somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ হিমুর ব্রেক-আপ

৩১ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ৮:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
;;
;;
;;


প্রচ্ছদ কৃতজ্ঞতাঃ তানভীর চৌধুরী পিয়েল

আমার কাছে ঈদের দিন আর অন্যান্ন দিনের মাঝে তেমন কোন পার্থক্য নেই। ভেবেছিলাম দুপুর পর্যন্ত ঘুমাবো। কিন্তু সেটা আর হলো না। সকাল সকাল ঘুম ভাঙ্গলো খালু সাহেবের ফোন পেয়ে।
- হ্যালো কে হিমু?
- জি খালুসাহেব। ঈদ মোবারক।
- রাখো তোমার মোবারক ফোবারক।
- কি হয়েছে?
- I am in deep trouble. সমস্যা বাদলকে নিয়ে। এই গাধা পুত্র আমার লাইফ ত্যানা ত্যানা করে দিয়েছে। সাক্ষাতে বিস্তারিত বলবো। তুমি এখনি আমার বাসায় চলে আসো। কুইক। উইথিন হাফ এন আওয়ার।
- ওকে কমরেড।
- তোমার স্বভাবসুলভ ফাইজলামী আমার সাথে করবে না। ওকে? আর কোন কথা না বলে রওয়ানা হও।
আমি রওয়ানা হয়ে গেলাম।


কলিং বেল টিপতেই দরজা খুলে গেলো। দরজা খুলে দিলেন মাজেদা খালা। খোলা মাত্রই আমি খালার পায়ের উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। খালা চমকে উঠে বললেন,
- এই গাধা। কি করছিস?
- আজকে ঈদের দিন না? সালাম করলাম। সালামি দাও এখন। আজ মহান সালাম দিবস। যাকেই পাবো সালাম করবো। তোমাদের কাজের বুয়া, দারোয়ান কেউ বাদ যাবে না। খালু কোথায়?
- তোর খালু তার ঘরে। আমরা বিরাট বিপদে পড়েছিরে হিমু। বাদল আমাদের মান ইজ্জত ডুবিয়ে দিয়েছে। একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।
- বাঘের বাচ্চা। তোমার পুত্র আর পুত্র বধু এখন কোথায়? এখানে?
- মাথা খারাপ? আমি এদেরকে আমার বাড়িতে রাখবো কেনো। মেয়ের বাবা মন্ত্রি শ্রেনীর কেউ। এর মাঝে পুলিশে জানাজানি হয়ে গেছে। আমি বাদল আর তার বউকে তার নানাবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।
- ভালো করেছো। আমি যাই খালুর সাথে দেখা করে আসি।

খালু সাহেব আয়েশ করে বসে আছেন। তার চোখ মুখ লাল। সামনে তিনটা মদের বোতল। তিনটাই খালি। বুঝলাম তিন বোতল মদ খাওয়ার কারনেই তার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
আমি খালু সাহেবের পায়ে ধরে সালাম করলাম।
- এটা কি হলো হিমু?
- এটা একরম ব্যায়াম খালুসাহেব। পায়ে ধরে সালাম করার জন্য আপনার মাথা নোয়াতে হবে। এটা করলে গ্র্যাভিটির কারনে আপনার মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাড়বে। ব্রেইন নিউট্রিশন পাবে ভালোমতো।
- এটা কার আবিষ্কার?
- কার আবিষ্কার সেটা বড় কথা না। বড় কথা হলো ব্যায়ামটা।

মাতাল মানুষকে প্রভাবিত করা সহজ। খালু সাহেবও আমার কথা বিশ্ব্বাস করে ফেললেন।
- হিমু, দাও। তোমার পা দাও। সালাম করি। ব্যায়ামটা হয়ে যাক। আমার মাথায় নিউট্রিশনের দরকার আছে। মাথাটা কাজ করছে না।

আমি পা দিলাম। খালু সাহেব পা ধরে সালাম করলেন, ঠিক তখনই ঘরে ঢুকলেন মাজেদা খালা। খালু আমার পায়ে ধরে সালাম করছেন এই দৃশ্য দেখে খালা মোটামোটি খাম্বার মতো হয়ে গেলেন।
খালু দ্বিতীয়বার ব্যায়াম করার উদ্দেশ্যে খালার পায়ের দিকে এগুলেন। খালা ছোটখাটো একটা চিৎকার করে ঝেড়ে দৌড় দিয়ে নিচে নেমে গেলেন।
খালুর মাথায় ব্যায়ামের ব্যাপারটা ভালো মতো ঢুকে গেছে। এটা কোন পর্যন্ত গড়ায় কে জানে! উত্তেজিত মস্তিষ্কে কিছু ঢুকে গেলে সেটার ফল হয় মারাত্মক।
আমি নিচে নেমে আসলাম।


ড্রয়িং রুমে এসে দেখি বসে আছেন রমনা থানার অসি সাহেব। তিনি আমাকে দেখে নাক কুচকালেন। বুঝাই যাচ্ছে তিনি আমাকে দেখে বিরক্ত। বিরক্ত মানুষকে রাগিয়ে দেয়া সহজ। অসি সাহেবকেও রাগিয়ে দিলাম।
- ঈদ মোবারক অসি সাহেব। আসেন কোলাকোলি করি।
- আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই। আপনাকে আমি চিনি। আপনি মানুষের মাথা আউলা করে দেন। আমার সাথে ভুজং ভাজং করার চেষ্টা করবেন না প্লিজ। আমি কঠিন চিজ। এই বাড়িতে মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। এক মেয়েকে এনে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আমি আপনার খালুর সাথে কথা বলতে চাই। তাকে ডাকুন।

খালু সাহেবকে ডাকতে হলো না। তিনি চুপি চুপি এসে দাড়ালেন অসি সাহেবের সামনে। অসি সাহেব খালুকে দেখে বসা থেকে উঠে দাড়ালেন। তখনই একটা নাটক ঘটলো। খালু সাহেব হঠাৎ করে অসি সাহেবের পায়ে হাত দিলেন। তারপর দিলেন পায়ে ধরে টান। অসি সাহেব তাল সামলাতে পারলেন না। তিনি ধুম করে পড়ে গেলেন। তার মাথা লাগলো পাকা ওয়ালে। তিনি বিরাট চিৎকার করে ভু-পাতিত হলেন এবং কোমায় চলে গেলেন।

ঘটনা জটিল হয়ে গেলো। আমি সব সময় জটিলতা এড়িয়ে চলি। এবারও একই কাজ করলাম। খালু সাহেবের বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। এখন যেতে হবে বাদলের খোজে। বাদলের নানা বাড়ি বেশি দূরে না। হেটে যেতে ৩০ মিনিট লাগার কথা।


আমাকে দেখেই বাদল চিৎকার করে উঠলো।
- হিমু দাআআআআআআআআআ।
- কিরে বলদ। তুই নাকি বিয়ে করেছিস?
- আরে বিয়ে ফিয়ে পরে। চ্যানেল আই দেখো। আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে র‍্যাব আর পুলিশ। বাবার মাথা নাকি আউলা হয়ে গেছে। তিনি রমনা থানার অসিকে উলটা করে ঝুলিয়ে রেখেছেন।
- বলিস কি!

আমি টিভির সামনে বসলাম।
ঘটনা সত্যি। খালু সাহেবের বাসার লাইভ বর্ননা দিচ্ছেন জনৈক সুন্দরী তরুনী।
প্রিয় দর্শক, এই সেই বাসা। যেটার ভেতর ঘটছে অদ্ভুত সব ঘটনা। কিছুক্ষন আগে রমনা থানার অসিকে আহত করা হয়েছে। ঘটনার মুল হোতা হলেন এ বাড়ির মালিক আরেফিন সাহেব। তিনি যাকে দেখছেন পায়ে ধরে টান দিচ্ছেন। তারপর পায়ে ধরে মাথার উপর তুলে ঘুরাচ্ছেন। কিছুক্ষন আগে জনৈক র‍্যাব সদস্য বাড়ির ভেতর ঢুকেছেন। তার আর কোন খবর পাওয়া যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে তার পরিনতিও হয়েছে রমনা থানার অসি সাহেবের মতো”

টিভিতে বেশ উৎসাহের সাথে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে মর্জিনা বুয়া।
“আল্লাহ গো! স্যারেরে জ্বিনে ধরছে। যারে দেখতেছে ঠ্যাঙ্গে ধইরা আছাড় দিতেছে। আমাগো আজগর মাস্টররে একবার এই জ্বিনে ধরছিলো। সে এক বিরাট কাহিনি। কোন মোল্লা মুন্সি তারে ভালো করতে পারে না। তারপর কোনহান থেইকা আসলো এক দাড়িওয়ালা ব্যাটা….”

একটু পর আবার দেখা গেলো উপস্থাপিকাকে
“প্রিয় দর্শক, সুখের খবর হলো এ বাড়ির গৃহকর্তৃকে এই মাত্র র‍্যাব গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এবার কথা বলবো তার সাথে”
টিভি পর্দায় মাজেদা খালার বিদ্ধস্ত চেহারা দেখে গেলো। তিনি চিচি করে বলছেন “আমি কিচ্ছু জানি না, আমি কিচ্ছু জানি না”
খালা এটা বলার পরেই মূর্ছা গেলেন।

আমি বললাম “হলি কাউ। পবিত্র গাভী”

বাবা-মার এই অবস্থা দেখে বাদল বিরাট মজা পাচ্ছে। সে কিছুক্ষন পর পর হাতে কিল দিয়ে বলছে “হিমু দা, ফ্যান্টাস্টিক ব্যাপার”
- ব্যাপার তো ফ্যান্টাস্টিকই। তা তর বউ কই।
বাদল লজ্জায় লাল হয়ে বললো “ও একটু শপিং করতে বের হয়েছে। ও অনেক ভালো। তোমার কথাও ওকে বলেছি”

এমন সময় ঘরে ঢুকলো বাদলের সদ্য বিবাহিত বউ। আমি যা ধারনা করেছিলাম তা-ই। বাদল বিয়ে করেছে রুপাকে।
বাদল রুপার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো।
- এই হচ্ছে সেই গ্রেট হিমু দা। তোমাকে যার কথা বলেছিলাম।”
মুখ খুললো রুপা, “আপনার কথা অনেক শুনেছি। বাদল আপনার বিরাট বড় ভক্ত। আমি আপনার জন্য একটা পাঞ্জাবী এনেছি। দেখুন তো পছন্দ হয় কি না!”

পাঞ্জাবী দেখে বাদল বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলো। “ওয়াও। হলুদ পাঞ্জাবী! তার উপর পকেট নাই। রুপা! তুমি জানলে কিভাবে হিমু দা এরকম পাঞ্জাবী পরে!”
রুপা রহস্যময় হাসি হাসলো। এই হাসির অনেক অর্থ হতে পারে।
আশ্চর্য! রুপা এই হাসি কবে শিখলো!

আমি রুপাকে বললাম -“তোমার শশুর শাশুড়ি বিরাট বিপদে পড়েছেন। তাদেরকে উদ্ধার করো।”
রুপা বললো - “আমি কিভাবে করবো”
- তুমি তোমার বাবাকে ফোন করে বলো তিনি যাতে র‍্যাবকে বলে দেন তাদেরকে নিয়ে আর যাতে তারা মাথা না ঘামায়।
- আমি বললেই কাজ হবে?
- হ্যা হবে।

রুপা ব্যাগ থেকে মোবাইল ফোন বের করলো।

আমি তার দেয়া পাঞ্জাবীটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
আজ শহরে কাঠ ফাটা রোদ উঠেছে। পিচ ঢালা রাস্তায় অদ্ভুত মরিচিকা সৃষ্টি হয়েছে। আমি মরিচিকার দিকে এগুতে থাকলাম। যদিও জানি মরিচিকার কাছে গেলে সেটা দূরে সরে যেতে থাকবে কেবল।

*************************************************
## "আজ হিমুর বিয়ে" যেহেতু আছে সেহেতু "আজ হিমুর ব্রেক আপ" জাতীয় কিছু থাকা উচিত- এরকম বাসনা থেকেই লেখাটা লেখা। স্বীকার করছি হুমায়ুন আহমেদের ধারে কাছেও যায় নি।
## আমার অন্যান্ন লেখার মতো এটিও একটি ফাইজলামী পোস্ট মাত্র। হিমু এবং হুমায়ুন আহমেদ ভক্তরা আশা করি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।



একটি ঈদ স্পেশাল রাজি প্রোডাকশন



ঘুরে আসতে পারেনঃ
** হিমুর হাতে কয়েকটি নোবেল প্রাইজ

অন্যান্ন অপ্রকাশিত লেখার সাথে আমার পার্সোনাল ব্লগে এর আগে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৩১
৯৭টি মন্তব্য ৮৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×