somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ইসিয়াক
একান্ত ব্যক্তিগত কারণে ব্লগে আর পোস্ট দেওয়া হবে না। আপাতত শুধু ব্লগ পড়বো। বিশেষ করে পুরানো পোস্টগুলো। কোন পোস্টে মন্তব্য করবো না বলে ঠিক করেছি। আমি সামহোয়্যারইন ব্লগে আছি এবং থাকবো। ভালো আছি। ভালো থাকুন সকলে।

কৃষ্ণকলি-সহজ সরল এক গ্রাম্য বালিকা -১ম পর্ব

২২ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমাদের গ্রামের নামটি বেশ সুন্দর।কৃষ্ণকলি।সবুজ শ্যামল এই গ্রামটি আমার খুব পছন্দ।এই গ্রামকে ঘিরে আমার যত স্মৃতি যত কথা।এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এক শান্ত টলটলে জলের নদ।নদের নামটিও বেশ মিষ্টি কপোতাক্ষ।কপোতাক্ষের জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে আমার খুব ভালো লাগে। কি যে স্বচ্ছ!নদীর তলদেশ পর্যন্ত স্পষ্ট দেখা যায় আমার যখন খুব মন খারাপ লাগে তখন একমনে এই জলের দিকে তাকিয়ে থাকি আর কথা বলি। মনে মনে নিজের কষ্ট নিজের দুঃখ নদীর সাথে ভাগ করে নেই।

আমার নামও কিন্তু কৃষ্ণকলি । শুনেছি এই নাম নিয়ে অনেক যুদ্ধ হয়েছে আমদের রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে । সে লড়াই বাবা একাই লড়েছিলেন ।মা নিপাট ভালো মানুষ একটু বেশী মাত্রায় ভালো।সাতেও নেই পাঁচেও নেই। যা হোক আমাদের পরিবারের সকল মেয়েদের নামগুলো আরবী শব্দে রাখা শুধু আমার নামটি বাদে ।এইজন্য আমাকে কম টিটকারি শুনতে হয়নি বা হয়না।ছোটবেলায় আরবী পড়তে গেছি মক্তবে হুজুর আমাকে ডেকে বলল, এই হিন্দুয়ানী নাম কে রাখছে? এই নাম এখানে চলবেনা । আজ থেকে তোর নাম হইলো খাদিজা। বিবি খাদিজার নামে নাম।কি? নাম পছন্দ হইছে? আমি শুকনো মুখে মাথা নাড়ালাম।

এখন ও কেউ কেউ আমায় খাদিজা বলে ডাকে। কিন্তু কেন জানি আমার কৃষ্ণকলি নামটাই বেশী পছন্দ হয়।বাবা রেখেছিলেন বলে হয়তো এই নামের প্রতি আমার ভালো লাগাটা অন্যখানে।

আমার বাবা ছিলেন লেখাপড়া জানা শিক্ষিত উদার মনের মানুষ।দাদাজানের সবচেয়ে স্নেহভাজন পুত্র।তিনি নাম ধাম নিয়ে অহেতুক প্যাঁচাল পছন্দ করতেন না।অবশ্য তিনি কোন বিয়য়ে কোন ঝামেলায় জড়াতেন না। আমার দূভাগ্য তার সাথে মনে রাখার মতো কোন স্মৃতি আমার খুব একটা নেই।আমার যখন ছয় বছর বয়স তখন তিনি ট্রেনে নিচে পড়েন । সাত দিন বেঁচে ছিলেন এরপর।সাত দিনের মাথায় এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে আমাকে আর মাকে একলা রেখে বাবা চলে গেলেন অজানার উদ্দ্যেশে আর শুরু হলো আমাদের মা ও মেয়ের অনন্ত কষ্টের জীবন।

বাবা ছিলেন কাব্য প্রেমি । অবসর সময়ে তিনি হয় কবিতা পড়তেন, নয়তো লিখতেন আমার সহজ সরল মা লুকিয়ে লুকিয়ে এখন ও সেই কবিতা পড়েন আর কাঁদেন। আমি জিজ্ঞাস করলে চুপচাপ চোখ মোছেন, কোন কথা বলেন না । মায়ের এজীবনে অনেক কষ্ট ,সেই উথাল পাতাল কষ্টের ভাগ তিনি কাউকে দিতে চান না।একা একা বয়ে বেড়ান অতীত স্মৃতির যন্ত্রণা ।

আমাদের যৌথ পরিবার। নিজেরা বাদেও অনেকগুলো আশ্রিত মুখ এই সংসারে আছেন ।তবে যাই বলি না,কেন একটা যৌথ পরিবারে কিন্তু সব কিছুই একটু বেশী বেশী। এখানে বিভিন্ন সাংসারিক কাজ, নানান ঝামেলা, অথবা আজাইরা ক্যাচাল যেমন বেশী তেমনি আবার একে অপরকে সাপোর্ট করার প্রবনতা কিংবা একে অপরের প্রতি আদর ভালোবাসা সহমর্মিতা, সহানুভূতি সবই কিন্তু এখানে অনেক বেশী বেশী ।যদিও আমি ও আমার মা এই হিসাবের মধ্যে পড়িনা।প্রয়োজনের বেলায় শুধু সবাই আমাদের খোঁজে ।কাজ ফুরালে অথবা প্রয়োজন ফুরালে কেউ আমাদের কথা মনে রাখে না।

বাবা মারা যাওয়ার পর আমি আর মা এই পরিবারে এক রকম আশ্রিতার মতো থাকছি, কাজের বেলায় সবাই খোঁঁজে, ওরে কলি তোর মাকে দেখছিনা যে ,শরীর খারাপ করেনিতো আহারে !!!
তোর মুখ এতো শুকনো দেখাচ্ছে কেন?কিছু খেয়েছিস?
এসব বাক্যে আমি ভুলিনা। এই লোকগুলোকে আমি হাড়েহাড়ে চিনি ।আমি শুধু মনে মনে হাসি মানুষের বিচিত্র চরিত্র দেখে।কত অভিনয় যে জানে এরা, তা এরাও মনে হয় নিজেরাই জানে না।

চলবে.....
#চলতে চলতে জীবনের পথে দেখা কতজনের সাথে
সময় কেটে যায় একে একে হিসাব মেলাতে ।।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৪৪
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×