সাইদির টেলিসঙ্গমের অডিও ফাঁস হবার পরে আমার মনে ক্ষীণতম ধারণা ছিল -- শিবিরনিয়ন্ত্রিত পেজগুলো অন্তত কিছু দিনের জন্য গা ঢাকা দেবে কিংবা রক্ষণাত্মক অবস্থানে যাবে। কিন্তু তা না করে তারো উলটো এই অডিওকে বানোয়াট ও মিথ্যে দাবি করছে।
জামাত-শিবিরের ইতিহাস মিথ্যাচারের ইতিহাস। জামাত-শিবির গোটা মুক্তিযুদ্ধকেই অস্বীকার করে চলছে, অস্বীকার করে চলছে তাদের যুদ্ধাপরাধের ইতিবৃত্ত। গোটা ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল আর একাত্তরের গোটা সাড়ে সাত কোটি মানুষ যেখানে জামাতের হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ-লুটতরাজের সাক্ষী; সেখানেও তারা দাবি করে যে, একাত্তরে তারা এসব অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল না; মুজাহিদ দাবি করে দেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই, গোলাম আজম নিজেকে দাবি করে নির্দোষ; শহীদুল্লা কায়সারের হত্যাকারী, জামায়াতের তত্কালীন দপ্তর সম্পাদক খালেক মজুমদার দাবি করে সে শহীদুল্লা কায়সারকে চোখেই দেখেনি; সাইদি দাবি করে একাত্তরে সে পিরোজপুরেই ছিল না! জামায়াতের সবাই দাবি করে রাজাকারবাহিনীর সাথে জামায়াতের সম্পৃক্ততাই ছিল না! এই যদি হয়, তাহলে একাত্তরে দেশীয় রাজাকারবাহিনীটা গড়েছিল কারা? নাকি মুক্তিযুদ্ধ বলে কোনো যুদ্ধই হয়নি? নাকি পৃথিবীর ক্যালেন্ডারে একাত্তর বলে কোনো সালই আসেনি?
জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রতিটি অপকর্মের দলিল লিপিবদ্ধ আছে একাত্তর সালের দৈনিক সংগ্রামের সংখ্যাগুলোর পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়। সংগ্রাম জামায়াতেরই মুখপত্র, পত্রিকাটি এখনও বহাল আছে, জামায়াত ঐ পত্রিকাটিরও একাত্তরের রিপোর্টগুলোকে অস্বীকার করে থাকে! মিথ্যাচারের তো একটি সীমা থাকা উচিত?
জামায়াতের রাজনীতি মিথ্যাচার আর ভণ্ডামির রাজনীতি। যারা ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইলে আষ্টেপৃষ্ঠে লেপটে থাকা নিজেদের অপরাধের কথা অবলীলায় অস্বীকার করতে পারে, যারা সাড়ে সাত কোটি সাক্ষীর সাক্ষ্য অস্বীকার করতে পারে, যারা অস্বীকার করতে পারে নিজেদের প্রকাশিত পত্রিকারই সুনির্দিষ্ট নয় মাসের প্রতিবেদন; তারা সামান্য কিছু অডিও রেকর্ড অস্বীকার করবে, এতে আশ্চর্য হবার কী আছে?
সাইদির ওয়াজ বাংলাদেশের সবাই একবার-না-একবার শুনেছে। ওর কণ্ঠ একেবারেই আলাদা ও ব্যতিক্রমী। ওর ফাঁস-হওয়া এগারোটা অডিওর মধ্যে সাতটি আমি শুনেছি, বাংলাদেশের লাখ লাখ ইন্টারনেট-ব্যবহারকারী তা শুনেছে। একজনকে ধোঁকা দেয়া যায়, দশজনকে ধোঁকা দেয়া যায়, একসাথে লাখ লাখ মানুষের লাখ লাখ কানকে ধোঁকা দেয়া যায় না। সাইদির কণ্ঠ কেবল জামাত-শিবিরের লোকজনই শোনেনি; আমিও শুনেছি, আমরাও শুনেছি, সাইদির ওয়াজ জন্মের পর থেকেই শুনছি। অডিওগুলো যে সাইদির, তা বোঝার জন্য প্রযুক্তিবিজ্ঞানী হতে হয় না!
জামায়াত-শিবির ইসলামের রাজনীতি করে না, সাইদি-আজম-নিজামির রাজনীতি করে। জামায়াত-শিবিরের কাছে ইসলাম মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে ব্যভিচারী সাইদির পশ্চাদ্দেশ বাঁচানো।
এই সেদিনও জামায়াত নির্বাচন কমিশনের চাপে তাদের দলীয় গঠনতন্ত্র থেকে আল্লাহ-রাসুলের নামাঙ্কিত লোগো এবং ইসলামসংক্রান্ত বেশ কিছু ধারা বাদ দিয়েছে! এই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামির ইসলামপ্রীতি!
শিবিরও জানে যে, অডিওগুলো সাইদির। জানার পরও তারা না জানার ভান করছে, অস্বীকার করছে, পেজে পেজে মিথ্যাচার করছে। মিথ্যাচার তারা করবেই, কারণ মিথ্যাচার তাদের পূর্বপুরুষদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিরায়-উপশিরায়।
শিবির যদি অডিওগুলো সাইদির স্বীকার করে নিয়ে সাইদির প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করত, সাইদির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করত, তাহলে শিবিরের জন্য সেটি হতো প্রথমবারের মতো অভিনন্দনযোগ্য একটি কাজ। কিন্তু ঐ যে আগেই বলেছি, শিবিরের কাছে ইসলাম মুখ্য নয়, সাইদিরাই মুখ্য! সাইদি রাস্তায় প্রকাশ্যে ধর্ষণ করলেও তারা সাইদিকে ছাড়বে না। উলটো এই ধর্ষণকর্মকে জায়েজ করার জন্য কেতাব ঘেঁটে ফতোয়া এনে হাজির করবে। একবার রাজাকার চিরকাল রাজাকার, একবার শিবির চিরকাল শিবির -- টেলিসঙ্গমকেলেঙ্কারি ফাঁস হবার পরও এরা মেশিনের দিকেই তাকিয়ে থাকবে, মেশিন থেকে চোখ নামাবে না!
মরুর বালিতে মাথা গুঁজে ঝড় চলে গেছে ভাবলেই ঝড় চলে যায় না, ঝোঁপের আড়ালে মুখ লুকিয়ে বাঘ চলে গেছে ভাবলেই বাঘ চলে যায় না, অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয়ে যায় না; লাখ লাখ মানুষকেও একসাথে বলদ বানানো যায় না, বাংলাদেশের মানুষ এত বলদ না -- শিবিরের এটা ভুলে গেলে চলবে না। অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সেই গোয়েবলসীয় প্রোপাগান্ডা স্টাইল অচল!
অডিওগুলো সাইদির না হলে সাইদির পক্ষ থেকে কেউ আদালতে বাংলালিক্স নামক ওয়েবসাইটটির বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করছে না কীজন্যে? সাইদির মতো 'মানী' লোকের মানহানি করে তার মেশিন নাঙ্গা করে দিলো বাংলালিক্স, অথচ মামলা কেন হচ্ছে না?
মামলা হোক। মামলাটা হলেই বেরিয়ে পড়বে থলের সব বেড়াল, বরজের সব পান, সাগরের সব লৈট্টা ফিশ, জঙ্গলের সব ময়না-টিয়া পাখি, গরু-ছাগলের সব কলিজু, পাজামার আড়ালের সব মেশিন, মেশিনের দৈর্ঘ-প্রস্থ ব্যাস-ব্যাসার্ধ আয়তন-ক্ষেত্রফল! খালি মামলাটা হোক!
কৃতঙ্গতায়: Akhtaruzzaman Azad লেখাটি এই ভাইয়ের । আমি শুধু শেয়ার করলাম