somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথ হুজুরের ইংলিশ কমোড

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিভিন্ন কারণে রবীন্দ্রনাথকে আমার পীর মনে হয়। বিপুল ক্ষমতাবান মানুষ মনে হয়। তাঁর গেটআপ, ড্রেসআপ, বাণী, সুরের গাম্ভীর্য, গদ্যের স্মার্টনেস তাকে কুর্ণিশ করতে বাধ্য করে। আমি তারে ঘুমে জাগরণে কুর্ণিশ করি। তিনি আমাদের অঞ্চলের প্রাক্তন জমিদার, কুর্ণিশতো করতেই হতো। শুনেছি, কুর্ণিশ প্রথা নাকি তিনি রহিত করেছিলেন।

আমার হেলুসিনেশন আছে। অডিটরি ও ভিজ্যুয়াল দু’ধরণের হেলুসিনেশনই আছে। বেশ ক’বার স্বপ্নে ও আধো ঘুমে আমার রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা হয়েছে। পীর সাহেব একবার এলেন, তখন আমি কমোডে বসে আছি। কোনও কারণ ছাড়াই ধমক দিয়ে বললেন, ওসব ছাড়!! যত্তোসব!!! নতুন কিছু ভাববার মুরোদ নেই, ছাইপাশ নিয়ে ভাবনা।
আমি বিস্মিত হলাম। হুজুর মাইন্ড রিড করতে পারেন, এটা জানতাম না। মাল্টিট্যালেন্টেড মানুষ হিসেবে জীবনের কোনও অঞ্চলই তিনি অনুন্মোচিত, অস্পর্শিত রাখেননি। ধরা যাক দেশ এখন ক্রিকেট জ্বরে কাঁপছে। রবীন্দ্রনাথ ক্রিকেটও খেলেছেন। যেহেতু জমিদার হিসেবে বৃটিশ রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিল। বৃটিশরা যদি হতেন বাংলার চেয়ারম্যান, তাহলে রবীন্দ্রপরিবার সেটার সিইও। তিনি চেয়ারম্যানদের খাদ্যাভ্যাস-হাগ্যাভ্যাসের পাশাপাশি খেলাধূলাও চালু করে ফেলেছিলেন। তবে মলত্যাগের মুহুর্তে আমাকে ধমক দেয়া তাঁর উচিৎ হয়নি। আমি তার জমিদারির প্রজা নই।



বললাম, কি সমস্যা ?
তিনি আবারও ধমকে বললেন, কমোডে বসে বসে রবীন্দ্রচর্চা না করলে হয় না ?
আমি বললাম, আপনি কি পবিত্র পীর নাকি আপনার বাণী ধর্মগ্রন্থের বাণী, যে হাগতে হাগতে গান গাওয়া যাবে না ? বরং আপনার গানগুলো এ কাজের সময় বেশ আরামদায়ক ও উপাদেয়।
তিনি বেদম বিরক্ত হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। আমি ভাবতে থাকলাম, হুজুর যদি এখন থাকতেন বা তার সময় যদি স্মার্টফোন থাকতো তিনি নিশ্চয়ই কমোডে বসে বসে স্মার্টফোনে ফেসবুকিং করতেন আমারই মতো। কবিতা লিখতেন, ‘ ... কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও ...’ কিংবা ‘কে তুমি চুপিসারে ওগো ফলোয়ারীনি ...’

শৌচাগার বা স্নানঘর বা গোসলখানা বা বাথরুম বাঙালির জীবনের এক মহা গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে আমার মনে হয়। বিশ্বের উল্লেখযোগ্য শিল্পী সাহিত্যিকদের টয়লেট সম্বন্ধীয় কোনও রচনা বা স্মৃতি বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আছে কি না আমার দূর্বল পাঠ দৌরাত্মের কারণে জানা হয়নি। তবে এ জায়গাটি নিয়ে আমি একদিন একটি স্বতন্ত্র, পূর্ণাঙ্গ ও প্রামাণ্য গ্রন্থ রচনা করবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাতে উল্লেখ থাকবে যাবতীয় স্পর্শকাতর সব বিষয়। যৌবনকালে এ ধরণের বিষয় নিয়ে লেখা ও সেগুলো প্রকাশ করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেক সাহিত্যিক লেখেননি। আমি ঝুঁকি ও শাই ফিল থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবো। সবাই ধরে নেবেন আমার লজ্জা শরম কম।

শুরুটা হতে পারে লাইব্রেরী নিয়ে। শৈশবে আমাদের কলোনীর বাসার বাথরুমে আমার একটা ছোটখাটো লাইব্রেরী ছিল। ছোটখাটো লাইব্রেরীতে বইগুলোও ছিল ছোট খাটো। সব সেবা প্রকাশনীর বই। তিনগোয়েন্দা, গোয়েন্দা রাজু, কুয়াশা, মাসুদ রানা, ওয়েস্টার্ন ইত্যাদি ইত্যাদি। বাথরুম গ্রন্থাগারে হুমায়ুন আহমেদও ছিলেন। আমার ছোটকাল থেকেই দোষ ছিল— আমি বাথরুমে ঢুকলে অনেক দেরিতে বেরুতাম। আমার মা নানা ধরণের সন্দেহ করতেন। বয়ঃসন্ধিকালীন ওইসব সন্দেহ আমি পাত্তা দিতাম না। একদিন ধরা খেলাম। আমার তিনগোয়েন্দার কতিপয় বই মা কুটিকুটি করে ছিঁড়ে বাসার পেছনের বাগানে ফেলে দিলেন।

কৈশোরে প্রচুর গান শুনতাম। আমার প্রিয়র তালিকায় কিছুই বাদ যেত না। মনির খান, মনি কিশোরের ‘মাইরালা আম্রে মাইরালা টাইপ’ ছ্যাকা খাওয়া গান, বাচ্চু, জেমস, হাসান, মাকসুদ, রিমেক কোন কিছু বাদ যেত না। তখনকার লতিফুল ইসলাম শিবলীর যাবতীয় গান ছিল আমার ভীষণ প্রিয়। তার লেখা, সুর করা গান শুনতে শুনতে এলো তার নিজ কণ্ঠে গাওয়া গান, এর পর প্রিন্স মাহমুদের করা সব অ্যালবাম। বাথরুমে বসে আমি ওই গানগুলো — আমার মায়ের ভাষায় ষাঁড়ের মতো — গাইতাম। তখন নিজেই গান লেখা শুরু করি। লিখে বেশ শান্তি পেতাম। গানের ডায়েরীগুলো আমার ব্যক্তিগত জাদুঘরে রাখা আছে সযতনে। ওই বাথরুম ছিলো গান আর কবিতা নাজেল হবার সবথেকে উত্তম জায়গা। মেডিটেশনের আদর্শ স্থান। এখনও বাথরুমে বসে দারুন দারুন আইডিয়া মাথায় আসে তা বাথরুমের বাইরে সম্ভব না। তাই বাথরুমে ঢুকলে আমার বেরুতে একটু দেরি হয়। এ কারণে অবশ্য অফিসে ও কাজের জায়গাগুলোতে প্রায়ই বিপদে পরতে হয়।

তরুণ লেখক প্রকল্পের ক্লাসে একদিন সেলিনা হোসেন রবীন্দ্রনাথের আধুনিকতা প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তিনি তরুণ লেখকদের একে একে জিজ্ঞেস করলেন রবীন্দ্রনাথকে কীভাবে তারা আধুনিক হিসেবে দেখে, এবিষয়ে তাদের কী মত?
সবাই যে যার মতো বললো। কবি সাইয়েদ জামিল বলল, রবীন্দ্রনাথ আধুনিক, কারণ আজ থেকে একশ বছর আগেও উনি ইংলিশ কমোডে পায়খানা করতেন।
জামিলের বয়ান শুনে আমি চমৎকৃত হলাম, বিস্মিত হলাম। এই অ্যাঙ্গেলে দেখা যায়, বুঝিনাইতো ! সেলিনা হোসেন চমকের ধাক্কা চট করে সামলে নিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল জামিল। সেখানে গিয়ে সে হুজুরের [যেহেতু জমিদার, ওই সময় তাকে নিশ্চয়ই সবাই হুজুর বলতো, আমরাতো প্রজামাত্র।] শৌচাগারে ঢুকে গেছে। আমি খুলনায় হুজুরের শ্বশুরবাড়ি গিয়েছি, শাহজাদপুরের কাছারি বাড়িতে গিয়েছি। শুধু কুষ্টিয়ার কুঠিবাড়িতে যাওয়া হয়নি। জামিল বলার পর মনে হয়েছে, কুষ্টিয়া যাওয়া দরকার। বাথরুম নিয়ে কেতাব রচনা শুরুর আগে হুজুরের ইংলিশ কমোডটা জিয়ারত করে আসা অতীব দরকার।

রাত ১:১৮
৪ মার্চ, ২০১৪, জসীম উদদীন রোড
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৫:১১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×