somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ জোনাকি (শেষ পর্ব)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘জয়নাব মঞ্জিল’ এ সকাল থেকেই সাজ সাজ রব । নতুন কলিং বেল আর গেট লাগানো হয়েছে। বাড়ির ছোট মেয়ে ব্যারিস্টার কুসুম আজই লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসছে । মেহমানে গিজগিজ করছে গোটা বাড়ি । বিয়েবাড়ি বিয়েবাড়ি বলে ভুল হচ্ছে । কুসুম ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে । সিয়ামের টিকিটিরও দেখা নেই । আগে জানলে কুসুম আজকে পড়াতে আসতো না । তাকে কেউ আসার জন্য মানা করেনি । রোকসানা বারকয়েক এসে ঘুরে গেলেও সিয়ামকে ডেকে দেওয়ার নামগন্ধ নেই । পোলাওয়ের মৌ মৌ সুবাস নাকে আসতেই রাহেলার কথা মনে পড়ল কুসুমের । রাহেলা গত মাসের শেষে কোন এক বৃষ্টির দিনে খুব করে পোলাও খেতে চেয়েছিল । ডাক্তার, টেস্টে অনেক টাকা বেরিয়ে যাওয়ায় খালি পকেটের দিকে তাকিয়ে কুসুম ‘দেবো দিচ্ছি’ করেছিল । আর এই কারণে রাহেলা প্রচণ্ড অভিমানে মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছিল । এতদিন পর কথাটা মনে করে মুহূর্তেই কুসুমের বুকটা কষ্টে ভরে গেল ।
“কুসুম, তোমার সাথে একজনকে পরিচয় করাতে নিয়ে এলাম । এ হচ্ছে ব্যারিস্টার কুসুম । আমার একমাত্র ননদ । লন্ডন থেকে আজই এলো ।“ রোকসানা উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে রুমে ঢুকল ।
এই সেই দুই বেণী করা মেয়েটি । কুসুম যার নাম দিয়েছিল কুসুমকুমারী । ছোটবেলার গোলগাল দুই বেণী চেহারাটার অনেকটাই বদলে গেছে । শুধু শ্যাম্পু করা ঘন কালো চুলের ভেতর দিয়ে দৃষ্টিটা এখনো আগের মতোই আছে ।
“আপনি সিয়ামের টিচার ? শুনলাম আপনার নামও নাকি কুসুম ? সিয়াম আপনার কথা খুব বলল । ভালই ফ্যান বানিয়ে ফেলেছেন দেখছি এরই মধ্যে ।” কথাটা বলেই একটা ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিল সে । দৃষ্টির সাথে আচরণের অসাধারণ মিল । রোকসানা বিষয়টা অতোটা বুঝল না । অথবা বুঝেও হয়তো বুঝল না কে জানে ।
“আসলে কি জানো, সিয়াম এতদিন ফুপুর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিল । এখন ভাগীদার বেড়ে যাওয়াতেই... ।”
“মোটেই না ভাবী । আমি এটা মিন করিনি ।” ব্যারিস্টার কুসুম ঝাঁঝ দেখিয়ে বলল । তারপর কুসুমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি খেয়ে যাবেন ।” বলেই ঝড়ের গতিতে সে বেডরুমের দিকে চলে গেল । রোকসানা চরম বিব্রত ভঙ্গিতে কি যেন বলতে চাইল । কুসুম মোটেই অবাক হলনা । আচরণটা তার কাছে প্রত্যাশিতই ছিল ।
“আপা, কিছু মনে করবেন না । আমার বোনকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যেতে হবে । ৪ টায় অ্যাপয়েন্টমেন্ট । আমি বরং আজকে যাই । দেরি হলে জ্যামে পড়ে যাব ।”
কুসুম ব্যাগ কাঁধে নিয়ে উঠে দাঁড়াল । রোকসানা কুসুমের হাত ধরল,
“তুমি ওর কথায় রাগ করোনা । ও একটু বদমেজাজি । কিন্তু মনটা খুবই ভাল, জানো । খেয়ে যাও । কতক্ষনইবা লাগবে বল ?”
“না, আপা, রাগ করিনি । সত্যিই তাড়া আছে আমার ।”
বাইরে কারও আগমনে শোরগোল শোনা যাচ্ছে । রোকসানা তাতে মনোযোগী হওয়ার সুযোগে কুসুম বেরিয়ে গেল । আগমনকর্তার অট্টহাসি শুধু বিল্ডিং নয় কুসুমের বুকটাও কাঁপিয়ে দিল । হাসিটা বড় চেনা একজন মানুষের সাথে আশ্চর্যজনক মিল । পৃথিবীটা সত্যিই বড় অদ্ভুত । মাঝে মাঝে অসম্ভব কিছু মুহূর্তের সাথে আমাদের হঠাৎ করেই পরিচয় করিয়ে দিয়ে যায় ।

নিউ মার্কেটের সামনে গরম কাপড় বিক্রির পসরা । একটা সোয়েটার অথবা শাল কেনার কথা এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিদিনই ভাবে কুসুম । কিন্তু দৈনন্দিনের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে শেষপর্যন্ত আর কেনা হয়ে ওঠেনা । নিউ মার্কেট পেরিয়ে নীলক্ষেতের রাস্তায় নামলেই রাস্তার ওপাড়ের খাবারে দোকানগুলোতে কুসুমের কেবলই চোখ আটকায় । বড় স্মৃতিময় একটা দোকান ‘বার্গার কিং’ । সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় অদ্ভুত একটা অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় । অনেক আগের মায়া মায়া একটা দিনের কথা মনে করিয়ে দেয় । দিনটা রোববার ছিল । পরেরদিন কি একটা অ্যাসাইনমেন্টের চিন্তায় ব্যস্ত রাস্তা পার হতে গিয়ে বাধা পড়ল কুসুমের । কে যেন পেছন থেকে তার নাম ধরে ডাকছে । শ্রুতিভ্রম নয়ত ? নাহ ভুল হয়নি । ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরল সে । সামি । দোকানেই বসে ছিল । ডাকতে ডাকতে বাইরে চলে এসেছে ।
“বাব্বা, অনেক তাড়াহুড়া মনে হচ্ছে ?”
“সরি, শুনতে পাইনি, তুমি আমাকে ডাকছিলে ?” কুসুম বিব্রত । কিছুটা হতচকিত ।
“আমাকে একটু সময় দেয়া যাবে ?”
অসম্ভব অবাক হল কুসুম । সামি তার কাছে সময় চাইছে ? ও বড়লোকের একমাত্র ছেলে । যতদূর জানা যায় তার সময়প্রার্থীর তালিকাও বেশ আকর্ষণীয় এবং দীর্ঘ । তাতে কুসুমের অনুপ্রবেশ একেবারেই অকল্পনীয় । মেয়েরা সামিদের প্রেমে পড়তে পারে, কিন্তু সামি-রা পড়ে না । এটাই বাস্তবতা ।
কুসুম মাটির দিকে তাকিয়ে বলল, “সামি আমাকে বাস ধরতে হবে । তাছাড়া কালকের অ্যাসাইনমেন্টটাও রেডি করতে হবে ।”
“পাঁচ মিনিট ? প্লিজ ?”
ওর বলার ভঙ্গিতে কিছু একটা ছিল । কুসুম না করতে গিয়েও পারেনি । না করতে পারার আরও কিছু কারণের মধ্যে সেদিনের কেমিস্ট্রি ক্লাসের মুগ্ধতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল বোধহয় ।
মিরিন্ডার হিমশীতল বোতলের সামনে গ্রীষ্মবেলার অসহ্য পাঁচ মিনিট মুহূর্তেই স্বপ্নিল এক ঘণ্টায় রূপান্তরিত হল ।
ক্যাম্পাসে পরের দিন সবার মুখে একটাই ডায়ালগ “কুসুম কুসুম ভালবাসা” । সামির অতি-উৎসাহী কিছু গোয়েন্দা সহপাঠীর ঈর্ষান্বিত প্রচারণা । মহিলা সহপাঠী !! কোন সন্দেহ নেই ।
কুসুম অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে কলেজের বাইরে একটা ক্যাফেটেরিয়ায় সামিকে ডাকল ।
“এসব কি হচ্ছে সামি ? তুমি ডেকেছিলে বলেই কিন্তু... ।” কথাটা শেষ করতে দেয়নি সামি ।
“কুসুম আমি সেদিন তোমাকে একটা কথা বলার জন্য ডেকেছিলাম, তুমি বুঝতে পারো নি ।”
“কি কথা ?”
“এটা নিয়ে যাও, এখন না, বাসায় গিয়ে পড়বে ।”
একটা চিঠি । নীল খাম । সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পর কুসুম খুব ভয়ে ভয়ে চিঠিটা খুলেছিল । গোলাপি পাতায় গোলাপ পাপড়ি পরিবেষ্টিত এতদিনের না বলা অনেক কথা । কুসুম অনেকদিন পরেও জিজ্ঞেস করতে পারেনি এত মেয়ে থাকতে সামি কেন তাকেই ভালবেসেছিল ।

মিনু আলমারি খুলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন । ২৮ বছর পুরানো ভাঙ্গা আলমারি । বিয়ের সময় দুবাই প্রবাসী মামার দেওয়া উপহার ছিল এটা । তখন চারিদিকে যুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছে । কুসুম তখন মিনুর পেটে । সরকারি চাকুরীজীবী স্বামী নিজে ঢাকায় থেকে মিনুকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় । দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগে কুসুমের বাবা গ্রামে চলে যান । সেই রাতেই ঢাকার বাসায় আর্মি অভিযান হয় । তারা বাসায় কাউকে না পেয়ে ফাঁকা গুলি করে রেখে যায় । ভাঙ্গা আলমারিটার গায়ে গুলির সেই গর্ত দুটো চোখ হয়ে যেন মিনুর দিকে তাকিয়ে থাকে সবসময় । উপরের তাকে রাখা বিয়ের লাল বেনারসিটার দিকে তিনি কেন জানি বেশিক্ষণ তাকাতে পারেন না । সেটা কি লজ্জায় না কষ্টে, আজও তাঁর অজানা । কুসুমের বাবা রংপুর বদলি হওয়ার পর প্রতি শুক্রবার রাতে ঢাকায় আসতেন । রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে মিনুর প্রতি তাঁর একটাই আবদার থাকতো, বিয়ের লাল বেনারসিটা পরে এসো । মিনু মুখে কপট রাগ দেখালেও স্বামীর এই অনুরোধটুকু কখনই ফেলেন নি । লজ্জাবনত বেনারসি-পরিবেষ্টিত সেই রাতগুলোর স্মৃতি আজও তিনি রোমন্থন করেন...প্রতি শুক্রবার... মেয়েরা ঘুমিয়ে যাবার পর ...শাড়িটাকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে ।
খুট করে একটা শব্দ হল । মিনু তাকিয়ে দেখলেন রাহেলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ।
“কিছু বলবি মা ?”
রাহেলা এসে মিনুকে জড়িয়ে ধরে । মিনু ওর কপালে চুমু খেলেন । রাহেলার মুখের দিকে আজকাল তিনি আর তাকাতে পারেন না । একটা নিভু নিভু প্রদীপ প্রবল ঝড় বাতাসে কোনোরকমে সলতে উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে যেন । রাহেলা পেটে থাকা অবস্থায় ক্যান্সারে মারা গেলেন কুসুমের বাবা । মুক্তিযুদ্ধ দেখলেন কুসুমকে নিয়ে আর জীবন যুদ্ধে ঝাঁপালেন রাহেলাকে নিয়ে । যুদ্ধ কখনোই তাঁর পিছু ছাড়েনি, আজও ছাড়বেনা ।
“মা, আপা কাঁদছে । ডাক্তার কি রিপোর্ট দেখে খারাপ কিছু বলেছে? তোমরা তো আমাকে কিছুই বলছনা ।”
“যা শুইয়া পর, ম্যালা রাত হইসে না ?”
“ঘুম আসছে না, মা । আমার মাথায় হাত বুলিয়ে একটু ঘুম পাড়িয়ে দেবে ?”
মিনু হেসে ফেললেন । কাষ্ঠময় হাসি । ছোটবেলায় রাহেলাকে ঘুম পাড়াতে গেলে জানালার ওপাশে চাঁদ দেখিয়ে গল্প না বললে তার ঘুম আসতো না । সারা আকাশ চষেও আজ চাঁদ পাওয়া গেল না । আজ কি তবে অমাবস্যা ? কে জানে ।

রোকসানা খুব ঠাণ্ডা মেজাজের ভালো মেয়ে হিসেবেই শ্বশুরবাড়িতে পরিচিত । তার রাগী চেহারা শেষ কবে দেখা গেছে সেটা একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে । জয়নাব বেগম সকাল থেকে তাঁর আবছা স্মৃতি হাতড়েও এরকম কোন ঘটনা বের করতে পারেননি । প্রতিদিনের নাস্তা থেকে শুরু করে কার কোনটা প্রয়োজন সবটা যে মেয়ের নখদর্পণে সে কি কারণে দরজা আটকে বসে আছে সেটা কারোরই মাথায় ঢুকছে না । শফিকের অফিসে ফোন দিয়ে জানা গেল সে মন্ত্রীর সাথে জরুরী মিটিং এ আছে, ১২ টার আগে দুনিয়া উল্টে গেলেও নাকি তার বের হওয়া সম্ভব না । জয়নাব বেগম বর্তমানে সংসারের সমস্যা সরাসরি মোকাবেলা করে অভ্যস্ত নন । বছর চারেক আগে স্বামী মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত তিনিই সামলেছেন সবটা । এখন পুরোটা সামলায় শফিক আর রোকসানা । মেয়ে কুসুম তাকে এসব কারণে “বোগাস বু” ডাকে । তিনি এতে মনখারাপ করেননা । সত্যিই এখন তিনি তাই । ছেলের বউয়ের দরজা আটকে থাকার কারণ সেই সাথে করনীয় ব্যবস্থাদি সম্পর্কে যার কোন ধারণা নেই, সে আসলেই সুপার “বোগাস বু” ছাড়া আর কি ? এটাকে ঠিক ইমারজেন্সি অবস্থা বলা যায় কিনা এটা ভাবতে ভাবতেই তিনি মেয়েকে খবর দিলেন । কুসুম এসেই মাকে একটা ঝাড়ি দিলো,
“ভাবি দরজা বন্ধ করে বসে আছে, কোন সাড়াশব্দ নেই ? মাই গড ? কখন থেকে ? আমাকে এতক্ষণে জানাচ্ছ ? ভাইয়া জানে ?
জয়নাব বেগম প্রশ্নের তোড়ে বিপর্যস্ত বোধ করলেন । এদিক ওদিক দিশেহারা হয়ে তাকিয়ে শূন্য চোখে প্রশ্ন করলেন,
“কি বলিস, দরজা ভাঙ্গবো ?”
“দেরী করে লাভ কি ? সোলায়মানকে খবর দাও । ও এসে দরজা ভাঙ্গুক । কে জানে এতক্ষণে গলায় ফাঁস-টাঁস লাগিয়ে ঝুলেই পড়ল কিনা ।”
“চুপ, কোন অলুক্ষুনে কথা বলবি না । রোকসানা এরকম মেয়েই না । তোকে ডাকাটাই আমার ভুল হয়েছে ।”
জয়নাব বেগম রাগের চোটে বসে পড়লেন । ততক্ষণে সোলায়মান এসে হাজির হয়েছে । সে এই বাসার মালী কাম দারোয়ান এবং অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন ব্যক্তি । বিনামূল্যে বুদ্ধি-পরামর্শ দিতে তার কোন ক্লান্তি নেই এবং এজন্য রাত-বিরাত কোন ব্যাপারই না । সর্বদা জনগণের সেবায় নিয়োজিত টাইপ মানুষ । সে এসে জয়নাব বেগমকে কদমবুসি করলো । অতঃপর গলা নামিয়ে বলল,
“বেগম সাহেবা, দরজা ভাঙ্গাভাঙ্গিতে শব্দ হইলে সমস্যা নাই তো ?”
জয়নাব বেগম বিস্ফারিত নেত্রে সোলায়মানের দিকে তাকালেন । তারপর বললেন,
“তুমি যখন জানতে পেরেছ, তখন আশেপাশের ১০ জনকে ব্যাপারটা না বলে নিশ্চয়ই আসোনি । জানাজানির কি আর কিছু বাকি আছে ? হোক শব্দ, দরজা ভাঙো ।”
এই প্রথম তাঁকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হোল । বিপদে পড়লে আল্লাহই সাহস জোগান বোধহয় । সোলায়মান বেশ কায়দা করে দরজা খোলার প্রস্তুতি নিয়ে দরজার নবে হাত দিয়েই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ।
“বেগম সাহেবা, দরজা তো খোলাই ।”
এত হাঙ্গামার মধ্যে রোকসানা কখন দরজা খুলে দিয়েছে কেউ টের পায়নি । সবাই মিলে ঘরে ঢুকে দেখল রোকসানা খাটের উপর বসে আছে । খোলা চুলের ফাঁক দিয়ে কাজলটানা রক্তাভ চোখ জানান দিচ্ছে একটু আগের প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসের কথা ।
জয়নাব বেগম মুহূর্তে সাবধান হলেন । কুসুম ছাড়া সবাইকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে আদেশ দিলেন । কুসুম এরমধ্যেই আড়চোখে দেখে নিলো সিলিং ফ্যানে কোন ওড়না বা কাপড় জাতীয় কিছু ঝুলছে কিনা,সেইসাথে পুরো রুমটাও এক ফাঁকে চোখ বুলালো সে । রোকসানা সেটা খেয়াল করে দেখে আবার চোখ নামিয়ে নিলো । জয়নাব বেগম এগিয়ে এসে রোকসানার মাথায় স্নেহের হাত রাখলেন । রোকসানা মাকে খুব অল্প বয়সে হারিয়ে শাশুড়ির মাঝেই জান্নাতবাসী মাকে খুঁজে নিয়েছিল । জয়নাব বেগমও এটা বুঝতে পেরে এক মুহূর্তের জন্যও তাঁকে স্নেহবঞ্চিত করেন নি । বরং প্রয়োজনের তুলনায় সেটা মাঝে মাঝে বেশিই মনে হত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে । রোকসানা শাশুড়িকে হাত ধরে খাটে বসাল । তারপর ওয়াড্রোব থেকে গয়নার বাক্স বের করে বলল,
“মা আপনি আপনার গয়নাগুলো নিয়ে যান।”
জয়নাব বেগম কুঁকড়ে গেলেন । ব্যাপারটা তিনি তখনো ধরতে পারেন নি ।
“সে কি ? মা, তুমি এসব কি বলছো হঠাৎ ? ওগুলো আমি তোমাকে দিয়েছি । ফেরত নেয়ার কথা আসছে কেন ?”
“প্লীজ মা, আপনার পায়ে পড়ি আপনি এগুলো নিয়ে যান ।”
জয়নাব বেগম দ্বিধান্বিত হলেন । প্রকৃতপক্ষে কুসুমের আসার পরের দিন ঘটে যাওয়া কিছু অসংলগ্ন ঘটনা তাঁকে পুনরায় দ্বিধান্বিত করলো । এই ঘটনার সাথে সেগুলোর কি কোন যোগসূত্র আছে ? তাহলে তো বিপদ । আগুন এখনই নেভাতে হবে, নাহলে তার লেলিহান শিখা কোন কিছুই বাদ রাখবে না । তিনি কুসুমের দিকে ফিরলেন,
“কুসুম তোর বিয়ের গয়না পছন্দ হয়েছে ?”
কুসুম নিশ্চুপ । তার দৃষ্টি আটকে আছে রোকসানার বের করা গয়নার বাক্স থেকে উঁকি মারা সীতা হার আর বাজুবন্ধের উপর । জয়নাব বেগমের সন্দেহ পরিষ্কার হোল। সমস্যা তাহলে তিনি যেটা ভাবছেন সেটাই। কুসুম লন্ডন পড়তে যাওয়ার পর তিনি রোকসানাকে একদিন ডেকে সীতা হার আর বাজুবন্ধটা পরতে দিয়েছিলেন কোন এক অনুষ্ঠানের জন্যে, আর ফেরত নেননি, ইচ্ছে করেই । এতিম মেয়েটা তাঁর জন্য, এই সংসারের জন্য যা করে তা এই সামান্য গয়না দিয়ে মেটানো সম্ভব নয় । এই বোধ থেকেই তিনি রোকসানাকে সেগুলো দিয়েছিলেন । কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি কুসুম এসে ওগুলোই খুঁজবে এবং খুঁজেছেও, রোকসানার অনুপস্থিতিতে, তার ঘরে এসে । বিষয়টা গোপন থাকেনি। জয়নাব বেগম মানসম্মান রক্ষার্থে ঘটনা চেপে গেলেও রোকসানার যে চোখ এড়ায় নি, আজকের ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ ।
জয়নাব বেগম শান্ত গলায় সামনের দিকে তাকিয়ে শুধু একটা কথাই বললেন,
“শোন মা, আমি মির্জা বাড়ির মেয়ে । যাকে যা দেই তা মরে গেলেও আর ফেরত নেই না । আর এই গয়নাগুলো আমার বাবার দেয়া, যাকে খুশি তাঁকে দেয়ার অধিকার আমার আছে । আমার সব গয়না তো তোমাদের জন্যই। আমি এই বুড়ো বয়সে এগুলো নিয়ে কি করবো ? কুসুমের বিয়ের জন্য তোমার শ্বশুর নিজের হাতে গয়না বানিয়ে লকারে রেখে গিয়েছিলেন। সুতরাং তার আর গয়নার প্রয়োজন নেই। আশা করি ভবিষ্যতে তুমি অথবা কুসুম কেউই এটা নিয়ে আর কোন কথা তুলবে না ।”
এটা বলেই জয়নাব বেগম অনেকটা হালকা বোধের অনুভূতি নিয়ে রোকসানার ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন ।

কুসুম আজকে বাসায় যাবেনা বলে ঠিক করেছে। কথা নেই বার্তা নেই “তোকে ছেলে-পক্ষ কাল বিকেলে দেখতে আসবে’ এরকম বিনা মেঘে বজ্রপাত কার সহ্য হয় ? প্রস্তাব এনেছেন মিনুর দুঃসম্পর্কের বোন রীতা । তাঁর এক ভাইপো যে কিনা ইটালিতে থাকে, তার জন্যে। রীতা খালার ভাষ্যমতে ছেলের পয়সা-পাতি ভালোই, ছেলেও নিজেও খারাপ না। কিন্তু কুসুম কি করে কাউকে বোঝাবে দুনিয়ার তাবৎ ছেলেদের উপর তার বিশ্বাস একেবারেই উঠে গেছে। বিশেষ করে বিয়ে নামক বস্তুটার প্রতি নূন্যতম আগ্রহও এখন নেই বললেই চলে। খালার পান খাওয়া লাল মুখে ছেলের প্রশংসা শুনতে শুনতে মিনু মোহাবিষ্ট হলেও কুসুম আড়ষ্ঠ হয়ে রইল। তারপর আচমকা বলে বসলো,
“খালা, ম্যালা গুণ গাইছেন। এইবার ছেলের দোষ কিছু থাকলে বলেন।”
রীতা খালা বেজায় থতমত খেলেন। মুহূর্তেই তাঁর চেহারার মানচিত্র বদলে গেল। কিন্তু তিনি “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন” নীতিতে বিশ্বাসী বলে খুব কৌশলে নিজেকে সামলালেন। মিষ্টি হেসে আরেক খিলি পান মুখে পুরে জবাব দিলেন,
“আম্মাজান ছেলেরা হইলো গিয়া সোনার আংটি । ব্যাকা ত্যাড়া যাই হউক, চলবো । হেগো দোষ দুই চাইরটা থাকলেই বা কি, না থাকলেই বা কি?”
কুসুম দমবার পাত্রী নয় । সে ঠিক করলো রোজ রোজ এইসব ফাজলামির সে শেষ দেখে তবে ছাড়বে ।
“যে দুই চারটা আছে সেগুলাই বলেন, শুনি । বিয়ার আগে থেকে জাইনা নিলে সুবিধা না ?”
রীতা খালা হাওয়া বুঝতে পারছেন না । কথা যেন কেমন কেমন ঠেকছে । মেয়ে কি বলতে চায় ?
“কি সুবিধা আম্মা ?”
“এই ধরেন গিয়া খালা, ছেলের যদি মাথা গরমের রোগ থাকে, এইডা আগে থেকে জানা থাকলে খাটের নিচে লাঠি, বাঁশ কিছু একটা রাইখা দিমু । ঠিক আছে কখন কুন সময় কামে লাগে । আবার ধরেন গিয়া যদি চরিত্র খারাপ থাকে, মাইয়া মাইনসের দোষ থাকে...।”
“কি যে কন আম্মা, ছেলের এই সমস্ত কিছু নাই, খালি বয়সটা সামান্য বেশী, এইডাই ।”
“কত বেশী ?”
“এই ধরেন গিয়া পঁয়তাল্লিশ-ছেচল্লিশ হইবো ।”
রীতা খালার “পঁয়তাল্লিশ-ছেচল্লিশ” বলা মানে হচ্ছে এর সাথে আরও চার-পাঁচ বছর যোগ দিতে হবে । কুসুম হাই তুলল,
“আগের বউ আছে না মরছে ?”
“মরছে ১০ বছর হইসে । কিন্তু হেই ঘরে কুনো পুলাপাইন নাই । এক্কেরে ঝাড়া হাত পা।”
বোঝা গেলো ছেলে মেয়ে না থাকার মতো ইতিবাচক একটা ব্যাপার বলতে পেরে রীতা খালা মনে মনে খুব খুশি । সেই খুশি তাঁর চেহারাতেও দেখা গেলো । কুসুম শোনার পর খুব একটা অবাক হলনা, ব্যতিক্রম কিছু হলেই বরং সে অবাক হত। কিন্তু মিনুর চেহারায় এতক্ষণে বিষণ্ণতার ছায়া পড়লো । গরীব আর বাপ মরা বলেই কি এই ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দেবেন তিনি ? মেয়ের বাপ বেঁচে থাকলে জীবনেও এধরনের প্রস্তাব আনার সাহস করতো না কেউ । কি এমন বয়স হয়েছে কুসুমের ? গরিব ঘরে একটা দুটো ভালো প্রস্তাব আসা কি অপরাধ ? পথ ভুল করেও তো এলো না কোনদিন । যৌতুক ছাড়া বিয়ে মানেই কি এইসব ছেলের প্রস্তাব । মিনু নিজের উপর হঠাৎ প্রচণ্ড ঘৃণা আর আত্মগ্লানি অনুভব করায় উঠে বারান্দায় চলে গেলেন।

রাহেলার শরীর ক্রমশই খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে অনেকদিন ধরেই। কুসুম রিপোর্ট নিয়ে হাসিবের সাথে আগের মঙ্গলবার কথা বলে এসেছিল। কিডনির ডোনার এই মুহূর্তে পাওয়া যাচ্ছে না। জীবনে অনেক কঠিন বিপদেও যে মেয়ে কখনো দিশেহারা হয়নি সেই কুসুম হাসিবের চেম্বারে বসে অঝোর ধারায় কেঁদেছিল সেদিন।
“হাসিব, আমার কিডনি নেয়া যাবে না ?”
“অসম্ভব কথা বলোনা, তোমার আর রাহেলার ব্লাড গ্রুপ ভিন্ন। কিভাবে হয়, বল ?”
“কত অসম্ভবই তো সম্ভব হয়, এটা কেন হয় না ?”
“নিজেকে শক্ত রাখো কুসুম। তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে খালাম্মাকে কে সামলাবে। ধৈর্য্য ধর। একটা ব্যবস্থা হবেই। দেখো তুমি।”

ধৈর্য্য আসলেই বেশিদিন ধরতে হয়নি। কিডনি পাওয়া গেল। মিনু তার বশির ভাইয়ের কাছে গ্রামের ভিটার লাগোয়া ২ কাঠা ধানী জমিটা বিক্রি করে দিলেন। গয়নাগাটি যা ছিল কুসুমের বাবার ক্যান্সারের চিকিৎসায় অনেক আগেই শেষ হয়েছে। শেষ সম্বল বলতে ওই জমিটুকুই ছিল। বশির ভাই যথেষ্ট ধনী হওয়া সত্বেও মিনু কখনো তাঁর কাছে আঁচল পাতেননি। এবার অভাবে পড়ে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তাই করতে বাধ্য হয়েছেন। বশির ভাইও কর্তব্যে অবহেলা করেননি। বোনকে তার জমি বিক্রি করার পরামর্শটা বিনামূল্যেই দান করেছেন।
“তোর জমি থাকতে মাইনস্যের কাছে হাত পাতবি কি জন্যি ? আমি সব ব্যবস্থা করতিসি। ভালো দামে বেচা হয়ে যাবিনি দেখিস।”

ভালো দামই বটে। মিনু কোন উচ্চবাচ্য না করে টাকাটা নিয়ে এসেছিল। ২৫শে মার্চের কালো রাত্রি কারো কারো জীবনে ২ বারও আসে। মিনুরও এলো। কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফল হওয়ার ২ সপ্তাহ পর অর্থাৎ ২৫শে মার্চ ১৯৯৮ তারিখে রাহেলা আবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ফিরে গেলো।

২৬শে মার্চ রাতে রাহেলাকে যখন অ্যাম্বুলেন্স বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল দূরে “জয়নাব মঞ্জিল”-এ তখন বিয়ের সানাই বাজছে। ব্যারিস্টার কুসুমের বিয়ে। ইঞ্জিনিয়ার পাত্র নাইমুর হাসান সামি। কুসুম বকেয়া বেতন আনতে গিয়ে কার্ডসহ নিমন্ত্রণ পেয়েছিল। সামি জীবনের হিসেব মেলাতে ভুল করেনি। হয়তো এভাবেই মেলাতে হয়। কুসুম কার্ডটা হাতে নিয়ে “কুসুম” নামটুকুর দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ। সামির পাশে নামটা প্রভাব প্রতিপত্তির রোশনাই জ্বালিয়ে জ্বলজ্বল করছে যেন। একই নামের দুজন মানুষ। অথচ ভাগ্যের পরিক্রমায় একজন বিজয়ী, আরেকজন পরাজিত।

আজ অনেকদিন পর পূর্ণিমার অপার্থিব আলোতে রাহেলার ঘর ভেসে যাচ্ছে। মিনু তাকিয়ে আছেন সাদা কাফনে জড়ানো মায়া মায়া জ্যোৎস্না নিয়ে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে যাওয়া মেয়েটার মুখের দিকে। থাক ঘুমাক পরীটা...
শেষ রাত্রির ঘুম।
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×