বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীনের তৈরি পোশাক শিল্পের সর্বোচ্চ সংগঠন চীনা ন্যাশনাল গার্মেন্টস এ্যাসোসিয়েশন (সিএনজিএ)। বাংলাদেশ সফরে এসে জিএনজিএ এর মহাসচিব ফেং দেহু বলেছেন, বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে বছরে চীনের অভ্যন্তরীণ চাহিদার পুরোটা (প্রায় ২৪৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের) পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তারা। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের, বিজিএমইএ’র সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিটিএমএ’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামীন প্রমুখ।এ সময় ফেং দেহু আরও বলেন, চীন তাদের তৈরী পোশাক কারখানা থেকে ৩শ’ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক আমদানি করে। যার ৮২ শতাংশ অভ্যন্তরীন বাজারে আর বাকি ১৮ শতাংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। প্রতিনিধি দল বলেন বাংলাদেশ চাইলে চীনের আভ্যন্তরীন চাহিদার পুরোটাই রপ্তানি করতে পারে। চীনের বর্ধিত শ্রমিক মজুরী তৈরী পোশাক শিল্পের প্রতিকূলে আর তাই পোশাক তৈরী ও আমদানীর জন্য তারা এ দেশকে বেছে নেয়। তবে তারা বিনিয়োগের সুযোগ পেলে তৈরী পোশাক শিল্পের প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন বিষয় বিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন ফেং। জানা যায়, সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আগামী মাসেই তারা পোশাক আমদানির অর্ডার/ প্রস্তাব দিবে।
বানিজ্যমন্ত্রী জি.এম. কাদের বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের মান আন্তর্জাতিক মানের হওয়ায় আজ চীন এদেশের পোশাক আমদানী করতে আগ্রহী। মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে চীনা’র পদার্পনের মাধ্যমে এদেশের বেকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি পোশাক শিল্প তার সাফল্য ধরে রাখতে সক্ষম হবে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকায় সবচেয়ে বেশী পোশাক রপ্তানী করে আসছে।
বিজিএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ২০১০-১১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ চীনে রপ্তানি করেছে ৩২০ মিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, এ দেশের বেশির ভাগ পোশাক ইউরোপ ও আমেরিকা অঞ্চলে রপ্তানি হতো কিন্তু সেসব দেশে এখন অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তাই আমাদের পোশাক রপ্তানিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবে চীন পোশাক আমদানি শুরু করলে সে ঝুঁকি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, চীনের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া পোশাকের বিশাল চাহিদা রয়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে চীনে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১.৮৯ কোটি ডলার। ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় ৫ গুণ বেড়ে ৫.২৮ কোটি ডলার হয়েছে। গত অর্থবছরে ১০.৪৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। আগামীতে চীনে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়ে ৫০-১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যপারে বিজিএমইএ এর আরডিটিআই কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ আলী রাসেল বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে দেশের বাহিরের কোন কোম্পানী বিনিয়োগ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে দেশের বাহিরের যে কোন কোম্পানী তাদের চাহিদা অনুযায়ী শুধুমাত্র অর্ডার দিতে পারবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, চীনের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পে বিনিয়োগের বিষয়ে যেসব সংবাদ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য নয়। চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আসেনি বরং আমাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে আদেশ দিয়ে পোশাক আমদানীতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের দাবি ও জানিয়েছেন তারা।