somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ খড়কুটো

২৬ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সকাল চুমকি জোর পায়ে হেঁটে চলেছে।অনেক দেরি হয়ে গেছে আজ।বড় রাস্তায় উঠে ঠিক ঠাক একটা ইজি বাইক পেলে হয়। না হলে টুম্পা ভাবি আজ বাড়তি দু'কথা না শুনিয়ে ছাড়বে না এটা নিশ্চিত।

সাড়ে সাতটা নাগাদ চুমকি কলিং বেলে হাত রাখতে না রাখতেই দরজা খুলে গেল এবং রোজকার মত সে হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে গেল যথারীতি।
অন্যদিন টুম্পা ভাবি দরজা খুললেও আজ খালুজান দরজা খুলে দিয়েছে। যাক আপাতত আর টুম্পা ভাবির মুখোমুখি হতে হচ্ছে না এটাই অনেক ভাগ্য । যে মুখ বাবারে বাবা। ভাবি মনে হয় এখনও ঘুমাচ্ছে । ঘুমাক,ভালো করে ঘুমিয়ে নিক।চুমকি রান্না ঘরে এসে ঝটপট কাজে হাত দিল। এমনিতে অনেক বেলা হয়ে গেছে আর দেরি করা ঠিক হবে না। এ বাড়ির কাজ সেরে অন্য বাড়িতে ছুটতে হবে। গরীবের কাজের কি শেষ আছে নাকি! সব কাজ গুছিয়ে ছেলেটা স্কুল থেকে ফেরার আগেই আবার বাড়ি পৌছুতে হবে।

একটা প্লেটে যেই ভিম লিকুইডের খানিকটা লাগিয়েছে ঠিক এমন সময় পেছন থেকে কে যেন এসে চুমকির কাঁধে হাত রাখলো। আলতো স্পর্শ! ভীষণ চমকে চুমকি পেছন ফিরে চাইলো এবং অবাক হয়ে গেল।

- একি খালুজান আপনি?

-এখন এসব কাজ রাখ।উঠে আয়।

-কাজ রাখ বললেই কি করে হইবো? সেই তো সব আমারেই করতে হইবো এখন আর তখন।আপনে ঘরে যান আমার দেরি হইতাসে ।

-তোকে এসব কাজে মানায় না চুমকি।

-উল্টা পাল্টা কি কন এসব? যান ঘরে যান। ভাবি দেখলে রাগ করবো।

-ভাবি দেখবে না। সে তো বাড়ি নাই। তার মা হাসপাতালে। টুম্পা সেখানে ব্যস্ত।

-আপনে আপনার কাজে যান। এসব কথা শুনন পাপ।

-বাদ দে তোর ধর্ম কথা। চল একটু মজা করি।

চুমকি এ বাড়িতে বছর খানিক ধরে কাজ করে,এ বাড়ির মানুষ দুটিকে তার আপনজন বলেই মনে হয় ।এখানকার প্রতিটা কাজ সে বেশ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই করে। একদম ঝামেলা বিহীন নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ এরা।কারো সাথেও নেই পাঁচেও নেই। টুম্পা ভাবি একটু ঠোঁটকাটা হলেও বাড়ির মালিক তো একেবারে নিপাট ভদ্রলোক। চুমকি অনেক খেয়াল করে দেখেছে চাল চলন আচার ব্যবহার চোখের নজর সব দিক দিয়েই লোকটা খুব ভদ্র। আদর্শ মানুষই বলা চলে।

বাড়ির মালকিনকে ভাবি বললেও অভ্যাস বশত মালিককে খালুজান ডাকে সে। সব বাসাতেই অবশ্য তাই করে । এতে গৃহকর্তার সাথে একটা নিরাপদ দূরত্ব তৈরি হয় সম্পর্ককে আড়াল করে।

টুম্পার স্বামির আজকের ব্যবহারে এক নিমেষে চুমকির বিশ্বাসের ভিত্তি টলে গেল। সে নানাভাবে বাধা দিতে গিয়ে শক্তিতে পেরে উঠলো না শেষ পর্যন্ত ।তাকে এই নির্জন ফ্ল্যাটে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করতেই হলো...

ঘন্টা খানিক ধরে চুমকির শরীর খুবলে খুবলে খেয়ে জয়নাল ভালো করে শাওয়ার নিল। তারপর হতভম্ব চুমকির দিকে কিছু টাকা ছুড়ে মেরে এমনভাবে বলল যেন কিছুই হয়নি।

-কেউ যেন কিছু জানতে না পারে বুঝছিস। উত্তেজনার বশে ভুল হয়ে গেছে। তোর ভাবি বাড়িতে নেই আর তোকেও আজ অন্যরকম লাগছিলো। স্যরি

যা গোসল সেরে নে। ভালো করে সব পরিষ্কার করে ফ্রেশ হয়ে নে। দেখবি ভালো লাগবে।আর টেবিলের উপর তোর টুম্পা ভাবির জন্য কেনা নতুন একটা ড্রেস রাখা আছে। গতকালই কিনেছি। বেশি দামি না অবশ্য ওটা তোকে দিয়ে দিলাম,নিয়ে নে। বলিস না আবার কাউকে এসব।

চুমকি বাথরুমে গেলো তবে সে গোসল করল না।শুধু পোশাক পাল্টে নিল। মন্দের ভালো, পরণের পোশাকের যে অবস্থা তাতে এটা পড়ে আর বাইরে বের হওয়া যায় না।
আর যা ভাবার ভেবে নিয়েছে চুমকি।এখন পদক্ষেপ যা ফেলতে হবে হিসাব করে।আসলে সে আলামত নষ্ট করতে চাইছে না,এই ধরনের ঘটনা তার জীবনে এই প্রথম নয়।অনেক হয়েছে, এই সমস্ত ঘাপটি মেরে থাকা জানোয়ার গুলোর বিচার হওয়া উচিত,কিন্তু তার মত খড়কুটোরা কি পারবে এদের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকতে? না টিকতে পারুক চুমকি ঠিক করলো এবার একটু হলেও ঝাঁকি দেবে সে। চুমকি শুধু জামা কাপড় পাল্টালো আর অন্য জামা কাপড়গুলো প্যাকেটে ভরে নিলো।
এখান থেকে তার কাজের পাট আজ থেকে উঠে গেল।উঠে যায় যাক।এই ঘটনার একটা বিহিত করেই ছাড়বে সে। এখনই সে শিরিন আপার বাসায় যাবে। তারপর যা কিছু করার শিরিন আপাই করবেন।

বেরিয়ে আসার আগে চুমকিকে আবার ডাকলো জয়নাল,
-চুমকি শোন।
-জ্বি বলেন।
- এখন ফ্রেশ লাগছে তো।
-হু।
-কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। বুঝেছিস তো।
-হু।
-বাড়াবাড়ি করলে বা কোন সুযোগ নেবার চেষ্টা করলে কিন্তু সমস্যা হবে।উল্টো পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করলে কিন্তু টিকতে পারবি না এটা মনে রাখিস। খড়কুটোর মত ভেসে যাবি।

চুমকি মনে মনে হাসে আর বলে,
বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান এইবার ঘুঘু তোমার বধিব পরাণ.......

সমাপ্ত

© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:১৩
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×