মিসেস চৌধুরী জানালা দিয়ে দেখলেন নাদিয়া ফুটফুটে দুটি বাচ্চাকে রিকশা থেকে নামতে সাহায্য করছে।। তার সাথে অনেকগুলো প্যাকেট।বাচ্চা দুটির বসন ভূষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে এদের চাল চুলোর ঠিক নেই। নাদিয়া মিসেস চৌধুরীর বাসায় দোতলায় দুটি রুম নিয়ে ভাড়া থাকে এই দুই বছর চার মাস হলো। সরকারী চাকুরে এই মেয়েটির কর্মকাণ্ড তার কেন জানি ভালো ই লাগে। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে নিজস্ব কৌতুহলে কলাপসিবল গেটের তালা খুলে ভ্রু নাচিয়ে তিনি জানতে চাইলেন,
- এরা কারা?
নাদিয়া ঠোঁট টেনে একটা হাসি দিলো তবে মুখে কিছু বলল না।বাচ্চাদুটোর হাত ধরে ভিতরে নিয়ে এলো। মেয়েদুটো খানিকটা বিহ্বল মুখে এদিক ওদিক চেয়ে চেয়ে দেখছে।দৃষ্টিটা অন্যরকম, দেখলেই কেমন যেন একটা মায়া জাগে মনে। বাচ্চা দুটোর প্রতি প্রথম দেখায় মায়া পড়ে গেল মিসেস চৌধুরীর। তার বিদেশী নাতনিটিও এদের বয়সী।..
নাদিয়া ওদের তাড়া দেয়
- তাড়াতাড়ি করো তাড়াতাড়ি করো । অবাক হবার কিছু নেই,এটা তোমাদের নতুন বাসা। ওই যে ওখানে গোসলখানা , ওখান থেকে ভালো করে হাত মুখ ধুয়ে এসো।নতুন জামা কাপড় পরতে হবে। চাইলে গোসল সেরে নিতে পারও। তারপর খেতে হবে।
মিসেস চৌধুরী পিছন পিছন এসে তখনও জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
নাদিয়া প্যাকেটগুলো রেখে এবার কিছুটা কৈফিয়তের সুরে বলল,
- আপনি তো জানেন আন্টি, এক সময় আমার বাসস্থান ছিল রাস্তায়। অনাথ ছিলাম আমি। মিস মরিয়ম আমায় রাস্তা থেকে তুলে উনার আশ্রয়ে মানুষ করেছেন নিজের মত করে, এজন্য আমি ওনার কাছে চির ঋণী । উনার হাত ধরেই আমার যা কিছু উন্নতি। আমার পড়াশোনা চাকরি সবকিছুতে ওনার নিঃস্বার্থ অবদান। তিনি আজ আর পৃথিবীতে নেই তবে উনার ঋণ শোধ করার দায় রয়ে গেছে আমার। তাই এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
নাদিয়ার মহানুভবতায় মিসেস চৌধুরীর মনের মধ্যে অন্য রকম এক ভালো লাগার আবেশ ছুঁয়ে গেল। সবাই যদি এমন করে ভাবতো তবে পৃথিবীটা অন্য রকম হয়ে যেতো।
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:১৫