাননি তো ?

--মা , আমি একটু বের হবো । আজ ভোরে হোসেনআলী মাঠে প্র্যাকটিস আছে । সামনেই ফুটবল টুর্নামেন্ট । আজ পুলাপান আসবে প্র্যাকটিস করতে ।

--আমি একটু নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি । খেয়ে তারপর যা । রাতে জানিয়ে রাখবি না ? রুটি বেলে রাখতে পারতাম ।
--না মা । এখন কিছু খাবো না । আমি তাড়াতাড়ি চলে আসব । আজ প্রথম দিন তো , বেশীক্ষণ প্র্যাকটিস হবে না তুমি ভিতর থেকে দরজা না আটকিয়ে শুয়ে পড়ো । আমি বাইরে থেকে লক করে যাচ্ছি । শিপলু কথা বলতে বলতে টেবিলের উপর থেকে সাইকেলের চাবি পকেটে ভরে নিল ।

বের হবার আগে শিপলু’র হাতে মা একটা আপেল ধরিয়ে দিল ।
--খেতে খেতে যা ।
তুমি শুয়ে পড়ো । আমি যাচ্ছি ।


শিপলু বাইরে থেকে দরজা লক করে চলে যাচ্ছে । রেহনুমা আক্তার ছেলের পায়ের শব্দ পাচ্ছেন । সিঁড়ি ভেঙে ছেলের পায়ের শব্দ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে । রেহনুমা আক্তার দরজার সাথে কান ঠেস দিয়ে রেখেছেন । শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি শিপলুর পায়ের শব্দ শুনতে চান ।

ভোর হচ্ছে । ক্রমশ আলো ফুটছে । একটা ঠাণ্ডা বাতাস চারিদিকে । আহা কি মিষ্টি বাতাস । রেহনুমা আক্তার জানালার ধরে দাড়িয়ে আছেন । ঐ তো শিপলুকে দেখা যাচ্ছে । লাল সাইকেলে প্যাডেল মেরে হামিদউদ্দিন সড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছে ।

জানালার পাশে চেয়ার টেনে রেহনুমা আক্তার বসলেন । এখন তিনি অপেক্ষা করবেন । যতক্ষন না ছেলেকে আবার দেখতে পারছেন তিনি অপেক্ষা করবেন । এতো ভোরে ছেলেটা কিছু মুখে না দিয়েই বের হয়ে গেল । চিন্তা হয় তো !
ছেলের জন্য রেহনুমার আক্তারের বড় চিন্তা হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×