সুকুমারি(১৯২৮)
(The Good Girl)
উপমহাদেশের প্রথম বায়োস্কোপের প্রদর্শনীটি হয় ৭ জুলাই, ১৯৮৬ বোম্বাইয়ের ওয়াটসন হোটেলে। তার অল্পকিছুদিনের মধ্যেই কোলকাতায় বায়োস্কোপ প্রদর্শিত হয় জন স্টিভেনস, হাডসন এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ফাদার লাফাউন এর হাত ধরে। ১৮৯৬-৯৭ সময়কালে স্টিভেনস ঢাকায়ও বায়োস্কোপ প্রদর্শন করেন, যদিও এর যথেষ্ট তথ্যসূত্র পাওয়া যায়নি। প্রায় একই সময়ে কোলকাতা এবং ঢাকায় বায়োস্কোপ প্রদর্শন হলেও চলচ্চিত্র নির্মানের ক্ষেত্রে কোলকাতা এগিয়ে থাকে শুরু থেকেই। তবে চলচ্চিত্র নির্মানের স্বপ্নে ছোঁয়া লাগে বহু আগে থেকেই, যার সূচনালগ্নেও চলে আসে ঢাকার নবাব পরিবারের নাম। শিল্প ও সংস্কৃতির অনুরাগী নবাব স্যার খাজা আহসানউল্লাহ ও নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ ১৮৮৮-৮৯ এবং ১৮৯০-৯৬ সময়কাল ধরে ছিলেন কোলকাতার ‘ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র সদ্স্য। তাদের হাত ধরেই ঢাকায় ফটোগ্রাফির সূচনা ও বিকাশ হয়। নবাব স্যার খাজা আহসানউল্লাহের আমন্ত্রণেই কোলকাতার সিনেমেটোগ্রাফ কোম্পানি ১৮৯৮ সালের এপ্রিলের দিকে আহসান মঞ্জিলে আসে। অবশেষে নবাব পরিবার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তরুণ ১৯২৭-২৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ‘সুকুমারি’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি নির্মানের প্রয়াস নেয়। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন অম্বুজ প্রসন্ন গুপ্ত। অম্বুজ প্রসন্ন গুপ্ত ছিলেন তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) শরীরচর্চার শিক্ষক, তিনি একজন নামকরা নাট্য-ব্যক্তিত্বও ছিলেন। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক খাজা আজাদ এবং নামকরা খেলোয়াড় খাজা আইয়ান(যিনি ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশুনা করেন) চিত্রগ্রাহকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৮-২৯ সালে দিলকুশা গার্ডেনে শুটিং শুরু হয় এবং এ সময়কালেই শেষ হয়। শুটিংয়ে চারটি রিল ব্যবহার করা হয়। চলচ্চিত্রের মূল দুটি চরিত্রে অভিনয় করেন নবাবজাদা নাসরুল্লাহ(নায়ক) ও সৈয়দ আবদুস সোবহান(নায়িকা)। তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যাপারটি রীতিবিরোধী হওয়ায় তরুণ যুবক সৈয়দ আবদুস সোবহান নারী সেজে সুকুমারির চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেন নবাব স্যার সলিমুল্লাহ’র ভাগ্নে খাজা আজমল, খাজা আদিল, সৈয়দ সাহেব আলম, নবাবজাদা নাসরুল্লাহ এবং আরও কয়েকজন। চলচ্চিত্রটিতে সার্বিক সহযোগিতা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অধ্যাপক আন্দালিব সাদানি, সৈয়দ আবদুস সোবহান, কাজী জালালউদ্দিন এবং অন্যান্য আরও কয়েকজন। সফলভাবেই নির্মিত হয় বাংলাদেশের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র(নির্বাক) সুকুমারি। চলচ্চিত্রটি কয়েকবার ব্যক্তিগত পরিসরে প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটির প্রিন্ট চিরতরে হারিয়ে যায়। শুধুমাত্র সেই চলচ্চিত্রের (নায়ক খাজা নাসরুল্লাহ এবং নায়িকা সৈয়দ আবদুস সোবহানের একত্রে) একটিমাত্র ছবি পাওয়া যায় এবং ১৯৭৯ সালে তা বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
একনজরে ‘সুকুমারি’
নির্মানকালঃ ১৯২৮-২৯
চলচ্চিত্রের ধরণঃ নির্বাক।
সময়সীমাঃ পাওয়া যায় নি (শুধু জানা যায় চারটি রীল ব্যবহৃত হয়)।
বাজেটঃ পাওয়া যায় নি।
পরিচালকঃ অম্বুজ প্রসন্ন গুপ্ত।
প্রযোজকঃ খাজা আজমল, খাজা আদিল, সৈয়দ সাহেব আলম, নবাবজাদা নাসরুল্লাহ এবং প্রমুখ।
চিত্রগ্রাহকঃ খাজা আজাদ ও খাজা আইয়ান।
শ্রেষ্ঠাংশেঃ খাজা নাসরুল্লাহ (নায়ক) এবং সৈয়দ আবদুস সোবহান (নায়িকা)।