ছুটির দিনের ভোররাতে হঠাৎ করেই শরীরে শীত শীত অনুভূতি । বিছানার পাশে সাইড টেবিল । অন্ধকারের মধ্যেই সেটার ড্রয়ার হাতড়ে থার্মোমিটার বের করে টেবিল ল্যাম্প জ্বাললাম । শরীরের তাপমাত্রা মেপে তো আমি হতবাক । থার্মোমিটার প্রায় ফেটে যাবার মতো অবস্থা । ১০৫ ডিগ্রী জ্বর । কয়েকদিন যাবত প্রচণ্ড কাজের চাপ, তার উপর ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব, সব মিলিয়ে সপ্তাহান্তে বিছানায় পড়লাম এবং অবধারিত জ্বর ।
বাসায় কেউ না থাকায় কাউকে কিছু বলার কোন উপায় নেই । উঠে বসে এক গ্লাস পানি ঢেলে খাবো এই শক্তিটুকুও শরীরে অবশিষ্ট নেই । মাথায় যখন জলপট্টি দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি ঠিক সেই মুহূর্তে হঠাৎ পাশে যেন কারো উপস্থিতি টের পেলাম । সেইসাথে হাল্কা মিষ্টি একটা সুগন্ধ । তার উপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভয় পেয়ে গেলাম । তাহলে তো জ্বর বাড়ছে । জ্বরের ঘোরের মধ্যেই টের পাচ্ছি সুগন্ধটা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে , সেই সঙ্গে বাড়ছে আমার উদ্বেগের মাত্রা । এবং এর একটাই কারণ..গন্ধটা আমার খুবই পরিচিত এবং খুবই আপন । হঠাৎ মনে হল , গন্ধটার সাথে আমার কিছু ভালোলাগার স্মৃতি জড়িয়ে আছে বলেই হয়তো এটাকে এতো ভালো লাগছে । গন্ধটা আষ্টেপৃষ্ঠে লেপটে আছে আমার পাশে বসে থাকা মানুষটার গায়ে । চোখ মেলে তাকে দেখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাত বাড়িয়ে তাকে স্পর্শ করতে চাইলাম , পারলাম না । অস্থির হয়ে উঠলাম আমি , “কে তুমি ?” হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে হাসল সে । তার মুখ জুড়ে শুধু যেন সেই হাসিটারই অস্তিত্ব । এক অদ্ভুত সুন্দর মায়াবী আলোয় ভরা তার সেই অবয়বহীন নির্মল হাসি । অপার্থিব সুখে আপ্লুত হলাম আমি । কিন্তু শিহরন তোলা এই হাসি যার পক্ষে দেওয়া সম্ভব সেই মানুষটা তো এখন পৃথিবীর অন্য এক প্রান্তের ,অন্য এক শহরের বাসিন্দা । কোন অধিকার বলেই যাকে আমি কখনো স্পর্শ করতে পারবো না ।
এই প্রথম ভোর হওয়ার অনেক পরে আমার ঘুম ভাঙ্গল । অনুভব করলাম গায়ে জ্বরের লেশমাত্র নেই । কিন্তু গতরাতের সেই অপার্থিব হাসি এবং সুগন্ধ আমার নিজের কাছে বিস্মৃতির আড়ালে তলিয়ে যাওয়া এই মানুষটিকে নতুন করিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেলো । জয়তু জ্বর । এইরকম অভূতপূর্ব আর একটি জ্বরের জন্যে আমি সারাজীবন অপেক্ষা করতে চাই….. সারাজীবন ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:২৬