কবিতা
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ভোর হয়ে এলো।ঘরে ঢুকে ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলেও মিনারের দুচোখে ঘুম এলো না একরত্তিও। পুরো বাড়িতে এখনও তিথির স্পষ্ট স্পর্শ বিদ্যমান।হাতের ছাপগুলো এখনও লুকিয়ে যায়নি।ওর নিঃশ্বাসের অবশিষ্টাংশ এখনও রয়েছে ঘরের আনাচে কানাচে।অথচ সেই জলজ্যান্ত মানুষটিই এখন অবর্তমান। অতীত হয়ে গেল কিছু সময়ের ব্যবধানে!
এটা কিভাবে সম্ভব?কখনও কি হয় না-কি এমন? হতে পারে? এমন কিছু যে হতে পারে কখনও কল্পনাও করেনি মিনার।তিথিও কি ভেবেছিলো কখনও তাদের এমনভাবে বিচ্ছেদ হবে?
মানুষ ভাবে এক হয় আরেক, এটাই বুঝি ভবিতব্য।
তাহলে কেন এতো সব প্রস্তুতি। এতো আয়োজন। এতো আকুলতা।এতো ভালোবাসা! কেন এই সব মায়ার খেলা?
সবই যখন হারাবে তবে কেন এই আসা আবার বিনা নোটিশে চলে যাওয়া?
তিথির সাথে প্রথম দেখার দিনটা মিনারের চোখে বরাবরই জীবন্ত।
সেদিন রাত গভীরে বাড়িতে হঠাৎ "চোর এসেছে, চোর এসেছে " শোর উঠলো।চোরের পিছু ধাওয়া করতে গিয়ে তিথির সাথে মিনারের তীব্র বাদানুবাদ । অনেক ঝামেলার পরে জানা গেল চোর ভাবা সেই ছেলেটি আসলে একজন মানসিক রোগী।ছেলেটির নাম মারুফ। মারুফ তিথির ভাই ছিল। মারুফের অবিন্যস্ত ভাবনার দেয়ালের পরতে পরতে তিথির প্রবল উপস্থিতি ছিল।বোনকে সে খুব ভালোবাসতো।হাসপাতাল চত্ত্বরে মারুফের আকুলতা সবাইকে স্পর্শ করছিল।আসলে তিথির এই হুট করে চলে যাওয়াটা একদমই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। ওর এই চলে যাওয়া সবাইকে কাঁদাচ্ছিল।
হঠাৎ ই ঠান্ডা লেগেছিল তিথির।কাশিটাও বেড়েছিল বাড়াবাড়ি রকম।পারিবারিক চিকিৎসক ঢাকায় ব্যস্ত থাকার কারণে চিকিৎসায় দেরি হচ্ছিল। বাড়াবাড়ি কাশির দমকে সন্ধ্যায় হঠাৎ বমি হলো।সদ্য অফিস ফেরত মিনার সব ময়লা গুছিয়ে পরিষ্কার করলো।তিথি আট মাসের সন্তান সম্ভবা ছিল,ওকে বিশ্রামে রেখে চায়ের জল চড়িয়ে মিনার টিভিতে ক্রিকেট খেলায় মন দিল।
এরই এক ফাঁকে অন্য ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ সেরে নিয়েছিল। দশটা নাগাদ বেরুতে হবে। যদিও তিথি মানা করছিল এসব না করতে।
এদিকে দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচ ছিল বলেই তিথির হঠাৎ উঠে যাওয়াটা খেয়াল করেনি মিনার।অদ্ভুত একটা শব্দ হতেই ছুটে গিয়েছিল মিনার।তখন তিথি মেঝেতে.... রক্ত ভেসে যাচ্ছিল।টাইলসের মেঝেতে পানি ছিল। সামান্য পানিতে এত বড় অঘটন ঘটবে কে ই বা জানতো!
অ্যামবুলেন্সে তোলবার সময় শেষবার চোখ মেলেছিল তিথি।মিনারের হাতটা বড্ড বেশি শক্ত করে আকড়ে ধরেছিল সে।কিছু বলতে চাইছিল হয়তো!কিন্তু তার চোখ জুড়ে সর্বনাশি ঘুম ছিল। অ্যাম্বুলেন্সের চলার পথে একসময় সেই শক্ত বাঁধনও শিথিল হলো। তিথি চলে গেল রাত নয়টা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে।
সি সি টিভি ফুটেজ চেক করে ঘুমুতে যাবার আগে
মোবাইলটা হঠাৎ বেজে উঠলো।অফিসের রিসেপশনিস্ট লাস্যময়ী মিথিলার কল পেয়ে মিনারের মুখে সূক্ষ্ম একটা হাসির চিহ্ন ফুটে উঠলো।.....
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০৭