রোদ, বৃষ্টি, ঝড় মাথায় করে লাল রঙের চিঠি পোষ্টের বাক্সগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে দিনের পর দিন। এক সময় অতি যতেœ থাকা বাক্সগুলির দিকে এখন আর কেউ ফিরেও তাকায় না। দূরে থাকা প্রিয়জনকে নিজের একটি খবর দেওয়ার জন্য এই লাল বাক্সগুলিতে সযতেœ রেখে যাওয়া হতো খামে মোড়া কিংবা পোস্টকার্ডে লেখা চিঠি। দিনের নির্দিষ্ট সময়ে দু-বার করে বাক্সগুলির তালা খুলে ভেতর থেকে বের করে আনা হতো প্রিয়জনকে লেখা সেইসব চিঠি। সেখান থেকে জমা পড়তো পোস্ট অফিসে অতঃপর বাছাইয়ের জন্য কনসেন্ট্রেশন অফিস। তারপর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজ নিজ গন্তব্যে যাত্রা করতো সেই চিঠিগুলো। আজও প্রিয়জন আছে, খবর নেওয়া বা দেওয়ার প্রয়োজন আছে শুধু যেন প্রয়োজন নেই বহুল স্মৃতি বিজরিত এই চিঠির বাক্সগুলির। উল্লেখিত বিষয়ে কথা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল শিক্ষিকা কামরুন্নাহার মনি’র সাথে, উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য তার ছেলে থাকতো দুর পরবাসে। তিনি বলেন, আমার ছেলের খবর নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের পাঠদান শেষে একটা চিঠি পোষ্ট করার জন্য ছুটে যেতাম পোষ্ট বক্সের কাছে। অতি যতেœ সেই পোষ্ট বক্সে রেখে আসতাম চিঠিখানা। আবার প্রতীক্ষা শুরু হতো উত্তর পাবার জন্য। কিন্তু এ সবই আজ নস্ট্যালজিয়া, ইতিহাস।
আস্তে আস্তে ফুরিয়েছে চিঠির মাধ্যমে খবর নেওয়ার বা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। তাই বোধহয় আজ আর দরকার পড়ে না রাস্তার ধারের এই লাল রঙের পোষ্ট বাক্সগুলির। শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে বা ফুটপাথের ওপর লাল বাক্সগুলি যেন শুধুই দাঁডিয়ে থাকা ইতিহাসের সাক্ষী। চিঠির বক্স গুলি বুঝি এখন বলছে আমার এবার সংগ্রহশালায় ঠাঁই পাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু কুড়ি-পঁচিশ বছর আগেও “আমি” ছিলাম অপরিহার্য।
ইন্টারনেট, ই-মেইল, ফেসবুক এবং মোবাইলের শর্ট মেসেজ সার্ভিস বা এসএমএসের দৌলতে ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আদান প্রদান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ডাকঘরগুলিতেও আগে যে পরিমাণ ব্যক্তিগত চিঠিপত্র লেনদেন হত, আজ আর হয় না। কমে গিয়েছে লেটার বক্সগুলিতে জমা পড়া চিঠির সংখ্যাও। যদিও ব্যক্তিগত চিঠিপত্র আদান প্রদান বন্ধ হলেও অফিসের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ায় বেড়েছে অফিসের চিঠিপত্র। তবে সেখানে কুরিয়ার সার্ভিস তা দখল করে নিয়েছে।
সুত্র জানায়, সরকারী ও বেসরকারী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান এখন চিঠি আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে পেষ্ট অফিস বা পোষ্টবক্স ব্যবহার না করে ব্যবহার করে কুরিয়ার সার্ভিস। যা পোষ্ট অফিসের গ্রহণযোগ্যতাকে আরও কমিয়ে দিচ্ছে। তবে তাদের অভিযোগ, সরকারী পোষ্ট অফিসের সেবার মান খুবই নিম্ন মানের হওয়ায় তারা এদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এদিকে গ্রাহক শূন্যতায় লেটার বক্সগুলি দিন গুনছে সরকার কবে তাদের হেরিটেজ ঘোষণা করবেন! তবে এ ডাক বিভাগকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে গ্রাহকের জনপ্রিয়তা অর্জন সম্ভব। যার মাধ্যমে সরকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে পারবে।