প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
প্রথম পর্বের পর...
আমার কথা মত বিজন সব ব্যবস্থাই করে দিয়েছে। একদম সময় মতো। মেঘনার বিয়ের আগের দিন আমি দেশে ফিরে এলাম। প্রায় পনের বছর পর, দেশের মাটিতে পা দিতেই, গায়ে কেমন কাটা দিয়ে উঠল। মেঘনার সাথে ফোনে কথা হওয়ার পর, ওর সাথে Whats app এ কথা বলতে শুরু করি। তখনই ওর কাছ থেকে, ওদের বাড়ির ঠিকানাটা নিয়ে রেখেছিলাম। তাই Airport থেকে Taxi ধরে, সোজা ওদের বাড়ি চলে গেলাম। মনে হয়, এই বাড়িটা নীলার নতুন স্বামীর। কারন ওর বাবার বাড়িটা অন্য জায়াগায় ছিল। টাক্সিওয়ালা আমাকে জায়গা মতো নামিয়ে দিল। বাড়িটা একদম বিয়ের সাজে তৈরি। বিয়ের কারনে সারা বাড়িতে প্রচুর লাইট লাগানো হয়েছে। অসাধারন লাগছে বাড়িটাকে। আমার ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে সামনের দিকে এগোতেই, একটি যুবক ছেলে এসে জিঞ্জেস করল –
-“কাকে চাই অঙ্কেল আপনার?”
-“আসলে, এখানে মেঘনার বিয়ে হচ্ছে তো?”
-“হ্যাঁ এখানে মেঘনারই বিয়ে হচ্ছে।”
-“ও, যাক ঠিক বাড়িতে এসেছি। তুমি একটু ওকে বলবে কি, কানাডা থেকে সজল রায় এসেছে”।
-“ঠিক আছে আঙ্কেল, আপনি একটু দাঁড়ান, আমি ওকে খবর দিয়ে আসছি”।
এই বলে ছেলেটা বাড়ির ভেতরে চলে গেল। আমি ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে গেটের বাইরে দাড়িয়ে রইলাম। মেঘনার বিয়েতে বেশ ভালই টাকা খরচা করছে নীলা। তাহলে মেয়েটা বোধহয়, খুব একটা অযত্ন হয়ত পায়নি, তার সৎ বাবার কাছে। এই সব কথা যখন ভাবছি, ঠিক তখনই পিছন থেকে দুটো হাতে এসে, আমাকে জড়িয়ে ধরল। ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি, একটি যুবতী মেয়ে। কিন্তু চোখ দুটো সেই ছোটবেলার মতোই আছে। ২০ বছর পর দেখেও, একবারেই চিন্তে পারলাম, ও আমার মেয়ে, মেঘনা। ওমা, আমার মেয়েটার দেখি চোখে জল, আমি বিব্রত হয়ে জিঞ্জেস করলাম-
-“একি রে পরী, তুই কাঁদছিস কেন? আমি চলে এসেছি দেখ, তুই আমাকে আসতে বলেছিলি না। পাগলী মেয়ে দেখ, আমি চলে এসেছি তো”।
কিন্তু কে শোনে কার কথা, সে তো কেদেই চলছে, আমার বুকে মাথা রেখে।
-“পাগলী মা আমার। কাদে না শোনা। এত কাদলে, পরশু যখন জামাই এসে, তোকে নিয়ে যাবে, তখন তো কান্নার জন্য আর জল থাকবে না রে।”
-“ধ্যাত বাবা। তুমি যে কি বল না।”
অনেকক্ষন পর মেঘনা নিজের কান্না থামিয়ে, সেই ছেলেটার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
-“তুই আমার বাবাকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে, বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস? তোর হাল আমি কি করি, তুই দেখিস”।
-“ ও মা, আমি জানব কি করে। যে উনি তোমার বাবা। আগে তো কোন দিন ওনাকে দেখিনি”।
আমি মেঘনাকে আস্বস্ত করে বললাম,
-“ওর কোন দোষ নেই রে মা। আর তাছাড়া ও ঠিক কাজই করেছে। বিয়ে বাড়ির সুযোগে, অনেক উটকো লোক বাড়িতে চলে আসে। ও আমাকে আটকে ঠিকই করেছে”।
-“তাই বলে ও তোমাকে আটকাবে বাবা? ওর কোন কান্ডঞ্জান নেই”।
-“উফ ঠিক আছে, এবার ভেতরে চল তো, আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না”।
আমাকে গেস্টরুমে পৌছে দিয়ে, মেঘনা অনেকক্ষন আমার সাথে বসে গল্প করল। আমার জামাকাপড় বের করে গুছিয়ে রাখল। রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল বলে, খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কারন পরদিন বিয়ে, অনেক সকালে উঠতে হবে। আর বাড়ির সবাইয়ের সাথে, পরিচিতও হতে হবে, দেখাও করতে হবে। এসে থেকে এখনো নীলা বা ওর নতুন হ্যাসব্যান্ডের দেখা পাইনি। মনে হয় ওরা কাজে ব্যাস্ত। আমিও আর ঘাটাইনি। পরদিন সকালে মেঘনার ডাকে আমার ঘুম ভাঙল। ও দেখি, আমাকে ডাকতে এসেছে।
-“বাবা, উঠ পর, অনেক সকাল হল”।
-“উম, হ্যাঁ রে, কটা বাজে?”
-“এই তো সাড়ে ছট। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। দিদি, তোমার সাথে কথা বলতে চায়”।
-“দিদি? মানে নীলার মা”?
-“হ্যাঁ, তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।”
নীলার মা এখনো বেঁচে আছেন শুনে অবাক হলাম আবার একই সাথে ভালোই লাগল। কিন্তু উনি আমাকে কেন ডেকেছেন বুঝলাম না। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে, আমার শাশুড়ি মায়ের কাছে গেলাম। দেখলাম ওনার বয়েস হয়েছে, খাটের উপর বসে আছেন। আমি যেতেই ওনার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ওনাকেও প্রায় ২০ বছর পর দেখালাম। ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বললাম –
-“আপনি কেমন আছেন মা?”
উনি আমাকে আশীর্বাদ দিয়ে বললেন,
-“আমি ভাল আছি বাবা, তুমি কেমন আছ?”
-“আঞ্জে, আপনাদের আশীর্বাদে ভালোই আছি”।
-“দেখ বাবা, তুমি তো জানোই, আজ তোমার মেয়ের বিয়ে। আর মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে তো, বাবাকেই কন্যা সম্প্রদান করতে হয়। তাই আমি বলছিলাম কি, তুমি যদি মেঘনাকে...”
-“আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না মা। আমার মেয়ের সম্প্রদান আমিই করব”।
হঠাৎ পাশ থেকে, একটু কড়া গলায় আওয়াজ এল,
-“মা, ওকে বলে দাও। মেয়েকে সম্প্রদান করছে বলে যেন ভেবে না নেয়, মেয়ে ওনার হয়ে গেল। মেঘনা শুধু আমার মেয়ে। আমিই ওকে মানুষ করেছি”।
কথার উৎস ধরে ঘুরে তাকাতেই দেখি, লাল একটা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে নীলা। নীলা, হ্যাঁ এই সেই নীলা। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে, যে আমার স্ত্রী ছিল। আর এখন ডিভোর্স দেওয়া বউ। চোখে মুখে, চেহারায় একটু বয়েসের ছাপ পরেছে। তাছাড়া নীলা সেই, কুড়ি বছর আগের, জেদী, মেঝাজী, অভিমানী আর অবুঝ নীলাই রয়ে গেছে। ঘরে উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি বললাম,
-“আমি কি তো..., মানে আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে পারি”?
নীলা কিছু বলল না, অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখে একটাই প্রশ্ন “কেন?” “একান্তে কি কথা বলবে তুমি, তোমার এই ডিভোর্সী স্ত্রীকে?” আমার কথা শুনে মেঘনা ওর দিদাকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। আমি নীলার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর মধ্যে সেই প্রথম দিনের মতো অস্বস্তি লক্ষ্য করলাম। একটু তফাত বজায় রেখে জিঞ্জেস করলাম –
-“কেমন আছ নীলা?”
কোন জবাব এলো না। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
-“তোমার ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। আমি এখানে তোমার মেয়ের দাবি জানাতে আসিনি। এসেছি, নিজের মেয়ের বিয়েতে অতিথী হয়ে। এক, দু দিন থাকব, তারপর চলে যাব। তোমার মেয়েকে আমি তোমার থেকে কেড়ে নেব না। সে তোমারই থাকবে। আর তুমি যদি না চাও, তাহলে সম্প্রদানটাও না হয় অন্য কেউ করবে। কেউ তো মাথার দিব্যি দেইনি, বাবাকেই সম্প্রদান করতে হবে”।
নীলা মুখের চোয়ালটা শক্ত করে আমার দিকে ফিরে বলল,
-“আমার কুড়ি বছর আগে নেওয়া সিদ্ধান্তোটাতে যে কোন ভুল ছিল না, সেটা আজ বুঝতে পারছি।” আমি একটু হেসে বললাম
-“তুমি ঠিকিই বলেছ। ভুল তোমার ছিল না। ভুলটা আমার ছিল। আমি মানছি সে কথা। কিন্তু প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝনা। আমি শুধু...
-“দেখ সজল, পুরোন কাসন্দি ঘেটে কোন লাভ নেই। তোমার যদি কোন কাজের কথা থাকে, তাহলে বল। না হলে বাদ দাও। আমার অনেক কাজ পরে আছে।”
-“ঠিক আছে। আমি বুঝতে পারছি, আমি আসায়, তুমি মোটেও খুশি হওনি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আবার আমার মেয়েটাকেও কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, ও কালকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব”।
প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৮