চিরকাল বই পত্রিকা কেনা আমার নেশা কিন্তু এখন কথা হলো আমার আয় আবার তত বেশি না যাতে বই পত্র পত্রিকা নিয়মিত কেনা চলে।
গত দুবছর আমার মায়ের রেখে যাওয়া জমানো টাকায় হাত পড়েছে করোনার দূর্যোগের কারণে।টিউশনি পৌঁছেছিল প্রায় শূন্যের কোটায়।
যে স্কুল আমি চাকরি করি তাও প্রায় বন্ধ হয়ে যাবার জোগাড় হয়েছিল কয়েকবার তবু আমরা কয়েকজন শিক্ষক মিলে প্রায় বিনা বেতনে স্কুলটাকে চালিয়ে নিয়ে গেছি করোনার মধ্যেও।এখনও তা মোটামুটি চলছে বলা যায় ভালো ই চলছে যদিও বেতন বাড়েনি বা আগের বেতনও ফিরে আসে নি এখন। যাহোক ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গেয়ে লাভ নেই।
মাসের প্রথম তার উপর বইমেলা চলছে কিছু বই কিনতে ই হবে। টিউশনির টাকা পেয়ে অর্ডার দিয়ে দিলাম কিছু বইয়ের ।
কয়েক দিনের মধ্যে টিউশনির সব টাকা কালেকশন শেষে সংসার খরচের টাকা আলাদা রেখে বাটা শোরুমে উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম কারণ পায়ের চটি জোড়া সত্যি আর পরবার মত নেই। ডান পায়েরটা প্রায় ফেটে দুভাগ হবার জোগাড়। হাটবার সময় পা টেনে টেনে হাঁটতে হয়।অনেকে ভাবে আমার পায়ে বুঝি ব্যথা। এটা সেটা জিজ্ঞেস করে আমি মুচকি হেসে এড়িয়ে যাই।
যাহোক আমি হাঁটছি নানা রকম ভাবনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখি বাটার শো রুম ছাড়িয়ে পুরানো বইয়ের দোকানের দিকে চলে এসেছি।ফিরবো এমন সময় সামনে কিছু বইয়ের দিকে চোখ আটকে গেল।
আহ! কতদিন ধরে তো আমি এই বইগুলোই খুঁজছি। কি আশ্চর্য।
এ যে মেঘ না চাইতেই জল!
আজকাল মনের মত বই পাওয়া যায় না সহজে। এক হিসাবে বলা চলে বই পড়ার পাঠ প্রায় উঠে ই গেছে তাই বইয়ের দোকানও সব একে একে গুটিয়ে গেছে। কে আর সেধে সেধে দিনের পর দিন লস করবে?
এই বইগুলো বেশ দূর্লভ। নাহ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।মনে মনে ভাবলাম। চটি পরে কেনা যাবে।
ঝটপট বইগুলো উলটে পালটে দেখলাম। দরদাম করে কিনেও নিলাম অল্প সময়ের ব্যবধানে।
কিন্তু চটির কি হবে? হাতে তো এখন একশ টাকা মোটে। আর পায়ের চটিও হঠাৎ দুখণ্ড হয়ে গেল এ সময়। মর জ্বালা!
অগত্যা খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ফুটপাতে কমদামি জুতোর দোকান দেখে দামদর করতে থাকি। জানি একশ টাকায় কোন চটি হয় না।
হঠাৎ একখানা রিজেক্ট চামড়ার চটি পেয়ে গেলাম সৌভাগ্যক্রমে। নিয়ে নিলাম একশ টাকায় যদিও দুইশত টাকা চেয়েছিল। আমার সাজপোশাক দেখে মনে হয় দোকানির দয়া হলো। আমি করুন চোখে চাহনি দিয়ে বললাম
- ভাই এছাড়া আমার কাছে আর টাকা নাই।
যাহোক দোকানির দাম চুকিয়ে চটি জোড়া পায়ে দিয়ে দেখি বেশ আরাম দায়ক।তবে একটু সমস্যা হল ভিতরে দিকে বেশ কিছু হাবিজাবি দাগ আছে। অবশ্য পায়ে থাকলে কেউ বুঝতে ই পারবে না যে আমার পায়ে রিজেক্ট জুতা।
ইয়াহু কি মজা!
আমার পছন্দের বইও কেনা হলো আবার চটির সমস্যাও মিটলো।
দখিনা বাতাস ছেড়েছে। আবহাওয়াও ফুরফুরে। গান গাইতে ইচ্ছে করছে....
"আহা আজি এ বসন্তে কত ফুল ফোঁটে কত পাখি গায়।".....
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




