আন্দামান থেকে বলছি / রইসউদ্দিন গায়েন
‘বঙ্গ’ নয়, ‘বাংলা’ নয়,-- ‘নতুন বাংলা’
আমি প্রশাসনিক কারণে নাম পরিবর্তনের কথা বলবো না। স্বাধীনতার নামে কলঙ্কিত ইতিহাসের পাতা থেকে অখন্ড বাংলার নাম মুছে গেছে। তাই ‘বঙ্গ’ অথবা ‘বাংলা’ নাম হলে অনেকটা নিক্ নেম বা ডাক নামের মতো শোনায়। আমি চাই পশ্চিমবঙ্গ’র নাম হোক ‘নতুন বাংলা’। অনেকের মতে ‘বঙ্গ’ নাম হওয়াই ভাল— প্রাচীন বাংলার রূপ আমরা দেখতে চাই, ‘বঙ্গ’ নামের মধ্যে। আবার রবীন্দ্রনাথের গানে যখন শুনি ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ বাংলার বায়ু, বাংলার ফল’ অথবা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’। ...তখন যেন ‘বাংলা’ নামটাই অনেক আন্তরিক মনে হয় আমাদের কাছে। জীবনানন্দ’র ‘রূপসী বাংলা’ এই দুটো শব্দে বাংলার চিরন্তন রূপ ফুটে ওঠে! বাংলার ইতিহাস বড় বিচিত্র। লর্ড কার্জন বাংলা ভাঙলো, পঞ্চম জর্জ জুড়ে দিল। সবশেষে ‘র্যাডক্লিপ’ অলঙ্ঘ্য সীমারেখা তৈরি করল। বাঙালিদের কেউ বেদনার্ত হদয়ে বললো—আহা! আবার অদ্ভুতানন্দে উৎফুল্ল হয়ে কেউ বলল বাহ! বাহ!... যে বাংলার জন্য আমরা গর্ব অনুভব করি, সে প্রাচীন বাংলার রূপ যে আজ নেই, তা বলাই বাহুল্য। স্বাধীনতার নামে কলঙ্কিত ইতিহাসের পাতা থেকে যখন পূর্ব বাংলার নাম মুছে গেল,তখন পশ্চিমের কথা কেন এতকাল ধরে স্মৃতি রোমন্থন করতে হ’ল? ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামটি ছিল, এখনো আছে সাধারণ মানুষের মনে। বহুকাল ধরে পূর্ববঙ্গও ছিল মানুষের মনে। সুকুমার রায়ের লেখা ‘ অবাক জলপান’-এ এক পথিকের কথায় তা’ আজও স্মরণীয় হয়ে আছে—‘আজ্ঞে, আমি পুব গাঁয়ের লোক। একটু জলের খোঁজ করছিলুম’। এসব কথা আজ ধুলিধুসর ইতিহাস।
পশ্চিম বাংলায় এখন নব জাগরণের জোয়ার। অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত’র ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে গড়া এ বাংলা। তাঁর কন্ঠের অগ্নিক্ষরা বাণী দিয়ে গড়া এ বাংলা। তাঁর স্বপ্ন’র রঙিন তুলি দিয়ে আঁকা এ বাংলা। তাঁর প্রতিবাদী কর্মজীবনের আগুন দিয়ে গড়া এ বাংলা। শ্রাবণের ধারার মতো রবীন্দ্র-বাণীর অর্ঘ্য দিয়ে সাজানো এ বাংলা। ধর্মাধর্ম, জাতপাতের অভিশাপমুক্ত এ বাংলা, আজ নতুনের ডাকে জেগে উঠেছে! ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা—আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা’। জীর্ণ-পুরাতনকে দূরে ঠেলে, নতুনের এ আহ্বানে জেগে উঠবে নতুন বাংলা। তাই আজ থেকে এপার বাংলার নাম হোক, ‘নতুন বাংলা’!!