somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার তুমি [আজ দ্বিতীয় পর্ব]

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

প্রথম পর্বের পর...
আমার কথা মত বিজন সব ব্যবস্থাই করে দিয়েছে। একদম সময় মতো। মেঘনার বিয়ের আগের দিন আমি দেশে ফিরে এলাম। প্রায় পনের বছর পর, দেশের মাটিতে পা দিতেই, গায়ে কেমন কাটা দিয়ে উঠল। মেঘনার সাথে ফোনে কথা হওয়ার পর, ওর সাথে Whats app এ কথা বলতে শুরু করি। তখনই ওর কাছ থেকে, ওদের বাড়ির ঠিকানাটা নিয়ে রেখেছিলাম। তাই Airport থেকে Taxi ধরে, সোজা ওদের বাড়ি চলে গেলাম। মনে হয়, এই বাড়িটা নীলার নতুন স্বামীর। কারন ওর বাবার বাড়িটা অন্য জায়াগায় ছিল। টাক্সিওয়ালা আমাকে জায়গা মতো নামিয়ে দিল। বাড়িটা একদম বিয়ের সাজে তৈরি। বিয়ের কারনে সারা বাড়িতে প্রচুর লাইট লাগানো হয়েছে। অসাধারন লাগছে বাড়িটাকে। আমার ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে সামনের দিকে এগোতেই, একটি যুবক ছেলে এসে জিঞ্জেস করল –
-“কাকে চাই অঙ্কেল আপনার?”
-“আসলে, এখানে মেঘনার বিয়ে হচ্ছে তো?”
-“হ্যাঁ এখানে মেঘনারই বিয়ে হচ্ছে।”
-“ও, যাক ঠিক বাড়িতে এসেছি। তুমি একটু ওকে বলবে কি, কানাডা থেকে সজল রায় এসেছে”।
-“ঠিক আছে আঙ্কেল, আপনি একটু দাঁড়ান, আমি ওকে খবর দিয়ে আসছি”।

এই বলে ছেলেটা বাড়ির ভেতরে চলে গেল। আমি ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে গেটের বাইরে দাড়িয়ে রইলাম। মেঘনার বিয়েতে বেশ ভালই টাকা খরচা করছে নীলা। তাহলে মেয়েটা বোধহয়, খুব একটা অযত্ন হয়ত পায়নি, তার সৎ বাবার কাছে। এই সব কথা যখন ভাবছি, ঠিক তখনই পিছন থেকে দুটো হাতে এসে, আমাকে জড়িয়ে ধরল। ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখি, একটি যুবতী মেয়ে। কিন্তু চোখ দুটো সেই ছোটবেলার মতোই আছে। ২০ বছর পর দেখেও, একবারেই চিন্তে পারলাম, ও আমার মেয়ে, মেঘনা। ওমা, আমার মেয়েটার দেখি চোখে জল, আমি বিব্রত হয়ে জিঞ্জেস করলাম-
-“একি রে পরী, তুই কাঁদছিস কেন? আমি চলে এসেছি দেখ, তুই আমাকে আসতে বলেছিলি না। পাগলী মেয়ে দেখ, আমি চলে এসেছি তো”।
কিন্তু কে শোনে কার কথা, সে তো কেদেই চলছে, আমার বুকে মাথা রেখে।
-“পাগলী মা আমার। কাদে না শোনা। এত কাদলে, পরশু যখন জামাই এসে, তোকে নিয়ে যাবে, তখন তো কান্নার জন্য আর জল থাকবে না রে।”
-“ধ্যাত বাবা। তুমি যে কি বল না।”

অনেকক্ষন পর মেঘনা নিজের কান্না থামিয়ে, সেই ছেলেটার দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল,
-“তুই আমার বাবাকে বাড়িতে ঢুকতে না দিয়ে, বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছিস? তোর হাল আমি কি করি, তুই দেখিস”।
-“ ও মা, আমি জানব কি করে। যে উনি তোমার বাবা। আগে তো কোন দিন ওনাকে দেখিনি”।

আমি মেঘনাকে আস্বস্ত করে বললাম,
-“ওর কোন দোষ নেই রে মা। আর তাছাড়া ও ঠিক কাজই করেছে। বিয়ে বাড়ির সুযোগে, অনেক উটকো লোক বাড়িতে চলে আসে। ও আমাকে আটকে ঠিকই করেছে”।
-“তাই বলে ও তোমাকে আটকাবে বাবা? ওর কোন কান্ডঞ্জান নেই”।
-“উফ ঠিক আছে, এবার ভেতরে চল তো, আর বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না”।

আমাকে গেস্টরুমে পৌছে দিয়ে, মেঘনা অনেকক্ষন আমার সাথে বসে গল্প করল। আমার জামাকাপড় বের করে গুছিয়ে রাখল। রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল বলে, খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। কারন পরদিন বিয়ে, অনেক সকালে উঠতে হবে। আর বাড়ির সবাইয়ের সাথে, পরিচিতও হতে হবে, দেখাও করতে হবে। এসে থেকে এখনো নীলা বা ওর নতুন হ্যাসব্যান্ডের দেখা পাইনি। মনে হয় ওরা কাজে ব্যাস্ত। আমিও আর ঘাটাইনি। পরদিন সকালে মেঘনার ডাকে আমার ঘুম ভাঙল। ও দেখি, আমাকে ডাকতে এসেছে।
-“বাবা, উঠ পর, অনেক সকাল হল”।
-“উম, হ্যাঁ রে, কটা বাজে?”
-“এই তো সাড়ে ছট। তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। দিদি, তোমার সাথে কথা বলতে চায়”।
-“দিদি? মানে নীলার মা”?
-“হ্যাঁ, তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে এসো।”

নীলার মা এখনো বেঁচে আছেন শুনে অবাক হলাম আবার একই সাথে ভালোই লাগল। কিন্তু উনি আমাকে কেন ডেকেছেন বুঝলাম না। আমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে, আমার শাশুড়ি মায়ের কাছে গেলাম। দেখলাম ওনার বয়েস হয়েছে, খাটের উপর বসে আছেন। আমি যেতেই ওনার মুখে হাসি ফুটে উঠল। ওনাকেও প্রায় ২০ বছর পর দেখালাম। ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে বললাম –
-“আপনি কেমন আছেন মা?”
উনি আমাকে আশীর্বাদ দিয়ে বললেন,
-“আমি ভাল আছি বাবা, তুমি কেমন আছ?”
-“আঞ্জে, আপনাদের আশীর্বাদে ভালোই আছি”।
-“দেখ বাবা, তুমি তো জানোই, আজ তোমার মেয়ের বিয়ে। আর মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে তো, বাবাকেই কন্যা সম্প্রদান করতে হয়। তাই আমি বলছিলাম কি, তুমি যদি মেঘনাকে...”
-“আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না মা। আমার মেয়ের সম্প্রদান আমিই করব”।

হঠাৎ পাশ থেকে, একটু কড়া গলায় আওয়াজ এল,
-“মা, ওকে বলে দাও। মেয়েকে সম্প্রদান করছে বলে যেন ভেবে না নেয়, মেয়ে ওনার হয়ে গেল। মেঘনা শুধু আমার মেয়ে। আমিই ওকে মানুষ করেছি”।
কথার উৎস ধরে ঘুরে তাকাতেই দেখি, লাল একটা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে নীলা। নীলা, হ্যাঁ এই সেই নীলা। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে, যে আমার স্ত্রী ছিল। আর এখন ডিভোর্স দেওয়া বউ। চোখে মুখে, চেহারায় একটু বয়েসের ছাপ পরেছে। তাছাড়া নীলা সেই, কুড়ি বছর আগের, জেদী, মেঝাজী, অভিমানী আর অবুঝ নীলাই রয়ে গেছে। ঘরে উপস্থিত সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি বললাম,
-“আমি কি তো..., মানে আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতে পারি”?
নীলা কিছু বলল না, অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। তার চোখে একটাই প্রশ্ন “কেন?” “একান্তে কি কথা বলবে তুমি, তোমার এই ডিভোর্সী স্ত্রীকে?” আমার কথা শুনে মেঘনা ওর দিদাকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। আমি নীলার দিকে এগিয়ে গেলাম। ওর মধ্যে সেই প্রথম দিনের মতো অস্বস্তি লক্ষ্য করলাম। একটু তফাত বজায় রেখে জিঞ্জেস করলাম –
-“কেমন আছ নীলা?”
কোন জবাব এলো না। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
-“তোমার ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। আমি এখানে তোমার মেয়ের দাবি জানাতে আসিনি। এসেছি, নিজের মেয়ের বিয়েতে অতিথী হয়ে। এক, দু দিন থাকব, তারপর চলে যাব। তোমার মেয়েকে আমি তোমার থেকে কেড়ে নেব না। সে তোমারই থাকবে। আর তুমি যদি না চাও, তাহলে সম্প্রদানটাও না হয় অন্য কেউ করবে। কেউ তো মাথার দিব্যি দেইনি, বাবাকেই সম্প্রদান করতে হবে”।
নীলা মুখের চোয়ালটা শক্ত করে আমার দিকে ফিরে বলল,
-“আমার কুড়ি বছর আগে নেওয়া সিদ্ধান্তোটাতে যে কোন ভুল ছিল না, সেটা আজ বুঝতে পারছি।” আমি একটু হেসে বললাম
-“তুমি ঠিকিই বলেছ। ভুল তোমার ছিল না। ভুলটা আমার ছিল। আমি মানছি সে কথা। কিন্তু প্লিজ তুমি আমাকে ভুল বুঝনা। আমি শুধু...
-“দেখ সজল, পুরোন কাসন্দি ঘেটে কোন লাভ নেই। তোমার যদি কোন কাজের কথা থাকে, তাহলে বল। না হলে বাদ দাও। আমার অনেক কাজ পরে আছে।”
-“ঠিক আছে। আমি বুঝতে পারছি, আমি আসায়, তুমি মোটেও খুশি হওনি। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। আবার আমার মেয়েটাকেও কষ্ট দিতে চাই না। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, ও কালকে চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব”।


প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:০৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×