somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার//ভিকারুন নিসা, সাস্কাতুন (কানাডা) থেকে |//সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৫// প্রথম আলো //

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি হ‌ুমায়ূন আহমেদের ভক্ত ছিলাম। আপনার কোনো বই আমি পড়িনি। চিঠিটি লিখতে আমি লজ্জা পাচ্ছি এই ভেবে। একটু অপরাধ বোধ হচ্ছে আমার। তবে সবচেয়ে বেশি লজ্জা লাগছে আমার পনেরো বছরের মেয়ের কাছে যখন ব্যাখ্যা করছিলাম আমার প্রিয় মাতৃভূমির ছাত্ররা কেন তার শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করেছে। তখন তার চেহারায় বাংলাদেশ সম্পর্কে যে তাচ্ছিল্য, বিস্ময়, অবহেলা ও কিছুটা ঘৃণা সৃষ্টি হলো সেটিই আমাকে লজ্জা দিচ্ছে ভীষণ।
ঘটনা আপনাকে খুলেই বলি। আমরা বাসায় বেশির ভাগ সময় বাংলা টিভি দেখি। সাত সমুদ্দুর তেরো নদীর পারে কানাডায় আমার ছোট্ট লিভিং রুমটা মিনি বাংলাদেশ হয়ে ওঠে প্রতি রাতে। এ দেশে সময় খুব মূল্যবান। তারপরও কয়েক ঘণ্টা আমরা প্যাচপ্যাচানি বিজ্ঞাপন, টকশো নামের গালগপ্পো সবই দেখি। তখন মনে মনে ভাবি আমরা সবুজ পতাকার দেশেই আছি। আপনি ছাড়া আর এটা কে বেশি জানে যে অন্য দেশে শিকড় ছাড়া গাছ হয়ে বেঁচে থাকা কত বেদনাদায়ক। তা না হলে উন্নত বিশ্বের লোভনীয় পেশা ছেড়ে আপনি আর আপনার সহধর্মিনী কেন সিলেটের শহরের মফস্বলে বাস করছেন।
যা হোক আমরা সেদিনও ওসব বস্তাপচা অনুষ্ঠান দেখতে গিয়ে দেখি হঠাৎ দেখি কতগুলো উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র শিক্ষকদের ঘিরে ধরে ধস্তাধস্তি করছে। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার দৃশ্য দেখে আমি সহ্য করতে পারলাম না। চিৎকার করে আমার স্বামীকে ডাকতে লাগলাম। আমার মেয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
কি মা, কি হয়েছে। তার কণ্ঠে উৎকণ্ঠা। আমার তখন হুঁশ ছিল না। আমি কাঁদতে কাঁদতে আঙুল তুলে টিভির দিকে তাকাতে বলে বললাম, দেখ ওই ছেলেগুলো ওদের শিক্ষকদের মারছে। মেয়ে অবাক হয়ে টিভির কাছে গেল। মিনিট কয়েক পরে টিভিটা বন্ধ করে আমার পাশে এসে বসল।
খুবই বিস্মিত কণ্ঠে মেয়ে আমাকে বলল, ছাত্র হয়ে ওরা টিচার গায়ে হাত তুলেছে, কেন? ওর কণ্ঠে কিছুটা ঘৃণা টের পেলাম।

প্রিয় স্যার, আমার মাথা ঠিক ছিল না তখন। আপনি তো জানেন, বিদেশে আমরা যারা থাকি তারা কত ইমোশনাল হই তাড়াতাড়ি। আমি ইমোশনাল হয়ে গড়গড় করে বলতে থাকলাম, যে টিচার আপা মাটিতে পড়ে গেছেন তিনি আমেরিকায় থাকতেন। শুধু দেশের জন্য কিছু করার জন্য বাংলাদেশে চলে গেছেন।
এ দেশের বাচ্চারা শিক্ষকদের নাম ধরে ডাকে। তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। কোনো কিছু পছন্দ না হলে কঠিন কণ্ঠে তার প্রতিবাদ করে। কিন্তু শরীরের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে। আর গায়ে হাত তোলা কিংবা তাদের মারতে তাদের পেছনে দৌড়ানো এত কল্পনা করাও অসম্ভব।
আমার মেয়ে খুবই ভদ্র ভাষায় ইংরেজিতে বলল, বাংলাদেশের ছাত্ররা এখনো তাহলে মনুষ্যত্ব ধারণ করতে পারেনি। তারা একটা বর্বর সমাজে বাস করে। কানাডীয় ছাত্ররা যা কলপনাও করতে পারবে না। মা, গায়ে হাত তোলা বর্বরতা, আর শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকেরাই করে। তোমার দেশের ছাত্ররাও তাই। ওর চোখে তাচ্ছিল্য ও ঘৃণা।
স্যার, আমি সব সময় বলি কানাডীয় ছাত্ররা বেয়াদপ। শিক্ষকদের মুখে কথা বলে। বেঞ্চে পা তুলে বসে থাকে। যখন ইচ্ছা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যায়। আমার কন্যা আজ সে সুযোগ নিল।
হতাশ কণ্ঠে বললাম, ওটা তোমারও দেশ বাবা।
আমার মেয়ে আমাকে কঠিন কণ্ঠে জানিয়ে দিল, না মা, আমি ওরকম দেশ চাই না। আমার কাছে কানাডাই অনেক পছন্দ।
মেয়ে তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। স্যার এরপর আমি প্রচণ্ড লজ্জায় মাথা তুলতে পারছি না। ভীষণ রাগ লাগছে আমার নিজের ওপর। কেন যে বাংলা টিভি ছেড়ে রাখি সারাক্ষণ। না হলে তো মেয়ের কাছে লজ্জা পেতাম না। আমার ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
লেখিকাআমার লিভিং রুম থেকে আমার মেয়ের রুমের দরজাটা দেখা যাচ্ছে। দরজাটা বন্ধ। আমি অপেক্ষা করছি কখন সে দরজাটা খুলবে। চোখের পানি মুছে আমি ওর হাত ধরব। আমার আর লজ্জা লাগবে না। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে চাই, তুমি যা ভাবছ তা সত্যি নয়। সবুজে-শ্যামলে ঢাকা মাঠ, টলমলে পানিতে ভরা নদী, সোনালি রোদে ছাওয়া যে দেশ, সে সত্যিই অনেক চমৎকার দেশ। ওখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো মহান নেতা, জিয়াউর রহমানের মতো সৎ প্রেসিডেন্ট, রবীন্দ্রনাথ–নজরুল এর মতো অসাধারণ লেখক, মোহাম্মদ ইউনূসের মতো নোবেল বিজয়ী, হ‌ুমায়ূন আহমেদের মতো কথাসাহিত্যিক, জাফর ইকবাল, ইয়াসমিন হকের মতো নিঃস্বার্থ শিক্ষক ছিলেন, আছেন। তাদের জন্যই তো এত চমৎকার একটা লাল-সবুজ পতাকা এখনো টিকে আছে পৃথিবীর বুকে। কিছু শকুন ওই পতাকায় ছোবল দেয় মাঝে মাঝে তবে কখনো ওই পতাকা গিলতে পারে না। ওনাদের হাতে যে মঙ্গল প্রদীপ সেটা কখনো নিভে না। ওই প্রদীপের আলো কালো অমাবস্যাকে ঢেকে দেবে অবশ্যই। তখন আমরা মা মেয়ে ওখানে যাব, চোখ বন্ধ করে নির্মল বাতাসে ঘ্রাণ নেব। দেখ কত মিষ্টিই না সেই ঘ্রাণ। সেটা তোমার-আমার, আমাদের দেশ। প্রিয় বাংলাদেশ

ভিকারুন নিসা, সাস্কাতুন (কানাডা) থেকে |
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৫১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×