somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশ আমার এখন নষ্টপল্লী আর মৃত্যুপুর রেলস্টেশন

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুমায়ুন আহমেদের ‍‍হিমুর মধ্যদুপুর বইয়ে রক্তের পুড়িং সম্পর্কে পড়েছি। চোখে না দেখেও কেমন একটা ঘৃণার ভাব চলে আসায় মুখে থুথু জমে যেত….
জহির রায়হানের সময়ের প্রয়োজনে প্রবন্ধে পড়েছিলাম তাজা রক্ত শুকিয়ে যাওয়ার কথা। মুখ নেড়ে বলেছিলাম পাকিস্তানিদের পিশাচ। অন্তরাত্মা তন্ময় হয়ে শুনেছিল তাদের রক্ত চোষার পৈশাচিক আনন্দগাথা। উনুনে যেমন গরম পানি ফুটতে দেখা যায় সেরকম আমার রক্ত ফুটত পাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণা এবং চরম রাগে……
দাদুর মুখে জোছনা রাতে শুনেছিলাম মা-মেয়ে আর বৌ-এর সম্ভ্রম ছিনিয়ে নেওয়ার পর লিঙ্গ বৈষম্যের মৌলিক উপাদান গুলো কেটে রক্তের জোল রান্না করার গল্প। আমার শিশু মন তখন ভয়ে কঁকিয়ে উঠত…
এতদিন যা শুনেছি। সবই শক্রদের চরম অন্যায়। দুর্বল ভেবে বাঙালীদের উপর করা অত্যাচারের ঘৃণিত ইতিহাস। তবে হিমুর মধ্যদুপুরের রক্তের পুড়িং-এর একমাত্র কারিগর ছিল জেলের আসামি এবং মস্ত বড় এক উন্মাদ। যখন পড়ছিলাম তখন মনে হয়েছিল লেখক পাগল হয়ে যাওয়ার কাহিনীটা উন্মোচন করবেন। অন্ততপক্ষে রক্তের পুড়িং বানানো সে কবে, কোথায় দেখে শিখেছে? কারা তাকে দেখিয়েছিল এক গামলা রক্ত এসব জট খুলবেন। কিন্তু লেখক খোসাটা খুলার পথে হাঁটেন নি। কেন? তা আমি জানার বা বুঝার সাধ্যি নেই….
হয়তো পাঠকের মাঝে এসব প্রশ্ন সারা জীবন বাচিঁয়ে রাখাতেই লেখকের প্রকৃত সার্থকতা…..
আজকাল এসব কোন উপন্যাস কিম্বা সিনেমার কাহিনী হিসেবে নেই। বাস্তবতার উদরে জন্মনিচ্ছে হাজারো কুলাঙ্গারের ইতিহাস। দেশটা দিন দিন নিষিদ্ধ পল্লীর চেয়েও জঘন্য রূপ ধারণ করছে। গত পাঁচ বছরের নথিপত্র ঘাটলে মনে হবে বাংলাদেশ একটা মৃত্যুপুর রেলস্টেশন। যেখানে নামার পর কোন মানুষের খুন না হওয়া আর কোন রমনীর ধর্ষণ না হওয়াটা অস্বাভাবিক। ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েছে খুন আর ধর্ষণ। আটজন শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিলো দু’হাজার বারোতে। ২০১৩ শেষ হেত না হয়তেই তার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ এ। ২০১৪ তে ২১ , আর ২০১৫ তে ৩০ এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ষনের পর খুনের সংখ্যা। দ’হাজার ষোলতে পা দিতে না দিতেই প্রায় ২০ জনকে র্ধষণ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আগামী প্রজন্মের সামনে আমরা এসব নিদর্শন রেখে গেলে তাদের বদ্ধমূলে গেঁড়ে বসবে তারা কোন রাষ্ট্রে জন্মায়নি তারা কোন এক নিষিদ্ধ পল্লীর কোন এক ধর্ষিতা নারীর উদর ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছে।
সবচেয়ে বড় দুঃখ আর উদ্বেগের ব্যাপার হচ্ছে এতোসব খুন আর ধর্ষনের পরো আমারদের সরকার ইলিশ মাছের ভর্তা দিয়ে প্রতি দিন ভাত গেলে নিশ্চিন্তে আর আমরা বর্ষ উদযাপন করি যেন কিচ্ছু হয়নি কখনো। আর খুনি আর ধর্ষকদের বাঁচানোর জন্যে তাহাদের সাথে মদ্যপান আর বেশ্যার সাথে গা মাখামাখি করে আমাদেরই কর্তা বাবুরা।

রাষ্ট্র আর রাষ্ট্রের অধিপতিরা আমাদের মস্তিস্ক থেকে ধয়ে মুছে নিয়ে গেছে তনুর মতো হাজারো ধর্ষণ আার খুনের ঘটনা। গত বছরের পহেলা বৈশাখেও ঠিক এমনি ঘটনার মুখোমুখি হই আমরা। বর্ষবরণের নামকরে আমাদের মা-বোনদের শাড়ি নিয়ে টানাটানি করা যদি রাষ্ট্রের কাছে ছেলেদের দুষ্টুমি আখ্যা পায় আমরা চাইনা এমন বর্ষপূরণ।
আজ ব্যাথার-সাগরে ডুব দিয়ে আসলাম নিজের অজান্তে….
যে উপাখ্যানের কাছে মনে হবে এসব মামুলি ব্যাপার!
মাসিক দেয়ালিকা সন্দীপনের সম্পাদক হিসেবে ছাপানোর উদ্দেশ্যে আসা সব লেখা্ই আমার পাড়া হয়। সেই ফাঁকে নাসরিন নামের এক মেয়ে আমাকে ঘুরাল ব্যাথার-সাগরের সবস্থানে। জানাল স্বদেশের তরুণদের মহা উপাখ্যানের কথা।
ইভটিজিং কেড়ে নেবে শত শত পুস্প। সুভাস ছড়ানোর সুযোগ বখাটেরা তাদের দিবে না। কেন তারা মেয়েটার সম্ভ্রম ছিনিয়ে নিল? স্বার্থপর চিলকে্ও কখনও মুরগির বাচ্ছাকে এভাবে ছুঁ মেরে নিয়ে যেতে দেখিনি। একটা মেয়ের শরীরে ছুরি চালিয়ে কীরকমের আনন্দ তার পেয়েছে? তারা রক্তে পুড়িং তৈরি করার পথেও হাটেনি। হেঁটেছে পাশবিকতার ঘোর অরণ্যে…..
তারা কতেক বখাটে মিলে বানিয়েরছ রক্তের মামলেট। শিউলির শরীর কেটে রক্ত নিয়ে সূর্যের তাপে তৈরী করল বাঙালীর লজ্জার ইতিহাস রক্তের মামলেট! এটি তৈরী করতে তারা ফ্রাইপেন হিসেবে ব্যবহার করেছে শিউলির নিথর নিষ্পাপ দেহ!
এরাই আমাদের তরুণ প্রজন্ম। আমাদের ভবিষ্যত কর্ণদ্বার। এদের অনিমিখে তাকিয়ে আছে নিষ্পলকে বাংলার জনগণ…..
বড় ঘ্যান্যা হয় এ বাঙালীদের নিয়ে….
ইচ্ছে করে নিজেকে নির্মমভাবে শেষ করে দিই….
সাবাস যুবক সাবাস, তোমাদের বিশেষিত করার মতো বিশেষণ আমার শব্দভান্ডারে নেই……
তবু আমার আশার বাঁধ ভাঙেনি…..
অপেক্ষার প্রহর গুনছি…
কবে বন্ধ হবে এসব নির্মমতা….?
কবে কালো রাত্তিরের নিগড় ছিড়ে জেগে উঠবে কাঙ্কিত মানবতা….?
কবে বন্ধ হবে ইভটিজিং….?
কবে বন্ধ হবে রাষ্ট্রকর্তৃপক্ষের এসব নাটক…?
এসব প্রশ্নের মারপ্যাঁচে পড়ে আর নিজের মরা হয়ে উঠেনা। পেরে উঠিনা। জীবনের মায়া সে যে বড় মায়া……

ছবি : জাহেদুর রহমান রবিন

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×