আজকাল টাকার গন্ধ ছাড়া বাগানের সদ্য ফুটা
লাল গোলাপ থেকেও কেউ সুগন্ধি নেয়না !
টাকা না থাকলে কবির সুন্দর বাণীও অসুন্দর মনে হয়।
টাকার চিন্তায় মস্তিস্ক আপনার সুন্দর ভাবনাগুলিকেও ইগনর করে।
টাকা দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে অসততা আর
নিতিহীনতার সাথে সততা আর নিতিকথা বিনিময় করতে হয়।
টাকা মানুষের সন্তানের মত,কেননা সন্তানকে মানুষ করতে যতটুকু সময় ব্যয় করে,
তার চেয়েও বেশী টাকার জন্য ব্যয় করে ।
এক কথায়, টাকা হচ্ছে জীবনের একটা পার্ট ।
মানুষের জীবনের প্রতিটি গুরত্বপূর্ণ সময় থেকে দৈনন্দিন
প্রতিটি কাজের সাথে টাকা জড়িত।
আর এই সত্যটা মানুষ মুখে না বললেও,মনে মনে সে ঠিকই বুঝে ।
অনেকেই বলে জীবনে টাকায় সব না,টাকায় সুখ এনে দেয় না।
কিন্তু সেই মানুষেই এক সময় বলে বেড়ায় " টাকা ছাড়া জীবন অচল "
টাকা মানুষের জীবনকে রঙ্গিন করে,টাকা মানুষের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেয়,
টাকা মানুষের সুখটাকে দীর্ঘ সময়ের সার্টিফিকেট দেয় ।
টাকা একটা জীবনের সুন্দর ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে দেয় ।
আর ইচ্ছা,পরিশ্রম,চেষ্টা এবং বুদ্ধির পথ নিজের মতই তৈরি হয়ে যাবে ।
কারন টাকা নামক শব্দটা এই প্রতিটি শব্দের শক্তি তৈরির উৎস ।
বিঃদ্রঃ- যদি ধৈর্য সহকারে টাকা আমরা সৎ ও সুন্দর ভাবে ব্যবহার করতে জানি।
সেক্সপীয়র দূরদেশ ইংল্যান্ডে জন্মেছিলেন বলে
কিনা জানি না,উনার বাণী আমার জীবনে আসার আগেই বাংলা ব্যকরণ চলে এসেছিল।
এই ব্যকরণ বই প্রথম আমার মত অনেকের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়-
অর্থই সব অনর্থের মূল!
এরপর অর্থ কেন এবং কীভাবে অনর্থ তৈরি করছে সেই ভাব সম্প্রসারণ করতে করতে অনেক দিন
গেছে। সেক্সপীয়র তখনও আসেন নি তবে ভাব সম্প্রসারণের পরিবর্তে চলে এসেছিল আর একটি
ভাব সংকোচন।
এই ভাব সংকোচন ছিল অনেকটা
এমন যে যাই বলুক টাকা ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না!
ঘরে টাকা বাইরে টাকা,টাকাহীন বসবাস একেবারেই অসম্ভব।
জন্মানোর সময় টাকা (হাসপাতাল খরচ)বেচে উঠতে টাকা,পড়ালেখা
চালিয়ে নিতে টাকা অর্থাৎ বেচে থাকার জন্য জীবনভর টাকা
এমন কি মৃত্যুর পরেও(মৃতের সৎকার) টাকার প্রয়োজন!
ছোটকাল থেকেই টাকা নিয়ে পরস্পর বিরোধী এমন ভাব সম্প্রসারণ ও সংকোচন আমাদের শিখতে
হয়েছে।
তবে সেক্সপীয়র ভাবটাকে নিয়ে টানাটানি করেন নি, একটা সেটেলডাউনের দিকে নিতে চেষ্টা করেছেন।
যদিও তার এই ভাব তিন চারশ বছর আগের।
সেক্সপীয়রের অমর ডায়ালগটা
-মানি ইজ দ্য ভিজিবল গড! হায় এক ঈশ্বরকেই শুধু
আমরা দেখতে পাই। তার নাম টাকা!
পরবর্তীকালে,মানে প্রায় তিন চারশ বছর পরে এই অধম মানি ইজ দ্য ভিজিবল গডের সাথে
আরো এক লাইন যুক্ত করেছে।ব্যাংক ইজ দ্য গ্রেটেস্ট টেম্পল! ঈশ্বর কিংবা দেবতারা
থাকেন স্বর্গে যেখানে আমরা যেতে পারিনা শুধু কল্পনা করতে পারি।
আর টাকা নামের ঈশ্বরের বাসস্থান হচ্ছে ব্যাংক।
ব্যাংকে যার নামে যত বেশি টাকা থাকে সে নাকি তত বেশি ঈশ্বরের কাছাকাছি যায়!
মানিক বন্দোপাধ্যায় কী সে কারণেই বলেছিলেন ঈশ্বর থাকে ঐ ভদ্র পল্লীতে?
টাকার গায়ে ভদ্র অভদ্র,ছোট বা বড়,জাত বা ধর্ম কিছুই লেখা থাকে না।
লেখা থাকে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিবে!
কিন্তু বাস্তবে সম্পুরন ভিন্ন গরিবের মুখ দেখা মাত্রই, লেখা হয়ে যায় টাকা শুধু মাত্র ধনী
মানুষদের স্বপ্ন পুরনের জন্য,আর গরিবের কান্না মুচনের স্বপ্ন।
জানতে চাওয়া হয় ছেলে বা মেয়েটা কী করে?
যদি জানা যায় মেযে চাকরি করে তাহলে তো পাত্রপক্ষ ভীষণ খুশি।
প্রতি মাসে যৌতুক পাওয়া যাবে! আর ছেলের চাকরিতে বেতনের সাথে
উপরি থাকলে সেতো সোনার ছেলে! স্ত্রী যতো টাকা খরচ করতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি
যে পুরুষ কামায় সেই নাকি সবচেয়ে সফল পুরুষ।
আর এমন পুরুষকে খুঁজে বের করতে পারে যে নারী সেও নাকি সফলতমদের একজন!
হয়তো একারণেই এমন কৌতুক জন্মায়-
ছেলে: বাবা বিয়ে করতে কতো টাকা লাগে?
বাবা: এখন পর্যন্ত শুধুই দিয়ে যাচ্ছে । কতো দিয়েছি আমার মরার পরে হিসেব করে দেখিস!
টাকা না থাকলে জীবন কীভাবে কাটে?
একটা চীনা প্রবাদ এমন ,
যে পুরুষের টাকা নেই সে পতিতার চেয়েও খারাপ দিন কাটায়!
রেনেসাব্যান্ডের জনপ্রিয় একটা গানের কথা এমন
দুঃখের দিনে কাছে আসে পথ ভুলে কী কেউ?
একলা ঘরে পরে রবে জানবে নাতো কেউ।
দিন বদলের খেলাতে মন বদলের মেলাতে মানুষগুলো দিনে দিনে বদলে কেন যায়?
হ্যা,মানুষ ক্রমাগত বদলায়।
প্রিয়তমা আর টাকাহীনা দিন নরকের আগুনের মত।
সিংহাসন হারিয়ে সম্রাট হুমায়ূনের মরভুমি কিংবা জঙ্গলের ভেতর দিনের পর দিন
পালিয়ে থাকার মতন!
তারপরও কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেন টাকা হয়তো অনেক কিছু পারে কিন্তু সব কিছু পারে না।
নারীকে এই টাকায় দর দামের পাল্লায় নিয়ে এসেছে,কিন্তু নারীর মমতাকে আনতে পারেনি।
টাকা ঘুমের ওষুধ যোগাতে পারে,ঘুম কিনতে পারে না।
সুখের সব উপকরণ যোগাড় করে দিতে পারে কিন্তু সুখ সরবরাহ করতে পারে না।
আনুষঙ্গিক অনেক কিছুই যোগাড় করা সম্ভব টাকার বিনিময়ে ভালোবাসা নাকি কেনা সম্ভব না।
দামাদামির জন্য কোন দালালির পদ বড়জোর টাকা তৈরি করে দিতে পারে,পারেনা
ভালোবাসা কিংবা এর আবহ তৈরি করে দিতে।
টাকা দিয়েও সম্ভব না অনেকের দেশপ্রেম কেনা!
বছরের পর বছর টাকার জন্য,একটু উন্নত জীবন যাপনের জন্য মেধা পাচার হচ্ছে তবু সবার
মাথা কেনা সম্ভব না!
কিন্তু কথায় যেমন আছে টাকা দিলে বাঘের চক্ষুও মেলে তেমনি আছে টাকা নাকি হাতের ময়লা!
গানের কথায় আছে না কাঁদিলে দুধ দেয় নারে সন্তানেরই মায়!
যে ছেলে মার জন্য সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করে,মা নাকি সেই ছেলেকেই বেশি ভালোবাসে!
বড় জানতে ইচ্ছে করে বিধাতাও কী এমন?
যে লোক সারা বছর ঘুষের টাকায় ফুলে ফেপে বড় হয় অথবা যার থাকে অবৈধ
উপার্জন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই নির্মান করে মসজিদ মাদ্রাসা!
বিধাতা কী তাদেরকেই বেশি ভালোবাসেন?
সেক্সপীয়রের লেখাতেই আছে কাউকে চিনতে হলে টাকা ধার দাও,তাকে কিছু ক্ষমতাও দাও!
সহসাই বুঝতে পারবে সে মানুষ কেমন! কথাটা ধ্র“ব সত্য। ক্ষমতা পেলেই বদলে যায়
অনেকে,হয়ে যায় রাবন।
আর পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে বন্ধুত্ব বা সম্পর্ক নিয়েই
টানাটানি পড়ে,খুনোখুনির ঘটনাও ঘটে যায় অনেক!
হয়তো সে কারণেই ছোটকালে শেখানো হতো অর্থই যতো অনর্থের মূল।
কিন্তু‘ শেষমেষ টাকাই যেন সব,পৃথিবীর সব কিছু,সব সম্পর্ক যেন টাকার অধীন। ব্যাংক
আসলেও যেন বড় মন্দির! সেই ব্যাংক থেকে যদি কেউ টাকা ধার নেবার পর ভাবে সে একা,
তার কোন খোঁজ কেউ নিচ্ছে না তাহলে যেন সে ব্যাংকের কিস্তি দেয়া বন্ধ করে দেয়।
পরের মাসেই ব্যাংকের লোক ঋণগ্রহীতা ও তার চৌদ্দগুষ্ঠিকে খুজে বের করবে!
টাকা খোঁজার পেছনেই যেন ছুটছে সবাই।
বাংলা ছবিতে দেখেছি ঢাকা শহরে টাকা নাকি উড়ে বেড়ায়।
কেউ সেটা সুখ পাখির মত ধরতে পারে অধিকাংশই হয়তো পারে না।
তবে সময় মত টাকার প্রয়োজন। যিনি আশি বছর বয়সে টাকার মালিক হন কিংবা
একই বয়সে নোবেল পুরষ্কার পান টাকা তার জন্য কতোটা বর বয়ে আনে?
সম্ভবত একারণেই একটা গানের কথা এমন- টাকা তুমি সময় মত আইলা না!
এই টাকার জন্যই হয়তো প্রেমিকার প্রেম মেলে না,মেলেনা মায়ের স্নেহ।
টাকা ধার দিয়ে যাচাই করা যায় বন্ধুত্ব! টাকার জন্য বন্ধ হয়ে থাকে কারো শিক্ষা জীবন।
থেমে থাকে সৃষ্টিশীলতা।
একারণেই সত্যজিৎ রায় যখন পথের পাচালি নির্মান করেন তখন তার স্ত্রীর গয়না
বিক্রি করতে হয়! তবে মেধা বা সৃষ্টিশীলতাকে দমিয়ে রাখা যায় না।
যে সৃষ্টিশীলতা ক্লিক বা হিট করে যায় টাকার বলয় তার পেছনেই ছোটে।
টাকা পেয়ে সৃষ্টিশীল মানুষ কী বদলে যায়?
কিংবা আধুনিক ব্যবসার কর্পোরেটশীপ কী নিয়ন্ত্রণ করে সৃষ্টিশীলতা?
ভালোবাসা দিবসে পত্রিকা বা টেলিভিশন কী করবে,কোন অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে,
কোন না কোন ভাবে কর্পোরেটরা কী তা নির্ধারণ করে দিচ্ছেন ?
বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য বৈশাখ উদযাপনও কী কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ করতে চায়
কথিত কর্পোরেটরা ? টাকার বলয় ভেঙ্গে সব সময়ে নিজের মত করে চলা কী অসম্ভব?
খুব সাধারন ভাবেই জানতে ইচ্ছে করে কতো টাকা পেলে সুখী হয় কিংবা
ভালো বোধ করে একজন মানুষ? নাকি এটা মাপার কোন নিক্তি নেই?
গাড়ি,বাড়ি,প্রভাব,ক্ষমতা যা কিছুই বলি সব কিছুর নিয়ামক টাকা হলেও নিজেকে সুখী ভাবার
একটা পরিমাপক বা নিক্তি সম্ভবত নিজের মাঝেই থাকা উচিত।
একজন মানুষ ছোটকাল থেকে স্বপ্ন দেখতেন বড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
হবেন। একটা পাজেরো ল্যান্সার গাড়ি কিনবেন আর সাগর পাড়ে বাড়ি বানাবেন।
এই মানুষটা পরবর্তীকালে একটা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হয়েছিলেন,
একটা পচা মজা খালের পাশে বাড়ি করতে পেরেছিলেন। বাসা থেকে স্কুলে যাবার
জন্য তার বাহন ছিল বাই সাইকেল।
এই মানুষটা দাবী করতেন তিনি সবচেয়ে সুখী!
বিশেষ দ্রষ্টব্য:
টাকা নেই আপনার।সমাজে কিংবা আত্মীয়স্বজনের মাঝে আপনার দামও নেই।
সেই আপনাকে খুঁজে বের করবে সবাই!
কীভাবে সম্ভব? উত্তর আপনাকে লাখ লাখ টাকার লটারি জিততে হবে!
আর মনে রাখবেন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট আর সেক্স একই রকম।
একবার ড্র করার পর আগ্রহ থাকে না!
তবে সবচেয়ে বাস্তব কথা বোধ করি এটাই,
আজকাল টাকার ছাড়া বাগানের সদ্য ফোটা গোলাপ
থেকে কেউ সুগন্ধিও নিতে চাই না!
[ পথিক আর আমি]
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭