somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বড়দিদি

১৪ ই এপ্রিল, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বড়দিদি আজ সকালে আমাকে ভয়ানকভাবে বকেছে । আমি নাকি অলস, কুঁড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি । কথাটা শুনে খুব মন খারাপ করেছিলাম । সারাটা দিন ওর সাথে কথা বলিনি । চুপচাপ সময় কাটিয়ে দিয়েছি । আর ঠিক খাবার সময়টাতে ছাদে উঠে বসে আছি । হঠাৎ করে খুব কান্না পেলো আমার । হাঁটু দুটোর মধ্যে মুখ গুঁজে জামা ভিজিয়ে ফেললাম । কতক্ষন কাঁদলাম জানিনা । নিজেকে খুব দুঃখী মনে হচ্ছিল । হঠাৎ সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ শুনে বুঝলাম কেউ আসছে । তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছলাম । অবন্তী । অবন্তী আমার ছোট বোন । অবন্তী হবার সময় আমার মা মারা যান । মা মারা যাওয়ার সময় আমি ছিলাম দেড় বছরের । মায়ের কথা কথা আমার মনেই পড়েনা । অস্পষ্ট একটা কল্পনা এ্যালবামের ছবির সাথে মিলে মিশে আমার মনে একটা অন্যরকম মায়ের স্মৃতি তৈরী করে । আমি জানিনা আমার মা দেখতে কেমন ছিলেন, কিভাবে কথা বলতেন আর কিভাবেই বা আমাকে আদর করতেন । এ্যালবামে মায়ের সাথে আমার একটাই ছবি আছে । ছবিতে আমি মাকে জড়িয়ে ধরে আছি । মা যদিও আমাকে বেশীদিন ভালোবাসার সুযোগ পাননি, তার দায়িত্ব নেন বড়দিদি । আমার বাবা চিরদিনই উন্নাসিক প্রকৃতির মানুষ । তাঁকে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনদিনই সক্রিয় দেখিনি । স্বভাবতঃই মা মারা যাবার পর তিনি তার কর্তব্য সম্পর্কে একেবারেই নীরব হয়ে গেলেন । তিনি থাকেন তাঁর নিজের খেয়ালখুশী মত, বাড়ীতে আসেন নিজের ইচ্ছেমতো, যখন তখন ।
অবন্তী ছাদে এসে আমাকে দেখে কতক্ষন তাকিয়ে রইলো, তারপর বললো,
“বাবা এসেছে, তোকে ডাকছে ।”
আমি ওর কথাটা শুনে খুব অবাক হলাম । তবুও বিনা বাক্যব্যয়ে চলে গেলাম নীচে । বৈঠকখানায় গিয়ে দেখলাম ময়লা একটা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে বাবা বসে আছেন । বাবা আমাকে দেখে বললেন,
“এখানে বস, শ্রাবন্তী ।”
আমি একটা টুল নিয়ে এসে বাবার পাশে বসে পড়লাম । বাবা শুরু করলেন,
“শুনলাম তুমি নাকি আজকাল কারো কথা শুনছনা আর পড়াশোনাও কম করছ । কথাটা কি ঠিক ?”
আমি মৌনতা অবলম্বন করলাম । বুঝলাম বাবা ভয়ংকর কিছু বলার জন্যেই এখানে এসেছেন । বাবা বলতেই থাকলেন,
“তোমাকে আমি কিছু বলছিনা । আর কিই বা বলবো বলো । তবে আমি জয়ন্তীর সাথে কথা বলে ঠিক করলাম যে তোমাকে হোস্টেলে দেওয়াটাই ঠিক হবে । তোমার কি এই সম্পর্কে কিছু বলার আছে ?”
আমি প্রতুত্ত্যরে কিছুই বললাম না । বাবা বুঝে নিলেন আমার বলার কিছুই নেই । তিনি সব ব্যবস্থা করতে শুরু করলেন । ১৪ই মে আমার যাওয়া ঠিকঠাক হলো । রাতে খাবার খেয়ে অনেকক্ষন ধরে ব্রাশ করলাম । শুতে গিয়ে দেখি আমার ঘরটা সুন্দর করে গোছানো । আমি অনেক অবাক চোখে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে তারপর বিছানায় শুয়ে পড়লাম । হঠাৎ করেই একটা ঠান্ডা হাতের স্পর্শ অনুভব করলাম । হাতটা অনেকক্ষন ধরে আমার বাহুর উপর স্থির হয়ে রইল । বুঝতে বাকি রইল না এই “ঠান্ডা হাতের” অধিকারীনী কে ? আমার গালদুটো অভিমানের জলে ভিজে গেল । বড়দিদি আমার মুখটা তার মুখের দিকে ফেরালেন । আমি ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না । হঠাৎ করে ডুকরে কেঁদে উঠে আমি বড়দিদিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,
“তোমাকে ছেড়ে আমি কোথাও যাবনা, কো-থ-থা-ও না । ”
বড়দিদি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
“পাগল কোথাকার, কে বলল তোকে যেতে হবে ? আমি তোকে কোথাও যেতে দিলে তো । তুই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া কর, তোকে কোথাও যেতে হবেনা, আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলব । ”
আমি অবিশ্বাস্য চোখে বড়দিদিকে আর একবার জড়িয়ে ধরতে ধরতে ভাবলাম, ও নিশ্চয়ই আগের জন্মে আমার মা ছিল ।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×