সত্যি ই কি এতটা ভুল ছিল আমার ?
তোমাকে প্রচন্ড রকম ভালবাসা_ই কি ছিল আমার অপরাধ ? আসলে পৃথিবীতে ভালবাসা বলতে কিছু নেই। সব মায়া, আর মায়ার অপর নাম মিথ্যা।
.
ভূত-অদ্ভূত কি সব ছাইপাস লিখছে কাব্য। হি হি হি হি, আমি হাসলাম, আপনি মাইন্ড করিয়েন না। আসলে পৃথিবীর সব ব্যার্থ প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে ভালবাসা বলতে কিছু নেই। তাহলে "তুমি যে আমার কবিতা, আমার ও স্বপন। আধো জাগরন" এই সব গান কি মিথ্যা ? যাচাই আপনারা করবেন, আমি শুধু উপস্থাপন করবো।
.
----------------------------------------------
কাব্য, আমাদের গল্পের নায়ক। গ্রামে বেড়ে ওঠা শান্ত-ছিষ্ট লেজ বিশিষ্ট একটা বালক। পড়া শুনায় তুলনাহীন। গ্রামের সবাই ভালছেলের উধাহরন হিসাবে কাব্যকে বুঝে। বাবা কৃষক। না, আমরা ধরে নি কাব্যর বাবা স্কুলের শিক্ষক। মা গৃহিণী। ছোট একটি বোন আছে কবিতা। ফাজিলের হাড্ডি।
.
কাব্যকে নিয়ে ওর পরিবারের অনেক স্বপ্ন। কাব্য ডাক্তার হবে, দেশ-দশের সেবা করে নোবেল পাবে। ওর বাবার ইচ্ছা ওকে ডাক্তারি পড়ানো। আমাদের বাবা-মায়েদের এটা বড় সমস্যা তাদের অসমাপ্ত কাজ গুলো ছেলে-মেয়েদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। তাদের ইচ্ছার দিকে কারো কোন খেয়াল নেই। অতঃপর বাবা-মায়েদের স্বপ্ন পূরন করতে করতে নিজের জিবন যখন প্রায় শেষ তখন ওরা তাদের ছেলে-মেয়েদের ওপর নিজেদের স্বপ্ন গুলো চাপিয়ে দেয়। এভাবেই চলে আসছে আমাদের ছন্নছাড়া জিবন।
.
★ ★ ★
সবে মাত্র ৫ এর বৃত্তি পরীক্ষা শেষ হয়েছে কাব্যর, তবুও ছুটি নেই। ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়া শুরু করেছে, বাবা-মা এর ইচ্ছা কাব্য শহরে পড়বে। শহরে না পড়লে কাব্য ডাক্তার হবে কি করে ? গ্রামের স্কুলে কি পড়া লেখা হয় ? কিন্তু কাব্য কি চায় এত ছোট বয়সে বাইরে থাকতে ? আব্বু-আম্মু আর একমাত্র ছোট বোনকে ছেড়ে ও তো যেতে চায় না। কিন্তু তবুও যেতে হবে বাবা-মা এর বোঝা টানতে।
.
শহুরে স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় কাব্য ৮ম হয়েছে। মামার বাড়ি থাকতে হবে। ভর্তি হলো, কাব্য একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারেনা সে ভর্তি পরীক্ষায় ৮ম হয়েছে কিন্তু তার রোল ৪৩ কেন। মামা বাড়ী আছে ২ মামা ২ মামি, ছোট্ট একটা মামাতো ভাই আর নানী। মামারা ব্যাবসা-চাকুরী এর জন্য প্রায়ই বাইরে থাকে, আর মামীরা তো একজন শেখ হাসিনা আর এক জন খালেদা জিয়ার মেয়ে। মহা বড়লোক তারা। বাড়িতে কে আসলো কে গেলো কে খাইলো কে না খেয়ে আছে সে খবর রাখার মত সময় কারো নেই। নানী দিন-রাতে ৩২ বার নামাজ, ৩৭ বার ওযু, ৪২ বার কোরআন শরিফ নিয়ে বসে। তার পৃথিবীর খোজ রাখার সময় কই? দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কেন, কেন ৩০ ঘন্টা হলো না এ নিয়ে মহা বিরক্ত সে।এদিকে কি করে ভাত মুখে তুলতে হয় এটা ও জানে না। তার কোন দিন ভাতে হাত দেওয়া লাগেনি, আম্মু-আব্বু আছে না? এমন কি ছোট বোন ও মুখে তুলে খাইয়েছে হাদারামকে।
.
.
গ্রামের বুকে বেড়ে ওঠা এক কিশোর কেমন করে ইট-পাথরের নিঃষ্প্রান শহরের চার দেওয়ালে বন্ধি থাকবে ?
তাছাড়া স্কুলের কারো সাথে মিশতে পারে না। কেমনে পারবে ? ওর পৃথিবী বলতে আব্বু-আম্মু আর কবিতা। ও বাইরের এ জগত সম্পর্কে কিছুই জানে না। কাব্যর অভ্যাস রাতে আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে ঘুমানো, সেই ছেলে এখন একা এক বিছানায়। কেমন করে ঘুমাবে ও? সারা রাত নির্ঘুম কাটে ওর। চোখ থেকে নিরবে অশ্রু ঝরে। এ ভাবে আর কত দিন, অসুস্থ হয়ে পড়ে। সুস্থহয়, আবার অসুস্থ।
ও ওর বাবার কাছে প্রতি সপ্তাহে চিঠি লিখত। একটা চিঠির একটা অংশ তুলে ধরা হলো:
.
আব্বু,
আমার আবার জ্বর আসছে। প্যারাসিটেমল এ এখন আর জ্বর যায় না। আমি যদি আবার আগের মত সকাল বেলা পান্থা ভাত খেতে পারতাম, যদি গ্রামের খোলা হাওয়ায় ঘুরতে পারতাম, যদি নদীর ঘোলা পানিতে আবার সাঁতার কাটতে পারতাম তবে আমি সুস্থ হইতাম। আমাকে নিয়ে যাও, না হলে মরে গেলে কিন্তু তুমি কাঁদতে পারবে না।
.
.
ওর বাবা ও ওকে ফিরিয়ে আনতে গেল। কিন্তু তত দিনে ও শহরের পরিবেশ এর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। ক্লাশ, আড্ডা, প্রাইভেট এভাবে কাটে গেল তিনটি বছর। এখন ও গ্রামে ও আসতে চায় না।
.(কলেজের বন্ধু এবং ভেসে আসা মেঘ)
.
"মনের কষ্ট আর চোখের পানি
কাউকে দেখাতে নেই।
নিজের জিবন সুখের না হলেও
কাউকে বলতে নেই।
......... ........ ★কারন★
সবাই কষ্ট দিতে পারে,
কষ্টের ভাগ নিতে পারে না।"
.......... ★...........★..............★..........
.
হি হি হি হি, আবার শুরু করেছে কাব্য। আসলে বুঝতেই পারছেন। বিরহে থাকলে যা-ই হয় আর কি! আজ কাব্যর কলেজ এর সম্পর্কে লিখবো।
.
কলেজের ফাষ্ট ইয়ার এ ই কাব্যর সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে নির্ঝর আর সম্রাটের। একই রকম ফাজিল। কলেজের বেঞ্চের লোহা ভেঙে বিক্রি করে আচার কিনে খাওয়া, অধ্যক্ষের বাসার কাঠাল চুরি। স্যারের বাসায় যেয়ে চুরি করে স্যারের খাবার খাওয়া সবই ছিল ওদের সামান্য ব্যাপার। তবে পড়া-শুনায় কিন্তু খারাপ ছিল না। কিন্তু প্রচুর ক্লাশ ফাকি দিত। ওদের দেহ তিনটি হলেও মন ছিল একটা।
.
এইচ এস সি পরীক্ষা, প্রস্তুতি খারাপ না। কিন্তু বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা ২৫ মিনিট হলেই নির্ঝর অসুস্থ হয়ে যায়। পরে আর পরীক্ষা দিতে পারে নি। কাব্য, সম্রাট সহ আরও কয়েকজন সিদ্ধান্ত নেয় যে ওরা পরীক্ষা দিবে না। কিন্তু বাড়ীর চাপে পরীক্ষা দেয় কাব্য। নাম মাত্র পরীক্ষা।
.
রেজাল্ট এ কাব্য তিন বিষয়ে টেনে-টুনে পাশ করে। মনে মনে খুব খুশি, প্রিয় বন্ধুকে রেখে ভার্সিটিতে যাবেনা। এদিকে সম্রাট চিটিং করেছে। যাই হোক, বন্ধ হয়ে যায় কাব্যের লেখা-পড়া। তাস, সিগারেট, আড্ডা,রাজনীতি এসবে জড়িয়ে পড়ে কাব্য। বাবা-মা এর সাথে সেরকম কথা ও বলে না।
.
দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে যায়। সামনে নির্বাচনী পরীক্ষা, কাব্যর লেখা-পড়া শিকায় তোলা। নির্ঝরের অনুরোধে আবার বই নিয়ে বসে কাব্য। ওর বাবা-মা দেখে তো পুরাই অবাক। পড়া-লেখার চেষ্টা করছে। রাত জেগে জেগে পড়ে আর নির্ঝরের সাথে পড়া নিয়ে কল করে, মেসেজ করে। এক দিন রাতে ঘুমানোর আগে কাব্য নির্ঝরকে একটা মেসেজ করে। মেসেজটা ছিল এরকম, "হারামি, কাল সকালে ডেকে দিস। কলেজে যাব"।
.
পরের দিন সকালে ফজরের নামাজের সময় একটা নাম্বার থেকে কয়েক বার ফোন আসে আর কয়েকটা মেসেজ। সকাল বেলা কাব্য কল লিষ্টে একটা অপরিচিত নাম্বার দেখে অবাক হয়। শুধু তাই নয়। রিসিভ কলে ও সেই নাম্বার। কল রেকর্ড এ শুনতে পেল ও খুব বকেছে ও। আসলে কাব্য খুব ঘুমে কাতর। কাব্য অনুতপ্ত হয়ে ওই নাম্বারে কল দেয়। সরি বলে। ভুল স্বিকার করে। পরে ওপাশ থেকে ও সাড়া মেলে। ওমা, একি ? এতো একটা মেয়ে। আসলে কাব্য মেয়েদের সাথে তেমন একটা কথা বলে না।
.
কাব্যর সাথে বেশ আলাপ চলে মেয়েটার সাথে। মেয়েটার নাম মেঘা। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট এ একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। বিজ্ঞান বিভাগে। এদিকে মেয়েটাকে দুষ্টুমি করে কাব্য বলে ও দশম শ্রেণীর ছাত্র। সুতরাং মেঘাকে আপু বলেই ডাকে কাব্য। বেশ মজায় মজায় কাটে ওদের দিন গুলি। এদিকে কাব্য আবার কবিতা লিখে। প্রতিদিন মেঘাকে একটু একটু কবিতা শোনায়। মেঘার ও বেশ ভাললাগে কাব্যর কবিতা।
.
কলেজে যেয়ে প্রতিদিন নির্ঝর আর সজিব (নতুন বন্ধু) কে সব বলে বেশ মজা করে ব্যাপারটা নিয়ে। নির্ঝর মেঘাকে কাব্য সম্পর্কে সব বলে দেয়। মেঘা কাব্যকে কল দিয়ে একটু বেশি ই বলে। কাব্যর কথার স্টাইল, উচ্চারন এতটা ভাল লেগে যায় মেঘার তা বলে প্রকাশ করা যাবে না। এত্ত কিউট করপ কেমনে একটা ছেলে কথা বলতে পারে? ছোট্ট একটা সমস্যার কারনে কাব্যর মোবাইল কয়েকদিন বন্ধ থাকে।
.
২৮ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টার দিকে মেঘা আবার কাব্যকে মেসেজ করে। এভাবে চলতে থাকে রাত ১১ টা পর্যন্ত।
.*১২:০১*
মেঘা- কাব্য, আমি তোমাকে ভালবাসি, I Love you আশাকরি তুমিও আমাকে ভালবাসো।
.
কাব্য= হি হি হি, ভালবাসা কোন আইসক্রিম নয় যে তা বাজারে পাওয়া যায়। চাইলেই ভালোবাসা যায় না।
.
মেঘা- আমি শুধু জানি তুমি শুধুই আমার, আমি সত্যিই তোমাকে ভালবাসি। বাকি জিবনটা তোমার সাথে কাটাতে চাই। তুমি যদি আমাকে ভালনা বাসো তবে আমি আত্মহত্যা করবো।
.
কাব্য- চেষ্টা করে দেখতে পারো। তাহলে অন্তত দেশের একটা মানুষ কমবে।
..
.
.১২:৩৫ মি
★ একটা অপরিচিত নাম্বারের ফোন। কাব্য আবার অপরিচিত নাম্বারের কল রিসিভ করে না। অপরিচিত নামবার দেখে ও আবার পড়ায় মন দিল। একবার, দুইবার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার কল দিল সেই বাংলালিংক নাম্বার। এর পরে মেসেজ, খুব অনুরোধ করছিল কলটা ধরতে। মেঘার রুমমেট। তাই ধরলো কাব্য। মেঘা নাকি স্টিল এর স্কেল দিয়ে হাত ফেড়েছে। অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ খেয়েছে। কোন ভাবেই ওকে থামানো যাচ্ছে না। খুব কাঁদছে।.
.
কি বিপদ! কি বিপদ!!
এতদিন জানতাম ছেলেরা নাকি মেয়েদের ভালবাসা পাওয়ার জন্য এত্ত সব করে। আজ তো উল্টো হয়ে গেল.....
.
তাৎক্ষনিক সজিব আর নির্ঝরকে কল দেয় কাব্য। নির্ঝর ওকে ও একটা শান্তনা মূলক একটা মেসেজ দিতে বলে মেঘাকে। তাই কাব্য "too" লিখে পাঠায়।
.
সকাল ৯:৫৫
একটা মেসেজ। ০১৭৫০০৯৭★★★
এটা নির্ঝরের নাম্বার। ভিতরে লেখা "দোস্ত, মেয়েটা সত্যি তোকে অনেক ভালবাসে। ওকে আর কষ্ট দিসনা, ওর মত আর কেউ তোকে ভালবাসতে পারবে না"
.
নির্ঝরও বলছে ? কিন্তু আম্মু তো বলেছিল মেয়েরা নাকি অনেক ডেঞ্জেরাস হয়!
.
.
(বাকিটা আগামী পর্বে)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৬ রাত ১২:৩১