* লিখাটা একটু বেশীই লম্বা আশা করি পড়ে দেখবেন *
>> ইচ্ছা করে কেউ প্রথম বাচ্চা নষ্ট করলে পরে আর বাচ্চা না হওয়ার সম্ভবনায় বেশী থাকে।
নারী আর পুরুষের ১ মিনিটের কামনার সুখে জীবন দিতে হয় একটি ভ্রুন বা নবজাতক শিশুকে ।
আমরা কত নির্বোধ ! একটি বাচ্চার জন্য মানুষগুলি কত হায় হুতাশ করে,অথচ বিভিন্ন কারন দেখিয়ে যখন ভ্রুন বা শিশুটি নষ্ট করি একবারো ভাবিনা এই যে ভ্রুনটি বা শিশুটি নষ্ট করছি এর পরিনাম কত ভয়াবহ হতে পারে,যে নষ্ট করেছে তার তো মৃত্যুও হতেপারে কিংবা তার চেয়ে আরো ভয়ংকর যন্ত্রনা নিয়ে বেচে থাকতে হতে পারে ,তার চেয়ে আল্লাহ আরো বেশী শাস্তি তাকে যেটা দিতে পারেন তা হল তার জীবন থেকে মা হওয়ার অধিকার চিরজীবনের জন্য বন্ধ করে দিতে পারেন।পৃথিবীতে সব কিছু তার থাকবে কিন্তু মা বাবা ডাক শোনার মত তার কেউ থাকবেনা । একটা ভ্রুন বা শিশু হত্যা করার আগে আমরা কি সে বিষয় গুলো একবার ভেবে দেখি ?
আমাদের এ সমাজে অনেকেই বলি মাত্র বিয়ে হয়েছে এখন বাচ্চা না একটু মজা করে নেই তারপর বাচ্চা নেব আর নিজেই ঠিক মত চলতে পারিনা আবার বাচ্চা ! একটু নিজেকে গুছিয়ে নিই । টাকা পয়সা বেশী করে হউক তারপর বাচ্চা,মেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকেই দ্রুত বাচ্চা নিতে চায়না কারন তাদের ফিটনেস নষ্ট হয়ে যাবে কিংবা এখনো বাচ্চা লালন পালন করার জন্য তৈরি না । আবার অনেকেই আছেন ক্যারিয়ার বিল্ডাপের কথা ভেবে বাচ্চা নিতে চায় না । তারপরেও মানুষের অসাবধানতায় কিংবা ইচ্ছাই বৈধ্য বা অবৈধ্য ভাবে গর্ভে চলে আসে সেই মানবভ্রুন,যা ধিরে ধিরে সে মানব শিশুতে রুপান্তরিত হয়।
কিন্তু প্রতিনিয়ত মানুষ তার গর্ভে বৈধ্য বা অবৈধ্য ধারন করা বাচ্চাটিকে নিজের লাভের কথা ভেবে নির্মম ভাবে নষ্ট করে ফেলে । কিন্তু একবারো ভাবিনা একটি জীবন হত্যা করার অধিকার আমাদের কেউ দেয় নি, একটি জীবন মানে নতুন এক পৃথিবী ,তার আলাদা একটি সত্ত্বা এবং আলাদা চিন্তা চেতনার আর ভাবনার বিশাল এক রাজ্য।একবারও মানুষ ভাবেনা বৈধ্য বা অবৈধ্য যেভাবেই হউক সেই অবুঝ শিশুটির তো কোন দোষ নেই,তবে তাকে কেন আমাদের পাপের কারনে জীবন দিতে হবে ? সে যদি সুন্দর ভাবে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে তবে কি খুব বেশী মানুষের সমস্যা হবে ,তার জীবন ধারন কিংবা চলার পথ এক সময়তো সে নিজেই তৈরি করে নিবে।
আমরা কেউ কখনোই ভাবিনি বৈধ্য/অবৈধ্য ধারন করা বাচ্চাটি যদি বেচে থাকতো তাহলে সে এই পৃথিবীর শ্রেষ্ট কোন মানুষ হতে পারতো ! হতে পারতো মানব জাতির শ্রেষ্ট কোন উদাহারন । সেই মানুষটির উছিলায় হয়তো অনেকের দুঃখ লাগব হতে পারতো কিন্তু আমরা সেই মানুষটিকে বৈধ্য,অবৈধ্যের আওয়াজ তুলে সমাজ,দেশ,বংশ ও নিজের মান সম্মানের কথা ভেবে শুরুতেই নষ্ট করে দিচ্ছি ।
বাচ্চা নষ্ট করার সব পদ্ধতিতেই এক ধরণের লম্বা নল জরায়ুতে ঢুকিয়ে গর্ভের শিশুটিকে প্রথমে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। পরে ভ্যাকুয়াম সাকারের মাধ্যমে শিশুটিকে শুষে আনা হয়। গর্ভপাতের সময়কার শিশুটির অব্যাক্ত বেদনা হয়তো কারো কানে পৌঁছায় না।
কিন্তু তাই বলে কি তাদের প্রতি আমাদের কোন মায়া-মমতা নেই? আপনার জন্ম গ্রহণকারী ছোট্ট বাবুটি যখন সামান্য একটু ব্যাথা পায় তখন আপনার কাছে কেমন লাগে? আর আপনার চোখের আড়ালে যাকে ক্ষতবিক্ষত করছেন তার ব্যাথাটা একটু বোঝার চেষ্টাও করেন না? মানুষ নামের নরপশুর নির্মমতায় একটি নিষ্পাপ শিশু মৃত মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়
যেসব মা ক্ষণিকের সুখের জন্য নিজ গর্ভের সন্তানকে পাশবিকভাবে হত্যা করে তাদের জন্য আমার পক্ষথেকে হৃদয় উগড়ে দেয়া সীমাহীন ঘৃণা।
গর্ভপাতের সময় গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় কিনাঃ-
গর্ভপাত ঘটানোর সময় গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় কিনা তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। গর্ভস্থ শিশুরা ব্যথা পায় কিনা তা এখনও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। আদৌ প্রমাণ করা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কেননা এর সাথে জড়িত রয়েছে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা ও নারীর অধিকার। একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতেঃ “গর্ভস্থ শিশুরা ৬/৭ সপ্তাহ থেকে ব্যথা অনুভব করতে পারে। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট এবং De Veber Institute for Bioethics and Social Research এর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট Dr. Paul Ranalli এ সম্পর্কে মত পোষণ করেন যে, গর্ভপাতের সময় মাতৃ গর্ভস্থ শিশুরা অবশ্যই ব্যাথা অনুভব করে। কারন যে সময়ে গর্ভপাতের মাধ্যমে তাদের কে হত্যা করা হয়, সে সময়টাতে ব্যাথা অনুভব করার মত ক্ষমতা তাদের মধ্যে চলে আসে।”
গর্ভপাত সম্পর্কে ইসলাম কি বলেঃ-
মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে সুরা আল-আনআমের ১৪০ নং আয়াতে উল্লেখ করেনঃ- “নিশ্চই তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতাবশতঃ কোন প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করেছে এবং আল্লাহ তাদেরকে যেসব দিয়েছিলেন, সেগুলোকে আল্লাহর প্রতি ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করে হারাম করে নিয়েছে। নিশ্চই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি”। ইচ্ছাকৃত গর্ভপাতকে যে ইসলাম সমর্থন করেনা, তা এই আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেছেন।
Abortion জিনিসটার কারনে আমার জীবন থেকে কি হারিয়ে ফেলছি একবার ভেবে দেখুন ???
নিচে একটু পড়ে দেখুন হৃদয়হীন মানুষের হৃদয়েও কমপনের সৃষ্টি হবে।।
লেখাটা লিখতে গিয়ে কতবার যে হাত কেপেছে পড়ে দেখুন নিজের বিবেকে নাড়া
দেয় কিনা !!??
প্রথম মাস – হ্যালো আম্মু…..!! কেমন আছো তুমি? জানো আমিএখন মাত্র ৩-৪ইঞ্চি লম্বা!!
কিন্তু হাত-পা সবই আছে তোমার কথা শুনতে পাই, ভালো লাগে শুনতে।আম্মু সোনামনি বলে ডাকতো আবার।
দ্বিতীয় মাস – আম্মু, আমি হাতের বুড়ো আঙ্গুল চুষা শিখেছি, তুমি আমাকে দেখলে এখন বেবি
বলবে! বাইরে আসার সময় এখনো হয়নি আমার, এখানেই উষ্ণ অনুভব করি খুব।তোমার মুখ দেখতে খুব মন চায়।
তৃতীয় মাস – আম্মু তুমি কি জানো আমি যে একটা মেয়ে? পরী পরী লাগবে আমাকে, আমাকে
দেখলে তুমি অনেক খুশি হবে, তুমি মাঝে মাঝে কাঁদো কেনো আম্মু ? তুমি কাঁদলে আমারও কান্না পায়। তুমি আর কেদনা,প্লিজ আম্মু ।
চতুর্থ মাস – আমার মাথায় ছোট্ট ছোট্ট চুল গজিয়েছে আম্মু আমি হাত-পা ভালো
ভাবে নাড়াতে পারি, মাথা নাড়াতে পারি, অনেক কিছুই করতে পারি। মা তুমি কি আমার চুলে সুন্দর সুন্দর ক্লিপ লাগিয়ে দিবে,ঘুম পাড়ানোর ছড়া বলে ঘুম পাড়িয়ে দিবে ।
পঞ্চম মাস – আম্মু তুমি ডক্টরের কাছে কেনো গিয়েছিলে? কি বলেছে ডক্টর?
আমি তার কথা শুনতে পারিনি, তোমার কথা ছাড়া আমি কারো কথা শুনতে পারিনা।
ষষ্ঠ মাস – আম্মু আমি অনেক ব্যথা পাচ্ছি আম্মু,ডক্টর সুঁচের মতো কি যেনো আমার শরীরে
ঢুকাচ্ছে, ওদের থামতে বলো আম্মু আমি তোমাকে ছেড়ে কথাও যাবোনা আম্মু…আমি আর দুষ্টুমি করবোনা আম্মু, প্লিজ আম্মু ব্যাথা পাচ্ছি তো !
সপ্তম মাস – আম্মু কেমন আছো? আমি এখন স্বর্গে আছি, একটা এন্জেল আমাকে নিয়ে এসেছে, এন্জেল বলেছে তোমাকে গর্ভপাত (Abortion) করতে হয়েছে,
তুমি আমাকে কেনো চাওনি আম্মু? আমি কি খুব পচা ছিলাম ? তাহলে আমিতো তোমারই সন্তান,তাহলে কেন এতো কষ্ট দিলে, সবাই না বলে মা কখনো সন্তানকে কষ্ট দেয়না।
ইসলামে বলা আছে ,মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। তাহলে আমার কি হবে মা, আমাকে যে তুমি নিজে হত্যা করেছো ।
প্রতিটি গর্ভপাত (Abortion) মানে একটি হৃদস্পন্দন থেমে যাওয়া…
একটি হাসি থেমে যাওয়া… দুটি হাত, যা কখনো কাউকে স্পর্শ করতে পারবেনা…
দুটি চোখ, যা পৃথিবীর আলো দেখবেনা…দুটি পা যা কখনো আধু আধু পায়ে টিপ টিপ করে হাটবেনা। মা বাবাকে দৌড়ে জড়িয়ে ধরবেনা ।
একটি নিষ্পাপ শিশু যার হাসিতে ভরে উঠতো এই পৃথিবীর সবার মন ,সেই হাসি আর কেউ দেখবেনা ।
প্রশ্নটা আমাদের সবার ! আমরা বৈধ্য অবৈধ্য যে ভাবেই হউক এই ভ্রুন বা শিশু গর্ভপাতের নামে হত্যা করে যাচ্ছি ! আমরা যা করছি তা কি ঠিক হচ্ছে, এরকম জগন্য পাপ করে কি কখনো নিজেকে ভাল মানুষ বলার আর কোন অবকাশ থাকে ।
কিভাবে গর্ভপাত করানো হয়ঃ-
গর্ভ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন উপায়ে গর্ভপাত ঘটানো যেতে পারে। উপায় সমূহ প্রধানতঃ গর্ভধারণকাল বা ভ্রুণের বয়স বা আকারের উপর নির্ভর করে। নিম্নে কৃত্রিম উপায়ে গর্ভপাতের কয়েকটি নৃশংসতম উদাহরন উল্লেখ করা হলো।
স্যাকশন ও এসপিরেশন পদ্ধতিঃ-
গর্ভধারনের ১২ সপ্তাহের পর গর্ভপাত ঘটাতে চাইলে সবচেয়ে বেশী যে পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে Suction Aspiration পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে একটি ভ্যাকুয়াম নল মাতৃজঠরে প্রবেশ করানো হয়। প্রসংগত এটি কাজ করে ভ্যাকুয়াম ক্লীনারের মতই, তবে এখানে কমপক্ষে ২৯ গুন বেশী চাপ প্রয়োগ করা হয়। এই প্রচণ্ড চাপে শিশুটি মুহূর্তের মধ্যেই টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এ পদ্ধতির সবচেয়ে বীভৎস অংশ হচ্ছে, যেহেতু শিশুটির মাথা অনেক বড় থাকে সেহেতু এটি নলের মাধ্যমে বের করা যায় না। সেজন্য চিমটার মতন একপ্রকার ধাতব যন্ত্র দিয়ে শিশুটির মাথা দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হয়। তারপর উক্ত শিশুটিকে মতৃজঠর থেকে বের করে আনা হয়।
ডায়ালেশন ও ইভাকুয়েশন পদ্ধতিঃ-
আরেকটু বড় শিশুর (গর্ভধারণের ১৮-২০ সপ্তাহের পর) ক্ষেত্রে, ভ্যাকুয়াম নল দিয়ে বের করা অত্যন্ত কঠিন (গর্ভস্থ ২০ সপ্তাহ বয়সের শিশু দেখতে কেমন এখানে জানা যাবে)। তাই আরেকটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যার নাম Dilation and Evacuation (D&E) পদ্ধতি। এখানে এক জাতীয় চিমটার মাধ্যমে বাচ্চাকে মুচড়ানো হয় এবং জীবন্ত শিশুটির দেহের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যংগগুলো টেনে টেনে আলাদা করা হয়। মাথাটিকেও প্রচন্ড চাপ দিয়ে বিচূর্ণ করা হয়। যতক্ষণ না বাচ্চাটি সম্পূর্ণভাবে টুকরো টূকরো করে সহজে বের করা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত বারংবার এই মুচড়ানো ও বিচূর্ণ করার প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে। অবশেষে এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পর বিচূর্ণ অংগ-প্রত্যংগ গুলো জড়ো করে মিলানো হয় যে সম্পূর্ণ শিশু বের হয়েছে কিনা। কারণ যদি শিশুর কোন অংগ মাতৃজঠরে রয়ে যায় তবে তা মায়ের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
লবন পদ্ধতিঃ- গর্ভপাতের আরেকটি অতি সস্তা পদ্ধতি হচ্ছে মাতৃজঠরে লবন বা বিষ প্রয়োগে গর্ভজাত শিশুটিকে ধীরে ধীরে হত্যা করা। পরবর্তীতে শিশুটি মরে যাওয়ার সাধারণত ২৪ ঘন্টার পরে মা মৃত বাচ্চা প্রসব করে। অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চা মরে না এবং জীবিতই প্রসব হয়। সেক্ষেত্রে মাটি চাপা দিয়ে উক্ত শিশুটিকে মেরে ফেলা হয়। আরেকটি ব্যয় বহুল পদ্ধতি হলো prostaglandin নামক একটি হরমোনের ব্যবহার, যা সাধারণত গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পরে প্রয়োগ করা হয়। এটির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে প্রসব বেদনা তৈরী করে জীবিত শিশুকে প্রসব করানো হয়। পরে শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
জীবন্ত গর্ভপাতঃ-
গর্ভপাতের এমন ভয়ংকর বিবর্তন ঘটেছে যে Live abortion -এর মত নিষ্ঠুর ঘটনাও দিন দিন বাড়েই চলেছে। যেখানে শিশুটিকে (সাধারনত গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহের পর থেকে) জীবন্ত প্রসব করিয়ে মেরে ফেলা হয়। আমেরিকাতে Live abortion-এর নিষ্ঠুরতা ও তৎসম্পর্কিত জনরোষের কারণে ২০০৩ সালে Partial-Birth Abortion Ban Act আইন পাশের মাধ্যমে তা নিষিদ্ধ করা হয়। মানবতা এতটাই নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আইন করেও কাজ হচ্ছে না, বের করা হচ্ছে নতুন নতুন ফাঁক-ফোঁকর। যেমন গাইনোকলজিস্ট শিশুটির মাথা ছাড়া দেহের বাকী অংশটুকু বের করেন; এতে করে আইনগতভাবে বলা যাবে না যে শিশুটি জীবন্ত প্রসব হয়েছে, কেননা মাথাটি এখনো বের হয়নি। তারপর ছটফট করতে থাকা শিশুটির মাথায় ফুটো করে পাইপের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে শুষে বের করে আনা হয়। এর ফলে মাথাটিও সহজে বের করে আনা যায়। এছাড়া এই মৃত শিশুটিকে নিয়েও চলছে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মানবতার উন্নতি সেখানে এতই চরমে পৌঁছেছে যে, জীবন্ত অবস্থায় যে শিশুটি ছিল অনাকাংখিত, মৃত্যুর পরে সেই শিশুটিই হয়ে উঠেছে বহু আকাংখিত। তবে মায়ের কাছে নয়, রিসার্চ সেন্টার ও প্রসাধন ইন্ডাষ্ট্রীর কাছে! অবহেলিত, অনাকাংখিত হত্যাকৃত শিশুদের রক্ত মাংসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠছে Fetal Harvesting Firms । যারা ফেলে দেওয়া শিশুদের অংগ, প্রত্যংগ, মস্তিষ্ক, টিস্যু ইত্যাদি অর্ডার মাফিক সযত্নে পৌঁছে দিচ্ছে রিসার্চ সেন্টারগুলোতে। মানবতার নামে এটা কেমন ধরনের প্রহশন?
কিছু ঘটনা সবার জন্যঃ
মাইকেল লিচফিল্ড এবং সুসান কেন্টিশ নামের দুই বৃটিশ গবেষক জানিয়েছেন, বৃটেনে গর্ভস্থ শিশুর জীবন নাশ বা গর্ভপাতের হার ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার কারণে এইসব শিশুর মৃতদেহ পোড়ানোর জন্য বিশেষ ধরনের অনেক চুল্লী বানানো হয়েছে। প্রতিবছর গর্ভপাতের শিকার হাজার হাজার শিশুর মৃতদেহ পোড়ানো হচ্ছে এইসব চুল্লীতে।
গর্ভস্থ শিশু হত্যার নৃশংস চিত্র এখানেই শেষ নয়। পাশ্চাত্যের এক শ্রেনীর মুনাফালোভী মানুষ আজকাল বিপুল অর্থের লোভে গর্ভস্থ শিশুকে হত্যা করছে চিকিৎসা গবেষণায় তাদের ব্যবহার করার জন্য। কানাডীয় লেখক উইলিয়াম গার্ডনার লিখেছেন, "নিহত ভ্রুণ শিশুর কোষগুলো সুস্থ ও খুব তাজা বলে এসব কোষ চিকিৎসা গবেষণায় ব্যবহার করছে কেউ কেউ। গর্ভস্থ শিশু বা ভ্রুণ শিশুর মৃত্যুর পরপরই তার দেহের কোষ ও চামড়াগুলো সতেজ থাকা অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়। এইসব কোষ অন্যদের কোষের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান।"
আরো দুঃখজনক খবর হল, আজকাল ইউরোপের চিকিৎসকরা ভ্রুণ শিশুর চর্বিকে সাজ-সজ্জার বা প্রসাধন সামগ্রীর উপাদান তৈরির মত বাণিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করছেন। গর্ভপাতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত চিকিৎসক অধ্যাপক ক্রিস ব্যাগলি বলেছেন, "ভ্রুণ শিশুর চর্বি প্রসাধন শিল্পের জন্য খুবই জরুরি।" অত্যন্ত নির্দয় এই চিকিৎসক বেশ আস্ফালনের ভঙ্গীতে এও বলেছেন,
" আমি পূর্ণতা প্রাপ্ত ভ্রুণ শিশু নষ্ট করি। এইসব ভ্রুণ শিশুকে যখন অপেক্ষাকৃত ভালভাবে ব্যবহার করা সম্ভব তখন তাদেরকে জ্বলন্ত চুল্লীতে ফেলে দেয়া লজ্জাজনক। আমি এমনকি সাত মাসের ভ্রুণ শিশুকেও নির্দ্বিধায় হত্যা করি। এইসব শিশুর সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকে এবং ওরা বেশি সময় বেঁচে থাকে। একদিন ভোরে আমি চারটি ভ্রুণ শিশু নষ্ট করি। ওদেরকে পাশাপাশি রাখা হয়েছিল এবং সেগুলো খুব উচ্চ স্বরে কাঁদছিল। ওদেরকে চুলার আগুনে ফেলার ইচ্ছে আমার হচ্ছিল না। কারণ, ওদের গায়ে ছিল বেশ চর্বি, আর এসব প্রাণীজ চর্বিকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা যায়। "
নরহত্যার শাস্তি সম্পর্কে ভয়-ভাবনাহীন ওই কষাই ডাক্তারের নির্মম বক্তব্য শুনলেন। তার কথা থেকে স্পষ্ট, এই নিরপরাধ মানুষগুলোর জীবন কেবল এই 'অপরাধে' বিনাশ করা হয়েছে যে তারা ছিল ক্ষুদে মানব।
ভ্রুণ শিশুকে দ্রুত হিমায়িত করা আরো এক আমানবিক ও অনৈতিক পন্থা। এভাবে মেরে ফেলা ভ্রুণ শিশুর কোষ বেশি নিরাপদ বা সুস্থ বলে সেগুলো ব্যবহারের অজুহাত দেখানো হয়।
আধুনিক যুগে পাশ্চাত্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও তারা নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন। মর্কিন লেখক জর্জ গ্রান্ট লিখেছেন, "আজ যুক্তরাষ্ট্রের বহু হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নব জাতক বা ভ্রুণ শিশুর বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত রয়েছেন নামকরা চিকিৎসক ও গবেষকরা। তারা এসব কাজকে স্বাভাবিক ও প্রাত্যহিক রুটিনে পরিণত করেছেন। এইসব কাজ হিটলারের চিকিৎসকদের নৃশংস বা ঘৃণ্য অপারেশনের অভিযোগের সমতুল্য, অথচ আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর নৈতিকতার এত ব্যাপক অবক্ষয় হয়েছে যে তারা এইসব অপরাধ তুলে ধরছেন না।"
সভ্যতার দাবিদার পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ভ্রুণ শিশু হত্যার এসব ঘটনা প্রত্যেক স্বাধীনচেতা ও বিবেকবান মানুষের মনে এ প্রশ্নের গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে যে, এইসব নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে কোন্ অপরাধে? এসব নৃশংসতা সে অন্ধকার যুগকেই স্মরণ করিয়ে দেয় যখন মানুষ নিজ সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ৬১ লক্ষ ভ্রুণ শিশু হত্যা করা হচ্ছে। একজন মার্কিন গবেষক গর্ভপাতের করুণ দৃশ্য রেকর্ড করেছেন গর্ভের ভেতরে ক্যামেরা বসিয়ে। তার এ ভিডিও চিত্রের নাম দেয়া হয়েছে "নীরব আর্তনাদ"। এই ফিল্মে দেখা গেছে তিন মাসের এক অসহায় ভ্রুণ শিশু কিভাবে যন্ত্রের হাত থেকে পালানোর হতাশাব্যাঞ্জক চেষ্টা করছে এবং গর্ভপাতকারী যন্ত্র কিভাবে একের পর এক ওই শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কেটে কেটে বের করে আনছে।
মার্কিন গণমাধ্যমগুলো এইসব বিষয় প্রচার না করায় জর্জ গ্রান্ট মার্কিন গণমাধ্যমের বড় রকমের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, "যেসব ভ্রুণ শিশু গর্ভপাতের পরও বেঁচে যায় সেসব শিশুকে জীবন্ত অবস্থায় নৃশংস ও অদ্ভুত নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়। এইসব ভ্রুণ শিশুকে প্রসাধন সামগ্রীর উপাদান থেকে শুরু করে ওষুধ তৈরিসহ বিচিত্র কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বেচা-কেনা করা হয়। আর আমাদের গণমাধ্যম এইসব তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার কষ্ট স্বীকার করতে রাজি নয়।
গিয়ান্না জ্যাসেন এক ভাগ্যবান মার্কিন তরুণী যে গর্ভপাতের ব্যর্থ চেষ্টার পরও বেঁচে আছে। ১৪ বছরের এই বালিকা গর্ভপাতের ব্যর্থ চেষ্টার পরও বেঁচে যাওয়া মানব সন্তানদের আন্তর্জাতিক এক সম্মেলনে বলেছে, কানাডার আইন অনুযায়ী কোনো মেয়েকে তার কান ফোড়ানোর জন্য বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। অথচ তারা বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়াই গর্ভপাত করতে পারে। জ্যাসেন আরো বলেছে, সে কানাডায় এসেছে এটা প্রমাণ করার জন্য যে মায়ের গর্ভে রয়েছে জীবন এবং সে জীবন বিনষ্ট করার অধিকার কারো নেই।
ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত এবং ক্ষতিকারক দিক :
গর্ভাশয়ের ভ্রুনটি ডিম্বানু নিষেকের পর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসের (২০ সপ্তাহ) মধ্যে যে কোন সময়ে প্রসবের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবার নামই গর্ভপাত বা Abortion। বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ গর্ভপাতই হয় ইচ্ছাকৃত ভাবে ভ্রুন নষ্ট করার কারনে। পাঁচ মাস (২০ সপ্তাহ) বয়সের পর শিশুর সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনই শেষ হয়ে যায়, তাই এসময়ে ইচ্ছাকৃত গর্ভপাত ঘটানোকে শিশু হত্যা বলাই শ্রেয়তর।
তবে এর ব্যতিক্রমও আছে, অনেক সময় মায়ের সন্তানটি ধারন করার ইচ্ছা থাকলেও নিজে নিজে গর্ভপাত (Miscarriage) হয়ে যেতে পারে আবার মায়ের স্বাস্থ্য রক্ষা বা শিশুটিকে চরম দুর্ভাগ্যের (চরম প্রতিবন্ধি) হাত থেকে বাঁচাতেও বৈধভাবে গর্ভপাত (Therapeutic abortion) করানো যেতে পারে। এখানে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যগত বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কারনে গর্ভপাত করার বৈধ দিক গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো।
বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের ফলে গর্ভধারণ করে ফেললে তখন গর্ভপাত করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। গর্ভপাত একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রক্রিয়া। এতে যেমন শারীরিক ক্ষতি হয় তেমনি মানসিক ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয়। গর্ভপাতের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে।
এর দীর্ঘমেয়াদী কুফলও রয়েছে। যেমন পরবর্তীতে গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া বা গর্ভধারণ
করতে না পারা ইত্যাদি। প্রথম সন্তান জন্মদানের আগে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটলে
পরবর্তীতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সন্তান ধারনে সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভপাতের মানসিক ক্ষতিও
কম নয়। সন্তান হারিয়ে অনেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি অনেকে বিকারগ্রস্ত
পর্যন্ত হয়ে পড়ে।
১। গর্ভাবস্থা চালিয়ে গেলে যদি মায়ের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে অথবা তার অপুরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।
২। ভবিষ্যতে জন্মনেয়া সন্তানটি যদি খুব খারাপ ধরনের শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মানোর নিশ্চিত সম্ভাবনার কথা জানা যায়। যেমন:
· মায়ের আলট্রাসনোগ্রাম বা এম্নিওসেন্টেসিস (Amniocentesis) করে জানা গেলো শিশুটি চরম বিকলাঙ্গ।
· গর্ভের প্রথম তিন মাসে মা জার্মান মিসল, গুটি বসন্ত, টক্সপ্লাজমোসিস জাতীয় রোগে ভুগে থাকেন।
· বাবা অথবা মা এর কেউ যদি মানসিক প্রতিবন্ধি হন।
· মা যদি গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে রেডিওথেরাপীর মতো চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
· মায়ের কোন রোগের চিকিৎসার কারনে যদি উনি শিশুটির ক্ষতির কারন হয় এমন কোন অসুধ খেয়ে থাকেন, ইত্যাদি।
৪। গর্ভের সন্তানটি যদি ধর্ষণের ফসল হিসেবে জন্ম নেয়।
৫। যদি জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতির ব্যর্থতার কারনে গর্ভধারন হয় এবং তা চালিয়ে গেলে মায়ের মানসিক বা শারীরিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবার সম্ভাবনা থাকে।
চিকিৎসা-শাস্ত্রের মূলমন্ত্রে আছে যে ভ্রুণের প্রথম দিন থেকেই তাকে একটি মূল্যবান প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।তাই থেরাপিউটিক এবরশনের বাচ্চাটি যদি সুস্থ্য থাকে এবং তাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই সেই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত।
ইসলামের মানবিক আইন অনুযায়ী ভ্রুণ শিশু হত্যা করা নিষিদ্ধ বা হারাম।
উপযুক্ত বা গ্রহণযোগ্য কোনো কারণ ও চিকিৎসকের সমর্থন ছাড়া ভ্রুণ শিশু নষ্ট করার অধিকার কারো নেই।
পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যার সমতুল্য এবং একজন মানুষকে বাঁচানো সব মানুষকে বাঁচানোর সমতুল্য।
আমরা এই সকল বর্বর কর্মকাণ্ড বা এমন ভুল পথ থেকে নিজেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারি
একমাত্র আল্লাহ তায়ালার বিধান বা নিয়ম মেনে চললেই, তাই আসুন সবাই নিয়মিত নামাজ পড়ি,কোর আন পড়ি,
আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে সুন্দর জীবন গড়ি ।
আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন, সঠিক পথ প্রাপ্ত করুন ।
শয়তানের সকল ধোকা থেকে রক্ষা করুন । আল্লাহ আপনিই সঠিক বিচারকারী ।
আল্লাহ আপনিই মহান দয়াবান ও রহমকারী ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৫