সে দিন পথে হাতছিলাম একা। বুকে কি যেন শূন্যতা হু হু করছিল। চেনা রোগের অচেনা কারন খুজে খুজে ফিরছিলাম চেনা পথে, আনমনে -ব্যাস্ত শহরের কোন এক ছোট রাস্তায়। নিউরন গুলো অসচেতন ছিল তাই গতিময় রিক্সা-টেক্সির বিম্ব মস্তিস্ক ধারন করছিল না। হাটতে হাটতে হঠাৎ নিতান্ত তুচ্ছ বস্তু দৃষ্টি কারল। জড়ে পড়তে দেখলাম একটি পাতা। এই জড়া পাতা অসচেতন মস্তিস্কে নিদারুণ আনন্দ অনুভুতি জাগাল। ন্যানো সেকেন্ডেই ভুলে গেলাম শুন্যতার কথা। মস্তিষ্কের ইশারা ছাড়াই দৌড় দিলাম কংক্রিটের রাস্তায় জড়া পাতাকে লুফে নিতে.....................
অতপর শুনলাম জড়া পাতার গল্প। তাদের বুকে জমা শত-সহস্র কষ্ট। শুকিয়ে যাওয়ার কষ্ট, জড়ে পরার কষ্ট। তারা চেয়েছিল শত সহস্র বছর বেচে থাকতে, অনন্ত যৌবন-সবুজ ধরে রাখতে। তারা কখনই চায় নি তাদের সবুজ-হলুদে রূপান্তরিত হোক। চির সবুজ হয়ে থাকতে চায় আরও সবুজের সাথে আর জুড়াতে সবার চোখ। তারা জানে তাদের এ জড়ে পড়া নিয়ে প্রভুর কোন ভাবনা নেই। তারা জানে তারা জড়ে গেলে নতুন পাতারা আসবে, নতুন সবুজের সৃষ্টি হবে। তাই তাদের মনে কষ্ট আরো বেশি এই ভেবে যে কালের পুরাণে তাদের নাম লিখা থাকবে না, সময়ের ব্যাবধানে বিলীন হয়ে যাবে তাদের অবদানের কথা, তাদের সব কথা। নতুনদের নিয়ে মেতে উঠবে সবাই।
জড়া পাতার গল্প শুনে মনে পরল আমার নিজের অবস্থানের কথা। চির সবুজের সেই শৈশব শেষ কবে!! দিনে দিনে হচ্ছে সপ্তাহ, মাস, বছর। আমার সবুজ ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে যাচ্ছে- হয়ে যাচ্ছে বিবর্ন। কালে ব্যবধানে আমাকেও জড়ে পড়তে হবে জড়া পাতার মত। আমারও নাম লিখা থাকবে না কোথাও। এই সমাজে আমার চিহ্ন টুকু রইবে না। বেহিসেবি মানুষ গুনবে নতুনদের-তাদের সংখ্যা, করা হবে তাদের নিবন্ধন। জড়ে পড়া মানুষ হিসেবে আমি থাকব কালের আস্তা কুড়ে।
কালের গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার ভয়তো আমার মাঝে নেই। নেই কোন আশা মানুষের মাঝে বেচে থাকার, কখনও স্বাদ জেগবে কিনা সেই নিশ্চয়তাও নেই। কর্মে যার অস্বস্তি, কর্মে যার হীনতা আর অলসতা যার অলংকার তারতো তলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকার কথা না। ‘বেচে’ থাকার জন্যে বেচে থাকার স্বাদ থাকতে হয়