♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধর্মীয় বিষয় কষ্ট দিলে আন্তরিকভাবে অনুরোধ থাকবে আমার লিখা এড়িয়ে যাবার।
(ছবি নেট হতে)
লিখার ক্ষেত্রে শিরোনাম অনেক বড় একটা বিষয়। এটাকে অনেকটাই লাভ এট ফার্স্ট সাইটের সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব। আপনি কি লিখেছেন তারচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সেই লিখায় আপনি কি শিরোনাম ব্যবহার করছেন। উপযুক্ত শিরোনাম নির্বাচনে ব্যর্থ হলে আপনার লিখা যতোই গুরুত্বপূর্ণ হোক না কেনো, তা কখনোই পাঠক আকর্ষণে তেমন সাহায্য করবে না। বিশেষ করে বহুমাত্রিক লিখা যাঁরা লিখে থাকেন তাঁদের জন্য বিষয়টা আরো বেশি গুরুত্ব বহন করে। কারণ, পাঠকের কাছে লেখকের পরিচয় তাঁর লিখা। এখন আপনি যদি সর্বদা একই ঘরণার লিখা লিখেন সেক্ষেত্রে শিরোনামটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ পাঠক জানে যে, ঘুরিফিরি আপনি সেই এক ব্লকের ভেতরই থাকবেন। তাই নির্দিষ্ট কিছু পাঠক ব্যতীত সবাই আপনার লিখার প্রতি তেমন আকর্ষণ অনুভব করবে না এটাই স্বাভাবিক।
আবার আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে এন্টি-লেখক পাঠ। অর্থাৎ লেখকের প্রতি নেতিবাচক ধারণা যাঁরা পোষণ করে সর্বদা লেখকের ছিদ্রানুসন্ধানে ব্যস্ত থাকে, তাঁরা আবার শিরোনাম বা মূলভাবের তেমন ধার ধারবে না। তাঁরা আপনি যা লিখবেন তাই চুপিচুপি এসে পড়বে এবং ছিদ্রানুসন্ধান করে চুপিচুপি কেটে পরবে। তারা না বুঝবে শিরোনাম, না বুঝবে লিখা। আবার এঁদের মাঝে কিছু বিদ্রোহী পাঠক রয়েছেন যাঁদের পড়লেই দাঁড়িয়ে যায় গায়ের লোম। তাঁরা ছিদ্র না পেলেও কোনভাবে একটি ছিদ্র পেয়েছি টাইপের কমেন্ট করবেনই। যতোক্ষণ তা না করতে পারবেন ততক্ষণ আপনার সেই লিখার পাশেই ভনভন করবেন। তবে এই সংখ্যাটা নগন্য। এই গ্রুপের বেশির ভাগ পাঠকই লিখা হতে ছিদ্র খুঁজে নিয়ে নিজের ব্লকে (নট ব্লগ) গিয়ে তা নিয়ে জয়োল্লাসমূলক (ছিদ্রবিজয়ী হিসেবে) আলোচনা করতে বেশি আগ্রহী।
তাহলে শিরোনামের গুরুত্ব কোথায়? শিরোনাম তাদের জন্যেই গুরুত্বপূর্ণ যাঁরা ভালো লিখিয়ে হতে চান। কারণ বর্তমান মার্কেটিং-এর যুগে যদিও লেখক লিখার মাধ্যমে পাঠক তৈরী করে, কিন্তু সুলিখক আসলে পাঠকই তৈরী করেন। কারণ, যাঁর লিখা পাঠক সমাজে অতি লোভনীয় তাঁর লিখাই ততো সার্থক। তাই লিখার কেন্দ্রেই পাঠকের অবস্থান। এখন ভালো লেখক হতে চাইলে ভালো পাঠক, আই রিপিট "ভালো পাঠক"কে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। আর সেজন্যে প্রথমেই দরকার হবে একটি যথাপোযুক্ত শিরোনামের। ভালো পাঠকেরা অবশ্যই শিরোনাম বিবেচনা করেন। তারপর মূললিখায় শিরোনামের যথোপযুক্ত প্রতিফল ঘটাতে হবে বর্ণনা, শব্দ চয়ন, বাক্য গঠন, ভাষা বিন্যাস ইত্যাদির মাধ্যমে। নচেৎ পাঠক যদি একবার হতাশ হয়ে যায় তবে আর ভুলেও কখনও সেই লেখকের প্রতি আকৃষ্ট হবেনা।
"কথায় আছে, "আগে দর্শনদারী, পরে গুণ বিচারি"; তাই লেখার শিরোনাম অতি ভাইটাল ইস্যু। তবে সেই সাথে লেখার শুরুটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শুরুতেই যদি কোন লেখা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে না পারে, আকৃষ্ট কর্তে না পারে; তাহলে ভালো শিরোনাম সত্ত্বেও সেই লেখা পাঠক হারাবে। বিশেষ করে ব্লগ, ফেসবুক যেখানে প্রথম প্যারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই অংশই লেখককে লেখার ভেতরে টেনে আনে। তবে শিরোনাম নিয়ে নেগেটিভ ইউজ এখন অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো অহরহ করে শিরোনাম এর গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে অনেকাংশেই। " মারা গেছেন শাহরুখ" শিরোনাম এর ভেতরের খবর "নওগাঁর জনৈক শাহরুখ মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন... "।
-বোকা মানুষ বলতে চায়
এবার ভেবে দেখুন আপনার উদ্দেশ্য কি। যেমন আমার উদ্দেশ্য লিখা নিয়ে খেলা করা, মজা করা, সময় কাটানো, আর মাঝেমাঝে কিছু অসঙ্গতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া। যা সামস্টিকভাবে আমার লিখাকে ক্যাঁচালের অন্তর্গত করে দিয়েছে। তবে আমি তা নিয়ে গর্বিতই বটে। কারণ, সমাজের কাজে আসবে এতো বড়মাপের লেখক হবার মাথাব্যাথা বা সময় কোনটাই আমার নেই। আমার যা আছে তা হচ্ছে সময়ের মাঝে সময় কাটানো। কিছু মানুষ ইচ্ছায়, কিছু মানুষ অনিচ্ছায়, আবার কিছু জনদরদী সুপাঠক দয়া করে আমার লিখা পড়ছেন, এতেই আমার পরম প্রাপ্তি। এটাই আমার লেখালেখির সম্পদ। যদি বলি আমি নিজের জন্য লিখি তবে তা হবে চরমমাত্রার ভন্ডামি। কেননা, নিজের জন্য লিখলে তা পাবলিক করতাম না।
তাই যাঁরা ভালো লেখক হতে চান তাঁরা নিজের লেখার প্রতি যত্নবান হোন। একটা ট্রিক্স দেই। এখানে অনেক ভালো পাঠক আছেন। যদি আপনি তাঁদের দৃষ্টি-আকর্ষণে সক্ষম হোন, তবেই ধরে নেবেন আপনার লিখার মান উন্নত হচ্ছে। নতুন লেখক হলে একটু সময় নিন। তখন ধীরে-ধীরে বুঝে যাবেন কাঁরা সেই পাঠক যাঁরা লেখককে শানীত করতে চান। তাঁদের প্রতি যথাযথ মনযোগ রাখুন। তাঁরাই আপনার মূল সম্পদ।
অনেক বড় বড় কথা বললাম বলে ক্ষমা করবেন। শেষে আরেকটু স্পর্ধা দেখিয়ে কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করি। বিশেষভাবে ধর্মীয় লেখাগুলোর ক্ষেত্রে শিরোনাম লেখককে যতোটা উঠায়, ঠিক ততোটাই আবার নামিয়ে ফেলে। ধরুণ আপনি রোজাকে কিভাবে আরো সহী করা যায় তা নিয়ে লিখতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে যদি শিরোনাম দেন "যখন যেভাবে রোজা রাখবেন" তবে এর মাধ্যমে যদিও বুঝাতে চাচ্ছেন নির্দিষ্ট সিচুয়েসনে নির্দিষ্টভাবে রোজার মাসালা আছে, কিন্তু "যখন যেভাবে" শব্দদ্বয় পাশাপাশি থাকায় অর্থটা "সেচ্ছাচারিতা" বুঝিয়ে ফেলছে যা আপনার লিখাটার অর্থৎ বিপরীত করে দিচ্ছে। আবার শিরোনাম দিলেন "মুসলমানের ভন্ডামি" যাঁর অধীনে চলমান অনেক মুসলমান লেবাসধারীদের ভন্ড আচরণগুলি তুলে ধরলেন। সেখানেও শুধু শিরোনামের কারণে আপনি পাঠকের কাছ থেকে রিজেক্টেড হবেন। কারণ, এ ধরণের শিরোনামে সামস্টিকভাবে এবং পার্সোনালভাবে প্রতিটি মুসলমানকে আক্রমণ করে বসবেন। তাই, শিরোনাম বাছাইয়ে যথেষ্ঠ্য সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৫২