somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাক্ষী হাজির হতে না পারলেআদালতের বাইরে সাক্ষ্য নেওয়া যায়

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা প্রমাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করার বিধান রয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, সাক্ষীর জবানবন্দি-জেরা ইত্যাদি সম্পন্ন করতে বেশ সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে আদালতে হাজির হয়ে বয়স্ক সাক্ষী দ্বারা সাক্ষ্য প্রদান করা বেশ কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া কোনো সাক্ষী অসুস্থ থাকলে, আদালতে আসার জন্য শারীরিকভাবে অক্ষম হলে বা বিশেষ প্রয়োজনে উপস্থিত হতে না পারলে কিংবা কোনো কারণে সাক্ষ্য প্রদানের আগে সাক্ষ্য গ্রহণকারী আদালতের স্থানীয় সীমার (দেশের ভেতর বা বিদেশে গমন করলে) বাইরে যেতে চাইলে অথবা সাক্ষী সরকারি কর্মচারী হলে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ততার কারণে সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে মামলা দীর্ঘায়িত হবে। ফলে মামলা পরিচালনা অসুবিধাজনক হবে এবং খরচ বেড়ে চলবে।
এ ছাড়া কোনো পর্দানশিন নারী যদি সমাজে প্রচলিত রীতি, প্রথা বা আচারানুযায়ী জনসম্মুখে উপস্থিত হয়ে সাক্ষী দিতে অপারগ হন অথবা কেউ যদি আদালতের স্থানীয় সীমার বাইরে বসবাস করে তবে তার জন্য দূরবর্তী আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে আদালতকে সহযোগিতা করা অসুবিধাজনক। তিনি যদি মামলা প্রমাণের জন্য অপরিহার্য সাক্ষী হন তবে তার সাক্ষীও আদালতের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়। এ ধরনের উভয় সংকট পরিস্থিতির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে আইনে কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে আদালতের বাইরে সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
যে ক্ষেত্রে সাক্ষীর দ্বারা আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করা সম্ভব নয় অথবা সাক্ষীর ওপর সংশ্লিষ্ট পক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই কিংবা যে ক্ষেত্রে সাক্ষীকে আদালতে হাজির করে এরপর বিচার নিষ্পন্ন করতে চাওয়া অযৌক্তিক বলে বিবেচিত হবে সে ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়া অবিচল রাখতে কমিশন প্রেরণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। কমিশন হলো, আদালত কর্তৃক মনোনীত একজন ব্যক্তি, যিনি আদালতের পক্ষ হয়ে প্রয়োজনীয় সাক্ষীর সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করে বিচারের জন্য আদালতে পেশ করেন, যিনি কোনো আইনজীবী অথবা ম্যাজিস্ট্রেটও হতে পারেন।
কমিশন নিয়োগের আবেদন
কমিশনার নিয়োগ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে যে পক্ষ সাক্ষী উপস্থিত করতে অপারগ হয় সে পক্ষ অথবা সাক্ষীর নিজের আদালতের কাছে উপযুক্ত কারণ দর্শিয়ে আবেদন জানাতে হবে এবং এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষকে অবহিত করতে হবে। কমিশন প্রেরণের আবেদনে আবেদনকারী আদালতের নাম উল্লেখ করে কমিশন প্রেরণের হেতু, মোকদ্দমা বা বিষয়বস্তুর মূল্য, কমিশন সম্পন্ন করার সময়, ব্যয়ের আনুমানিক হিসাব, কমিশন সম্পন্ন হওয়ার স্থানের বিস্তারিত বিবরণ ইত্যাদি উল্লেখ করে আবেদন দাখিল করতে হবে। তবে আদালত নিজ উদ্যোগেও কমিশন নিয়োগ করতে পারেন।
সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যে কমিশন পাঠাতে চাইলে আবেদনকারী পক্ষকে আদালতকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে আবেদনটি সরল বিশ্বাসে করা হয়েছে, অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই আবেদন করা হয়েছে, আদালতের বিচার্য বিষয় নির্ধারণের জন্যই কমিশন প্রেরণ প্রয়োজন, সাক্ষী বিচার্য বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দিতে পারে, সাক্ষীর আদালতে হাজির না হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ইত্যাদি। বিচারিক আদালত উপযুক্ত মনে করলে এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষের আবেদনে সন্তুষ্ট হলে কমিশন নিয়োগ করার আদেশ দিতে পারেন এবং কমিশনার হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে নির্ধারণ করে দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আদালত কমিশন সম্পন্ন করার সময়ও নির্ধারণ করে দেবেন এবং নির্ধারিত সময়ে তা শেষ করার জন্য কমিশনার এবং পক্ষদ্বয়কে চাপ দিতে পারেন।
কমিশনার যেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন
কমিশনার নির্ধারিত দিনে নিজে সাক্ষীর বাসভবনে বা তার জন্য সুবিধাজনক কোনো স্থানে উপস্থিত হয়ে আদালতের হয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। তবে প্রতিপক্ষ চাইলে সাক্ষীকে তারা যেসব প্রশ্ন বা পাল্টা প্রশ্ন করতে চায় তা তাদের পক্ষ হয়ে করার জন্য লিপিবদ্ধ করে কমিশনারকে দিতে পারেন এবং কমিশনার উপযুক্ত মনে করলে সংশ্লিষ্ট সাক্ষীকে সে বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। তাই কমিশনার প্রেরণের আগে মামলার প্রতিপক্ষকে কমিশন প্রেরণের ব্যাপারে জানাতে হবে এবং তাদের এ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় দলিলাদি সরবরাহ করতে হবে। প্রতিপক্ষ চাইলে নির্ধারিত দিনে সাক্ষীর সামনে উপস্থিত হয়ে সাক্ষীকে প্রশ্ন, জেরা প্রভৃতি করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে কমিশন প্রেরণের ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খরচাদি (ফিস, ভ্রমণ ভাতা প্রভৃতি) আবেদনকারী পক্ষ আদালতে জমা দেওয়ার পরই কেবল কমিশন পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হবে।
কমিশনার প্রদত্ত প্রতিবেদনের ফলাফল
কমিশনার সাধারণত বিরতিহীনভাবে সাক্ষ্য গ্রহণের কাজ শেষ করেন বলে সাক্ষীকে বারবার সাক্ষ্য প্রদানের ঝামেলা পোহাতে হয় না। কমিশনার সাক্ষীর স্বাক্ষরসহ গৃহীত সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (বিশেষ প্রয়োজনে অবশ্য তিনি আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন) নির্ধারিত আদালতের কাছে পেশ করবেন। কমিশনারের দাখিলকৃত প্রতিবেদন আদালতে উন্মুক্ত দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে এবং পক্ষদ্বয় চাইলে সে প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে পারবেন বা আপত্তি দিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আদালত কমিশনার এবং উভয় পক্ষকে শুনে ও সংশ্লিষ্ট দলিলাদি যাচাই করে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। অতঃপর ওই প্রতিবেদন আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে এবং বিচার নিষ্পন্ন করতে ব্যবহার করা যাবে।
শেষ কথা : সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়াও স্থানীয় তদন্ত করতে, হিসাব নিরীক্ষণ বা সংশোধন করতে বা সম্পত্তি পরিমাপ, পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে অথবা বণ্টনের জন্যও কমিশন প্রেরণ করা যায়। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের উদ্দেশ্যেও কমিশন প্রেরণ করা যায়। সুতরাং এ ধরনের কোনো প্রয়োজন অনুভূত হলে এবং বিচারিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আদালতে সশরীরে হাজির না হয়েও কমিশনের সহযোগিতা নিয়ে আইনি কার্যধারা নিরবচ্ছিন্ন রাখা যেতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন বিচারপ্রার্থীর দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হবে অন্যদিকে ঠিক তেমনি প্রয়োজনীয় বিচারিক স্তরগুলো সচল রেখে কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে রায় পেয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষের জন্য ন্যায়বিচারও নিশ্চিত করা যাবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×