আমার প্রথম গল্পের বই পড়া
আমার ছেলেবেলার বন্ধুদের মধ্যে চঞ্চল ছিল আমার খুব কাছের আর ঘনিষ্ঠ ।ওর সাথে ই আমার বেশির ভাগ সময় গান গল্প আড্ডা ওঠা বসা,শুধু গান গল্প আড্ডা ওঠা বসাই নয় খেলাধূলা মারামারি দুষ্টুমি সবই চলতো সমানতালে। ওর সব ভালো ছিল শুধু একটাই দোষে দুষ্ট ছিল সে।সেটা হলো হিংসা। ভীষণ হিংসুটে ছিল ও। আমার সাথে অবশ্য তেমন একটা হিংসা না করলেও কখনও কখনও করতো বৈকি ।
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি তখন। সেদিন কি একটা উৎসবের জন্য স্কুল ছুটি ছিল। আমি পড়াশোনা শেষ করে সকাল দশটার দিকে গেলাম চঞ্চলদের বাসায় উদ্দেশ্য ওর সাথে ক্যারাম খেলবো।
আমাকে উঠানে দেখে চঞ্চলের মা যাকে আমি খালাম্মা বলে ডাকতাম উনি বললেন,
- ও এখন বাইরে যাবে না একটু ব্যস্ত আছে ।জরুরি একটা কাজ করছে।ওকে এখন বিরক্ত করা যাবে না। তার চেয়ে বরং তুমি ওবেলা এসো। এখন যাও।
আমি কৌতুহলঃবশত চঞ্চলের ঘরে উঁকি দিলাম। কি এমন রাজকার্য যে খেলতে যেতে পারবে না সে। তাকাতে ই দেখি ওর হাতে একটা বই,সম্ভবত গল্পের বই। ও সেই বইটা পড়ছে আর খিলখিল করে হাসছে দম ফাটিয়ে। কি পড়ছে কে জানে।আমার খুব কৌতুহল হলো। আমি চুপিচুপি ওর ঘরে গেলাম। এই কিছু দিন আগে ও রিডিং পড়তে পারতো না,এখন বেশ উন্নতি করছে। খালাম্মা আমাকে প্রায় বলতো তুমি এসে মাঝে মাঝে ওর সাথে পড়বে।তাহলে ও রিডিংটা তাড়াতাড়ি শিখবে। সেই হিসাবে আমি কিন্তু চঞ্চলের গুরু মশাই। তো সেই গুরু মশাইয়ের এমন অমর্যাদা!
স্বাভাবিক ভাবে ই আমার আঁতে বেশ একটু ঘা লাগলো। তারপর ও যখন আমায় দেখে বইটাকে লুকাতে চাইলো তখন আমার জেদ আরও বেশি চড়ে গেল।
আমি বললাম,
-দেখ চঞ্চল আজকাল তোর দেখি খুব দেমাগ হয়েছে।তারপর গলা নামিয়ে মধুর স্বরে একটু খাতির করে কি বই পড়ছে জানতে চাইলাম।
আমাকে পাত্তা না দিয়ে বরং চঞ্চল বেশ বিরক্ত হয়ে তাকালো। আমি সে সব উপেক্ষা করে বইটার দিকে হাত বাড়ালাম।
-দেখি দেখি কি এমন ঘোড়ার মাথা বই যা পড়লে শুধু হাসি পায়। দেখি তো....
আমি হাত বাড়িয়ে বই নিতে যেতেই চঞ্চল তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো,
- মা অপু আমাকে মারছে।
সাথে সাথে খালাম্মা বলে উঠলো,
অপু তোমাকে না বললাম ওকে বিরক্ত করা যাবে না কেন ওকে বিরক্ত করছো। এখন তুমি যাও তো যাও। পরে এসো।
ভীষণ অপমানিত বোধ করলাম আবারও । তবে মনে মনে ঠিক করলাম আমাকে জানতেই হবে ওই বইতে কি আছে যা পড়লে হাসি আর থামানো যায় না।
কথায় আছে সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল একটু বাঁকাতেই হয়।
আমি বিকালে আবার গেলাম ওদের বাসায়।গিয়ে দেখি দরজা খোলাই আছে। চঞ্চল ঘুমোচ্ছে। আমি যখনকার কথা বলছি তখন ঢাকাতে আমাদের এলাকা অমন ই ছিল।চোরের তেমন উপদ্রব ছিল না বললেই চলে। যে কোন বাড়িতে সোজা ঢুকে পড়া যেত।
যাহোক ঘরে ঢুকে দেখি চঞ্চলের মাথার কাছে সেই বইটা রাখা। আর চঞ্চল তখন তুমুল ঘুমে।বইয়ের নামটা এক দেখাতে পড়ে নিলাম। "বাছাই করা হাসির গল্প সংকলন।"
আমি সুযোগ মত আস্তে করে বইটা নিজের আয়ত্বে নিলাম।তারপর সোয়েটারের নীচে লুকিয়ে ফেললাম।একছুটে বাসায় এসে গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম আর হো হো করে হাঁসতে লাগলাম।সত্যি বেশ মজার ছিল বইটি। আর গল্পের বই পড়া এত মজার সেটাও জানা ছিল না আগে। সর্বোপরি নতুন একটা দিকও সহসা উন্মোচিত হলো আমার সামনে।
পরদিন দেখি চঞ্চল মনমরা হয়ে খেলতে এলো।আমি তো জানি ওর সমস্যাটা কি হয়েছে।ভাবখানা যেন কিছু ই জানি না। ওকে স্বান্তনা দিলাম। চোরের গুষ্টির শাপ শাপান্তর করতেও কম করলাম না।পরে অবশ্য কৌশলে বইটা ওর ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলাম ঠিক ই। সেও আরেক মজার ঘটনা। আজ থাক অন্য দিন করা যাবে আজ এ পর্যন্ত ই...
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




