somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে নাস্তিক ও অন্নান্যধর্মের অপপ্রচার চালনাকারীদের দাঁতভাংগা জবাব দিতে চাইলে পড়ুন

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সনাতন ধর্ম সত্য ধর্ম হলেও সাধারনত দেখা যায় বর্তমান সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্মের লোক ব্যাতীত প্রায় সকলেই হিন্দু ধর্মকে একটি মিথ্যা বা কাল্পনিক ধর্ম মনে করে। শুধু তাই না হিন্দু ধর্মেরও অনেকে সনাতন ধর্মকে অবিশ্বাস করে থাকে, কেউ প্রকাশ্যভাবে আবার কেউবা মনে মনে। যদিও বাস্তবতা আসলে অন্যরকম। এখানে সনাতন ধর্মের সত্যতার প্রমান দেয়া হবে। তার পূর্বে জানা দরকার হিন্দু ধর্মেরই অনেকে কেন অবিশ্বাষী? তার প্রধান কারণ হল- ব্রাম্ম্যন ব্যাতীত ধর্ম গ্রন্থগুলো আর কেউই পড়ে না।তাই ঈশ্বর কি কি বলছে তা ব্যাক্তিগত ভাবে জানতে পারে না বিধায় তারা ঈশ্বর বিমুখ হয়ে পরে। এখন অবশ্য অনেক হিন্দু পন্ডিত সকল বর্ণের এমনকি নারীদেরকেও গীতা পাঠ করতে উতসাহিত করে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোর বেশীরভাগ অংশই বিভিন্ন ভাবে বিকৃত হওয়ায় এবং অবিকৃত অংশের সবগুলোই পরিপুর্নভাবে অনুধাবন ও মান্য না করায় অনেকেই সঠিকভাবে ধর্মালম্বী হতে পারছে না। এখানে ১মেই সত্যের মাপকাঠিতে প্রমান দেখানো হবে যে, ধর্মগ্রন্থগুলো কিভাবে বিকৃত হয়েছে, কেন হয়েছে এবং কতটুকু হয়েছে। এর পর পরই বাকী অবিকৃত অংশেরও সত্যতার প্রমান দেয়া হবে। অনেকেই মনে করে খ্রীস্টপূর্ব ৫৫০০ অব্দ এ ধর্মের গোড়ার দিক কিন্তু বাস্তবে সনাতন ধর্ম যে আরও পূর্বের তা একটু পরে আলোচনা করা হবে। তবে এটা নিশ্চিত হিন্দু ধর্ম সবচেয়ে প্রাচীন আর তাই বেশি পুরোনো হওয়ায় এই ধর্মই সবচেয়ে বেশি বিকৃত হবার প্রয়াশ পেয়েছে। ২য়ত অতীত কালে লেখার প্রচলন না থাকায় লিপিবদ্ধ করা ছিল না, প্রাথমিক অবস্থায় শুধুমাত্র মানুষের সৃতিতে ধর্মগ্রন্থগুলো সঞ্চিত ছিল বলেও বিকৃত হবার সম্ভবনা রয়েছে
যেমন-হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ সংকলন হয় আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০-৯৫০অব্দে ও খ্রীস্টপূর্ব ৫০০-১০০ অব্দের মধ্যে রামায়ণ এবং মহাভারত শ্রুতিবদ্ধ হয়। ৩য়ত যেকোন মৌখিক তথ্য একজন হতে বিভিন্নজনের কাছে পৌছাতে পৌছাতেই যে বিকৃত হয়ে যায় এটা প্রমানিত, যেমন- একদিন আমাদের ক্লাশে এক হিন্দু শিক্ষক আমাদের একটি পরীক্ষন দেখিয়েছিলেন, পরীক্ষনের জন্য তিনি ছাত্রদের মাঝ হতে ৫/৭জন ছাত্রকে ডাকলেন এবং তাদেরকে সবাইকে সারিবদ্ধভাবে দ্বার করিয়ে বললেন- আমি তোমাদের লাইনে দ্বারানো ১ম জনের কানে কানে ১টি কথা বলব, সে আবার তার পাশের জনের কানে সেটাই বলবে, এরপর পরের জন তার পরের জনের কানে যা শুনেছে তাই পৌছাবে, শেষের জনের কাছে এই কথাটি পৌছানোর পর স্যার সবাইকে বললেন কে কি বলেছ আর কে কি শুনেছ এবার উচ্চস্বরে তা বল। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে স্যার ১মজনকে যে কথাটি বলেছিল লাইনে দ্বারানো শেষের জনের কাছে সেই কথাটি ধীরে ধীরে বিকৃত হতে হতে এমনভাবে পৌছায় যে ১ম জনে বলা কথাটির সাথে একেবারেই মিল নেই। সুতারাং বিভিন্নজনের মুখে বলার মাধ্যমে হাজার হাজার বছরের পূর্বের এই হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলো যে কি হারে বিকৃত হয়েছে এটা খুব সহজেই বুদ্ধিমানরা বুঝবে। আবার আরেকটি আশ্চর্যের ব্যাপার হল অনেক হিন্দুই ভাবে আমাদের ঈশ্বর ভিন্ন আর অন্যান্ন ধর্মের ঈশ্বরও ভিন্ন। কিন্তু একই দুনিয়ায় ঈশ্বর যদি আলাদা আলাদা হয় তবে চাঁদ, সূর্যের নিয়ন্ত্রন নিয়ম মাফিক হত না, শুধু তাই না ঈশ্বরে ঈশরে যুদ্ধ লেগে দুনিয়াই ধংস হয়ে যেত, আর বর্তমান পৃথিবীতে এক ঈশ্বরের অনুসারিরা অন্য ঈশ্বরের অনুসারির এলাকায় খুব সুন্দরভাবেই জীবন যাপন করছে আর তারাও বৃষ্টি, রোদ, ছায়া সেসব এলাকার লোকদের মতই পাচ্ছে সুতারাং এতেও প্রমানিত হয় ঈশ্বরের ব্যাপারটা আঞ্চলিকও নয়। একটি রাজ্যে যেমন রাজা বা প্রধান ১জনই হয় ঠিক তেমনি এই মহাবিশ্ব পূরাটাই ১ ঈশ্বরেরই রাজ্য। বিভিন্ন কাজ পরিচালনার জন্য তিনি বিভিন্ন ফেরেশতাকে দায়িত্ব দিয়ে রাখলেও আসল ক্ষমতা তার হাতেই, সুতারাং ফেরেশতা বা দেবতাদের পূজো দিয়ে কোন লাভই নেই বরং পরম ঈশ্বরকে এখানে অবমাননা করা হয় কারন সরাসরি স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির মাধ্যমে পুজা করলে স্রষ্টার সৃষ্টির পুজাই হয় স্রষ্টার নয় যেহেতু স্রষ্টার মাধ্যমেই সৃষ্টির সৃষ্ট হয়েছে কিন্তু সৃষ্টির মাধ্যমে স্রষ্টা নয় সেহেতু সৃষ্টকে মাধ্যম করলে স্রষ্টার না হয়ে সৃষ্টির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। এগুলো কোন যুক্তির কথা নয় বরং হিন্দু ধর্মগ্রন্থই তা বলছে যেমনঃ “এক জনেই বিশ্বের প্রভু” (ঋকবেদ ১০;১২১;৩) "মা চিদান্যাদভি শাংসাতা " অর্থাৎ "হে বন্ধুগণ, সেই একমাত্র ঐশী সত্তা ছাড়া আর কারো উপাসনা করো না।" [ঋগ বেদ সংহিতি, ভলিউম-১১, পৃষ্ঠা ১ ও ২। এছারাও Ma cid anyad vi sansata sakhayo ma rishanyata" অর্থাৎ "বন্ধুগণ, একমাত্র ঈশ্বরকে ছাড়া কারও উপাসনা করো না, শুধুমাত্র উনারই প্রশংসা কর।"রিগবেদ ৮;১;১“তিনি একজন তাঁরই উপাসনা কর” (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬) "তিনি উজ্জ্বলতায় সমাসীন । তিনি অমূর্ত নিরাকার, শরীর-বিহিন এক পবিত্র সত্তা, যাকে কোন অশুভ ভেদ করে নাই । তিনি সুদূরদর্শী, প্রজ্ঞাময়, সর্বব্যাপী সয়ম্ভু, যিনি যথার্থভাবে অনন্ত সময়ের জন্য লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট করেছেন ।" [যজুর্বেদ-৪০:৮]‘আমার আদি নাই, জন্ম নাই । আমি সকল জগতের প্রভু, আমার এই স্বরুপ যিনি জানেন, তিনি এই জিগতের সকল পাপ হইতে মুক্ত’ (গীতা, দশম অধ্যায়, শ্লোক/৩৭)। এছাড়াও আছে ‘হে মহাত্মা তুমি ব্রহ্মার চেয়েও বড়, তুমি সৃস্টিকর্তা তাই তোমাকে তাঁরা সকলে প্রনাম করিবে না কেন ? হে শ্রেষ্ট দেবতা, হে অনন্ত, হে জগতের আশ্রয়! তুমি ব্যক্ত ও অব্যক্তের অতীত যে পরম ব্রহ্মা তাঁহাই তুমি’ (গীতা, দশম অধ্যায়, শ্লোক ৩৭-৩৮)।“ন দ্বিতীয়, ন তৃতীয়, চতুর্থ ন পুচ্যতে ন পঞ্চম, ন ষষ্ট, সপ্ত্য ন পুচ্যতে। ন অষ্টম, ন নবম, দশমো ন পুচ্যতে য এতং দেভ মেক বৃতং বেদ”(অথর্ব বেদ। সুক্ত ১৪;৪;২)অর্থাৎ ‘পরমাত্তা এক। তিনি ছাড়া কেহই দ্বিতীয়, ৩য় বা ৪র্থ, ৫ম, ষষ্ট বা ৭ম, ৮ম ৯ম বা দশম বলিয়া অবিহিত আর কেহ নাই। যিনি তাহাকে এক বলিয়া যানেন তিনিই তাঁহাকে প্রাপ্ত হন’। “একম এবম অদ্বৈত্তম”(ঋকবেদ ১;২;৩) ছান্দোগ্য উপানিষদ , প্রাপাথাকা - অধ্যায় ৬, শ্লোক ২, "এক্কাম এবাদিতিয়াম" অর্থাৎ তিনি একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই। হিন্দু বেদান্ত সুত্র এর ব্রক্ষা সুত্রাঃ "একাম ব্রহাম, দ্ভিতিয়া নাস্তে নেহ না নাসতে কিনচান " অর্থাৎ "ঈশ্বর, কেবলমাত্র একজন, দ্বিতীয় কেউ নেই; কেউ নেই, কেউ নেই, মোটেই কেউ নেই।"
এখন প্রশ্ন হল হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে এত স্পষ্টভাবে মহান ঈশ্বরের পরিচয় থাকার পরও কেন তারা বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী? তারকারন হল দুটি – ১মত ধর্ম কর্মের দায়িত্ব শুধু ১টা নির্দিষ্ট শ্রেনীর মধ্যে আবদ্ধ থাকায় তাদের চিন্তা চেতনাই বেশী প্রাধান্য পেয়েছে ধর্মগ্রন্থের চাইতে, তাই তাদের দেয়া বহু ঈশ্বরের মতবাদটাই সর্বসাধারনের কাছে বেশী গৃহিত হয়েছে পক্ষান্তরে সাধারন হিন্দুরা জানতেও পারেনি আসলে ধর্মগ্রন্থে কি আছে? আর দু একজন আপত্তি করলেও তাদেরকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে গোজামিল দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল ধার্মিক শ্রেনীদের মধ্যে বহু ঈশ্বরের মত কিভাবে স্থান পেল ? হ্যা সেটাই হল বহুশ্বর মতবাদের ২য় এবং মুল কারন- যেমনঃ ধর্ম গবেষকদের মধ্যে অদ্বৈতবাদী/সর্বেশ্বরময়বাদী দর্শন এবং ত্রুটিযুক্ত দ্বৈত ও ভক্তিবাদী দর্শনের উৎপত্তি। এই দুটি মতবাদের মতই কিছু তথ্য ঈশ্বর এর গ্রন্থেই ছিল যদিও এরকম না কিন্তু পরবর্তিতে ধর্মগ্রন্থের শুধুই শাব্দিক তথ্যের উপর সন্তুষ্ট না হতে পেরে কিছু সাধু সন্যাসীর উর্বর মস্তিকের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তানুযায়ি ভাবার্থ করায় এই দুটি ভ্রান্ত মতবাদের জন্ম, আর সেখান থেকেই বহুশ্বরের ধারনার উৎপত্তি। যেমন- সব হিন্দুই মনে করে যে আসল ঈশ্বর ১জনই তাকে তারা বলে পরম ঈশ্বর বা পরমাত্মা। কিন্তু তারা এও ভাবে যে পরম ঈশ্বর বা পরমাত্মা হতেই সব কিছুর তৈরী আর তার হতেই অন্যান্ন ঈশ্বরগুলোর সৃষ্টি আর তারা পরম ঈশ্বরের শক্তির বিভিন্ন রুপমাত্র, শুধু তাই না প্রকৃতির বিশেষ কোনকিছু দেখলে তাকেও ঈশ্বরের একটি বিশেষ রুপ ভেবে পুজা করা উচিত, তাদের পুজো করলে পরমাত্মারই পুজো করা হয়, আর অদ্বৈতবাদ মতানুসারে তো স্রষ্টা ও সৃষ্টি সবই এক। এসবই ভ্রান্ত মতবাদ। আর তা কিভাবে হিন্দুদের মাঝে স্থান পেল এবং সঠিক মতবাদ আসলে কি ছিল তা এখন সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে- ১ম সমস্যাটা শুরু হয় ঈশ্বর সম্পর্কে মাত্রারিক্ত কৌতুহল এবং আত্মা বা জীবাত্মা এর সঠিক পরিচয় নিয়ে। এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই মানুষ তৈরী করে এসব ভ্রান্ত কাল্পনিক মত। এর মূল ভিত্তি হল বিভিন্ন অবতারদের মাধ্যমে পাওয়া ১টি তথ্য যে সব জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের আত্মা থাকে যার কারনেই জীব বেচে থাকে আর মৃত্যুর পর আত্মাও চলে যায় আর জীবদেহে তখন পচন ধরে। ১মত তথ্যটি সঠিক হলেও এই তথ্যটাকেই ফুলিয়ে ফাপিয়ে বড় করে ভূল মতবাদের তৈরী করেছে।
যেমন- আত্মার যেহেতু মৃত্যু হয় না সেহেতু আত্মা হল শ্বাশত ও অবিনশ্বর, তার উপর আত্মা যদি হয় আদি-অন্তহীন ঈশ্বরের আত্মা তবে তো আর কথাই নেই , জীবাত্মারও একেবারে বিনাশ নেই, অর্থাৎ আত্মাকে ভাবল ঈশ্বরের ১টি অংশ, শুধু কি তাই আত্মাই ঈশ্বর ঈশ্বরই আত্মা বা দুটোই এক পার্থক্য শুধু এই যে ঈশ্বর ১মে একটি আত্মাই ছিল বা প্রধান আত্মা ছিল পরে তার থেকেই সমস্ত আত্মার তৈরী। আর একারনেই হিন্দুরা ঈশ্বরের আরেকটি নাম দিল "পরম আত্মা"। এসব ভ্রান্ত মত মানুষের তৈরী অবাস্তব কল্পনাই শুধু কখনই ঈশ্বরের দেয়া তথ্য ছিল না। বরং মানুষরা ঈশ্বরের ব্যাপারে এসব বিভ্রান্ত মুলক মত তৈরী করার সংগে সংগেই তিনি অবতারদের(যেমন-জৈনদের ও বুদ্ধকে) পাঠিয়ে এসব মতের ভূল সংশোধন করিয়ে দিতেন যে ঈশ্বরের স্বরুপ সম্পর্কে মানুষ কোন চিন্তা করলে তা ভুল হতে বাধ্য তাই ঈশ্বর সম্পর্কে মানুষের কাছে ঈশ্বর নিজেই যতটুকু বলেছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকা এবং স্রষ্টার চেয়ে তাঁর সৃষ্টিকে নিয়েই বেশী ভাবা উচিত আর ঈশ্বরের অস্তিত্বের স্বরুপের ব্যাপারে চুপ থাকাই শ্রেয়। যেকারনে বুদ্ধকে যখন মানুষরা বলেছিল- অনেক কিছুই তো বললেন এবার ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু বলুন, তখন বুদ্ধ গাছ হতে কিছু পাতা ছিরে হাতে করে এনে সবাইকে তা দেখিয়ে বললেন- আমার এতটুকুই জ্ঞানের সাধ্য এর বাইরে বলার সাধ্য আমার নেই। অর্থাৎ পুরো গাছের পাতার মধ্যে মাত্র ১মুঠো পাতা নিয়ে তিনি মানুষকে প্র্যাকটিক্যালি বুঝিয়ে দিলেন যে ঈশ্বরের জ্ঞানের তুলনায় মানুষের জ্ঞানের ক্ষুদ্রতা ও সীমাবদ্ধতা, সুতারাং এই জ্ঞানে ঈশ্বরের স্বরুপ বুঝা সাধ্যের বাইরে তাই নিজেদের সীমাবদ্ধতা স্বিকার করে চুপ থাকাই উচিত। তারপরও মানুষের যতটুকু জ্ঞান এবং সে অনুসারে ঈশ্বরের ব্যাপারে মানুষের যে পরিমান কৌতুহল সে অনুযায়ি সঠিক তথ্য দিতে দিন দিন মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধির হার অনুযায়ি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন অবতারদের পাঠিয়ে ঈশ্বর সবকিছুর সঠিক ব্যাখ্যা ও সমাধান ঠিকই দিতেন, কিন্তু বেশীরভাগ হিন্দুই পুর্ববর্তী সাধু সন্নাসীর মনগরা ব্যাখ্যাই বেশী মিঠা লাগায় পরবর্তী অবতারদের না মেনে ভুলের মধ্যেই ঘুরপাক খেত। মানুষের কাল্পনিক ব্যাখ্যা বেশীরভাগ মানুষের ভাল লাগার কারন হল- ভুল ব্যাখ্যাদানকারীও মানুষ এবং একই এলাকার হওয়ায় চিন্তা চেতনাও একই হত, আর আশপাশের দেখা পরিবেশ অনুযায়ি মনের মধ্যে সে অনুযায়ি চিত্র তৈরী করে ঈশ্বরের আকৃতির যে ব্যাখ্যা তারা দিত তা খুব সহযেই মনের মধ্যে একটি চিত্রের তৈরী হত, আর মনের সেই চিত্রটাকেই আপন ঈশ্বর ভেবে মানুষ একধরনের মজা পেত- যেমনঃ সব মানুষই মানুষের ১টি মাথা ২হাত ও চেহারার সাথে পরিচিত, তাই ঈশ্বরের বিশেষ রুপের ক্ষেত্রে আরেকটু বেশী তথা ৪টি মাথা অধিক হাত অতি সুন্দর মনুষ্য চেহারা কল্পনায় আনা সহজ হত এবং চেহারা অনেকটা মানুষের মত ব্যাখ্যা করায় মানুষেরা ঈশ্বরের সাথে ১ধরনের অভিন্নতার স্বাধ অনুভব করত। পক্ষান্তরে অবতাররা এসে ঈশ্বরের যে রুপের ব্যাখ্যা দিতেন তা মানুষের কল্পনায় আনা কঠিন হত আর মনের মধ্যে সরাসরি নির্দিষ্ট কোন ছবিও ভাসত না ফলে পূর্বের মত মজাও পেত না, কিন্তু ঈশ্বরের সঠিক তথ্য এমনই। আর মানুষের চিরচারিত স্বভাব এটাই যে, যেটি তার মনপ্রত হবে এবং মজা পাবে সেটাকেই সঠিক মানবে এবং সেটাকেই সে গ্রহন করবে, তাই বুদ্ধের মত মহাপুরুষরাও বেশীরভাগ হিন্দুদের দ্বারা হয়েছে প্রত্যাখ্যাত। রাম কৃষ্ণ সহ যুগে যুগে বিভিন্ন অবতার ঈশ্বর সম্পর্কে আসলে যা বলে গিয়েছিলেন তা হল- সব আত্মা ঈশ্বরেরই আত্মা কিন্তু ঈশ্বর মানুষের মত না যে আত্মা ছারা ঈশ্বর বাঁচবে না বা জীবদের মত অচল বা ঘূমন্ত। বরং আত্মাটাও হল ঈশ্বরের একধরনের সৃষ্টি যা তাঁরই আদেশে একসময় সৃষ্টি হয়েছে, এর পূর্বে আত্মার কোন অস্তিত্বই ছিল না তবে প্রতিটা সতন্ত্র আত্মার পূর্ব পরিকল্পনা তাঁর জ্ঞানের মধ্যেই শুধু অবস্থিত ছিল, তাই প্লান হিসাবে ঈশ্বরের জ্ঞানে থাকার অর্থ পুর্ব হতেই আত্মার অস্তিত্ব থাকা তো নয়ই বরং ঈশ্বরের আত্মা তৈরীর পরিকল্পনাও হয়ত একটা নির্দিষ্ট সময় পূর্বে ছিল না। অর্থাৎ ঈশ্বর আত্মাকে সতন্ত্ররুপে একটা নির্দিষ্ট সময়ে তৈরী করেছেন, আর যেহেতু আত্মাও বস্তুর মতই সৃষ্টি হয়েছে তাই ঈশ্বরের তৈরী নিয়মানুসারে বস্তু এবং আত্মাকেও ধংস হতে হচ্ছে কেননা সৃষ্ট যেকোনকিছুরই ধংস অনিবার্য। তাই আত্মা শাশ্বত বা অবিনশ্বর নয় কিন্তু একমাত্র ঈশ্বরই ধ্বংস হন না কারন তিনি তো সৃষ্টিই হননি বরং নিজেই স্রষ্টা, পরিচালক এবং সবকিছু তিনিই করাচ্ছেন।
অনেকেরই ধারনা বস্তুই শুধু ধ্বংস হয় কিন্তু আত্মার যেহেতু মৃত্যু ঘটে না শুধুই স্থানান্তর হয় তাই আত্মা শাশ্বত বা অবিনশ্বর। তাদের এটা জানা নেই যে শক্তির মত বস্তুও এক রুপ হতে অন্য রুপে পরিনত হয় মাত্র ধংস হয় না, ইদানিং আবার বিজ্ঞান উন্নত হওয়ায় মানুষ জানতে পেরেছে যে বস্তুর ক্ষুদ্রতম মৌলিক এককও এক ধরনের শক্তি, তাই বস্তুরও বিনাশ হয় না শুধুমাত্র রুপান্তর হয় যেমনঃ মাটির ও পানির উপাদান যায় উদ্ভিদে, উদ্ভিদ হতে প্রানীতে এবং প্রানী ও উদ্ভিদ হতে আবারও মাটিতে ও পানিতে এভাবে চক্র চলতেই থাকে। কিন্তু একদিন বস্তু ও আত্মাও একেবারেই ধ্বংস বা বিলীন হয়ে শুধুই ঈশ্বর একা থাকবেন। এই ধারনা হতেই হিন্দুদের মাঝে মোক্ষলাভের আরেকটি ভ্রান্ত মতের সৃষ্টি হয়েছে যেটা নিচে আলোচনা করা হবে। আর যা কিছুই আছে তাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- ১) স্রষ্টা ও ২)সৃষ্টি। সৃষ্টি ১মে ছিল না একসময় থাকবেও না, কিন্তু স্রষ্টা সবসময়ই ছিল, আছে এবং থাকবে। সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে স্রষ্টা থেকে কিন্তু সৃষ্টি থেকে স্রষ্টা নয় তাই সৃষ্টি আর স্রষ্টা কখনও এক নয় বরং আলাদা আলাদা, যদিও স্রষ্টা হতেই সমস্ত সৃষ্টির সৃষ্ট যেমন- সূর্য হতে সূর্যের আলোর সৃষ্টি সম্ভব কিন্তু সুর্যের আলো থেকে সূর্যের তৈরী অসম্ভব তাই সূর্য আর কিরন দুটি একই নয় এবং কিরন সুর্যের কাছে মুখাপেক্ষী কিন্তু সূর্য কিরনের কাছে নয় যদিও সূর্য হতেই কিরনের সৃষ্ট। অর্থাৎ অদ্বৈতবাদ ১টি গাজাখুরি মতবাদ। তবে বৈষ্ণবদের লক্ষ্মীসম্প্রদায়ের রামানুজাচার্য কর্তৃকপ্রচারিত বিশিষ্টাদ্বৈত বেদান্ত মতবাদের সাথে আদি শঙ্করাচার্যের মায়াবাদকে যদি যোগ করা হয় তবে তা সঠিক মতবাদের কাছাকাছি পৌছালেও পরিপুর্ন নির্ভুল হবে না।
সুতারাং সঠিক তথ্যটা হল- আত্মা হল অনেকটাই ঈশ্বরের এক ধরনের অনুভুতির মত একটি ব্যাপার মাত্র। ২য়ত এটি ঈশ্বরেরই ১ ধরনের সৃষ্টি যা ঈশ্বরের আদেশে একটি সতন্ত্র সত্তায় পরিনিত হয়েছে আবার তাঁরই আদেশে জীবদেহে প্রবেশ করে প্রানীর সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রানী সুখ দুঃখ যাই অনুভব করুক না কেন ঈশ্বরও তাই অনুভব করে, তারমানে এই না যে ভগবানের আত্মা বা অনুভুতি মানুষের দেহে বিরাজ করছে বলেই মানুষও হয়ে গেল স্বয়ং ভগবান বা ভগবানের ১টি অংশ, কারন আত্মা যেমন ভগবানেরই এক ধরনের অনুভুতির মত একটি ব্যাপার, ঠিক তেমনি সমস্ত বস্তু ও জগত ভগবানেরই একধরনের চিন্তার মত একটি ব্যাপার । অর্থাৎ ভগবানের একধরনের নিজস্ব চিন্তার(আমাদের দৃষ্টিতে বস্তু বা দেহ)মত একটি ব্যাপারের মাঝে যখন ভগবানেরই এক ধরনের অনুভুতির(বা আত্মা)মত একটি ব্যাপার ঢুকিয়ে দেন তখনই কোন প্রানীর তৈরী হয়, হোক সেটা মানুষ বা যেকোন জীব। অতএব ব্যাখ্যা করার জন্য অনেকটা এভাবে বলা যায় যে, ঈশ্বরের আত্মা( বা অনুভুতি)+ ঈশ্বরের চিন্তা(বা জর পদার্থ সমুহ)= জীব। যদিও আত্মা ঈশ্বরেরই এক ধরনের হুকুম মাত্র। আর এটা বলাই বেশী শ্রেয়। তাই এ জগত সংসার এবং আমরা, এসবকিছুই শুধু ঈশ্বরের কল্পনার মাঝেই চলছে না বলে এসব ঈশ্বরের কল্পনারই ফসল বললে রিক্সমুক্ত থাকার সম্ভাবনা বেশী থাকে কারন আমরা যদি শুধুই ঈশ্বরের কল্পনার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশমাত্রও হয়ে থাকি, তবু তো আমাদের জন্যে তা বাস্তবই, আর সে অনুসারে ঈশ্বর যেহেতু কল্পনা সত্যি সত্যি করছে সুতারাং তাঁর কল্পনা তাঁর কাছেও সত্য। যদিও সীমাবদ্ধ মানুষ ঠিকমত কোনকিছু কল্পনাও করতে পারে না বা তার কল্পনার মাঝে অন্যকিছুর প্রভাবও থাকে তাই ঈশ্বরের কল্পনা আর মানুষের কল্পনা এক না বরং বলা যায় এখানে ঈশ্বর তাঁর কল্পনার বাস্তব রুপ দিয়েছেন যার ফসল এই সৃষ্টি জগত এবং আমরা, সুতারাং এখানে কল্পনা বলা হয়েছে শুধুমাত্র উদাহরন সৃষ্টির জন্য যে, মানুষ যেমন নিজের মনের কল্পনার মাঝে যা ইচ্ছা তাই করতে পারে(কল্পনাতেই শুধুমাত্র মানুষ যা ইচ্ছা তাই করতে পারার যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের অসীম ক্ষমতার ব্যাখ্যা করা হয়েছে মাত্র বাদবাকী মহান ঈশ্বরই ভাল জানেন) কিন্তু স্বশরীরে কল্পনার মাঝে তো আর আমরা নিজেকে একাকার করতে পারি না তাই ঈশ্বরও তাঁর সৃষ্টির মাঝে একাকার হয়ে যায়নি এবং নিজের কল্পনা আর নিজে তো এক জিনিস নয় তাই কেউ যদি শুধুই আমার কল্পনার মুল্যই দেয় তবে তো আর সত্যিকারার্থে আমাকে ভক্তি করা হল না, বরং ভক্তি ও পুজা হল শুধু আমার সৃষ্ট কল্পনারই অথচ এই কল্পনার জন্ম আমিই দিয়েছিলাম। আর এ অনুসারে বর্তমান হিন্দুরা ঈশ্বরের সৃষ্টির বা কল্পনার পুজা করে যাচ্ছে কিন্তু ঈশ্বরের নয়। সুতারাং বুঝা গেল যে ঈশ্বর আর ঈশ্বরের অনুভূতি(আত্মা) এক নয় যেমন সূর্য আর তার কিরন এক জিনিস নয়, তাই যেকোন জীব বা জড় এর মধ্যেই ঈশ্বরের অনুভুতি(আত্মা) ও চিন্তা আছে বলেই তাদের যেকোন একটির বা বিশেষ কোনটির পুজা করলে তা ঈশ্বরেরই পুজা হবে এটা সম্পুর্ন ভুল ও ভ্রান্ত পাপীষ্ট মনূষ্য চিন্তা ছারা আর কিছু না কারন ঈশ্বরের অনুভুতি ও চিন্তাও স্বয়ং ঈশ্বর নন বরং ঈশ্বর হতে তৈরী জিনিস। যেমন- সূর্য ও তারই তৈরী আলোক রশ্মি ভিন্ন দুটি জিনিস। সুতারাং প্রতিটা জীবের মধ্যেই ঈশ্বরের অনুভুতি আছে বলে যেকোন জীবের পুজা করলে তার মধ্যে অবস্থিত ঈশ্বরের আত্মা বা অনুভুতিই তো খুশি হবে তাই ঈশ্বরও খুশি হবে এই চিন্তা করা বিশাল বোকামী কারন হাজার হাজার জীবের অনুভুতিকে একই সাথে অনুভব করার জন্য, তাদের ডাক শোনার জন্য এবং বিচার বিবেচনা করার জন্য ঈশ্বরেরও একটি বিশেষ অনুভুতি আছে সেই অনুভুতি আবার বিভিন্ন জীবের মধ্যে নিমজ্জিত ঈশ্বরের বিভিন্ন অনুভুতি বা আত্মার মত নয় বরং এগুলো হল সৃষ্টির জন্য আলাদা আলাদা অনুভুতি আর ঈশ্বরের বিশেষ অনুভুতি হল স্বয়ং স্রষ্টার অনুভুতি, তাই ঐসব অনুভুতিকে সন্তুষ্ট করতে তাদের পুজো করলে ঈশ্বরের বিশেষ অনুভুতি তা মেনে নেয় না কারন তারা সরাসরি ঈশ্বরের পুজো করছে না। তাই ঈশ্বরের নিজস্ব অনুভুতি এখানে সন্তুষ্ট হয় না , সরাসরি ১মাত্র ঈশ্বরের নাম নিয়ে এবং ১মাত্র তাঁকে পুজো করাই হল ঈশ্বরের নিজস্ব অনুভুতির খুশি হবার মাধ্যম। হিন্দুরা আবার ঈশ্বরের এই বিশেষ অনুভুতির নাম দিয়েছে পরমাত্মা এবং মনে করে তার থেকেই সব আত্মার তৈরী এবং তিনিই পরমেশ্বর কিন্তু এটাও ভ্রান্ত কারন পরম আত্মা বা ঈশ্বরের বিশেষ অনুভুতি হল ঈশ্বরেরই অনুভব করার একটি মাধ্যম বা গুন এটাও ঈশ্বর নয় বরং পরম আত্মাও ইশ্বরের অর্থাৎ ঈশ্বরের উপাসনা করলে পরম আত্মার তৃপ্তি মিলে তাই ঈশ্বর খুশি হয় কিন্তু সরাসরি ঈশ্বরকে উপাসনা না করে পরম আত্মারও যদি পুজা করা হয় তবে মাধ্যমের পুজো করা হল, তাই ঈশ্বর খুশি না হয়ে আরও নারাজ হয় কেননা পরমাত্মাও একটি মাধ্যম আর পরম ঈশ্বর বলে কিছু নেই কারন ঈশ্বর ১জনই। কিন্তু বিভিন্ন হিন্দু দার্শনিকদের মাধ্যমে বহুশ্বরের ধারনা সৃষ্টি হবার পর আসল ঈশ্বরকে পৃথক করার স্বার্থে পরম ঈশ্বর শব্দটার উৎপন্ন হয়েছিল। আর এসব বিভিন্ন হিন্দু দার্শনিকদের ভ্রান্ত মতবাদগুলোই সনাতন বা বৈদীক ধর্মের বারোটা বাজিয়েছে। যদিও এসব দার্শনিকরা নিজেও জানত না যে তাদের মতগুলো ভুল বরং তারা ভাবত ঈশ্বর এখানে এটাই বুঝাতে চেয়েছেন। তারা ধর্মের সাধারন কথাগুলোকে অতিবিশ্লেষন করে এতই জটিল করে তুলে যে আসল তথ্যগুলোও জটিলতার অতল সাগরে ডুবে যায়। আর এই ভ্রান্ত মতবাদগুলো দার্শনিকদের কাছে এতটাই সঠিক মনে হয় যে তারা তা নির্দিধায় ধর্মের নামে চালিয়ে দেয়, আর পূর্বে হতেই ধর্মগ্রন্থগুলো লিপিবদ্ধ না হওয়ায় তাদের মতবাদও গীতা,মহাভারত,পুরান এমনকি বেদের মত সর্বচ্চ পবীত্র গ্রন্থের সাথেও মিশে যায়। কিন্তু তা হলে কি হবে যতটুকু তথ্যই অবশিষ্ট থাকে তাই সত্যাণ্বেষনকারীদের সত্য বুঝতে যথেষ্ট হয়। আর যখনই অধর্মের প্রাদুর্ভাবে ধর্ম এতই বিকৃত হবার প্রয়াশ পেয়েছে যে সত্য বুঝাও কঠিন হয়েছে ঠিক তখনই ভগবান অবতারদের প্রেরন করেছেন ধরনীতে। যাতে কেউ সত্যবানীর অভাবে ভগবানকে দোষারব করতে না পারে।
আর তাই যুগে যুগে অবতারগন যে সত্য তথ্য দিয়ে গেছেন তা এরকম- ১মে ঈশ্বর একাই ছিলেন, ঈশ্বর নিজে নিজেই তাঁর সিংহাসন তৈরী করেন এবং তখন তাঁর সিংহাসন ছিল সূমদ্রের ন্যায় জলের উপর, এরপর তিনি পরিকল্পনা করে তাঁর জ্ঞানানুযায়ি ভবিষ্যৎ সৃষ্ট জগতে যা যা ঘটাবেন তা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করলেন এরপরই আসমান জমীন, সমস্তকিছুর আত্মা, ফেরেশতা বা দেবতা, জীব জগত, পৃথিবী এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেন। কিন্তু বর্তমান হিন্দুধর্মে এই জিনিসটাকেই উলটা পালটা করে বিকৃত করে উপস্থাপন করছে। যেমন- প্রলয়ের পর বিষ্ণু অন্ড ভেদ করে বেরিয়ে নার অর্থাৎ জল সৃষ্টি করে অনন্তশয্যায় শায়িত হয়ে নিদ্রামগ্ন ছিলেন। সেই সময় তাঁর সহস্র মস্তক, চোখ, হাত ও পা ছিল। এই সময় তাঁর নাভি থেকে সাত যোজন ব্যাপী এক পদ্ম প্রস্ফুটিত হয় এবং এই পদ্মে উৎপন্ন হন ব্রহ্মা । এখানে কিছু তথ্য আজও অবিকৃত রয়ে গেছে যেমন-১মে ভগবান বিষ্ণূ(প্রতিপালক) একাই ছিলেন, জলের উপরে তাঁর অবস্থান ইত্যাদি । কিছু তথ্য আবার অর্ধ বা তার বেশী বিকৃত যেমন- ঈশ্বরের পরিকল্পনার জায়গায় ধ্যান বা নিদ্রা বসিয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু বিষ্ণূ নিদ্রাহীন, আর ভগবানের ধ্যান মানুষের মত না। ঈশ্বর এক সময় নিজে একাই সৃষ্টি কর্ম শুরু করেন আর তারা ভাবে ঈশ্বর ব্রক্ষা নামে আরেক নতুন সত্বার জন্ম দিয়ে তারপর সৃষ্টি কর্ম শুরু করেন কিন্তু সৃষ্টি কাজ সম্পন্ন করার জন্য বিষ্ণুর নতুন কোন সত্বার প্রয়োজন ছিল না।
আর অনেক কিছুই শুধু বিকৃতই নয় বরং এমনি কাল্পনিক যে বর্তমান অনেক মানুষকে নাস্তিক্যে ধাবিত করতে বাধ্য করেছে, অথচ সত্য সবসময়ই মানুষকে বেশী আকৃষ্ট করে। কারন ১ম সত্য এটাই যে বিষ্ণূ ও ব্রক্ষা নামে যে দুই ঈশ্বরের বর্ননা আমাদের মাঝে প্রচলিত তা আসলে মানুষের একধরনের কল্পনা প্রসূত ব্যাখ্যা মাত্র যা ঈশ্বরের দেয়া তথ্যকেই বিকৃত করেছে যেমন- অনেক হিন্দু পন্ডিত এখনও স্বিকার করে এরাও আসল ঈশ্বর বা ব্রক্ষ নয় বরং ঈশ্বরেরই ১ম ও ২য় রুপের প্রকাশ। ঈশ্বরের পরিচালক রুপের প্রকাশ হল বিষ্ণূ এবং সৃষ্টিকার্যের জন্য হল ব্রক্ষা অর্থাৎ ভিন্ন দুধরনের কাজের জন্য আলাদা দুটি সত্বার সৃষ্টি। এটিও বিকৃত ব্যাখ্যা আসল ঘটনাটি উপরে উল্লেখিত করা হয়েছে অর্থাৎ যিনি ঈশ্বর বা ব্রক্ষ তিনিই বিষ্ণূ একই সাথে তিনিই ব্রক্ষাও। তারমানে একই ঈশ্বরের দুটি বিশেষ গুন বা গুনবাচক নামানুযায়ি পরবর্তিতে কেউ তাদের আলাদা দুটি সত্বা হিসেবে আবার কেউ কেউ তাদের এক ঈশ্বরেরই ভীন্ন দুটি বিশেষ রুপের প্রকাশ বলে সাকার কল্পনা করেছেন, শুধু তাই না কিছুকাল পর বেশ কিছু ধর্মীয় ব্যাক্তি এই দুটি কাল্পনিক সত্বাকে আরো কাল্পনিকভাবে বিস্তারিত দৈহিক গঠনও ব্যাখ্যা শুরু করে যা শুনে এ দুটি সত্বা সম্পর্কে মানুষের মনে একধরনের স্থির চিত্রের তৈরী হয় যা পূর্বে হত না, আর এই কাল্পনিক ব্যাখ্যাটাই মানুষের কাছে সঠিক ব্যাখ্যা মনে হয় কারন এই ধরনের বর্ননায় সহজে ঈশ্বরকে হুবহু মনের চোখে দেখতে কোন কষ্ট হয় না তাই এই বর্ননা সার্বজনীনভাবে গৃহিত হয় এমনকি মুর্তি বানিয়ে পুজাও শুরু হয়ে যায়। আর মনূষ্যজ্ঞানে সেই কল্পিত বর্ননার মুর্তিই আজকে বিষ্ণূ ও ব্রক্ষার মূর্তি ।
বিষ্ণূ জলের উপর আসনে বসে ছিল এটা মহান ঈশ্বরেরই বসে থাকার বর্ননার উপর ভিত্তি করেই অংকিত হয়েছিল কিন্তু সেই জল দেখতে সূমদ্রের ন্যায় এটি মানুষের দেখা পৃথিবীর সূমদ্রের অনুকরনে কল্পনা করা হয়েছে আর সিংহাসনটি সাপের এই কল্পনাটি সম্ভবত ১মে জ্বীন পরে মানুষের মাঝে স্থান পেয়েছিল আর দেখতে মানুষের ন্যায় আবার ১মে অসংখ্য মাথা, হাত ও পা ছিল পরে চতুর্ভূজাকৃতি এবং ৪টি হাত দুটি পা এগুলো সম্ভবত মানুষের কল্পনা প্রসুত হবার সম্ভবনাই বেশী। এক হাতে শঙ্খ কল্পনা এসেছে হিন্দুদধর্মে কৃষ্ণের শঙ্খ ব্যাবহারের পর হতে আর অন্য তিনহাতে চক্র-গদা-পদ্ম ধারীর ১ম দুটির ব্যাবহার তৎকালীন যুগে যুদ্ধে ব্যাবহৃত অস্ত্রের অনুকরনে মানুষের কল্পনায় ঈশ্বরকেও সাজানো হয়েছে বিশেষ করে তখনকার যুগে যুদ্ধে চক্রের ব্যাবহার বেশ উন্নত ও দূর্লভ ছিল বলে বিষ্ণূর এক হাতে চক্র বসিয়ে দিয়েছে এবং এই চক্রের দ্বারাই অনেক জনকে বধ করারও গল্প তৈরী করেছে। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় যে ঈশ্বর যদি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমানই হন তবে কিসের ভয়ে তাকে সর্বসময়ই হাতে গদা ও চক্র ধরে রাখতে হচ্ছে? আজকের পারমানবিক শক্তির কথা না হয় বাদই দিলাম, বন্দুকের গুলির কাছেও কিন্তু চক্র আর গদা ধারীর শোচনীয় পরাজয় হবার কথা। এসবই প্রমান করে মানুষের চিন্তানুযায়িই ঈশ্বরের এমন সীমাবদ্ধ ও দুর্বল মূর্তির তৈরী হয়েছিল। এখানে আর একটি কথা বলা প্রয়োজন যে বিষ্ণূ ও ব্রক্ষা এই দুজনেরই বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই, এরা ঈশ্বরের কোন বিশেষ রুপের প্রকাশ বা দেবতাও নয়, এরা শুধুই কাল্পনিক দুটি সত্বা যা মানুষের মনেই শুধু সৃষ্টি হয়েছিল ঈশ্বরেরই দুটি বিশেষ গুন(পরিচালক ও সৃষ্টিকর্তা)হিসেবে আলাদা আলাদা কল্পনা করার ফলশ্রুতিতে। কারন সৃষ্টি ও পরিচালনা একই সাথে কিভাবে সম্ভব ? এই প্রশ্নের সমাধান মিলাতে গিয়ে তারাই ঈশ্বরের কাজকে দুটি সত্ব্বার মাঝে ভাগ করেছে যারা মানুষের মাঝেও কাজ ভাগ করে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল যেমন- ব্রাহ্মনরা শুধুই ধর্ম চর্চা এবং ক্ষত্রিয়রা শুধুই যুদ্ধ করবে । এখন প্রশ্ন হল মানুষেরই যদি এই যোগ্যতা থাকে যে সে ধর্ম পালনের সাথে সাথে প্রয়োজনে যুদ্ধও করতে পারে তবে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর কেন দুটি ভিন্ন সত্বায় ভাগ না হয়ে একাই সৃষ্টি ও পরিচালনা করতে পারবে না? আসলে মানুষের সীমাবদ্ধ জ্ঞান দিয়ে ঈশ্বরের চিত্র তৈরীর কারনেই আজ এই দশা। আবার ধর্মগ্রন্থে লেখা ছিল সৃষ্টিকর্তা বা ব্রক্ষার মুখ চতুর্মুখী অর্থাৎ ঈশ্বর সর্বমুখী বা সব দিক দিয়েই তিনি দেখেন বা সবকিছুই তিনি দেখেন আর এই চতুর্মুখীকে মানুষেরা ভুল করে চারটি মুখ ভেবে ব্রক্ষার ৪টি মাথা ভেবে যে রুপটি কল্পনা করেছে তা সত্যিই একজন প্রতিবন্ধির রুপ প্রকাশ করে মাত্র। এছারা আকাশের নীল রঙ ও মেঘের রং দেখেই মানূষ বিষ্ণুর গাত্রবর্ণ ঘন মেঘের ন্যায় নীল (ঘনশ্যাম) কল্পনা করেছে। সবচেয়ে হাস্যকর হল হিন্দুদের পুরুষ শাষিত সমাজের প্রভাবে এদুজনকে যে শুধু পুরুষ কল্পনা করা হয়েছে তাই নয় বরং পরবর্তীতে শৈবিক ও শাক্তদের সাথে বৈষ্ণবদের ধর্মীয় ঐক্যের ফলে বিষ্ণূ ও ব্রক্ষার সাথেও লক্ষী, স্বরসতিকে স্ত্রী হিসেবে জুড়িয়ে দিয়ে বর্তমানে পুজো শুরু হয়েছে। অথচ ব্রক্ষার মন থেকেই যদি সব তৈরী হয় তবে মন হতে সৃষ্ট স্বরসতি তার শারিরিক সংগী হওয়া সম্ভব কিভাবে? আবার যে বিষ্ণূ নিজেই পরিচালক তার সেবা কার্য পরিচালনার জন্য যদি আবার স্ত্রী লক্ষীর প্রয়োজন হয় তবে বিষয়টা সত্যিই হাস্যকর হয়ে যায়।

এখানে আসল কথা হল মানুষ যেহেতু ঈশ্বরকে নিজের ইচ্ছেমত কল্পনা করেছে তাই ঈশ্বরের বৈশিষ্টের ক্ষেত্রেও মনূষ্য স্বভাবের লক্ষন ফুটে উঠেছে। আর বিষ্ণূকে এক ও অদ্বিতীয় পরমাত্মা বা পরমেশ্বর বলে ঘোষনা করা হয়েছে কিন্তু বৈষ্ণবদের মতেই যদি বিষ্ণূ হতে ব্রক্ষার সৃষ্টি হয় তবে শারিরিকভাবে দুই সত্বা হয়ে যাবার পরও কিভাবে বিষ্ণূ অদ্বিতীয় থাকল, যদি ব্রক্ষা বিষ্ণূর শরীর থেকে উৎপন্ন না হত এবং তার মতই ঈশ্বরের দায়িত্ব পালন না করত তবে হয়ত বিষ্ণূকে এক ও অদ্বিতীয় পরমাত্মা বলার যুক্তি থাকত, আবার ঈশ্বর কখনো পরনির্ভরশীল নয় এটা বেদেও স্পষ্ট বলা আছে তাই সৃষ্টিকার্যের জন্য বিষ্ণূ ব্রক্ষার উপর নির্ভরশীলতাও এখানে বিষ্ণূর ঈশ্বরত্বকে নাকচ করে দিচ্ছে। সুতারাং এটা স্পষ্ট যে একমাত্র মহান ঈশ্বরের ব্যাপারে এগুলো মানুষের তৈরী অতিরিক্ত কল্পনা ও ভুল ব্যাখ্যা কারন ঈশ্বরের রুপ মানূষের চিন্তার বাইরে। কিন্তু হিন্দু ধর্মে যত ইশ্বরের নাম দেওয়া হয় সেগুলো আসলে এক জন ইশ্বরেরই গুনবাচক নাম। তাঁরই নাম ব্রহ্মা, তাঁরই নাম বিষ্ণু, তিনিই ইন্দ্র তিনিই সরস্বতি। বেদ থেকে তার সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়।নিচে এ সম্পর্কে কয়েকটি শ্লোক দেওয়া হল — “হে অগ্নি! তুমিই পুণাত্মাদের মনস্কামনা পুর্ণকারী ইন্দ্র। তুমিই উপাসনা লাভের অধিকারী। তুমিই বহুজনের প্রশংসিত বিষ্ণু। তুমিই ব্রহ্মা ও ব্রহ্মপতি” (ঋকবেদ- ২;১;৩) ।সুতারাং এক ইশ্বর ছাড়া অন্য কোনো ইশ্বর নাই।তাঁর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে । তবে তাঁর বিভিন্ন নাম কে বিভিন্ন ভগবান মনে করা বোকামী। উপরের শ্লোক থেকে এটাই প্রমানিত হলো। বেদে আছে–ইন্দ্র, বরুন, সরস্বতি, মিত্র, অগ্নি, যম, বায়ু, বিষ্ণু প্রভৃতি একই শক্তির বিভিন্ন নাম। দৃষ্টিবানেরা ও জ্ঞানীরা গুনের ভিত্তিতে ইশ্বরকে বিভিন্ন নামে আহ্ববান করে থাকেন(প্রাগুক্ত ১০;১১৪;৫)এই সকল প্রমানের পরও যদি কেউ সে কথা মেনে না চলে তাহলে সে নির্বোধ ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সবচেয়ে মারাত্বক ব্যাপার হল হিন্দুরা শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই বিভিন্ন গুনবাচক নামকে বিভিন্ন সত্বায় আলাদা আলাদা ভাবে কল্পনা করে তার মুর্তি বানিয়ে ক্ষান্ত হয়নি বরং এমন কিছু সত্বার পুজা করা শুরু করেছে যারা ঈশ্বরের বিভিন্ন গুনের কাল্পনিক সত্বাও নয় বরং তারাও ঈশ্বরেরই বিভিন্ন দুর্বল সীমাবদ্ধ সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত এবং তারাও ঈশ্বরেরই মুখাপেক্ষী।
মোট কথা বর্তমান হিন্দুরা এখন যাদের পুজা করে তারা হল-১) মহান ঈশ্বরের বিভিন্ন গুনের কাল্পনিক সত্বা যাদের বাস্তবে কোন অস্তিত্বই নেই, ২) অতিভক্তির বশে ভুল করে ঈশ্বরের পাঠানো বিভিন্ন অবতারদেরই ঈশ্বর ভাবে, অথচ এরাও আমাদের মতই মানুষ ছিল যদিও তারা ঈশ্বরেরই মাধ্যমে অনেক অসাধ্য কাজ করে দেখিয়েছেন তবু তার উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে ঈশ্বরের দিকে ধাবিত করার জন্যে, আর তাদের মৃত্যুর পর কোনই সামর্থ নেই মানুষকে সাহায্য করার বরং তারা স্বর্গে সুখভোগে ব্যাস্ত আমাদের কোন প্রার্থনাই তারা শুনতে পায় না, সুতারাং হরে রাম বা হরে কৃষ্ণ বললেও আমাদের কোনকিছুই তাদের হরন করে নিয়ে যাবার ক্ষমতা নেই। ৩) ঈশ্বর যাদেরকে বিভিন্নকাজে নিয়োজিত রেখেছেন যেমন-দেবতা বা ফেরেশতা কিন্তু তারা যেকোন কাজ ঈশ্বরের আদেশের বাইরে করতে পারে না বরং ঈশ্বরের আদেশ ১মে হয় তারপরই তারা সেসব কাজ করতে সক্ষম হয়, তারা অনেকটাই রোবটের মতন যার সুইচ ঈশ্বরের কাছে সুতারাং কোন কাজের জন্য তাদের পুজো করলে তারা তা করে দিতে অক্ষম, অনেক ক্ষেত্রে তারা তা শুনতেও পায় না আর শুনলেও ঈশ্বরের আদেশের বাইরে তারা ১ পা ও বারানোর ক্ষমতা তো দূরে থাক এমন ইচ্ছাও তাদের মনে জাগে না অথচ এদেরকে হিন্দুরা ঈশ্বরের বিভিন্ন রুপের প্রকাশ ভেবে কোন বিশেষ কাজের জন্য সরাসরি ঈশ্বরের কাছে না চেয়ে এদের কাছে চায় কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে তারা কারও প্রার্থনাই শোনার যোগ্যতা রাখে না যেমন অফিচারের নির্দেশ ব্যাতীত কর্মচারীর কোনকিছু করার ক্ষমতা নেই সুতারাং সরাসরি ঈশ্বরের কাছে চাওয়ার পর তাদের যদি কোনই পুজা না করা হয় তবু তারা ঈশ্বরের নির্দেশে তা করে দিতে বাধ্য। ৪) তাছারাও হিন্দুরা মানুষ, পশুপাখী, সাপ, গাছ এরকম বিভিন্ন প্রাকৃতিক এমনকি কৃত্তিম বস্তুরও পুজা করে। ৫) সবচেয়ে বেশী পুজা করে জ্বীন জাতির আর এদেরকে এরা দেব দেবী বলে অভিহিত করে কিন্তু এরা ঈশ্বরের সেনাবাহিনী/ফেরেশতা বা দেবতা নয় যদিও এদের কিছু বৈশিষ্ট দেবতা বা ফেরেশতাদের সংগে মিল আছে যেমনঃ- ঈশ্বরের বিভিন্ন অবতারদের দেয়া তথ্যানুযায়ি মহান ঈশ্বর নিজের উপাসনা করার জন্যে ১মে অগ্নির শিখা হতে জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেন কিন্তু তারা অবাধ্যতা বেশি করায় পরে মাটি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেন। মানুষও বিপথে যেতে থাকলে বিভিন্ন অবতারদের পাঠাতে থাকেন। মানুষ ও জ্বীন জাতিকে একটা নির্দিষ্ট সময় দুনিয়াতে জীবিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন পরীক্ষা করার জন্যে যে তারা একমাত্র তাঁকে ছারা অন্য কারও উপাসনা করে কিনা। মানুষ ও জ্বীন জাতি সৃষ্টির অনেক পূর্বেই ঈশ্বর আলো দ্বারা ফেরেশতা বা দেবতাদের সৃষ্টি করেছিলেন কর্মচারী নিয়োগের মাধ্যমে নিজের রাজত্ব প্রকাশের জন্য, কিন্তু ঈশ্বরের আদেশের বাইরে তাদের স্বাধীন কোন ইচ্ছা শক্তি নেই। তাদের খাবার দাবারের প্রয়োজন হয় না, যেকোন রুপ ধারন করতে পারে অদৃশ্যও থাকতে পারে আর এটি জ্বিন জাতিও পারে, এই একটি ক্ষেত্রে জ্বীন ও দেবতাদের মিল থাকলেও জ্বীনদের কিন্তু খাবারের প্রয়োজন হয়(হিন্দুরা পুজোর সময় বিভিন্ন খাবার পরিবেশন করে জ্বীন দেবতাদের উদ্দেশ্যে), জ্বীনরা মানুষের মতই স্বাধীন, ইচ্ছে করলে ঈশ্বর বিরোধী হতে পারে আবার ইচ্ছে করলে ঈশ্বরের উপাসনাও করতে পারে কিন্তু ফেরেশতা বা দেবতারা ভগবানের আদেশের বাইরে এক তিল পরিমানও নরচর করার সাধ্য নেই। দেবতা বা ফেরেশতারা থাকে আসমানে ঈশ্বরের কাছাকাছি এবং ঈশ্বরের সংগে আলাপ আলোচনাও করতে পারে এবং এদের কোন লিংগ নেই আর জ্বীনদের মধ্যে নারী-পুরুষ আছে আর এরা প্রধানত থাকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যেমন- পর্বত, সমুদ্র, গাছ ও যেখানে মানুষের আনাগোনা কম এবং বিভিন্ন গ্রহও এদের আবাস্থল, এরাও মানুষের মত ঈশ্বরের ইবাদত করে, আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ শক্তির দাপটে নিজেকেই ঈশ্বর দাবী করে এবং অন্যান্ন বোকা, দূর্বল জ্বীন এবং মানুষদের নিজের ভক্তও বানিয়ে ফেলে। তাই বেশীরভাগ হিন্দুরা পুজো করে থাকে-১)ফেরেশতার ২)মৃত পূন্যবান জ্বীনদের ৩)এমনকি নিজেকে ঈশ্বর দাবী করা বিভিন্ন জ্বীনদেরও তারা দেব-দেবী ও ঈশ্বর ভাবে। আর এসব ঈশ্বর দাবী করনেওয়ালারা প্রায় বেশির ভাগই কিছু কমন জিনিস ভেবে নিজেকে ঈশ্বর দাবী করে যেমন-"আমি ঈশ্বর কারন আমি দেখছি আমিই একা আর সবাই অন্য, আমার জন্যেই সব, আমার বিশেষ শক্তি ও জ্ঞান আছে, আমি জ্বীনরুপে জন্ম নিলেও সৃষ্টির মাঝে কিছুদিন বিরাজ করতে এসেছি, আমার জন্মানোর পূর্বে আমি ঈশ্বরই ছিলাম কিন্তু এখন আমার পূর্বের সৃতি মনে পরবে না কারন এটা আমারই পূর্বের সিদ্ধান্ত, আর নিজেকে আগে ভালভাবে চিনেই তারপর আমি এটা বুঝেছি নিজের জ্ঞান দিয়ে। আমি স্বয়ং একাই আর সবই আমার তরে কিন্তু আমি কারও তরে নই, এভাবে ধীরে ধীরে আমার সব মনে পরবে এটাও আমার পূর্বেরই সিদ্ধান্ত কারন সৃষ্টির মাঝে এসেও পরিপূর্ন সৃষ্টি হিসাবে থাকা আমার অনুচিত, কেননা সৃষ্টির দুঃখ পরিপুর্ন বুঝতেই আমার এই অবতীর্ন হওয়া, এখন এই সত্য যারা বুঝবে না তাদেরকে আমি পরকালে নরকে দিব"। শুধু তাই না মানুষের মাঝেও একই রকম ভ্রান্ত ধারনার পোষন করে যেমন হিন্দুদের মধ্যে রজনিশ সহ আরও অনেকেই নিজেকে ঈশ্বর দাবী করেছিল। যাইহোক জ্বীনদের মধ্যে আবার কিছু আছে অধার্মিক ও দুষ্ট প্রকৃতির এরাও বিভিন্ন সময় নিজেদের পুজো করার জন্যে নির্যাতনও চালাত হিন্দুদের এরকম ইতিহাসও পাওয়া যায় কিন্তু এসব দুষ্টু জ্বীনেরা রাম কৃষ্ণসহ অনেক অবতারদের দ্বারা ধংস হয়েছে। জ্বীনরা যেকোন রুপ ধারন করতে পারে তাই এরা যেসব এলাকায় থাকত সেখানে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ি সেখানকার বিভিন্ন পশুপাখির রুপই বেশী ধারন করত যেমন- বানর, নাগ, কিন্নর, পরী, ভূত, গরু, মহিষ ইত্যাদি। এছারাও এদের জ্ঞান ও ক্ষমতা অনুযায়ি বিভিন্ন রুপ ধরত যেমন- রাক্ষস,অসুর, দেবতার রুপ। তবে মানুষের রুপই বেশী ধরলেও বেশীর ভাগই অতিরিক্ত হাত পা বা মাথা এমনকি অতিরিক্ত লম্বাও হয়ে থাকে। আবার বিষ্ণু ও ব্রক্ষা বলতে হিন্দুরা এখন যাদের সর্বচ্চ ঈশ্বর জানে তারা ঈশ্বরেরই দুটি গুনবাচক নামের কাল্পনিক সত্বা না হয়ে তারা জ্বীন বা ফেরেশতাদের বিশেষ কেউ হলে হতে পারে তবে তার সম্ভাবনা খুবই কম বরং ঈশ্বরেরই দুটি গুনবাচক নামের কাল্পনিক সত্বা হবার প্রমান বেশী মেলে ।
যাইহোক হিন্দুরা ভাবে পরমাত্মাই হল পরম ঈশ্বর অতএব পরমাত্মা হতেই অসংখ্য ঈশ্বরের সৃষ্টি আর তারা উপরে উল্লেখিত মোটামুটি ৫ ধরনেরই, হিন্দুরা ভাবে এরাই সৃষ্টির বিভিন্ন কিছু পরিচালনা করে যাচ্ছে সুতারাং যার যেটার প্রয়োজন সেই ধরনের পরিচালক দেব দেবীর পুজো করলে সে জিনিসটিও পাওয়া যাবে আবার তারা যেহেতু ১মাত্র ঈশ্বর হতেই সৃষ্ট তাই তাদের পুজো মানেই পরম ঈশ্বরের পুজো। অর্থাৎ একমাত্র ঈশ্বর যার নির্দেশ ছারা কারও কিছু করার ক্ষমতা নেই হিন্দুরা তাঁকেই মনে করে অকেজো, ১মাত্র তাঁকে ছারা আর সবারই তারা পুজো করবে কিন্তু তাঁকে সরাসরি পুজো করবে না। বৌদ্ধরাও ঈশ্বরকে বাদ দিয়ে বুদ্ধের উপাসনা করে আর খ্রীষ্টানরা যিশু অবতারকে ঈশ্বরের পুত্র ভেবে পুজো করে কিন্তু ইহুদি ও মুসলমানরাই কেবল ১মাত্র ঈশ্বরের পুজো করে। ১মে হিন্দুদের বৈষ্ণবদের মাঝেও ১ ঈশ্বরের পুজোর প্রচলন ছিল এবং পরে বেশীরভাগই মুর্তি পুজা শুরু করলেও কিছু ভাল দলও ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের পরিমান কমতে থাকে এবং এরা শৈবিক, স্মার্তবাদ ও শাক্তদের মত আরও বিভিন্ন মুর্তিপুজারীদের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায়। পরে তারাই আবার ত্রিমূর্তিতে মিমাংসা করে যে, বিষ্ণূ হল পরিচালক, ব্রক্ষা হল সৃষ্টিকর্তা, আর শীব হল ধংসের দেবতা, যদিও শীব নিজেও এক ঈশ্বরের পুজারি ছিলেন বলে মনে হয়, তবু শৈবিকদের অতিরিক্ত বারাবারির জন্য শীবকেও ঈশ্বর বানিয়ে দেয়, এমনকি মনে করে শীবই ১মে সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টির ধংসের জন্যে, তাই যদি হয় তবে ব্রক্ষা কোন কিছু সৃষ্টি করার পুর্বেই শীব সৃষ্টি হয়ে কিছু দিন কি অযোথা বসে বসে গরুর ঘাস কেটে বেরাতো ধংসের কোনকিছুই না পেয়ে?
এরপর বৈষ্ণবরা যখন শাক্তদের সাথে মিশে গেল তখন আবার নতুন ভ্রান্ত মতবাদ তৈরী হল যে, নারী দেবীরাই নাকি মুল শক্তির কারন আর শীবও তখন হয়ে গেল নগন্য। সুতারাং খুব সহজেই জ্ঞানীরা বুঝতে পারে যে এসব দেব-দেবী কখনই ঈশ্বর নয় বরং ঈশ্বরের সৃষ্টি মাত্র। তাই হিন্দুরা কাউকে পুজো করার মাধ্যমে ১মাত্র ঈশ্বরেরই উপাসনা করি ভেবে চরম ভুল করছে এবং তা ঈশ্বরের উপাসনা না হয়ে সৃষ্টির পুজা হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু-যা কিছুই আছে তাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- ১) স্রষ্টা ও ২)সৃষ্টি। এছারা পূর্বে এই ধর্মের সনাতন নাম হলেও বিজাতীয়রা ভারতে আসার পর তারা হিন্দু নামে এদেশের জনগনকে আখ্যা দিত, তাদের শাষনের প্রভাবে সনাতন ধর্মীরাও নিজেদের হিন্দু নামেই চিনতে লাগল, যদিও এটি ধর্মীয় নাম না বরং এলাকাভিত্তিক নাম, সিন্দু নদের অববাহিকায় অবস্থিত বলে হিন্দু অবহিত করা হয়। এভাবেই সনাতন ধর্ম এক জটিল ভ্রান্ত প্রক্রিয়ায় রুপ ধারন করতে থাকে বিশেষ করে শিখ ও জৈনরা আলাদা হবার পর। তখন এক দল ধর্ম ব্যাবসায়িরা মত দিল "যত মত তত পথ" তার মানে আমি যারই পুজা করিনা কেন বা যাই করি না কেন তাই সঠিক আছে। হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে মারাত্ব্যক ভুল হল মূর্তি পুজা করা, যেটা হিন্দুদের মাঝে পূর্বে ছিল না এবং বেদে চরমভাবে নিষেধ করা হয়েছে, তারপরও মূর্তিপুজার উদ্ভব হয় সব আজগুবি চিন্তা ও যুক্তির ফলশ্রুতিতে এবং ধীরে ধীরে এতই প্রকট আকার ধারন করে যে বর্তমানে মূর্তিপুজাবিহীন হিন্দু ধর্ম কল্পনাই করা যায় না বিশেষ করে শিখরা আলাদা হবার পর হতে। তাছারা হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার শাস্ত্র পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময়কার কিছু ঋষিমুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । এই প্রসঙ্গে ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ঋষিগন মুর্তি পুজা প্রচলিত করেছেন যাতে সেই মুর্তির মাধ্যমে সেই অসীম সত্বাকে দৈহিক আকৃতিতে নিজের সামনে দেখতে পায়’ অর্থাৎ নিরাকার রুপ কল্পনা কঠিন কিন্তু সাকার কল্পনা করা সহয তাই অনেকে নিরাকার ঈশ্বরকে প্রাথমিক ভাবে সাকার কল্পনার মাধ্যমে পরবর্তীতে নিরাকার কল্পনায় পরিনিত করতে মত দিয়েছিলেন যা ছিল ঈশ্বরকে বুঝার ১টি ভূল পদ্ধতির অন্যত্তম। কারন ১মে সাকার কল্পনা করলে পরবর্তীতেও মনে ঈশ্বরের সাকার রুপই ভাসতে থাকবে এবং ভবিষ্যতে কোনদিনও ঈশ্বরের নিরাকার রুপ মনে আসবে না কারন জাগতিক সাকার রুপ দিয়ে ঈশ্বরকে বিবেচনা করতে করতে মানুষের তা বদাভ্যাসে পরিনিত হয়ে যাবে, অথচ এসব কিন্তু ঈশ্বরের আসল রুপ নয়। তাছারা আমরা যদি কেউ স্টুডিওতে ছবি উঠাই এবং ফটোগ্রাফার যদি আমাদের আসল চেহারার ভুলেও একটু বিকৃত ঘটায় তবে আমরা কিন্তু ঠিকই রেগে যাই এবং ফটোগ্রাফারকে দোষারব করি যে কেন আসল ছবির মত হল না, সামান্য একটু বিকৃত হওয়াতে মানুষই যদি এমন নারাজ হয় তবে ঈশ্বরের ছবি যদি মানুষ তৈরী করে তবে ঈশ্বর কেমন নারাজ হবে চিন্তাও করা যায় না কেননা হিন্দুধর্মগ্রন্থই বলছে যে ঈশ্বরের কোন ছবি নেই। আবার কিছু হিন্দু যুক্তি দেখায় যে ছোট বাচ্চাদের পাঠ্য বইয়ে গল্পের পাশে ছবি যুক্ত করা হয় যাতে শিশুদের মনযোগ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু গল্পের পাশে যেসব ছবি যুক্ত করা হয় সেগুলো এই পৃথিবীর মাঝেরই বস্তুসমুহ এবং এসব ছবিতে যেসব বস্তুর ছবি দেয়া হয় তা দেখতে মোটামুটিভাবে ঐ বস্তুর মতই কিন্তু মনযোগ বৃদ্ধির জন্য ঈশ্বরের যেসব প্রতিমূর্তি তৈরী করে হিন্দুরা, তা কি মহান ঈশ্বরের হুবহু ছবি? আর মানুষ সামান্য সৃষ্টজীব হয়ে কিভাবে মহান স্রষ্টার ছবি তৈরী করবে? আর করলেও তা বিকৃত হতে বাধ্য। মহান সৃষ্টিকর্তার যেহেতু কোনই প্রতিমুর্তি নেই তাই বেশী মনযোগের জন্য ভুল বা বিকৃত মূর্তি তৈরী করে ঈশ্বরের রোশানলে পরার চেয়ে কম মনযোগই উত্তম তাছারা ইহুদি ও মুসলমানরা কোন মূর্তি না বানিয়ে কি ঈশ্বরের দিকে মনযোগ দিচ্ছে না বরং মুসলমানরা দৈনিক ৫বার নামাজের মাধ্যমে ছোট বড় সকলেই ঈশ্বরের আরাধনায় খুব মনযোগ দিচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হল হিন্দুরা তাদের ধর্মগ্রন্থের কথাই মানছে না যেমনঃ- "ন তস্য প্রতিমা আস্তি" অর্থাৎ "ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই, মূর্তি নেই, ছবি নেই।" [যজুর্বেদ,৩২:৩]আবার যজুর্বেদ অধ্যায় ৪০, শ্লোক ৯(আন্ধাস্মা প্রাভিসান্তি ইয়ে আসাম্ভুতি মুপাস্তে) আন্ধাস্মা মানে অন্ধকার, প্রাভিসান্তি মানে প্রবেশ করা, আসাম্ভুতি মানে প্রাকৃতিক বস্তু (পানি, আগুন, সাপ, মানুষ ইত্যাদি) মুপাস্তে মানে উপাসনা করা। হরনকারী গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যায়’(ঋকবেদ-৫;২;৫)।আরও আছে ‘যারা সম্ভুতির (অর্থাৎ যা সৃষ্টি যেমন জল, বাতাস, সুর্য ইত্যাদি) পুজা করে তারা অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে। আর যারা অসম্ভুতির পুজা করে তারা আরো অন্ধকারের দিকে যাচ্ছে’ (ঋকবেদ)। শ্বেতাশ্বত্র উপানিষদ, অধ্যায় ৪, শ্লোক ১৯(না তাস্যা প্রাতিমা আস্তি) অর্থাৎ-" ঈশ্বরের কোন প্রতিমা নেই।" আবার শ্বেতাশ্বত্র উপনিষদ অধ্যায় ৬ , শ্লোক ৯ "না চাস ইয়া কাসচিজ জানিতা না কাধিপাহ" অর্থাৎ-" ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই, তার কোন প্রভু নেই"। কিন্তু হিন্দুদের প্রধান সমস্যাটা হল এরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে এক করে ফেলে। এব্যাপারে যদিও উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে কিন্তু তারা মনে করে ঈশ্বরের শরীর হতেই সব সৃষ্টির হয়েছে যদিও তাদের ধর্মগ্রন্থ বলছে সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টিকর্তার মন হতে শরীর হতে নয় অর্থাৎ সবকিছুই ঈশ্বরের কল্পনার মধ্যে বিরাজ করছে, তার মানে হল একমাত্র ঈশ্বরের অস্তিত্বই শুধু আছে বা তাঁর সত্বাই শুধু ধ্রব সত্য আর যা কিছু আছে সবই তাঁর চিন্তার মধ্যেই নিমোজ্জিত, আর তাই যদি হয় তবে তাঁর সৃষ্টির পুজো করলে তো তাঁর একমাত্র শ্বাশত সত্বার পুজো হচ্ছে না, পুজো করলে সরাসরি একমাত্র ঈশ্বরেরই করতে হবে। তাছারা ভুল হলেও যুক্তির খাতিরেও যদি ধরে নিই যে ঈশ্বরের শরীর থেকেই দেব দেবী ও অন্যান্ন কিছুর সৃষ্টি হয়েছে তবুও তো তারা সৃষ্ট জীবই হল, ১মাত্র সৃষ্টিকর্তা তো হল না যিনি কখনও সৃষ্টি হননি বরং সৃষ্টি করেছেন সুতারাং সৃষ্টি সবসময় সৃষ্টিই কখনই স্রষ্টা নয় তাই ১মাত্র স্রষ্টা ব্যাতীত আর কারও পুজা করলে নরকে জ্বলতে হবে। বর্তমান হিন্দুরা ভক্তি ও পুজোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না বিধায় ভক্তি ও পুজোর ব্যাপারে তালগোল পাঁকিয়ে ফেলছে। অর্থাৎ পুজো এবং ভক্তি দুটোই পাবার যোগ্য হল ১মাত্র ঈশ্বর কিন্তু ঈশ্বর ব্যাতীত তার অন্যসব সৃষ্টিকেও ভক্তি করতে হবে তবে ঈশ্বর সন্তুষ্ট থাকবেন কিন্তু তাদের পুজো করা যাবে না, কিন্তু বর্তমান হিন্দুরা সৃষ্টিকে ভক্তির ব্যাপারে অতিরঞ্জিত করে সৃষ্টিরও পুজো শুরু করেছে যা কিনা হিন্দুধর্মগ্রন্থ বেদপুরান অনুযায়ি জঘন্য পাপের কাজ।

সুতারাং ভক্তি শুধু হবে সৃষ্টির আর ভক্তি ও পুজো দুটোই হবে ঈশ্বরের। উদাহরনস্বরুপঃ- ১টি পরিবারে যদি ৫জন ভাই থাকে এবং ১ভাই বিয়ে করে ১জনকে নারীকে ঘরে আনলে ঐ নারী তার স্বামীসহ অন্য ৪ভাইকে ভক্তি করলে বড় ভাই খুশিই হবে কিন্তু দৈহিক ভক্তির প্রাপ্য শুধুই তার স্বামী একথা যদি ঐ নারীকে বার বার বলা হয় এমনকি এটা লিখে রাখার পরও যদি বাকী ৪টি ভাই তার স্বামীরই সহদর ভাই বলে এখন যদি নারীটি তার স্বামীকে অধিক খুশি করতে তাদেরকেও দৈহিক ভক্তি প্রদান করতে থাকে তবে বড় ভাই এতে খুশি হবে নাকি উক্ত নারীকে স্বাস্তি প্রদান করবে? আর স্বাস্তি প্রদান করলে সেটা বর্তমান হিন্দুদের দৃষ্টিতে কি সঠিক না ভুল হবে ? তবে হিন্দুধর্মগ্রন্থে "১মাত্র ঈশ্বর ব্যাতীত আর কারও পুজা কর না ,সৃষ্টির পুজা কর না" এটা লিখা থাকার পরও যদি সেই ভুল করে হিন্দুরা তবে ঈশ্বরের স্বাস্তি দেয়া কি অনুচিত হবে? আবার বর্তমান হিন্দুরা মূর্তিপুজা করার পক্ষে হাস্যকর সব যুক্তি দেখায়, যেমন- তারা বলে গনিতের অজানা কোন সমস্যার সমাধান বাহির করার জন্য ১মে যেমন আমরা x এক্সকে কাল্পনিক হিসাবে ধরি এবং পরে সমাধান পেয়ে যাই তেমনি আমরা মূর্তিকে প্রাথমিক ঈশ্বরের সত্বা ধরে পরে ঈশ্বরের স্বরুপ অনুধাবন করি কিন্তু গনিতের ক্ষেত্রে আমরা কোন অজানা জিনিসকে x ধরি কিন্তু ঈশ্বরকি কোন অজানা বা কাল্পনিক জিনিস? তারা বলে মুসলিমরাও আল্লাহ লেখা কোন কাগজ দেখলে সম্মান করে চুমু খায়। হ্যা তারা এটার মাধ্যমে ভক্তি জানায় তারা কাগজের টুকরোটির পুজো করে না এবং তারা জানে এটা আল্লাহ নয় এবং তার কোন মূর্তিও নয় এটা তাঁর নাম লেখা একটা বস্তু তাই ভক্তি প্রকাশ করে। আবার একদিন নাকি আচার্য রামানুজের কাছে এক মূর্তি পুজায় আস্থাহীন ব্যক্তি এসে উপস্থিত হন। তিনি আচার্যকে জিজ্ঞেস করেন, ব্রহ্ম বিশ্ব ব্যাপী, তাকে পূজা করার জন্য আপনি ছোট ছোট কতগুলি পিতলের মূর্তি রেখেছেন কেন? আচার্য বললেন, আমার ধুনি জ্বালাবার জন্য আগুনের দরকার, আপনি গ্রাম হতে আমাকে আগুন এনে দিন, তারপর আপনার প্রশ্নের জবাব দিব। ঐ লোকটি একখানা কাঠে আগুণ নিয়ে উপস্থিত হলেন। আচার্য তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এক খণ্ড দগ্ধ কাঠ এনেছেন কেন? যা বলেছি তাই আনুন। আগুন বলেছি আগুন আনুন। আগুন সকল বস্তুর মধ্যেই আছে। আপনার হাত ঘষে দেখুন, হাতের মধ্যেও আগুন আছে। আপনি আমার জন্য একটু খাটি আগুন আনুন। পোড়া কাষ্ঠ চাই না। আচার্যের কথা শুনে লোকটি বললেন, অগ্নি সব বস্তুর মধ্যেই আছে কিন্তু আপনার নিকট আনতে হলে কাষ্ঠ ছাড়া উপায় দেখি না। তখন আচার্য বললেন, সকল বস্তুর মধ্যে নিহিত অগ্নিকে আমার নিকট আনতে হলে কাষ্ঠ ছাড়া উপায় দেখেন না- আমিও সেই রূপ সর্বভুতস্থ সর্বব্যাপী পরম ব্রহ্মকে আমার নিকটতম আনতে চাইলে মূর্তিকে আরোপ ছাড়া উপায় দেখি না। এইখানে উক্ত ব্যাক্তিটি আচার্যের কাছে যা এনেছে তা হল সৃষ্ট জিনিস আগুন এবং যার মাধ্যমে এনেছে কাষ্ঠ সেটাও সৃষ্ট বস্তু আর যার কাছে আগুন আনা হল সে নিজেও ১জন সৃষ্ট জীব অর্থাৎ এখানে সবাই সৃষ্ট জিনিস কিন্তু স্রষ্টা কি কোন সৃষ্ট জিনিস? তিনি তো নিজেই স্রষ্টা, তাঁর উদাহরণ জগতে ১টিও নেই সুতারাং সৃষ্ট জিনিসের তুলনা ঈশ্বরের সাথে কখনো দেয়া যাবে না, জগতের নিয়ম হল কোন কিছু পেতে হলে ১টা না ১টা মধ্যম লাগবেই অর্থাৎ মধ্যম শুধু সৃষ্ট বস্তুর ক্ষেত্রেই লাগে স্রষ্টার নয় এর উদাহরনও নিচে দেয়া হবে ২য় পর্বে।

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০০
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×