somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

গায়েন রইসউদ্দিন
আমি রইসউদ্দিন গায়েন। পুরনো দুটি অ্যাকাউন্ট উদ্ধার করতে না পারার জন্য আমি একই ব্লগার গায়েন রইসউদ্দিন নামে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি এবং আগের লেখাগুলি এখানে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আবার প্রকাশ করছি।

দানবের পেটে দু'দশক (মূল গ্রন্থ- IN THE BELLY OF THE BEAST) পর্ব-৬

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরএসএস, শিবসেনা ও ফ্যাসিবাদের প্রতি মুগ্ধতা
আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর হেডগেওয়ার এই ধারণা প্রচার করেন যে ভারতের সমস্ত অ-হিন্দু, যেমন মুসলিম ও ক্রিস্টানরা, যে আমাদের জাতির অংশ নয়, সেটা ঘোষণা করলে তবেই জাতীয় ঐক্য আসবে। কারণ, তাঁর মতে, অহিন্দুরা হিন্দু প্রথা, চিন্তা ও সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে। হেডগেওয়ার তাঁর নিজের হাতে গড়া শিষ্য মাধব সদাশিব গোলওয়ালকারের (যাঁকে সাধারণত বলা হয় গুরুজি) মধ্যেও এই ধারণা প্রতিষ্ঠা করে দেন। গোলওয়ালকারও এসেছেন আরএসএস-এর আঁতুড়ঘর নাগপুর থেকে। অন্যদের বাদ দিয়ে চলার এই ধারণা (exclusionary idea) নিয়ে সবচেয়ে ভালো বিবরণ পাওয়া যাবে ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত গোলওয়ালকারের স্বলিখিত পুস্তিকা ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিভাইন্ড’-এ।
এই চটি বইটিতে হিটলার ও তার জাতিগত আধিপত্যবাদী তত্ত্বের কথা বারবার শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আরএএস-এর কাছে এটি দিন দিন অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠছিল। কিছুদিন পর এটি বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়।
এই বইটি থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া যাক:
‘জার্মান জাতি গর্ব আর সবার আলোচনার বিষয়। জাতি ও সংস্কৃতির বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য জার্মানি তাদের দেশ থেকে সেমিটিক জাতির লোকেদের—ইহুদিদের—বের করে দিয়ে দুনিয়াকে চমকে দিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে জাতি তার সর্বোচ্চ উচ্চতার প্রকাশ পেয়েছে। জার্মানি আরো দেখিয়েছে যে জাতি ও সংস্কৃতির পার্থক্য যেহেতু শিকড় পর্যন্ত প্রসারিত, তাই মিশে যাওয়া প্রায় অসম্ভব এক ব্যাপার—আমাদের হিন্দুস্থানের (অর্থাৎ হিন্দুদের ভূমি) পক্ষে এটি একটি ভাল ও লাভজনক শিক্ষা’।
‘গুরুজি’ কাদের এই শিক্ষায় শিক্ষিত হতে বলছেন?
বুদ্ধিমান জাতিগুলির অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, হিন্দুস্থানের অ-হিন্দু জাতিগুলির লোকেদের হয় হিন্দু সংস্কৃতি ও ভাষা গ্রহণ করতে হবে, হিন্দুধর্মকে সম্মান করতে হবে, শ্রদ্ধা করতে হবে, হিন্দু জাতি ও সংস্কৃতির মাহাত্ম্য ছাড়া কোনও ধারণা পোষণ করা চলবে না; অর্থাৎ তাদের শুধু তাদের অসহনীয়তা ও এই দেশ ও তার প্রাচীন প্রথাগুলি সম্পর্কে অকৃতজ্ঞতা বাদ দিলেই চলবে না, তার বদলে, এক কথায়, ভালোবাসা ও ভক্তির ইতিবাচক ধারণা গড়ে তুলতে হবে; তাদের বিদেশী হয়ে থাকা বন্ধ করতে হবে। নইলে এদেশে তাদের হিন্দু জাতির সম্পূর্ণ অধীন হয়ে থাকতে হবে। কোনও অধিকার চাওয়া চলবে না। কোনও সুবধা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে না। তারা, কোন বিশেষ সুবিধা পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এমনকি নাগরিক অধিকারও অধিকারও থাকবে না তাদের’।
আরএসএস মহলে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় হিন্দু মহাসভা নেতা সাভারকর ঘোষণা করেন:
‘আমরা হিন্দুরা যদি শক্তিশালী হয়ে উঠি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের মুসলিম বন্ধুদের অবস্থা হবে জার্মানী ইহুদের মতো’। ‘উই অর আওয়ার নেশনহুড ডিভাইন্ড’-এর পর গোলওয়ালকর লেখেন ‘বাঞ্চ অফ থটস’। এটি এখন সংঘের ‘বাইবেল’। এতে আরএসএস-এর জাতীয়তার ফ্যাসিবাদী ধারণাকে একটা ধর্মীয় সাংস্কৃতিক পোশাকে মোড়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
আরএসএস ও হিন্দু মহাসভা সবসময় ভয়ানকভাবে মুসলিমবিরোধী ও খ্রিস্টান বিরোধী। এমনকি ভারত সরকার যখন আব্দুল হামিদ ও কেলকর ভাইদের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে তাদের দেশপ্রেম ও সাহসের জন্য সম্মান প্রদর্শন করেন, গোলওয়ালকর তারও বিরোধিতা করেছিলেন। কোন অহিন্দু সৈন্য ভারতের জন্য যতই আত্মত্যাগ করুন না কেন, তাদের সম্মানিত করা হোক এটা গোলওয়ালকর চাননি।
আরএসএস-এর এই মুসলিম-বিরোধী মনোভাব এতদূর বিস্তৃত যে উর্দুকেও তারা বিদেশি ভাষা আখ্যা দেয়।
‘উর্দু শব্দটির অর্থ ও তার তাৎপর্য জাতীয় আত্মসম্মানের প্রতি এত ক্ষতিকর যে তা এই ভাষার প্রতি সমস্ত ভালবাসাকে ছাপিয়ে যায়। কেমন করে বা কেন আমরা এমন একটা ভাষা রাখব যার নামটি প্রতিনিয়ত আমাদের রাজনৈতিক অধীনতার কথা মনে করিয়ে দেবে? আমাদের হিন্দু পূর্বপুরুষরা আমাদের সংস্কৃত ও হিন্দি দিয়ে গেছেন, উর্দু আনার ব্যাপারে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই’।
সঙ্ঘ পরিবারের রাজনৈতিক মিত্র শিবসেনা এখনও হিটলার ও নাৎসি জার্মানির প্রশংসা করে। তাদের প্রাক্তন প্রধান বাল্ ঠাকরে প্রায়ই প্রকাশ্য জনসভায় ও সাক্ষাৎকারে হিটলারের প্রশস্তি করে এসেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের তাড়নায় সঙ্ঘ এখন আর এই ঝামেলা চায় না। তবে এ নিয়ে ঠাকরের সমালোচনাও করেনি তারা। (ক্রমশঃ)

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:০৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×